#কাজললতা (সারপ্রাইজ পর্ব)
#লেখিকা_ইভা_আক্তার
#পর্ব_১৭
————————————————————————————
চিঠিটা পড়তেই মনের ভেতরটা আনন্দে নেচে উঠলো। সত্যিই কি তাহলে আমার শ্যামপুরুষকে আমি স্বচক্ষে দেখতে পাবো? ভাবতেই বুকের ভেতরে আনন্দের জোয়াড় বয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে গোসল সেরে এসে রুমে বসে চুল আছড়চ্ছিলাম। আয়নায় নিজেকে দেখে বেশ অদ্ভুত লাগছে। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে মিষ্টি একটা হাসি। প্রিয় মানুষকে দেখার আনন্দ বুঝি এমনটাই হয়ে থাকে? কিছু একটা ভাবতেই ঠোঁটের কোণের হাসিটা মিলিয়ে গেলো। প্রিয় মানুষ? সেটা তো একসময় ইফতি ভাইয়াকেও ভেবেছিলাম। অথচ আজ তাকে প্রিয় মানুষ তো দূরের কথা কোনো আপন মানুষও ভাবতে ইচ্ছে করছে না। ধুর এখনো কেনো যে ইফতি ভাইয়াকে নিয়েই এতো ভাবছি কে জানে? ইফতি ভাইয়া শুধুই আমার কাজিন এছাড়া আর কেউই না। আমি আমার শ্যামপুরুষকেই আপন করে নেব। তাকে ছাড়া আর কাউকেই না। হঠাৎই রুমের দরজায় টোকা পড়লো,
– ভেতরে এসো।
আমার কথায় ঠাস করে রুমের দরজা খুলেই ইলমা, নাহিল ভাইয়া আর ইফতি ভাইয়া রুমে ঢুকে পড়লো। ইফতি ভাইয়াকে দেখে বুকের ভেতরে আগুন জ্বলতে শুরু করলো।
– কিরে ইভা পরীক্ষা শেষ হয়েছে একবারও খবরও নিলি না। দেখবি না তোর এই হ্যান্ডসাম ভাইটা কেমন আছে। শুকিয়ে টুকিয়ে গেছে কিনা।
ইফতি ভাইয়ার কথায় আমি মুখ বন্ধ করে চুল আছড়াতে লাগলাম। ইলমা ইফতি ভাইয়ার কথা শুনে চোখ বাঁকা করে ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকালো।
– কি হলো ইভা? এতো চুপচাপ কেনো?কিছু হয়েছে? (ইলমা)
– জামাই মরেছে ওর। জামাই মরলে কি মানুষ দাঁত কেলিয়ে হাসে নাকি? বেচারি তার জামাইয়ের জন্য শোক পালন করছে (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
– জামাই মরেছে নাকি অন্য কেউ তাতে তোমার কি? তুমি কি আমার জামাই নাকি আজব।
– জামাই মরেছে বলে তোর এই অবস্থা আমি মরলে তো তুই রাস্তায় রাস্তায় পাগল হয়ে ঘুরতি।
ইফতি ভাইয়ার কথা শুনে ইলমা আর নাহিল ভাইয়া একে অপরের দিকে তাকালো। আর এদিকে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। ইলমা আর নাহিল ভাইয়ার সামনে ইফতি ভাইয়া কিভাবে এমন একটা কথা বলতে পারলো।
– ইভারে এসব কি শুনছি? সত্যি কি তাই নাকি? (নাহিল ভাইয়া)
-আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না তুই আর ভাইয়া? এতো বড় কথা আমাদের থেকে কিভাবে লুকালি তোরা? (ইলমা)
-আরে তোরা এসব কি আজেবাজে বকছিস? এমন কিছুই না। তোর ভাইয়ের মেডিকেল পড়তে পড়তে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে তাই এসব বলছে (আমি)
– দেখ ইভা একদম মিথ্যা কথা বলবি না। আমরা সব বুঝতে পেড়েছি এবার। আমাদের কাছে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে। দাঁড়া ছোটো চাচ্চুকে বলে সব ক্লিয়ার করছি (ইলমা)
