সরোবরে প্রেম পর্ব ৭+৮

0
798

সরোবরে প্রেম
লেখনীতেঃশ্যামকন্যা
পর্ব:০৭

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য

অবনীর কথায় গলা শুকিয়ে আসে প্রিয়তার। সে শীতল চোখে অর্ণবের চোখে তাকায়। একরাশ আতঙ্ক সেখানে ভয় করেছে। প্রিয়তাকে হারানোর ভয়। প্রিয়তা ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করলো অবনীকে,

“কোন নাটকের কথা বলছিস?”

অবনী কিছুটা সময় থেমে বলে,

“কেন, ওনি তোকে বলেনি তুই ওনার টাইম পাস। ওনি আমাকে বিয়ে করতে চায়। সেই জন্য আমরা একসাথে সময়ও কাটিয়েছি। ছবি দেখতে চাস?”

প্রিয়তা অবিশ্বাসের হাসি হাসে। বলে,

“ওনাকে আমি যথেষ্ট বিশ্বাস করি। এসব ছবি এখন এডিট করা যায়।”

অবনীর মুখ কিছুটা পানসে হয়ে যায়। সে তার বাবা-মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“তোমরা বলছো না কেন, ওনি আমাকে বিয়ের কথা বলেছিলেন।”

প্রিয়তার মামা আফতাব সাহেব বলেন,

“অর্ণব নিজেই আমাদের কাছে অবনীকে বিয়ে করার কথা বলেছে।”

সেলিনা বেগম হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। তার মেয়ের বিয়ে নিয়ে বড় ভাই খুশি ছিল না। এই কি তবে আসল কারণ?

অর্ণবের কাছে সবটা পরিস্কার হয়। তাদের কথা গোপনে রেকর্ডিং করা, বিয়ের আসরে ফেইক ফটো নিয়ে হাজির হওয়া সবটা অবনীর পাগলামি। মেয়েটা এমন গেইম খেলবে অর্ণব স্বপ্নেও ভাবেনি। সে প্রিয়তার দিকে তাকায়। মেয়েটাকে শান্ত দেখাচ্ছে।

প্রিয়তা বলে,

“তোমাদের আরও কিছু বলার থাকলে বলো। আমি কবুল বলবো।”

বিয়ের আসরে থাকা সবাই চমকে উঠে। অর্ণবকে চরিত্রহীনের তকমা দিতে থাকে। সবার গুঞ্জন বন্ধ করতে প্রিয়তা বলে,

“মিথ্যা যেকেউ বলতে পারে। আপনারা কিভাবে বুঝলেন ওনারা সত্য বলছে? কোনো উপযুক্ত প্রমাণ আছে?”

থমকে যায় সবাই। আফতাব সাহেব মাথা চুলকান। সেলিনা বেগম বলেন,

“ভাই, কখনো তো আপনার কাছে সাহায্যের হাত পাতিনি। তবে আমার মেয়ের সুখে এতো নজর কেন?”

কারো মুখে রা ফুটে না।

অবনী রেগে বলে যায়,

“তোকে আমি দেখে নেব, প্রিয়তা। আমার জিনিস সবসময় আমারই হয়।”

অবশেষে ঠিকঠাক বিয়ে সম্পন্ন হয়। আসমা চৌধুরী মনে মনে ভীষণ খুশি হন। ছেলের জন্য খাঁটি সোনা পছন্দ করেছেন তিনি। মেয়ে আজকে অর্ণবের পাশে যেভাবে দাঁড়ালো, অন্য মেয়ে হলে হয়তো পারত না।

বিদায়ের সময় সেলিনা বেগম জ্ঞান হারায়। প্রিয়তার খালা তাকে সামলান। কাব্যর চোখেও পানি। কিছুতেই সে বোনকে যেতে দিবে না। সে বলে,

“আমি আর কখনো ঝগড়া করবো না আপু। তবুও তুমি এ বাসায় থাকো।”

প্রিয়তার চোখ দিয়ে নোনাজল গড়ায়। কেন মেয়েদের এতো কষ্ট?

চৌধুরী মেনশনে আসার পর আসমা চৌধুরী প্রিয়তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেন। কপালে চুমু খেয়ে বলেন,

“মাশাল্লাহ, খুব সুন্দর লাগছে, মা। আমার ছেলেকে কখনো কষ্ট দিও না, মা। আমার অনেক আদরের সন্তান।”

স্নেহের ভারে প্রিয়তার চোখ বুঁজে আসে। আশপাশ থেকে অনেক মানুষই নতুন বউ দেখতে আসে। কেউ বা খোঁচা মেরে বলে, ডাক্তার ছেলের জন্য ডাক্তার বউ কেন আনলে না? মেয়ের বাপের বাড়ির সাথে তোমাদের যায় না। প্রিয়তা সেসব কথা শুনে খানিকটা মন খারাপ করে। সত্যিই অর্ণবের পাশে সে অযোগ্য।

রাতে অর্ণব রুমে এসে সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। প্রিয়তা পাশেই বউ সেজে বসে ছিল। সে উঠে গিয়ে প্রিয়তার কোলে মাথা রাখে। বলে,

“অবশেষে আমার আমানত আমার কাছে।”

“আমি কি আপনার যোগ্য, অর্ণব?”

