#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আঠার বছর বয়স তো।দুনিয়া রঙিন মনে হবে।এরকম করে হাসাহাসি বন্ধ করো।আশেপাশের মানুষের সমস্যা হচ্ছে।”
দিশার স্বাবধান বাণীতে কিশোরী গুলো বিরক্তবোধ করলো।কিন্তু এতে অবশ্য কাজ হলো।নিজেদের কণ্ঠ খাঁটো করে নিলো।দিশা লম্বা শ্বাস নিয়ে পুনরায় নিজের ফোনে মনোযোগ দিলো।ক্ষাণিকক্ষণ বাদে চিরপরিচিত কণ্ঠে মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো তার।
“মায়ান!কেমন আছো?কতোগুলো দিন পর।”
বিনিময়ে মায়ান হেসে বলল,
“আমি ভালো আছি।তা বলো তো।তোমরা নিজেদের এতো মেইনটেইন করো কীভাবে?সবগুলো এখনও নজরকাড়া রয়ে গেলে।মনে হয় না বয়স চল্লিশ।”
“প্রশংসা নাকী নিন্দে করলে?”
“অবশ্যই প্রশংসা।”
“টিনাকে নিয়ে এলে না কেন?ওর সাথে দেখা করার ইচ্ছে ছিল।”
মায়ানের মুখটি গম্ভীর হতে দেখা গেলো।নিজস্ব ফোনটা সুইচড অফ করে শুধালো,
“তোমার মনে আছে?আমার ধারণা করার ক্ষমতা অনেক?মানে যার ব্যাপারে যেটা বলতাম।ঠিক সেটা মিলে যেতো।”
“আছে।হঠাৎ এই প্রশ্ন যে।”
“দেশে ব্যাক করার পর এয়ারপোর্টে কবীর-তোশা গিয়েছিল।তাদের একান্তে কথা বলা।একে অপরকে দেখে হাসা আমার কাছে স্বাভাবিক লাগেনি।তুমি জানো কবীরকে কতোগুলো বছর ধরে চিনি।আমি কীভাবে ভুল হতে পারি যে ও আমার মেয়েটাকে পছন্দ করে।তুমি কী এই ব্যাপারে কিছু জানো?তোশার ম্যাডামও ছিলে তুমি।কখনো এরকম কিছু…।”
দিশার ঘোলাটে দৃষ্টি মায়ানের মুখবিবরে লুটোপুটি খেতে লাগলো।সময়ের সঙ্গে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কৌতুহল বেড়ে যাচ্ছে তার মনে।পাশ থেকে কিশোরী গুলোর খিলখিল আওয়াজে দিশার ধ্যান ভাঙলো।
“আমি কিছু জানিনা মায়ান।হতে পারে তোমার দেখার ভুল।”
“এতো বড় ভুল হবে?আমি কখনো ভুল প্রমাণিত হইনি।”
“তাহলে দেখা যাচ্ছে তোমার ধারণা করার রোগটি এখনও সারেনি।”
“রোগ বলো না।সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটি উপহার।তা নয় আমি যেমনটা ধারণা করলাম তোমার সংসার কিংবা নিজের সংসার নিয়ে।ঠিক সেটাই তো শেষটাতে গিয়ে হলো।মনে করে দেখো কবীরের সাথে ঝগড়ার পর সবসময় আমি বলতাম সংসার টিকবেনা।এবং শেষটায় তাই হলো।বাই দ্যা ওয়ে পুনরায় বিয়ে কেন করছো না?”
“তুমি কেন ডিভোর্সের পর এতো জলদি বিয়ে করে নিয়েছিলে?ওয়েট আগে খাবার অর্ডার করে নেই।”
ওয়েটার এসে খাবারের অর্ডার নিয়ে গেলো।দিশা পুনরায় প্রশ্নটির কথা মায়ানকে মনে করিয়ে দিলো।অদ্ভূত এক জবাব দিলো সে..
