এক মঠো অনুভূতি পর্ব ১৫+১৬

0
775

#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:১৫

একটা অন্ধকার রুমের মেঝেতে পড়ে আছে রোহান। সমস্ত শরীর জুড়ে তার ক্ষ/তে/র চিহ্ন। ঝাঁপসা ঝাঁপসা চোখে কাউকে রুমে প্রবেশ করতে দেখেই সে বলে উঠে,
–কে তুমি? এভাবে আমাকে তুলে এনে আ/ঘা/ত করেছো কোন সাহসে! আমার বাবা কিন্তু তোমাকে ছাড়বে না, দেখে নিও।
–হুহ, তোমার তাই মনে হয়? এতোগুলো সিকিউরিটি গার্ড নিয়ে তো ঠিকই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছিলে। তাদের সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে যখন তোমাকে এখানে নিয়ে আসতে পেরেছি, তাহলে বুঝে নাও তোমার বাবা আর কিছুই করতে পারবেন না।
রোহান কয়েকবার চোখ পিটপিট করে সামনে কে তা বোঝার চেষ্টা করে।
–কে তুমি? আমাকে মে/রে ফেলতে চাও?
–নাহহ! তোমাকে মা/রা/র আমার কোন ইচ্ছেই নেই, আ/ঘাত করারও ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু এতো সহজে তো তোমায় ছেড়ে দেওয়া যায় না।
–তাহলে কি চাও তুমি?
–ওহির সাথে যা হয়েছে তার প্র/তি/শো/ধ! কি ভেবেছিলে তুমি? ওহিকে ভয় দেখিয়ে, বাবার ক্ষমতার জোরে নিজেকে বাঁচিয়ে নিবে। এতো সহজ?
কথাটা বলে রোহানের সামনে বসে চুল ধরে তাকে টেনে তুলে।
–ভালোয় ভালো যা বলছি তা করবে। এখন থেকে ওহির সামনেও যাবে না তুমি। আর যতো দ্রুত সম্ভব, ভার্সিটি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে।
রোহান তার দিকে ফিরে মাথা নাড়াতেই, তাকে ছেড়ে দেয়। তখন রুমে কেউ একজন রুমে প্রবেশ করতেই,
–একে হাসপাতালে নিয়ে রায়হান সিকদারকে খবর পাঠিয়ে দাও। ছেলের অবস্থা দেখে উনার একটু বোঝা প্রয়োজন, ক্ষমতা শুধু উনার একারই নেই।
–জি স্যার!
কথাটা বলেই সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
——————

এদিকে,

একের পর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছে আশ্বিন ওহিকে। ওহি ফোনের দিকে তাকিয়ে বারবার ফোন কেঁ/টে দিচ্ছে। আশ্বিন তবুও থেমে না গিয়ে আবারও ওহিকে ফোন করতেই ওহি ফোন রিসিভ করে।
–কি সমস্যা? ফোন রিসিভ করছিলে না কেনো?
–কারণ আপনার সাথে আমার কথা নেই।
–কিসের কথা নেই? আমি কি রোহানকে কিছু করেছি নাকি? আমি বুঝতে পারছি না, তুমি কেনো এমন করছে ফাইজা?
–আপনি বুঝতে পারছেন না, আশ্বিন ভাইয়া। আপনি প্রথম দিন ঠিকই বলেছিলেন, আমারই উচিত হয়নি আবারও রোহানের সাথে ঝামেলা করার। আমি এমন কিছু না করলে, আজ এই দিন দেখতে হতো না।
–ফাইজা, তুমি…।
–আশ্বিন ভাইয়া! আপনি আবারও জেদ করছেন??
আশ্বিন ওহির কথায় কিছুক্ষণ চুপ থেকে,
–ঠিক আছে। আমি কিছুই করবো না। রোহান তোমার সাথে এমন করলো অথচ তাদের শাস্তি অন্য কেউ পেলো। এতকিছুর পরও আমি শুধু মাত্র তোমার কথায় এবার রোহানকে ছেঁড়ে দিলাম।
–সত্যি তো? আমাকে শোনানোর জন্য বলছেন না তো?
–ফাইজা!
–আচ্ছা, ঠিক আছে। ঠিক আছে, বিশ্বাস করলাম আপনার কথা।
–হুম। কি করছিলে?
–পড়ছিলাম। জানেন আজকে কি হয়েছে?
ওহি বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আপনমনে আজকের সারাদিনের গল্প শুরু করে। আশ্বিন শান্ত হয়ে ওহির সব কথা শুনে যাচ্ছে। আজকাল এই বাচাল প্রকৃতির মেয়েটার বকবক শুনতে তার কাছে ভালোই লাগে। সকালে রাগ দেখিয়ে ওহির চলে যাওয়ার পর থেকে কেনো যেন তার রাগ ভাঙানোর জন্য সে উঠে পরে লেগেছিলো। হয়তো এরই নাম ভালোবাসা!