অর্ণব সুন্দর করে হাসে। বলে,

“সম্পর্কে যোগ্য, অযোগ্য হওয়ার চেয়ে ভালোবাসা বেশি দরকার। দুজনের ভেতর বোঝাপড়া আর সম্মান দরকার।”

প্রিয়তা অর্ণবের মাথার চুল এলোমেলো করতে করতে বলে,

“তবুও আপনি আমার চেয়ে ভালো মেয়ে পেতেন।”

“তুমি থাকলে আমার কাউকেই লাগবে না, প্রিয়ু।”

খানিক পরে প্রিয়তা ভারী গয়না আর শাড়ি খুলে পাতলা জামা পড়ে আসে। এসে দেখে অর্ণব খালি গায়ে বসে আছে। প্রিয়তা তাকাতেও পারছে না সেদিকে। এই অবস্থায় লোকটাকে কি নিদারুণ সুদর্শন লাগছে। হুট করে অর্ণবের সাথে প্রিয়তার চোখাচোখি হয়ে যায়। প্রিয়তা চোখ নামিয়ে ফেলে। অর্ণব বলে,

“তাকাচ্ছ না কেন,বউ? আমি তো তোমারই।”

প্রিয়তার বুকে কাঁপন ধরে। সে ধীর পায়ে অর্ণবের দিকে এগোয়। অর্ণব খপ করে প্রিয়তার হাত ধরে বলে,

“আজ আমাদের প্রথম রাত। একটা কথা রাখবে বউ?”

প্রিয়তা মাথা নাড়ে।

অর্ণব বলে,

“তোমার বুকের উপর একটু মাথা রাখতে দিবে?”

লজ্জায় কুঁকড়ে যায় প্রিয়তা। হাত পায়ে কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়। তবুও সাহস সঞ্চয় করে মাথা নাড়ে।

অর্ণব আলগোছে নিজের মাথা প্রিয়তার পেলব বুকের উপর রাখে। মৃদু ব্যথায় কেঁপে উঠে প্রিয়তা। অর্ণব গান ধরে,

“কোনো এক রুপকথার জগৎে
তুমি তো এসেছো আমারই হতে।”

চলবে?

সরোবরে প্রেম
লেখনীতেঃশ্যামকন্যা
পর্ব:০৮

রাতে ডিউটি শেষে বাসায় ঢুকে অর্ণব দেখতে পায় প্রিয়তা খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে। অর্ণব ঈষৎ রাগান্বিত হয়। বারংবার মেয়েটাকে বলেছিল খেয়ে শুয়ে পড়তে। সে খানিকটা এগিয়ে এসে বলে,

“ঘুমোওনি কেন?”

প্রিয়তা হাত দিয়ে ভাত মেখে অর্ণবের মুখের সামনে ধরে। প্লেটে বিরিয়ানি দেখে অর্ণবের রাগে ভাটা পড়ে। সে কথা ছাড়াই বিরিয়ানি গিলতে থাকে। খাওয়া শেষে বলে,

“আর যেন অপেক্ষা করতে না দেখি। এসব আমার ভালো লাগে না। ”

প্রিয়তা জবাব দেয় না। লোকটার জন্য সারাক্ষণ তার খারাপ লাগে। এতো কষ্ট করে সারাদিন রাত এক করে ডিউটি করে। খাওয়ার সুযোগ অব্দি পায় না। এই মানুষটার জন্য সে সামান্য একটু অপেক্ষা করতে পারবে না?

রুমে এসে প্রিয়তা দেখে অর্ণব শুয়ে আছে। চোখদুটো বুঁজে রাখা। হয়তো সারাদিনের ক্লান্তিতে প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা। সে ধীর পায়ে এগিয়ে অর্ণবের পায়ের পাশটায় বসে। আলগোছে পা দুটোতে হাত বোলায়। তারপর টিপতে থাকে। অর্ণবের ঘুমের রেশ কেটে যায়। সে ধপ করে উঠে বসে। রাঙানো চোখে বলে,

“আমার পায়ে হাত দিচ্ছ কেন, প্রিয়ু?”

সারাদিন কেবিনে হাঁটাহাঁটি করেছেন, ব্যাথা হয় না বুঝি?”

