#মনের ক্যানভাসে🌼
#পর্ব:২
#Tabassum Ferdous Samiya
‘সময়টা এখন রাত দশটা নাগাদ হবে এখনো জায়ান বাসায় আসেনি। আপু অনেক বার ফোন করেছে কিন্তু তাতে বিশেষ কোন লাভ হয়নি;কারণ ভাইয়া ফোন ধরছে না।
‘আপু আমার মনে হচ্ছে ভাইয়ার ফোনটা বন্ধ তার জন্য ফোন যাচ্ছে না!
“আমারও তাই মনে হচ্ছে, জায়ানকে কতবার করে বললাম যেন তাড়াতাড়ি বাসায় আসে। কিন্তু দেখ এখনো বাসায় আসার কোন নাম গন্ধ নেই; আম্মু যদি একবার জানতে পারে যে জায়ান রাত দশটার পরে বাসার বাইরে তাহলে,তো জায়ানের কপালে দুঃখ আছে!”
‘আমার আর আপুর কথার মাঝে কলিং বেল বেজে উঠলো। আমি আপুকে বললাম মনে হয় ভাইয়া আসছে!আমি গিয়ে দরজা খুলে দেই আর তুমি খাবার গরম করো, আপু আমার কথা শুনে বলল____
“আচ্ছা তুই তাহলে যা আমি আমার গরম করছি”
‘আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম ___
“বাইরে থেকে ভাইয়া ভিতরে আসলো আর বলল পড়তে বসে ছিলি?”
‘আমি না ঠিক বুঝিনা তুমি সব সময় এত পড়া পড়া করো কেন?পড়া ছাড়াও তো একটা মানুষের অনেক রকম কথা থাকতে পারে; সবাই কি তোমার মত নাকি যে শুধু সারাদিন পড়া নিয়ে পড়ে থাকবে? আজকে পর থেকে আমার সাথে কথা বলতে আসলে পড়া নিয়ে কোন কথা বলতে পারবে না।
“সব সময় পড়া নিয়ে ফাঁকিবাজি তাই না?”সব ফাঁকিবাজি কাল থেকে বের করছি তোর আমি!”
‘কেন কাল থেকে তুমি আবার কি করবে?
“কি করবো তা না হয় কালকেই দেখতে পারবি ওয়েট কর একটু সবুরে মেওয়া ফলে; কথাটা শুনেছিস মনে হয়?”
“এই জায়ান এত কথা না বলে তাড়াতাড়ি আগে ফ্রেশ হয়ে আয় তো; খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে এমনিতেই অনেক দেরি করে বাসায় এসেছিস! তার ওপরে তোর আবার ফ্রেশ হতেই এক ঘন্টা লাগবে।”
“আপু তুই কখনো দেখেছিস আমাকে এক ঘন্টা সময় নিয়ে ফ্রেশ হতে?কেমন করে এমন মিথ্যা কথা বলিস তুই?”
“আমি মোটেও মিথ্যা কথা বলছি না তুই সব সময় শাওয়ার ও ফ্রেশ হতে বেশি সময় লাগছে।”
‘ মেয়েদের ও হার মানাবে আপু!’
তুই বেশি কথা বলছিস কিন্তু;আর বেশি কথা বললে তোর কপালে দুঃখ আছে!”
“সায়রা তো ঠিকই বলেছে।”
“আপু একদম ভালো হচ্ছে না কিন্তু!”
“হয়েছে যা তো ফ্রেশ হয়ে আয় আর কথা বলিস না।”
‘আপুর কথা শুনে জায়ান ভাইয়া আর কিছু বলো না।চলে গেল ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে এসে আমরা তিনজন এক সাথে খেয়ে বসলাম;খাবার টেবিলে আপু আর জায়ান ভাইয়া টুকটাক কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলছেন।আর আমি তাদের কথা চুপচাপ শুনে খেয়ে যাচ্ছি। আমার খাওয়া শেষ হলে আমি উঠবো এমন সময় আপু বলো,___
“সায়রা তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে!”
“হুম,বলো আপু কি বলবে?”
“তুই আজকে থেকে জায়ানের কাছে পড়তে বসবি!আর তুই যে ম্যাথ এ ফেল করেছি বাসায় বলিছ কেনো?”
‘আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই জায়ান ভাইয়া বলো___
“হইছে আপু এই সব কথা বাদ দে সায়রা এখন থেকে আমার কাছে পড়বে কথা এখানেই শেষ।”
‘কিসের জন্য কথা এখানেই শেষ হবে, আগে তো আপুর কথা শুনবো আমি কবে ম্যাথ এ ফেল করলাম?
“তোর এত কথা শুনতে হবে না খাওয়া শেষ হাত ধুরে আমার কাছে পড়তে আয়;আর আপু তুই যা ভাইয়া সাথে কথা বলে আয়, ভাইয়া একটু আগে আমাকে ফোন করেছিলো কি যেনো দরকারি কথা আছে বলো তোর সাথে!”
“ঠিক আছে,আমারও তো খাওয়া শেষ তাহলে আমি যাই দেখি কি বলবে তোদের ভাইয়া!”
‘আপুপ্ আমার কথা তো শুনে যাওও;যা কথা না শুনেই চলে গেল এখন আমার কি হবে ?