পরদিন,

ক্লাসে বসে আছে ওহি। কাল ক্লাস টেস্ট তাই বসে বসে নোটগুলো ভালোভাবে খেয়াল করছে সে। তখন জাইমা এসে ধুপ করে তার পাশে বসে পরে।
–খবর শুনেছিস?
–কিসের খবর?
–রোহান ভাইয়ার খবর। শুনেছিস?
জাইমার কথায় খাতা থেকে একনজর জাইমার দিকে তাকিয়ে,
–না তো। কি হয়েছে উনার? আবার কি করেছেন উনি?
–উনি আর কি করবেন? শুনেছি, কাল রাতে কেউ একজন রোহান ভাইয়াকে আহত আর জ্ঞানহীন অবস্থায় হাসপাতালে রেখে গিয়েছে। রোহান ভাইয়ার অবস্থা খুব খারাপ, কেউ হয়তো খুব বাজে ভাবে অত্যাচার করেছে উনার উপর।
–কি বলিস? কখন হলো এসব? তুই কোথায় শুনেছিস এসব কথা?
–সবাই বলাবলি করছে বাহিরে। আমার মনে হচ্ছে, তোর সাথে এমন করার শাস্তি সে পেয়ে গিয়েছে।
জাইমা কথাটা বলতেই ক্লাসে স্যার প্রবেশ করে। ওহি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ জাইমার কথাগুলো ভাবতে থাকে।

এদিকে,
রোদ্দুর আফরার দিকে তাকিয়ে আশ্বিনকে আলতো করে একটা ধাক্কা দেয়। আশ্বিন রোদ্দুরের দিকে তাকাতেই সে তাকে আফরার দিকে ইশারা দেয়। আফরা ইদানীং ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলে। তার ভাব ভঙ্গি দেখে সুবিধার মনে হচ্ছে না দুজনের।
–তোর কাহিনী কি বল তো আফরা?
–কিসের কাহিনী রোদ?
–এই যে, আজকাল কার সাথে এতো কথা বলিস? আমরা সামনে বসে আছি তবুও তুই কাকে ম্যাসেজ দিচ্ছিস।
–ওহ! তেমন কিছু না, এমনি।
–আফরা, রোদ ঠিকই বলছে। তোকে কদিন ধরেই অন্যমনস্ক লাগছে। মনে হচ্ছে, আমাদের তোর কিছু বলার আছে। বলে ফেলো জলদি। তুই আমাদের থেকে কথা লুকিয়ে রাখতে কবে শিখেছিস?
আফরা কিছুক্ষণ মাথা নামিয়ে চুপচাপ কিছু একটা ভেবে,
–আমার একজনকে ভালো লাগে, আশ্বিন। মানে হুট করেই তার প্রতি ভালোলাগা কাজ করছে।
আফরার কথায় আশ্বিন আর রোদ্দুর অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকায়।
–এ আমি কি শুনছি? আমাদের আফরা রাণীর এই প্রথম কাউকে ভালোলাগে! বলে ফেলেন, কে সেই সৌভাগ্যবান?
–ও..ওসমান।
–কিহহ?
আশ্বিন আর রোদ্দুর একসাথে বলে উঠে। আফরা তাদের এভাবে বলতে দেখে মাথা নিচু করে ফেলে।
–ওহির ভাই ওসমান? মানে, তোর ওসমান ভাইকে ভালোলাগে অথচ তুই এতোদিন পর এটা আমাদের বলছিস?
–আমি ভেবেছিলাম তোরা হয়তো রেগে যাবি। আর আমাদের মাঝে তেমন কিছুই নেই। আমার উনাকে ভালো লাগে, উনার ব্যক্তিত্ব, চিন্তাভাবনা, ভালো ব্যবহার এসব আমার মনে দাগ কাটে। এই প্রথম কারো প্রতি আমার এমন অনুভূতি হয়েছে।
–হুম। আমি যতদূর বুঝেছি, ওসমান ভাই ভালো মানুষ। তোর জন্য উনার থেকে ভালো আর কেউ পাবিনা। চালিয়ে যা, আমরা আছি তোর সাপোর্ট হিসেবে।
আশ্বিনের কথায় আফরা খুশি হয়ে হেসে উঠে। রোদ্দুর মুহূর্তেই ট্রিটের আবদার করে বসে।