“সঙ্গীবহীন থাকতে কষ্ট লাগছিলো দেখে বিয়ে করে নিয়েছি।”
“এরপর তোমার সব কষ্ট চলে গিয়েছে?তাহিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদে আফসোস হয়না?”
মায়ান অনেকটা জলদি জবাব দিলো,
“কষ্ট হয়।কিন্তু পরিমাণ কম।”
“বেশ।তবে আমার একাকিত্ব বোধ হয়না।বিশ্বাস করো তাহিয়ারও হয়না।তাইতো দুজনে কাওকে জীবনে আসতে দেয়নি।অথচ তোমরা।”
“তোমরা?কবীর কাওকে পছন্দ করে?সত্যি করে বলো।”
দিশা প্রসঙ্গ বদলানোর নিমিত্তে বলল,
“আমি কবীরের ব্যাপারে কিছু জানিনা।যদি পছন্দ করে থাকে সেক্ষেত্রে ভেবে নিবো যে মেয়ে পছন্দ করে তাকে সে যোগ্য হীরাকে পছন্দ করে।”
“তোমাদের কবীরকে উপরের স্তরের ভালো বলার অভ্যেসটা কখনো গেলো না।স্কুল, কলেজে সকলের দৃষ্টিতে আজও কবীর ভালো।কিন্তু আমি আবার স্বাবধানী।ছেলে মানুষ একা থাকে।তাই..।”
ওয়েটার খাবার দিয়ে গেলো।চামচ দিয়ে অল্প মুখে নিয়ে দিশা শুধালো,
“সময়কে সময় দাও।দেখবে শেষটায় যা হওয়ার তাই হবে।তবে কী জানো মায়ান?তুমি ধারণা করা বন্ধ করে দাও।যদি বছর বছর পূর্বে আমার ক্ষেত্রে ঝগড়া মিটিয়ে নিয়ে সংসারের পরামর্শ দিতে।কিংবা তা নিজেও মানতে তাহলে হয়তো আজ সবকিছু শেষ হতো না।ভবিষ্যতে একটা তেঁতো কান্ডের সূচনা তৈরী হতো না।”
“এখন সব দোষ আমার ধারণার দিওনা।ডিভোর্স তো দুটো দম্পতির মধ্যেকার ব্যাপার।”
দিশা ধীর কণ্ঠে মাথা দুলিয়ে বলল,
“যতোক্ষণ না সেখানে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ ঘটে।”
“বাদ দাও দিশা।যাক মেয়ে নিয়ে যে টেনশনের কিছু নেই এটাতে খুশি আমি।”
বিনিময়ে দিশা মুচকি হাসলো।সে সত্য বলে দোষের ভাগীদার হতে চায়নি।এই কারণে মিথ্যার আশ্রয়টি গ্রহণ করেছে।সে বুঝেছিল মায়ান দেশে এলে বিষয়টা বুঝবে।যেহেতু এতোটা খেয়াল করেছে বাকীটা না হয় নিজে বের করুক।তবে তার কাছে একটি বিষয় অদ্ভূত লাগলো হুট করে দেশে এসে তোশার ব্যাপারে পজেসিভ হয়ে উঠেছে তার বাবা।অথচ কতোগুলো বছর দায়িত্ব পালনে অপারগ ছিল।
(***)
“আপনি পরকীয়া করছেন কবীর শাহ।আপনি এই আপনি ঠিক নেই।”
“কী বলতে চাও?আমি কেন ঠিক থাকবো না?”
প্রশ্নের সঙ্গে কবীরের ভ্রুঁ জোড়া আন্দোলিত হলো।তোশা ক্রন্দরত কণ্ঠে পুনরায় বলল
“পুরো বিশ্বে একটা জিনিস আগুনের মতো ছড়াচ্ছে।মানুষ বিশ,পঁচিশ, ত্রিশ বছর বাঁচার পর পুরুষ থেকে নিজেকে নারী ভাবা শুরু করে।আপনি ও কী এমন?দেখেন আমি অনেক সুন্দর।হতে পারে উল্লাসের মতোন বডি ফিটনেস এতো সুন্দর না।”
নিজের নাম শুনে উল্লাস মুখের উপর থেকে ম্যাগাজিন সরিয়ে দিলো।তোশার উদ্দেশ্যে চিল্লিয়ে শুধালো,
“তুই কী বলতে চাস তোশামণি?”
