#আসক্তির_শেষ_বেলায়_তুমি
#পর্বঃ০৮
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* অধরা ভালো করে অয়নের পাশে তাকাতেই দেখতে পায় অয়নের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ঈশা। অধরার জ্ঞান ফিরতেই অয়ন অধরার পাশে বসলো। অধরাকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে অয়ন বলল
— কি হয়েছে? তোমায় কত বার করে বলেছি গাড়ি করে আসতে। তুমি পায়ে হেঁটে কেনো আসছো?
অধরা অয়নের কথার কোনো জবাব দিলো না। নিশ্চুপ হয়ে মাথাটা নিচু করে আছে সে। অধরাকে নিশ্চুপ দেখে ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— স্যার আপনি অযথা রাগ দেখিয়ে কথা বলছেন। আমার মনে হচ্ছে ম্যাম কোনো চিন্তায় আছেন। ওনাকে একটু একা থাকতে দিন।
— হ্যাঁ এটা থাকতে দিবো তো, ওনাকে আমার অফিসে বসিয়ে আমি বাড়ি চলে যাবো। যত্তসব। এই কথা বলার ইচ্ছে না থাকলে সেটাও মুখে বলবে। এমন চুপ করে থাকবে না।
অধরা অয়নের কথার বিপরীতে বলল
— আমায় একটু পানি দিতে পারবেন? গলাটা শুকিয়ে গেছে আমার।
— হুম দিচ্ছি।
অয়ন অধরাকে পানি এগিয়ে দিতেই অধরা এক নিঃশ্বাসে পুরো পানিটা খেয়ে নিলো। অয়ন জানে না অধরার আসলে কি হয়েছে! তবে এই টুকু অয়ন ঠিক বুঝতে পারছে নিশ্চই কোনো খারাপ কিছু হয়েছে। অয়ন অধরাকে আর কোনো প্রশ্ন করলো না। ঈশাকে নিজের কাজে যেতে বলল। আর অয়ন ও কাজে মনোযোগ দিলো। অফিস শেষ করে অয়ন অধরাকে সাথে নিয়ে বাড়িতে ফিরলো। বাড়ি ফিরতেই অয়ন লক্ষ্য করলো বসার রুমে অয়নের বাবা মা বসে আছে। অয়নকে দেখে অয়নের মা বলল
— অয়ন তুই ফ্রেশ হয়ে একটু নিচে আসবি! তোর সাথে কিছু কথা আছে।
— হুম আম্মু আসবো কথা তো আমার ও আছে। আর জানার ও অনেক কিছু আছে। আসছি আমি।
অয়ন রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো। অধরা এখনও নিশ্চুপ হয়ে আছে। কারোর সাথে কোনো কথা বলছে না সে। অয়ন ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসলো। ঈশাকে বাড়িতে কেনো ডাকা হলো আর ঈশা কেনো ছুটি নিয়েও অফিসে জয়েন করলো সেটা অয়নের কাছে অস্পষ্ট। অয়ন বসার রুমে এসে বসে তার মা কে উদ্দেশ্য করে বলল
— আম্মু তোমাদের কথা শোনার আগে আমার এই একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। ঈশাকে বাড়িতে ডাকার কারন কি? আমায় মিথ্যা বলিও না প্লিজ!
— ঈশাকে বাড়িতে ডাকার অনেক কারন আছে। কোন কারনটা শুনবি তুই?
— মজা করছো আমার সাথে? মানে একটা অপরিচিত মেয়ে আমাদের বাড়ি আসবে, যাবে। আর তার পিছনেও নাকি অনেক কারন আছে! বুঝলাম না কি হচ্ছে আমার সাথে?
— অপরিচিত মেয়ে আসছে বলেই তোর এতো সমস্যা নাকি ঈশা এসেছে বলে সমস্যা হচ্ছে! কোনটা অয়ন?