আশ্বিন তাদের কিছু বলতে নিবে তখনই ওহি রেগে তার কাছে এসে ধপ করে বসে,
–আশ্বিন ভাইয়া! আপনি কাল আমায় বলেছিলেন আপনি রোহান ভাইয়াকে কিছুই করবেন না। এতো দ্রুত আপনার প্রমিস ভেঙে ফেলেছেন আপনি? আমি আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম।
–কিহ? কি করেছি আমি? আমি তো…।
আশ্বিনের কথা ইগনোর করে ওহি রেগে সেখান থেকে চলে যেতে শুরু করে। আশ্বিন একবার তাদের দিকে তাকিয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে ওহির পেছন পেছন যেতে থাকে।
–ফাইজা দাঁড়াও, আমার কথা তো শুনবে তুমি?
–কি শুনবো আপনার কথা? সবার কথা তো শুনতেই পারছি। আপনি আমার কথা কেনো শুনতে চাইছেন না আশ্বিন ভাইয়া। আপনি কেনো বুঝতে চাইছেন না যে আমি চাই না এর জন্য আপনার…।
ওহি কথাটা বলতেই হঠাত পেছন থেকে কেউ একজন তাকে ডেকে উঠে। ওহি পিছনে ফিরে দেখে রাফিন। সে তাদের কাছে এসে,
–কি খবর আশ্বিন?
–এইতো..। তোমার কি অবস্থা?
–ভালোই। তোমরা দুজন কি কিছু নিয়ে ঝগড়া করছিলে নাকি?
–তেমন কিছু না, রাফিন ভাইয়া। কিছু বলবেন আপনি?
–হ্যাঁ। তোমার ফোনটা ফেরত দিতে এসেছি। এই নাও।
রাফিন ওহির দিকে ফোনটা এগিয়ে দিতেই আশ্বিন আর ওহি অবাক হয়ে যায়। ওহি ফোন হাতে নিয়ে সন্দেহের কণ্ঠে,
–এই ফোনটা তো রোহান ভাইয়ার কাছে ছিলো। আপনি এটা..? মানে, রোহান ভাইয়ার এই অবস্থা আপনি করেছেন রাফিন ভাইয়া?
ওহি অবাক হয়ে কথাটা বলে উঠে। রাফিন হেসে উঠে ওহির গাল টেনে,
–যে শাস্তির যোগ্য ছিলো তাকে সঠিক শিক্ষা দিয়েছি। তবে বেশি কিছু করিনি, ভয় পেয়ো না।

রাফিনের কথায় ওহি আর আশ্বিন দুজনেই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। ওহি নিজেকে স্বাভাবিক করে,
–কিন্তু ভাইয়া, আপনি এমনটা কেনো করলেন? আমি বলেছিলাম এই নিয়ে কোন ঝামেলা আমি চাই না আর। এখন যদি রোহান আবারও ক্ষতি করার চেষ্টা করে?
–এই ভার্সিটির আর কারো এতোটা সাহস নেই এই রাফিনের বন্ধুর কোন ক্ষতি করতে চাইবে। আর, রোহানকে নিয়ে আর ভয় পেয়ে না। সে আর এই ভার্সিটি আসবে না।
ওহি স্তব্ধ হয়ে রাফিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাফিন ওহিকে দেখে হেসে উঠে সেখান থেকে চলে যায়। ওহি আবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।

–এই জন্যই তাহলে আমাকে কিছু করতে নিষেধ করছিলে তাই না ফাইজা? ভেবেছিলে রাফিন তো আছেই।
আশ্বিনের কথায় ওহি তার দিকে ফিরে তাকিয়ে,
–রাফিন ভাইয়া এমন করবে আমি কিছুই জানতাম না, আশ্বিন ভাইয়া। আমি আগে জানলে তো…।
–হুম, বুঝেছি আমি। তোমাকে আর বলতে হবে না।
আশ্বিন কথাটা বলেই সেখান থেকে চলে যায়। ওহি তাকে পেছন থেকে কয়েকবার ডেকেও লাভ হয়না। শেষে ওহি অবাক হয়ে আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আশ্বিন তাকে এভাবে ভুল বুঝলো!