‘আমি এই রাক্ষস তার কাছে কিছুতেই পড়বো না! আর কি মিথ্যা বাদি ছেলে আমার নামে আপুর কাছে মিথ্যা কথা বলছে ; আমি নাকি ফেল করছি! আর তার থেকেও বড় কথা হলো, পড়রা না পারলে তো কথা কথা ধমক দিবে!এই সব মনে মনে ভাবছি তখনই ভাইয়া বলো ___
“এই মেয়ে কি এত ভাবিস?এত ভাবা ভাবি বাদ দিয়ে পড়তে আয় আমি কোন কথা শুনতে চাই না।”
‘আমি কিছুতেই তোমার কাছে পড়তে যাব না;তুমি আমার নামে আপুর কাছে মিথ্যে কথা বলছো! এমন মিথ্যে বাদি ছেলের কাছ থেকে আমার কিছু শেখার নেই।কি শেখাবে তুমি হুম মিথ্যে কথা বলা?
“ইদানিং দেখছি তোর মুখে খুব খই ফুটেছে, এই খই ফোটার বালীতে কি ভাবে পানি দিতে হয় তা আমার খুব ভালো করে জানা আছে! আর কোন কথা না বাড়িয়ে আমার সাথে আয়।”
‘ধুর ছাই আমি একটু কথা বলেই সব সময় এমন করে!সব সময় কি মুখটা এমন হুতুম পেঁচার মত করে রাখতে হবে?কখনো কি আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলা যাই না?কি আর করবো যাই পড়ে আছি।
‘ডাইনিং রুম থেকে চলে গেলাম আমার রুমে;সেখান থেকে ম্যাথ সাবজেক্ট নিয়ে আসলাম ভাইয়া রুমে; মূলত আমি প্রয়োজন ব্যতীত ভাইয়ার রুমে বেশি আসি না!শুধু আমি না বাসার অন্য সবাই ও ভাইয়ার রুমে কম আসে।তার কারণ হলো;ভাইয়া পছন্দ করে না তার রুমে অন্য কেউ আসুক।ভাইয়ার রুমে এসে দেখি রুমটা বেশ গোছালো আমি এইসব ভাবছি ;এমন সময় ভাইয়া রুমে আসলেন আর আমাকে ইশারায় পড়ার টেবিলে বসতে বললেন,আমি কোন কথা ছাড়া চুপচাপ গিয়ে বসে পড়লাম____
“কোন কোন চ্যাপ্টার বুঝিস না? সব গুলো চ্যাপ্টারে এখন রেড মার্ক করে রাখ ও গুলো থেকে প্রতিদিন একটা করে চ্যাপ্টার পড়াবো।”
‘আমি ভাইয়ার কথামতো তিনটা চ্যাপ্টার রেড মার্ক করে রাখলাম।
‘তার পরে জায়ান ভাইয়া একটা চ্যাপ্টার পড়ানো শুরু করল কিন্তু; আমার মাথার উপর দিয়ে সব পড়া চলে যাচ্ছে!আমি কিছুতেই আমার মাথায় পড়া নিতে পারছি না! কিছুক্ষণ পর আমি গোল গোল চোখ করে জায়ান ভাইয়া দিকে তাকিয়ে রইলাম; জায়ান ভাইয়াকে দেখতে অনেক সুন্দর মাশাল্লাহ।ঠিক টার্কিশ নায়ক জান ইয়ামান এর মত।লোকটার মাঝে অদ্ভুত একটা মুগ্ধতা খুঁজে পাই সে যতই গম্ভীর মুখ করে থাকুক না কেন! আমি এইসব ভাবছি তার মাঝে হঠাৎ জায়ান ভাইয়া জোরে একটা ধমক দিয়ে বলল____
“পড়ার সময় মন কোথায় থাকে তোর? কখন থেকে ডাকছি তোকে? কথা কান পর্যন্ত যায় না নাকি তোর?”
‘জায়ান ভাইয়ার হঠাৎ এমন ধমকে আমি কেপে উঠলাম তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম___
‘হ্যাঁ,কি বলছিলে তুমি আমি ঠিক শুনতে পাইনি!
“কোন ভাবনায় এত বিভোর ছিলি যে আমার কথা তোর কানে পর্যন্ত পৌঁছালো না?”
‘বললাম তো শুনতে পাইনি তারপরে ও বকছো কেন?’
“বকবো না তো কি করব কখন থেকে ডাকছি? মনে তো হয় পড়া কিছুই বুঝিস নি যা হয়েছে;আজকে আর পড়তে হবে না এখন গিয়ে আপুর সাথে ঘুমাবি! ঘুম বাদে যেন টিভি দেখতে না দেখি!”
‘আচ্ছা ঠিক আছে তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো বেশি রাত জেগো না আমি যাই।
“হয়েছে আমাকে নিয়ে তোরা তো ভাবতে হবে না যা এখন।”
‘আমি আর কোন কথা না বলে আপু রুমে চলে আসলাম। এই বাসায় আমার জন্য এক্সট্রা একটা রুম আছে!কিন্তু আমি সেখানে বেশি থাকি না কারণ, আমার একা ঘুমাতে ভয় লাগে,তার জন্য আমি বেশিরভাগ সময় খালামনির সাথে ঘুমাই।আর খালামণি বাসায় না থাকলে আপুর সাথে ঘুমাই! আর এখন আমার অনেক ঘুম ধরছে; তাই আমি আপুর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম আর শোয়ার সাথে সাথে আমার চোখে রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিল।
চলবে
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। সময়ের অভাবে রিচেক করতে পারিনি।)