ইলমা ছোটে চাচ্চু বলে চিৎকার করতেই ইফতি ভাইয়া ওর মুখ চেপে ধরলো।
– কি করছিস তুই? ওই আহসান চৌধূরীকে ডেকে কি মান সম্মান নষ্ট করতে চাইছিস? এমনিতেই উকিল মানুষ ডাইরেক্ট কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে আমাকে। আর তোরা কিসব বাজে বকছিস? যত্তসব নিজেদের মতো বলেই যাচ্ছিস।
– আমাদের দোষ কি? তুমিই তো বুঝাতে চাইছো যে,,,(ইলমা)
-একদম চুপ। আরেকটা কথা বললেই মুখে পিন মেরে দেব। আমি বলতে চাইছি যে ইভা যেদিন থেকে ইন্টারে উঠেছে সেদিন থেকেই তো ওকে সব পড়ার শর্ট নোট দিয়ে আসছি আমি। যদি আমি সত্যি সত্যি মরে যাই তাহলে তো ইভা আর পড়ার নোটসও পাবে না আর এই দুঃখে ও পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে। এমনিতেই তো মাথায় গোবর ভরা। নোটস না ছাড়া পড়া পড়তে গিয়ে তোরা দেখবি সত্যি সত্যি এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছে (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় নাহিল ভাইয়া আর ইলমা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেও আমার চেহারা রাগে লাল হয়ে গিয়েছিলো। আমার চেহারা দেখে নাহিল ভাইয়া বুঝতে পেরেছিলো যে এক্ষনি ঝড় হতে চলেছে।
– আচ্ছা আমি এখন যাই ওকে। দেখি গিয়ে মেঝো মামি কি রান্না করেছে। পেটে হাতি দৌড়চ্ছে (নাহিল ভাইয়া)
– হ্যা হ্যা আমিও যাবো। আমারো ক্ষিদে পেয়েছে। চলো যাই (ইলমা)
এই বলেই ওরা দুজন দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। কিন্তু ইফতি ভাইয়া এখনো আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। আমি ইফতি ভাইয়াকে পাত্তা না দিয়ে হাতের চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে চলে যেতেই ইফতি ভাইয়া আমার পিছনের ওড়না টেনে নিজের সামনে নিয়ে আসলো।
-কি করছো ইফতি ভাইয়া?
– দেখ ইভা। এখানে আমি তোর রাগ দেখতে আসে নি। কেনো এতো রাগ করে আছিস আমার উপর? সবজায়গা থেকে কেনো ব্লক করে দিয়েছিস? কি করেছি আমি?
– আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। কেনো এতো কইফত চাইছো তুমি? দুটো মাস মরে আছি নাকি বেঁচে আছি সেটার তো খোঁজও নেও নি। এখন কেনো এতো দরদ দেখাতে এসেছো?
– ইভা তুই ভালো করেই জানিস পরীক্ষার সমটায় আমি কারও সাথে যোগাযোগ রাখি না। আমার ফোন এই সময়টায় বন্ধ করে রাখি। তাছাড়া ইলমার কাছ থেকে সবসময় আমি তোর খোঁজ নিতাম।
-হয়েছে আর করুণা দেখাতে হবে না। আমার খোঁজ নিয়ে কি হবে তোমার? তোমার মেডিকেলের ওই সুন্দরী রমনী তো আছেই তোমার পাশে। তোমার গার্লফ্রেন্ড সুহাসিনী। আমাকে তো তোমার ফ্লার্ট করার জন্য কাজে লাগে তাই না?
– এসব কি বাজে বকছিস? সুহাসিনী কেনো আমার গার্লফ্রেন্ড হতে যাবে? আর তুই ওকে কিভাবে চিনলি? তোকে এসব কে বলেছে?