–চলবে(ইনশাআল্লাহ)

#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:১৬

আজ দুদিন হয়ে গেলো আশ্বিন আর ওহির কথা হয়না। প্রথম দিকে ওহি অনেক চেষ্টা করে আশ্বিনের রাগ ভাঙাতে চেয়েছিলো। কিন্তু প্রতিবারই সে ব্যর্থ হয়। তাই আশ্বিনের প্রতি রাগে অভিমানে সে নিজেও কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
রোজই ভার্সিটিতে দুজনের দেখা হচ্ছে, পাশাপাশি বসে তারা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে, অথচ দুজন দুজনের জেদ ছাড়ছে না। আফরা আর রোদ্দুর বিষয়টা খেয়াল করে একটা প্ল্যান ঠিক করে ফেলেছে।

রোদ্দুর আফরা মিলে আশ্বিনের বাসায় বসে আছে। আশ্বিন আপনমনে বই পড়ছে। আফরা বই থেকে একনজর মুখ তুলে হাতের কনুই দিয়ে রোদ্দুরকে একটা ধাক্কা দেয়। রোদ্দুর আফরার দিকে একবার তাকিয়ে,
–বুঝলি আশ্বিন? আমি আর আফরা মিলে একটা পিকনিকের প্ল্যান করেছি। এখন শুধু তুই রাজি হলেই হবে।
–কোথায় যাবি?
–বেশি দূর কোথাও না। সামনেই একটা রিসোর্ট আছে। সেখানেই যাই।
–হুম, যাওয়া যায়।
–তাহলে আমি ওহিকে জানিয়ে দিচ্ছি।
আফরা কথাটা বলেই ফোন হাতে নিয়ে ওহিকে কল করতে নিতেই আশ্বিন তাকে থামিয়ে,
–তাকে কেনো জানাবি তুই? আজব! সেও যাবে নাকি আমাদের সাথে?
–অবশ্যই। কেনো যাবে না? আমরা তিনজন একা গিয়ে কি মজা করতে পারবো নাকি? সবাই মিলে গেলে না বেশি ভাল লাগবে।
রোদ্দুর আফরার সাথে তাল মিলিয়ে,
–হ্যাঁ! ওহি না গেলে জাইমাও যেতে চাইবে না। জাইমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো এটাই তো একটা সুযোগ।
–আবার ওহি গেলেও তো একা যাবে না, মানে ওসমানও থাকবে আমাদের সাথে। ওহি গেলে আমার আর রোদ দুজনেরই লাভ, কি বলিস রোদ?
–ঠিক বলেছিস।
আশ্বিন তাদের কথা শুনে বই বন্ধ করে পাশে রেখে,
–তাহলে তাদের নিয়েই যা। আমার যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
–আশ্বিন! তোকে রেখে আমরা যাবো ভেবেছিস? আর তুই কিন্তু বলেছিলি আমাকে সাপোর্ট করবি, এখন নিজেকে পাল্টি দিচ্ছিস কেনো?
আফরা রেগে কথাটা বলে উঠে। আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাজি হয়ে চলে যায়। রোদ্দুর হেসে আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আফরাকে কিছু একটা ইশারা দেয়।

পরদিন,
ভার্সিটির মাঠে বসে সবাই একসাথে আড্ডা দিচ্ছে। আফরা ওহি আর জাইমাকে পিকনিকের কথা বলতেই জাইমা রাজি হয়ে যায়। ওহি কিছুক্ষণ ভেবে,
–বাবাকে বলতে হবে। বাবা রাজি হলেই আমার কোন সমস্যা নেই।
–ওসমানকেও নিয়ে যাবে কিন্ত।
রোদ্দুরের কথায় ওহি হেসে উঠে।
–ভাইয়া আমাকে একা যেতে দিবে না। তাই সে এমনিতেই আমার সাথে যাবে।
–তাহলে কথা ফাইনাল। এই শুক্রবার আমরা পিকনিকে যাচ্ছি।
আফরার কথায় জাইমা খুশি হয়ে যায়। ওহি হেসে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দেখে সে নিজের মনে ফোন দেখছে। ওহি একটা ভেংচি কেঁটে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
————–