“আমার অভ্যাস আছে। তুমি আর কখনো আমার পায়ে হাত দেবে না।”

“যেখানে আমার বেহেশত লুকায়িত সে পায়ে আমি শতবার হাত বুলাব।”

অর্ণব প্রিয়তাকে বুকে টেনে নেয়। চুলের মিষ্টি গন্ধটা শুষে নিয়ে বলে,

“তুমি আমায় এতো ভালোবাসবে আমি কোনদিন কল্পনাও করিনি, প্রিয়ু।”

প্রিয়তা অর্ণবের বুকে নাক ঘষে বলে,

“বিয়ে ব্যাপারটা পবিত্র। দু’টো মানুষের মধ্যে উপর থেকে ভালোবাসা তৈরি করে দেয়া হয়।”

ভোর রাত থেকেই আসমা চৌধুরী খারাপ স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্নটা তার আবছা মনে থাকছে। তবুও ভয়ে তার শরীর অসাড় হয়ে আসছে। তার পাশেই আমিন সাহেব বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন। আসমা চৌধুরীর স্বামীর ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করছে না। তিনি বিছানা থেকে উঠে রান্নাঘরের দিকে আসেন। এসেই দেখেন কোমড়ে আঁচল গুঁজে প্রিয়তা কড়াইয়ে খুন্তি নাড়ছে। তিনি উঁকি দিয়ে দেখলেন বিরিয়ানি গরম করা হচ্ছে। আসমা চৌধুরী উপদেশের সুরে বলেন,

“মা, গাঁধাটাকে আর বিরিয়ানি দিও না। পেটটা চারমাসের মহিলাদের মতো হয়ে গিয়েছে প্রায়।”

প্রিয়তা হেসে বললো,

“মা, এটা অনির জন্য। ও সারারাত পড়েছে। এখন নাকি খিদে পেয়েছে। খেয়ে ঘুমাবে।”

আসমা চৌধুরী নীরবে হাসলেন। প্রিয়তা বেশ সংসারী মেয়ে হয়েছে।

সন্ধার দিকে বাইরে বাতাস দেয়া শুরু করে। যে বাতাসে শরীরে কাঁপন ধরে। প্রিয় মানুষটার সঙ্গ পাওয়ার জন্য মন উদাসীন হয়। প্রিয়তা ছাদ থেকে কাপড় নিয়ে আসে। বাসার পাশে শান বাঁধানো খালি জায়গাটায় গিয়ে বসে। অর্ণব থাকলে কি হতো! কেন তাকে সারাদিন রোগীর সামনে বসে থাকতে হবে। প্রিয়তার জন্য কি তার সময় হবে না কখনো? প্রিয়তার কতো ইচ্ছে করে অর্ণবের সাথে বাইরে ঘুরতে। তবে সে সুযোগটা কোথায়? শুক্রবারেও অর্ণবের ডিউটি থাকে। রাত জেগে মানুষটা বিসিএস এর জন্য পড়ে। প্রিয়তার ভীষণ একা লাগতে শুরু করে। আজ আসমা চৌধুরী আর আমিন চৌধুরী গেছেন তাদের এক বন্ধুর বাসায়। রাতে থাকবেন। অনি রুমের দরজা লক করে ঘুমাচ্ছে। প্রিয়তার কোনো কাজ নেই। হুট করে তার অভিমান হওয়া শুরু করে। বাকি পাঁচটা মেয়ের মতো সে কেন স্বামীকে কাছে পায় না।

প্রিয়তা বৃষ্টিতে বসে থাকে। বৃষ্টিও পড়তে থাকে একটানা। ঠান্ডায় একটু পর পর প্রিয়তার শরীর কেঁপে উঠে। তবুও সে বাসার ভেতর যায় না। রাত সাড়ে দশটার দিকে অর্ণব বাসায় আসে। ততোক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে। প্রিয়তা ভেজা শরীরে বসে আছে দেখে অর্ণব চমকে উঠে। সে জিজ্ঞেস করে,

“বৃষ্টিতে ভিজলে কেন? জ্বর আসলে কে সামলাবে?”

“আমাকে আমি নিজেই সামলাতে পারি।”

অর্ণব আঁড়চোখে প্রিয়তার দিকে তাকায়। ভিজে যাওয়ার ভীষণ অন্যরকম লাগছে মেয়েটাকে। অর্ণব নিজেকে সামলাতে পারলো না। সে পৃথিবীর ভয়ঙ্কর কাজটা করে ফেলল। কাছে এসে প্রিয়তার কোমড় প্যাঁচিয়ে তাকে দীর্ঘ চুমু দিল। চুমু দিতে গিয়ে অর্ণবের ঠোঁটে ঠেকল নোনা পানির স্বাদ। প্রিয়তা কাঁদছে!

চলবে?

খুব ছোট পর্ব দিলাম। আমি নানান সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। আমার রাইআনের শরীরটা ভীষণ খারাপ। মন বসছে না লেখায়। তবুও কষ্ট করে লিখলাম কারণ পাঠকরা অপেক্ষা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here