— দুটোই। এই দুটোতেই আমার সমস্যা।
— অপরিচিত মেয়ে তো অধরা ও। কোথায় ওকে নিয়ে তো কোনো কথা হচ্ছে না। ও তো দিব্বি আমাদের বাড়িতেও থাকছে। তাও কোনো পরিচয় ছাড়া। একটা রাস্তার মেয়েকে নিয়ে এক ঘরে থাকিস তুই। এটা কত বড় লজ্জাজনক ব্যাপার সেই সম্পর্কে কোনো ধারনা আছে তোর?
— রাস্তার মেয়ে! কাকে রাস্তার মেয়ে বলছো আম্মু? ঐ মেয়েটাকে নিয়ে কোনো প্রকাশ বাজে কথা আমি সহ্য করবো না আম্মু।
— সত্যি টা তোর চেঁচিয়ে বলা কথায় মিথ্যা হয়ে যাবে না। ঈশাকে আমরা এই বাড়িতেই থাকার অনুমতি দিয়েছি। আর তাও তোর স্ত্রী হিসেবে। এতে তোর মত থাকুক বা না থাকুক। ঈশা এই বাড়ির বউ হয়ে আসবে মানে আসবে।
অয়নের আম্মুর কথা শুনে অয়ন বাঁকা হাসি দিলো। অয়নের হাসিটা কৌতুহলপূর্ণ। অয়নের হাসির মানে কেউ বুঝতে পারলো না। অয়ন মাথাটা নিচু করে নিজের আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— তোমরা কি ভাবছো আমায় ফোর্স করবে আর আমি তোমাদের দিকে তাকিয়ে সবটা মেনে নিবো? আচ্ছা একটা কথা কি তোমরা ভুলে যাচ্ছো, আমি তোমাদের সন্তান। তোমাদের যদি এটাই শেষ কথা হয় তবে আমার ও এটাই শেষ কথা। আমি ঈশাকে বিয়ে করবো না। আর না মানে না।
অয়ন কথাটা বলতেই রাগে গজগজ করতে করতে সকলের সামনে দিয়ে উঠে পড়লো। অয়নের বাবা মা অয়নের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। একটা রাস্তার মেয়ের জন্য আজ তাদের সন্তান তাদেরকে কথা শোনাতে পারলো! কথাটা ভাবতেই তাদের অবাক লাগছে। অয়ন নিজের রুমে ফিরে আসতেই দেখতে পায় অধরা সোফার বসে আছে। অয়নকে রেগে থাকতে দেখে অধরা বলল
— এতোটা রেগে আছেন কেনো? কিছু কি হয়েছে?
অধরার কথাটা শুনে অয়নের মাথা যেনো আরো গরম হয়ে যায়। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো
— সমস্যা কি তোমার? সব বিষয়ে জানার এতো আগ্রহ কেনো তোমার? আর কখনও আমায় কোনো প্রশ্ন তুমি করবে না। কথাটা মাথা ঢুকিয়ে রাখবে।
— আমি জানি আমায় নিয়েই ঝামেলা হয়েছে। ঈশা মেয়েটা খুব ভালো। আপনার ভালো কেয়ার করবে। আমায় মুক্তি দিয়ে দিন। আমার সময় শেষ হয়ে গেছে।
অধরার কথাটা শুনে অয়ন তাচলছিল্যকর হাসি দিয়ে বলতে লাগলো
— অধরা বলো বা ঈশা। আজ টাকা আছে বলেই প্রিয়জন বা প্রয়োজন সব হতে চাইছে। আজ যদি আমি সেই আগের বেকার মানুষটা হতাম না। ওহ গড কিসের অয়ন আর কিসের কি! মুখটাই দেখতে চাইতে না। এটাই বাস্তবতা।
— সকলকে এক ভাবে দেখা বন্ধ করুন। আমার মতো আর কেউ হতে পারে না। আমি জঘন্য হতে পারি। তবে সবাই নয়।
— আজ কারন মানুষ আর মুখোশ চেনা বড্ড দায়। সব গুলো চেহারা আড়ালে একটা অপরিচিত মুখ থাকে। যেটা আসলেই ভয়ংকর। যাই হোক আমায় নিয়ে আপাতত তোমার কোনো ইন্টারেস্ট দেখাতে হবে না। খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
অয়ন অধরার সাথে আর তর্ক করলো না। অধরার সাথে তর্ক করে নিজের মুড খারাপ করার কোনো ইচ্ছা অয়নের নেই। সকাল অয়ন ঘুম থেকে উঠতেই দেখতে পায় অধরা বিছানায় নেই। হঠাৎ করেই অয়নের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অয়ন অধরাকে না দেখতে পেয়ে একটু অবাক হলো। হঠাৎ করে আবার কোথায় চলে গেলো? অয়ন সোফা থেকে উঠে ব্যল্কনিতে যেতেই দেখতে পায় অধরা ভোরের আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— হঠাৎ করে এতো সকালে ব্যাল্কনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছো কেনো? কিছু কি হয়েছে?