-হয়েছে আর নাটক করতে হবে না আমার সাথে। ওইদিন চট্টগ্রামের রেস্টুরেন্টে আমাদের সামনে এমন ভাব করলে যেনো সুহাসিনী আপুকে তুমি চিনোই না। অথচ মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তোমাদের রিলেশন তাই না? আমি সব কিছুই জেনে গেছি। এখন আর আমার কাছে কোনো কিছু লুকানোর প্রয়োজন নেই।
– তুই ভুল বুঝছিস ইভা। সুহাসিনী আর আমার মধ্যে এমন কিছুই নেই। ও শুধুই আমার ক্লাসমেট। আর সত্যি রেস্টুরেন্টে যখন দেখা হয়েছিলো তখন আমি ওকে চিনতাম না। ওর সাথে আমার পরিচয় হয়েছে মাত্র ২ মাস আগে। ওয়েট তোকে এসব মিথ্যা কথা সুহাসিনী বলেছে তাই না? ইলমা আমাকে সেদিনই বলেছিলো যে সুহাসিনী নামের একটা মেয়ে তোর সাথে কথা বলতে তোদের কলেজে গিয়েছিলো কিন্তু আমি ভাবতেও পারি নি ওই ইডিয়ট মেয়েটা তোকে এরকম ধরণের মিথ্যে কথা বলবে।
– মিথ্যে কথা তাই না? মিথ্যে কথা তো তুমি আমায় বলেছিলে। আমার সাথে ফ্লার্ট করে গিয়েছো সারাটাদিন। চট্টগ্রামে যখন ওই ইমনের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো তখন তোমার মিথ্যা কান্নাকে আমি ভুল ভেবেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি আমার জন্য কাঁদছো। কিন্তু এ সবকিছুই সম্পূর্ণ মিথ্যে।
নিজেকে কিছুটা সামলে আবারো বলতে লাগলাম,
– দেখো ইফতি ভাইয়া আমি চাই না তোমার আর সুহাসিনী আপুর মাঝো কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ করতে। আমি চাই না কেউ আর মনে করুক তেমার আর আমার মধ্যে কোনো প্রকারের সম্পর্ক আছে। তুমি এখন থেকে তোমার মতো থাকবে আর আমি আমার মতো।
কথাগুলো বলে বের হতে যাবো তখনই ইফতি ভাইয়া আমার হাতে ধরে ফেলে। নিজের রাগকে সামলাতে না পেরে বললাম,
– দূরে থাকো আমার কাছ থেকে। আর কখনো আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টাও করবে না। এখন থেকে তুমি থাকো তোমার সুহাসিনীকে নিয়ে আর আমি থাকবো আমার শ্যামপ,,,
পুরোটা কথা বলতে গিয়েও যেনো আটকে গেলাম। আমার সেই শ্যামপুরুষটির কথাটা কি ইফতি ভাইয়াকে বলাটা ঠিক হবে? ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ইফতি ভাইয়া অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
– ইভা তুই আবারো ভুল বুঝছিস। তোকে কিভাবে বুঝাই তুই যাকে যা ভাবছিস সে আসলে তা না। তুই অনেক বোকা একটা মেয়ে। সহজেই একজনের জীবনে জড়িয়ে যাচ্ছিস।
– আমাকে নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে।
কথাটা বলেই হনহন করে রুমের দরজা খুলে বাইরে চলে আসলাম। বাইরে এসে দেখি সকলেই ড্রয়ইং রুমের সোফায় বসে আছে। পাশ থেকে নওশিন আপু আমার হাত ধরে বললো,
– কি হয়েছে ইভা? রুমের ভেতর ইফতির উপর কি নিয়ে চিৎকার করলি?
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
– তেমন কিছু না নওশিন আপু। তুমি তো জানোই তোমাদের ওই ইফতি আমাকে কিভাবে খোঁটা দেয়। এখন এাব বাদ দিয়ে বলো কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।
নওশিন আপু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
– তোকে ইমনের জন্য অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাই না ইভা?