“বলতে চাচ্ছি দুজন সুপুরুষ একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করছে।এটা নিশ্চয় ভালো কিছু না।তারা সবসময় একে অপরের সাথে থাকছে।এরকম গোপন জায়গায় আসছে।”
“তাই তারা সম্পর্কে আছে?”
“হুঁ।”
কবীর-উল্লাস নিজেদের দৃষ্টির বিনিময় করে নিলো।দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উল্লাস বলল,
“কবীর স্যার,আমার পক্ষ থেকে নিজের প্রেমিকাকে জোরে করে একটা চ’ড় দিবেন।এমনভাবে হাতের কাজ সারবেন যে হাতের পাঁচটা আঙুল যেন বোঝা যায়।”
কবীর অবশ্য হাতের কাজ দেখালো না।তোশাকে নিজের কাছে টেনে বলল,
“এসব কোথা থেকে শিখলে?ইন্সটা রিলস?”
“হুঁ।”
“বোকা মেয়ে।আমরা গভীর একটা কাজে এসেছি।জেদ করলে দেখে নিয়ে এলাম।উল্লাস একটা সমস্যায় পড়েছে আসলে।একজন রিপোর্টার ওর নামে ষ’ড়’য’ন্ত্রে লিপ্ত।সেটাকে একটু টাইট দিতে।”
“তাই?”
“হ্যাঁ।এখানে বসো।আমরা ওদিকটায় আছি।ভয় নেই তোমার সাথে আমার স্টাফ থাকবে।”
কবীর ইদানীং খুব নরম করে কথা বলে তোশার সঙ্গে।আজ তো আশ্চর্য কাজ করলো তামাটে পুরুষটি।পুরু উষ্ণ ঠোঁট দাঁড়া কপােলে চুমো খেলো মেয়েটির।
“আমি সব পরিস্থিতিতে তোমাকে ভালোবাসি বেলাডোনা।এখানে থাকো।আসছি একটু পর।”
উল্লাসকে ইশারায় নিজের সাথে আসতে নির্দেশ দিলো কবীর।তারা দুজন স্বচ্ছ কাচের দেয়ালে তৈরী একটা ঘরে ঢুকলো।একটা ধূর্ত লোক সেখানে প্রবেশ করতেই উল্লাস জোরেশোরে চ’ড় মেরে মাটিতে ফেলে দিলো।এরপর শুরু হলো কবীরের কাজ।তোশা তো পূর্ব থেকে এই পুরুষটির উপর মুগ্ধ ছিল।আজ যেন শতগুণে বেড়ে গেলো।লোকটাকে শা’স্তি দিচ্ছে কিছুর?তা নয় এতোটা ম’রি’য়া হয়ে আ’ঘা’ত করছে কেন?এলেমেলো কবীর শাহ তোশার হৃদয়ের স্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে।মেয়েটি তো পুরুষটির কপালের ঘাম মুছে নেওয়াকেও শৈল্পিক ধরে নিলো।যে লোকটাকে শা’স্তি দিচ্ছে সেই লোকটা বারংবার ভ’য়ে তোশার দিকে তাঁকাচ্ছে।হুট করে মেয়েটির মনটা কেমন করে উঠলো।সে নিজেকে প্রশ্ন করলো,
“কবীর শাহ কেন বলল সে সব পরিস্থিতি তে তাকে ভালোবাসে?কী এমন পরিস্থিতির উদয় ঘটলো?”
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকল পাঠক সর্বোচ্চ রেসপন্স করবেন।এখন উপন্যাস অর্ধেকের বেশী চলে গিয়েছে।