আসক্তির শেষ বেলায় তুমি পর্ব ১

0
1806

নিজের স্বামীকে হাসপাতালের বেডে রেখে আজ আমি আমার প্রাক্তন প্রেমিকের বাড়িতে। ভাবছেন হয়তো নিজের স্বামীকে ফেলে প্রাক্তন প্রেমিকের কাছে কি করতে এসেছি? তবে বলি তার কাছে রক্ষিতা হিসেবেই আসা আমার। আমার প্রাক্তন প্রেমিকের নাম অয়ন চৌধুরী। বিশিষ্ট বিজনেস ম্যান অয়ন চৌধুরীর সাথে আমার ৫ বছরের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো। যখন অয়ন আর আমার মাঝে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো তখন অয়নের নামের পাশে বিজনেস ম্যান এর উপাধিটা ছিলো না। তার সম্পূর্ণ পৃথিবীটাই ছিলাম আমি। কিন্তু দিন শেষে তখন ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে চাইলো। ঠিক তখনি আমি তার সাথে প্রতারণা করি‌। হ্যাঁ, প্রতারণা করি তার সাথে। যখন আমার উচিত ছিলো নিজের প্রিয়জনের হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সকল বাধাকে অতিক্রম করা। ঠিক তখন আমি আমার পরিবারের কথা ভেবে তার সাথে প্রতারনা করি। ফিরিয়ে দেই তাকে শুন্য হাতে। তার পবিত্র ভালোবাসাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আমি আমার জীবন নতুন কারোর সাথে সাজিয়ে নেই। বিয়ের দু’দিন পর আমার স্বামীর দূর্ঘটনার শিকার হয়। আর কোমায় চলে যায়। তার চিকিৎসার জন্য আমি অনেক চেষ্টা করেছি। দীর্ঘ একটি বছর তার চিকিৎসার খরচ চালিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। তাই নিজেকে অয়ন চৌধুরীর কাছে বিক্রি করে দেই। শুধু মাত্র আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য।

* অধরা কথা গুলো অয়নের ছবির দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো। আজ কেনো জানি বার বার তার অতীতের কথা মনে পড়ছে। অতিতের সেই দিন গুলোর কথা মনে পড়তেই অধরার ঠোঁটের কোনে হয়তো মৃদু হাসির রেখার উদয় হয় ঠিক। তবে শেষ বেলায় সেই হাসিটা কান্নায় রূপ নেয়। অধরা ভাবনার ডায়রির পাতায় চোখ বুলাতেই হঠাৎ করে কারোর পায়ের বুট জুতোর শব্দ অধরার কানে ভেসে আসে। অধরা দ্রুত নিজের চোখের কোন থেকে নোনা জলের বিন্দুটা মুছে নিয়ে সোফা থেকে উঠে পড়লো। অয়ন এসেছে হয়তো! অধরা সোফা থেকে উঠে দাড়াতেই অয়ন হনহন করে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো। অধরাকে সোফার সামনে দেখে ভারী কন্ঠে অয়ন বলল

— হঠাৎ করে আমার অনুপস্থিতিতে আমার রুমে কেনো এসেছো?

— আসলে তোমার বিছানাটা গুছিয়ে দিয়ে রুমটা একটু গুছিয়ে…!

অধরার কথাটা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই অয়নের মুখের উপর তীব্র বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট হলো। অয়ন অধরার দিকে বিরক্তি কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

— কত বার করে বলেছি আমায় তুমি করে বলবে না। কেউ আমায় তুমি করে বললে আমার ইগোতে লাগে। সো প্লিজ ইগনোর ইট!

— সরি অয়ন আমি ভুলে গিয়েছিলাম…!

অধরা অয়নের নামটা মুখে নিতেই অয়ন দুম করে অধরার দিকে এগিয়ে এসে অধরার চুলের মুঠি টা নিজের হাতের মুঠোয় মুষ্ঠিবদ্ধ করে নিলো। অধরা কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। হঠাৎ করে অয়ন এমন করছে কেনো? অধরা অয়নের চোখের দিকে তাকাতেই অয়ন অধরার ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে এসে রাগে গজগজ করতে করতে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— তোমার মতো একটা রক্ষিতার মুখে আমি আমার নামটা শুনতে চাই না। আমার নাম ধরে ডাকার কোনো অধিকার বা যোগ্যতা তোমার নেই। ( অয়ন)

— ভুল হয়ে গেছে প্লিজ! ক্ষমা করে দিন স্যার। আমি বুঝতে পারিনি একটা রক্ষিতার অধিকার সীমাবদ্ধ। তাই ভুল করে ফেলেছি। দয়া করে এই রক্ষিতাকে ক্ষমা করে দিন!