– প্লিজ আপু ইমন ভাইয়ার কথা বাদ দাও। বর্তমান সময়ে অতীতটাকে টেনে এনো না প্লিজ। এবার চলো দুলাভাইয়ের সাথে একটু মজা করে আসি।
নওশিন আপুকে সাথে নিয়ে আমি,ইলমা আর নাহিল ভাইয়া দুলাভাইয়ের সাথে বেশ মজা করলাম। দুলাভাইও খুব মজার একজন মানুষ। আমাদের আড্ডার মাঝখানে কিছুক্ষণ পর দেখলাম ইফতি ভাইয়া খুব দ্রুত মোবাইলে যেনো কি একটা করছে। সেদিকটায় পাত্তা না দিয়ে সকলে ডাইনিং টেবিলে চলে গেলাম লাঞ্চ করতে। ডাইনিং টেবিলে সকলে বসে খাচ্ছিলাম তখনই হাতে থাকা মোবাইলের মেসেন্জারে টুং টাং আওয়াজ আসতে শুরু করলো। মেসেজের আওয়াজগুলো যেনো থামছেই না। একের পর এক মেসেজের আওয়াজ আসছে। ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত সকলেই আমার দিকে বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে তাকিয়ে থাকলেও একমাত্র ইফতি ভাইয়া ছিলো যে কিনা শান্তিমতো খাচ্ছিলো। মোবাইলের মেসেন্জারে ঢুকেই দেখলাম হাজার হাজার মানুষ একের পর এক মেসেজ করেই যাচ্ছে। এতোগুলো মানুষ কি করে আমার আইডিতে আসলো তা নিজেও বুঝতে পারছি না। কেউ কেউ তো অশ্লীল ভিডিও আর মেসেজও দিচ্ছিল। তাড়াতাড়ি করে ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে গিয়ে দেখলাম আইডিতে ফ্রেন্ডের সংখ্যা মোট ৫০০০ জন। সকালেও আমার আইডিতে ইফতি ভাইয়া ফেসবুক ফ্রেন্ডদের আনফ্রেন্ড করার পর সংখ্যা ছিলো মাত্র ১০০ জন। তাহলে দুপুরের মধ্যেই কিভাবে ৫০০০ জন হয়ে গেলো? হুট করেই একের পর এক অপরিচিত লোকেরা কল দিতে শুরু করলো। কি করবো বুঝতে না পেরে মেসেন্জার আর ফেসবুক ডিলেট করে দিলাম। বুঝতে পারলাম যে কাজটা ইফতি ভাইয়ারই করা। আমার মুখোমুখি সামনের টেবিলে বসে আছে ইফতি ভাইয়া। ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি অত্যান্ত শান্ত আর ভদ্র একটা ছেলের মতো চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে আর এদিকে রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।
– কে এতো মেসেজ আর কল দিচ্ছিল ইভা? (বাবা)
বাবার কথায় প্রচন্ড ভয় লাগতে শুরু করলো। বাবা আমার দিকে কেমন একটা সন্দেহজনক চাহনিতে তাকিয়ে আছে। বাবা যে কি নিয়ে সন্দেহ করছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।
– কিছু না বাবা।
– কিছু না বললেই হলো নাকি? মোবাইলটা আমার কাছে দাও।
মেসেন্জার আর ফেসবুক যেহেতু আমি ডিলেট করে দিয়েছি তাই বাবা বুঝতে পারবে না এটা ভেবেই বাবার হাতে মোবাইল দিতে যাবো তখনই ইফতি ভাইয়া বলে উঠলো,
– তেমন কিছু না মেঝো চাচ্চু। ইভা তো এখন 2nd ইয়ারে উঠেছে তাই ওকে কিছু নোটস এর ছবি আর মেসেজ করেছিলাম তো সেগুলোই যাচ্ছলি। এসব মেসেজের আওয়াজই তোমার পাচ্ছিলে।
ইফতি ভাইয়ার কথায় বাবা মোবাইল না নিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিতে শুরু করলো। যতই এই ইফতি ভাইয়া আমাকে বাঁচাক না কেনো সব হয়েছে ওর জন্য। এমন চাচাতো ভাই থাকলে শত্রু না হলেও চলে।
– আচ্ছা ইভা আর ইলমা। এইচএসসি শেষ করে তোদের কোন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে? (ছোটো চাচ্চু)
ছোটো চাচ্চুর কথায় আমি লাফিয়ে উঠে বললাম,
– ঢাবিতে। আমার স্বপ্নের একটা বিশ্ববিদ্যালয়।
– ঢাবি? আমি তো চেয়েছিলাম তুই আর আমি একসাথে মেডিকেলে পড়বো (ইলমা)
– তুই পড়িস মেডিকেলে। ওইসব পড়া আমার মাথায় ঢুকবে না। আমি যেকোনো একটা সাবজেক্ট নিয়ে ঢাবিতে ঢুকে পড়বো (আমি)
– কিন্তু ইভা,,(বাবা)
– ওরা খুব শিগ্রই এইচএসসি দিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হবে। এটা নিয়ে তোমরা কোনো টেনশন করো না (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথা শুনে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। এক তো ওর জন্যই আমাকে সাইন্স নিয়ে পড়তে হয়েছে এখন আবার আমার উপর মেডিকেলে পড়ার জোড় খাটাচ্ছে কোন সাহসে?