–মা, আফরা আপুরা সবাই জোর করছে যাওয়ার জন্য। তাছাড়া ভাইয়াও তো যাবে আমাদের সাথে।
–হুম, বুঝেছি। কিন্তু তোমার বাবার অনুমত ছাড়া তো আমি কিছুই বলতে পারছি না, ওহি।
–ওহি তুই ঘরে গিয়ে পড়া শেষ কর। যা।
ওহি ওসমানের দিকে একবার তাকিয়ে ঘরে চলে আসে। ওসমান ওহি যাওয়ার পর মায়ের দিকে তাকিয়ে,
–মা, ওহি যখন যেতে চাইছে তখন রাজি হচ্ছো না কেনো?
–তোমার বাবাকে চেনো না ওসমান?
–আমাদের নিয়ে বাবার কোন মাথা ব্যথা নেই, মা। বাবা সপ্তাহে একবার আমাদের তিনজনের খোঁজখবর নিতে আসে, এতটুকুই। বাবার কথা মতো চলে, কিভাবে আমরা এখন সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকছি দেখছো না? এখানে আমাদের কোন আত্মীয়স্বজন নেই, বন্ধু নেই, কেউ নেই, আর কারো সাথে আমাদের যোগাযোগ পর্যন্ত নেই। বাবার রাগের কথা বলছো, মা? বাবা তো ওহির সেদিন হারিয়ে যাওয়া নিয়েও রাগ দেখিয়ে বলেছিলো, ওহি নিজে ওই ছেলের সাথে ঝামেলা করেছে বলেই নাকি এসব হয়েছে। সেদিন, আশ্বিন রাফিন রোদ্দুর ওহিকে খোঁজার জন্য আমাদের কতো সাহায্য করলো, অথচ এই নিয়েও বাবার রাগ দেখতে হয়েছে আমাদের।
আমি শুধু শুধুই তোমার কথায় ওহিকে বলি উনি আমাদের নিয়ে কেয়ার করেন। আসলে সত্য হলো, উনি শুধু আমাদের সাফল্য নিয়ে উনার বন্ধমহলে গর্ব করার জন্য আমাদেরকে ব্যাবহার করেন।
–ওসমান!!
ফারজানা বেগম রেগে কথাটা বলতেই ওসমান চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে সেখান থেকে চলে যায় সে। ফারজানা বেগম ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সোফায় এসে বসে পড়েন।
এদিকে, ওহি দরজার আড়াল থেকে ওসমানের বলা কথাগুলো শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

রাতের অন্ধকারে ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে গান শুনছে আশ্বিন আর আফরা। আশ্বিন সেদিনের পর থেকে অনেকটা চুপচাপ হয়েই থাকছে। আশ্বিনকে এভাবে দেখে মোটেও ভালো লাগছে না আফরার।
–আর কতোদিন ওহির উপর রাগ করে থাকবি আশ্বিন?
–আমার রাগ করায় কি যায় আসে আফরা? ফাইজার কাছে সবই মুল্যহীন।
–তোর মনে যে ওহির জন্য অনুভূতির বাসা বেঁধেছে তুই কি সেটা বুঝতে পারছিস?
আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে আফরার দিকে তাকিয়ে,
–তেমন কিছুই নেই আমাদের মাঝে।
–আচ্ছা? তাহলে বল, ওহিকে রাফিনের সাথে দেখলে তুই এতো রাগ করিস কেনো?
–কারণ রাফিন আমার শত্রু। আমাদের মাঝে কোন বন্ধুত্ব নেই।
–কিন্তু রাফিন ওহির বন্ধু। তারা একসাথে গল্প গুজব করতেই পারে। যদিও, রাফিন ওহিকে পছন্দ করে বলেই ওহির আশেপাশে থাকে সে। কিন্তু ওহির মনের কথা তো অন্য কিছু হতেও পারে।
–ফাইজা, রাফিনকে পছন্দ না করার তো কারণ দেখছি না আমি।
–কারণ থাকতেই পারে। এমনও তো হতে পারে ওহি তোকে পছন্দ করে..।

আশ্বিন কিছু না বলে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চুপ হয়ে যায়। সেদিন রাফিন ওহির জন্য রোহানকে শাস্তি দিয়েছে। কথাটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না সে।
–ওহির সাথে কথা বল। সময় থাকতে বিষয়টা গুরুত্ব দে। নাহয় রাফিন কিন্তু তোর সবকিছুর মতো ওহিকেও কেঁড়ে নিতে উঠে পড়ে লেগে পড়বে। তখন বুঝবি..।
আফরা কথাটা বলে উঠে ছাদ থেকে নিচে চলে যায়। আশ্বিন আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাটা ভাবতে থাকে। রাফিন কি সত্যিই তাকে হারানোর জন্য ওহিকে ছিনিয়ে নিতে চাইছে? যদি এমনই হয় তবে কিছুতেই তাকে জিততে দিবে না আশ্বিন।
——————