অধরার মুখে রক্ষিতা শব্দটা শুনতেই অয়ন দুম করে অধরার চুল গুলো ছেড়ে দিলো। অধরা দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে অয়ন অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলো। হঠাৎ করেই বুকের মাঝখানে অয়নের তীব্র যন্ত্রনার সৃষ্টি হলো। “অধরা তো কোনো ভুল কথা বলেনি। অধরা তো আমার রক্ষিতা। ওকে টাকা দিয়ে ক্রয় করে নিয়ে এসেছি আমি। তবে কেনো ওর মুখ থেকে এই শব্দটা শুনতেই আমার বুকটা কেঁপে উঠলো! তবে কি ওর প্রতি সেই আগের ভালোবাসাটা এখনও বেঁচে আছে? না থাকতে পারে না। একটা প্রতারককে কখনও ভালোবাসতে নেই”। অয়ন কথাটা আপন মনে বলল। অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অধরার দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি এসে বলতে লাগলো

— মাই ডিয়ার রক্ষিতা, এখন আমার ড্রিংক করার সময়। তুমি আমার জন্য ড্রিংক্স এর ব্যবস্থা করো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

— জ্বি স্যার, করছি।

অয়ন কথাটা বলেই নিজের ব্লেজারটা সোফার দিকে ছুড়ে ফেলে দিলো। অতঃপর ফ্রেশ হতে চলে গেলো সে। অয়ন চলে যেতেই অধরা অয়নের ব্লেজারটা হাতে তুলে নিয়ে ব্লেজারটার দিকে তাকিয়ে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলতে লাগলো

— তুমি আমার সেই অয়ন! যে আমার মুখে একটা বাজে কথা শুনলে আমার উপর রাগ দেখাতে! আর আজ সেই মানুষটি নিজেই আমায় রাস্তার মেয়ের সাথে তুলনা করছো! না তুমি আমার সেই অয়ন হতে পারো না। তুমি অয়নের মুখোশ পড়া একটা ভিন্ন মানুষ।

অয়ন ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো টেবিলের উপর সব কিছু গুছিয়ে রাখা। অধরা রুমের এক পাশে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে। অয়ন অধরার দিকে কোনো প্রকার ভ্রূক্ষেপ না দেখিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। অতঃপর একটা ড্রিংক্স এর প্যাক তৈরি করে গলায় ঢেলে দিলো। আজ অয়নের ড্রিক্স করে একটুও ভালো লাগছে না। কারন পরপর তিন থেকে চারটি প্যাক গ্রাম ঢালার পর ও আজ কেনো যেনো নেশা হচ্ছে না তার। অয়ন মদের বোতলটা ঝাকুনি দিয়ে পুরোটা ঢগঢগ করে গিলে দিলো। অধরা পাশ থেকে মৃদু কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— বাহ! আজ কাল দেখি মদের ও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছো।

অধরার কথার বিপরীতে বাঁকা হাসি দিয়ে অয়ন বলল

— কিছু বিশ্বাস ঘাতক ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেকটা স্বপ্ন দেখানোর পরেও শেষ সময়ে এসে পথে বদলে নেয়। অথচ এক মদটাকে দেখো বড় বড় অক্ষরে লিখেই দিয়েছে মদ্যপান মৃত্যুর কারন। আর দিন শেষে ঠিক তাই হয়। মৃত্যু! তবুও মানুষ এটাকেই পান করে কারন জানে। দিন শেষে এটা ঠকাবে না।

— এমন ভাবে নিজের জীবন নষ্ট করে দিয়ে কি মজা পাচ্ছো?

— নষ্ট করছি না, অভ্যাস করছি। কিছু মানুষের নিক্ষুত অভিনয় এর কাছে এটা সামান্য।

অধরা আর কোনো কথা বলল না। নিশ্চুপ হয়ে নিজের চোখের জল মাটিতে ফেলছে। অধরা আজ নিজের কাছেই নিজের ছোট হয়ে গেছে। সে শুধু একটা ছেলের ভালোবাসাকে নয় বরং তার জীবনটাকেই পাল্টে দিয়েছে। অয়ন ড্রিংক্স শেষ করে সোফা থেকে উঠে পড়লো। সামান্য টলছে অয়ন। নিজের বিছানার দিকেও ঠিক মতো এগিয়ে যেতে পারছে না সে। অধরা অয়নের দিকে দৌড়ে এগিয়ে এসে অয়নকে ধরলো। যাতে করে অয়ন বিছানায় যেতে পারে। অয়ন এক ঝটকায় অধরার হাত নিজের শরীর থেকে সরিয়ে দিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে ভিশন কর্কশ কন্ঠে বলতে লাগলো

— আর কখনও আমায় স্পর্শ করার ভুলটা করবে না। আমি নিজের পথ নিজে একা চলতে পারি। আমার কারোর সাহায্য লাগবে না।

অধরা আর কি করবে? অয়নের কাঁধের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। অয়ন নেশায় বুদ হয়ে বিছানায় পড়তে চোখ বন্ধ করে ফেলল। অধরা যেই পাপ করেছে তার কোনো ক্ষমা হয় না। অধরা অয়নের পা স্পর্শ করে অনেক কান্না কাটি করলো। বার বার অধরার মনে হচ্ছে আজ অধরার এই অবস্থার জন্য সে নিজেই দায়ী। অধরা কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে তার মনে নেই। সকাল হতেই অধরার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অধরা চোখ মেলতেই ভিশন অবাক হয়ে যায়। অধরা দেখতে পায়………………………….

#চলবে………………….

#আসক্তির_শেষ_বেলায়_তুমি
#পর্বঃসূচনা
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

[ প্রথম পর্ব কেমন লাগলো? কমেন্ট করে জানান। আর পরবর্তী পর্ব আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় হতে চলেছে। তাই সাথেই থাকুন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here