– মোটেও না। বাবা তুমি ইফতি ভাইয়াকে বলে দাও আমার নিজেরও স্বাধীনতা বলতে কিছু আছে। একারনে আমি আমার ইচ্ছেতে যা খুশি তা করবো। (আমি)
আমার কথায় চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। হুট করে ওয়াটসআাপে কারো মেসেজের শব্দ আসতেই প্রফাইলে গিয়ে দেখলাম কেউ একজন মেসেজ করেছে। ইনবক্সে গিয়ে দেখি ইফতি ভাইয়া মেসেজ করেছে “টেরা টেরা কথা বললে তোর ফেসবুকের ওই লোকেদের অশ্লীল ভিডিও আর মেসেজ গুলো উপস্থিত সকলকে দেখিয়ে দেব। তখন বুঝবি স্বাধীনতা কত প্রকার আর কি কি ”
ইফতি ভাইয়াকে সব জায়গায় ব্লক দেওয়ায় এখন নতুন ওয়াটসআ্যপ আইডি খুলে আমাকে মেসেজ দিয়েছে। ইফতি ভাইয়ার মেসেজ দেখে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
– না না। আমি মেডিকেল পড়বো। ইফতি ভাইয়া যা নিয়ে পড়তে বলবে আমি তা নিয়েই পড়বো।
আমার চিৎকার কারে কারে কাশি শুরু হয়ে গেলো,কারো কারো আবার পানি খেতে গিয়ে পানি পড়ে গিলো। আর ছোটো চাচ্চুর তো মুখের ভাতই পড়ে গেলো।
– তুমি না এই মাত্র বললে যে মেডিকেল নিয়ে পড়তে চাও না তাহলে? (বাবা)
– ওটা এমনি মজা করে বলেছিলাম। কিন্তু এখন আমি সিরিয়াসলি। আমি সত্যি সত্যি মেডিকেলেই পড়বো।
– যাক তাহলে তো ভালোই। ইলমা আর ইভা একসাথে মেডিকেলে যাবে (ছোটো চাচ্চু)
ছোটো চাচ্চুর কথায় সকলে সম্মতি দিতে লাগলো। ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকাতেই ইফতি ভাইয়া একটা সয়তানি হাসি দিলো।
————————————————————————————–
সময়টা কখন যাবে যাবে করে আসলেই সমটা চলে গেলো। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো। রমনা পার্কের সুন্দর এক বিলের সামনে দাঁড়িয়ে বেগুনি রূপে প্রিয় মানুষ টাকে দেখার অপেক্ষা করে চলছি। এখনো বাড়িতে সকল মেহমানরা রয়েছে। পুরোনো বান্ধবীর সাথে দেখা করার নাম নিয়ে প্রিয় মানুষটাকে দেখার জন্য চলে এসেছি। আসার সময় ইফতি ভাইয়ার শান্তশিষ্ট মুখশ্রীটা আমার চোখ থেকে এড়ায়নি। তবুও আজ যেনো নিজের মুখের হাসিটা সবচেয়ে বড় দামি হয়ে গেছে।হাজারো অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কারো “বেগুনি পরী” ডাক শুনে পেছনে তাকাতেই আমার চোখ কপলাে উঠে গেলো। যাকে কখনো কল্পনাও করি নি এই সময়টায় আমার সামনে থাকার সেই আজ আমার সেই শ্যামপুরুষ রূপে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি পড়া হাতে সাদা বেল্টের ঘড়ি, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া এক শ্যামবর্ণের সুদর্শন পুরুষ আমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমার সেই চিঠি দেওয়া শ্যামপুরুষটি আর কেউ নয় বরং ইফতি ভাইয়ার মেডিকেলের বন্ধু শুভ ভাইয়া। যেদিন ইফতি ভাইয়া তার বন্ধুদের নিয়ে আমাদের কলেজে এসেছিলো সেদিন শুভ ভাইয়াই আমার দিকে তাকিয়েছিলো। কিন্তু তখন তাকে চিনতাম না। পরবর্তীতে ইলমাকে জিজ্ঞেস করায় ইলমা বলেছিলো “ওটা শুভ ভাইয়া”। শুভ ভাইয়া হচ্ছে ইফতি ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। শ্যামবর্ণের হলেও শুভ ভাইয়া কিন্তু ইফতি ভাইয়ার থেকে কোনো অংশে কম না ”
কিন্তু কখনো কল্পনাও করি নি শুভ ভাইয়া হচ্ছে আমার সেই চিঠি দেওয়া শ্যামপুরুষ যার কথা পিয়ন লোকটি বলেছিলো। বিষয়টা ক্লিয়ার করার জন্য বললাম,
– শুভ ভাইয়া। আপনি?