শুক্রবার,
সকাল সকাল ওসমান ওহি আর জাইমা চলে এসেছে আশ্বিনের বাসার সামনে। আফরা আশ্বিন আর রোদ্দুর তাদেরই অপেক্ষা করছিলো। ওহিকে দেখেই আশ্বিনের মা তার কাছে এসে খুশি হয়ে,
–তুমিই তাহলে চশমা? মাশাল্লাহ, খুব মায়াবী মেয়ে! কেমন আছো মা?
–আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি আন্টি।
ওহি আশ্বিনের মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে সবাই গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে। এদিকে ওহি এখনও না আসায় আশ্বিন তাকে ডাকতে বাসায় এসে,
–আম্মু, তোমরা এখনও গল্প করছো? আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
–দেখেছো? কথা বলতে বলতে একদম খেয়াল করিনি। সাবধানে যেও, ওহি মা।
ওহি বিদায় জানিয়ে চলে যেতেই আশ্বিনের মা আশ্বিনের কাছে এসে মজা করে,
–বুঝলে বাবা আশ্বিন, আমার কিন্তু চশমাকে ছেলের বউ হিসেবে খুব পছন্দ হয়েছে। আমি শিওর তোমার বাবারও পছন্দ হবে ছেলের বউকে।
–কি বলছো এসব আজেবাজে? আম্মু, তুমিও না আসলেই..।
আশ্বিন অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলেই চলে আসে। এদিকে, আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তার মা হেসে উঠে।

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। সবাই এতোক্ষণ ধরে গল্প গুজব করছে। আর ওহি একমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখে যাচ্ছে। আশ্বিন ড্রাইভ করতে করতে গাড়ির গ্লাস দিয়ে কয়েকবার ওহির দিকে তাকিয়ে তাকে দেখেছে। বাতাসে ওহির চুলগুলো সব এলোমেলো হয়ে আছে, ঘুমঘুম চোখে সে বাহিরের দিকেই তাকিয়ে আছে। হঠাত করেই আফরা গাড়ি থামাতে বলায় আশ্বিন কিছু না ভেবেই গাড়ি ব্রেক করে। আশ্বিনের এমন কাজে হঠাত করেই ওহি চমকে উঠে, সোজা হয়ে বসে। আশ্বিন পিছনে ফিরে একনজর ওহির দিকে তাকিয়ে আফরাকে,
–কি সমস্যা তোর? এভাবে হঠাত করেই চিৎকার করলি কেনো?
–আরে, ওই দেখ মেলা হচ্ছে ওখানে। চল যাই আমরা।
আফরার কথায় সবাই সেদিকে তাকায়। আফরা আর জাইমা ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে সেদিকে চলে গিয়েছে। রোদ্দুর আর ওসমানও তাদের পিছু পিছু নেমে, রোড ক্রস করে চলে যায়। ওহি সবার যাওয়ার পর গাড়ি থেকে নেমে যায়।

সবাই যাওয়ার পর আশ্বিন গাড়ি সাইড করে এসে দেখে ওহি একা দাঁড়িয়ে আছে।
–ফাইজা, তুমি যাওনি কেনো তাদের সাথে?
ওহি একবার আশ্বিনের দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারপর নিজেই রাস্তা পার হতে চায় কিন্তু বেশি গাড়ি থাকায় ওহি যেতে পারে না। আশ্বিন কিছুক্ষণ ওহির কর্মকান্ড দেখে বুঝে নেয় যে সে রাস্তা পার হতে পারে না।
–এতো বড় হয়ে গিয়েছো, এখনও রোড ক্রস করতে শিখলে না তুমি।
আশ্বিন কথাটা বলে ওহির হাত ধরে তাকে নিয়ে রাস্তা পার হতে শুরু করে। ওহি একনজরে তাকিয়ে আছে তার হাতে আবদ্ধ করা আশ্বিনের হাতের দিকে। আশ্বিনের এই আলতো স্পর্শ তার হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়েছে। মুহূর্তেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে তার, মনে অজান্তেই এক ভালো লাগা কাজ করছে ওহির।

–চলবে(ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here