— কি হবে? কিছু হয়নি। একটা কথা ভাবছিলাম। আচ্ছা আপনি জানেন অভাগা যেদিকে যায় নদী সেই দিক দিয়েই শুকায়! আমার অবস্থা ও ঠিক এমনই। জীবনে এতো এতো ভুল করেছি যে তার মাশুল হয়তো এই জন্মে দিয়ে শেষ করা যাবে না।
অধরার কথাটা শুনে অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বাঁকা হাসি দিয়ে অয়ন বলল
— চোখের জল কখনও বৃথা যায় না। ততটাই পাবে যতটা দিবে। সেটা কষ্ট হোক বা ভালোবাসা। রেডি হয়ে নাও। অফিস যেতে হবে।
— স্যার আমার একটু কথা আছে আপনার সাথে। আপনার সময় হবে কি?
— উহু আমি এখন বিজি আছি। আসছি।
অয়ন অধরার কথাটা পাত্তা দিলো না। অধরাকে এড়িয়ে অয়ন চলে যায় ফ্রেশ হয়ে নিতে। অধরা জানে অয়নের কাছে তাঁর আর কোনো মূল্য নেই। নিজের করা প্রত্যেকটা আঘাতের সমান আঘাত অধরা ও সহ্য করেছে। নিজের পরিবারের জন্য অয়নকে ছেড়ে দিয়েও নিয়তি তাদের এক করে দিয়েছে। ভালোবাসার শক্তি হয়তো এটাই। নয়তো অয়নের সাথে করা সেই অপরাধের সাজা পাবার জন্যই হয়তো এক করেছে! তবে সেটা যাই হোক। অধরার করা অপরাধের সাজা অধরা একটু একটু করে ভোগ করছে। হয়তো এই অপরাধ বোধটা তার সারা জীবন থেকে যাবে। অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন গাড়িতে অপেক্ষা করছে অধরার। অধরা গাড়িতে উঠে বসতেই অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এতো লেট হলো কেনো? জানো আমি অপেক্ষা করা একদম পছন্দ করি না!
— হুম জানি আমি। তবে একটু কাজ পরে ছিলো তো তাই। সরি স্যার চলুন।
— হুম।
অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করছে আপন মনে। অধরার চোখ মুখ কেনো যেনো ছলছল করছে। অয়ন বিষয়টা দু একবার দেখলেও প্রশ্ন করেনি। কারন অধরাকে নিয়ে ইন্টারেস্ট দেখানোর কোনো ইচ্ছা অয়নের নেই। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করায় মন দিলো। অফিসের সামনে এসে গাড়ি পার্ক করে অয়ন সোজা নিজের কেবিনে চলে যায়। কেবিনে এসে অয়ন কম্পিউটার অন করতেই অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে মলিন কন্ঠে যা বলল তা শুনে অয়নের মাথা ঘুরতে লাগলো। অয়ন অধরার কথা যদিও সিরিয়াসলি নেয় না। তবুও অধরার কথাটা শুনে তার কলিজাটা কেঁপে উঠলো। অধরা অয়নকে অবাক করে দিয়ে বলল………………….
#চলবে……………………….
[নেক্সট পার্ট খুব শিঘ্রই আসছে দয়া করে অপেক্ষা করুন। কমেন্টে নেক্সট না লিখে অন্য কিছু লেখুন ভালো লাগবে। ধন্যবাদ]