আমার কথায় শুভ ভাইয়া মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,
– হ্যা আমি। তোমার সেই চিঠি প্রেমিক।
শুভ ভাইয়ার কথায় আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। শুভ ভাইয়া আমাকে চিঠি দিতো? কিন্তু কেনো? আর শুভ ভাইয়া আমাকে চিনেই বা কিভাবে? তার সাথে তো কখনো আমার কথাও হয় নি।
– কিন্তু কেনো? কেনো আমাকে চিঠি আর কাজল দিতেন? কিভাবেই বা আমাকে চিনেন?
– ইফতি আর ইলমার কাছে তোমার নাম শুনেছিলাম। তখন থেকেই মনে ইচ্ছে জেগেছিলো একবার হলেও তোমাকে আমি দেখতে চাই। আর সেই ইচ্ছে টা আমার পূরণ হলো ইফতির মোবাইলে তোমার ছবি দেখে। সেদিনই আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলি। আমার মনে তোমার নামটা পুরোপুরিভাবে গেঁথে গিয়েছিলো ইভা। তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু দুই মাস আগে আমার মনে সন্দেহ জাগে হয়তো তুমি আর ইফতি একে অপরকে ভালোবাসো। একারণে গত দুইমাস ধরে তোমার সাথে চিঠি আদান-প্রদা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। মনে মধ্যে একটা ভয় সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলো তোমাকে আবার হারিয়ে ফেললাম না তো?তারপর যখন পুরো মেডিকেলে ছড়িয়ে পড়লো ইফতি আর সুহাসিনীর রিলেশেনের কথাটা তখন মনে মনে প্রচন্ড খুশি হয়ে গিয়েছিলাম। যে না আমি আমার প্রেয়সীকে হারাই নি। আমার প্রেয়সী এখনো আমারই রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তোমার সাথে দেখা করে ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলাম যে হ্যা আমিই তোমার সেই চিঠি প্রেমিক।
শুভ ভাইয়ার কথায় নিজেকে সামলাতে পারলাম না। ঘন ঘন শ্বাস নিতে শুরু করলাম।
– শান্ত হও ইভা। আমি জানি তুমি কখনোই আমাকে এখানে আশা করো নি। কিন্তু তবুও পারবে না আমাকে মেনে নিতে? বলো না।
আমি শুভ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিতেই শুভ ভাইয়ার মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠলো।
দুজন বেগুনি রঙে রাঙায়িত প্রেমিক আর প্রেমিকা তাদের মধ্যখানে ভালোবাসার রং ফুটিয়ে তুললেও কাজললতার আসল প্রেমিককি তাকে পেয়েছে? বেগুনি রঙের প্রেমিকটির জায়গায় যার থাকা উচিত ছিলো সে কি থেকেছে? তাই তো দুজন নকল ভালোবাসার মধ্যখানে পাশ থেকে এক অসহায় প্রেমিক তার চোখের জল ফেলছে। সত্যিকারের ভালোবাসা কি কখনোই জিততে পারবে না? নাকি তার বাইশ বছরের ভালোবাসা এমনি এমনি হেরে যাবে?
——————————————————————————————-
বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আজ নিজেকে কেমন জানি সুখি মানুষ মনে হচ্ছে। শুভ ভাইয়ার সাথে পুরো রমনা পার্ক ঘুরলাম। আজকের মতো হাসি হয়তো আমার জীবনে কখনো ফুটে ওঠে নি। রিক্সা থেকে নেমে যেই না বাসার ভেতর ঢুকতে যাবো হুট করে কেউ একজন পেছন থেকে আমার মুখ আর চোখ বেধে কিছু একটা স্প্রে করলো যার ফলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে একটা গাড়ির ভেতর আবিষ্কার করলাম। আমার চোখ আর মুখের বাঁধন তখন ছিলো না। গাড়ির বাইরে তাকাতেই দেখলাম আশপাশটা সম্পূর্ণ নির্জন। কাউকেই আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। কে নিয়ে এসেছে আমাকে এখানে? আর কেনোই বা নিয়ে এসেছে? গাড়ির সামনে অন্ধকারে কাউকে আসতে দেখতে পেয়েই গাড়ির দরজা খুলে দৌড় দিলাম। কিন্তু ঝামেলা হলো তখনই। দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় দেখতে পেলাম সামনে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। সামনে অনেক বড় একটা নদী। পেছনে ফিরে তাকিয়েও দেখি কিছু গাছপালা ছাড়া আশেপাশে আর কিছুই নেই। চিৎকার করার আগেই কেউ একজন আমার হাত ধরে পেছনে টান দিলো। পেছনে তাকিয়ে দেখি ইফতি ভাইয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইফতি ভাইয়াকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,
– আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছো তুমি?
কথাগুলো বলে ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ইফতি ভাইয়ার চেহারা সম্পূর্ণ মনমালিন্য। ইফতি ভাইয়ার এমন চেহাটা দেখে আমার মুখটাও বন্ধ হয়ে গেলো। হটাৎ করে ইফতি ভাইয়া পেছন থেকে তার এক হাত বের করে আমার সামনে ধরে আরেক হাত দিয়ে তার পকেট থেকে একটা মোমবাতি বের করে জ্বালিয়ে বললো,
– শুভ জন্মদিন ইভা
ইফতি ভাইয়ার কথায় আমি প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলাম। জন্মদিন? হ্যা আজ তো সত্যি আমার জন্মদিন। ইফতি ভাইয়ার হাতে খুব সুন্দর একটা কেক।
– কি হলো মোবাতিটা বন্ধ করে কেকটা কাট।
ইফতি ভাইয়ার কথায় আমি মোমবাতিটা ফু দিয়ে বন্ধ করে কেকের পাশে রাখা ছুড়ি দিয়ে কেকটা কাটলাম। কেকটা কেটে এক পিস ইফতি ভাইয়ার মুখে ধরতেই ইফতি ভাইয়া খেয়ে তার এক হাতে থাকা মোমবাতিটা ফেলে আমার মুখে কেকের পিসটা দিতেই আমি খেয়ে নিলাম। ইফতি ভাইয়া মুখে ছিলো মিষ্টি একটা হাসি। কিন্তু হাসিতে ছিলো না কোনো মুগ্ধতা কোনো সুখ। এর কারণটা আমি এখোনো বুঝতে পারলাম না।
——————————————————————————————-
বাসায় এসে পেলাম আরও একটা সারপ্রাইজ। ইফতি ভাইয়ার সাথে বাসায় ঢুকতেই বাসার ভেতরটা অন্ধকার দেখতে পেলাম। ড্রয়ইং রুমের একটু কাছে যেতেই হুট করে আলো জ্বলে উঠলো আর সকলে একসাথে বলে উঠলো,
– শুভ জন্মদিন ইভা রাণী।
সকলের মুখে জন্মদিনের কথা শুনে আমি আরও বেশি অবাক হয়ে গেলাম। আবার খানিকটা কষ্টও পেয়েছিলাম। কেননা আমার শ্যামপুরুষটা অর্থাৎ শুভর কি আমার জন্মদিন সম্পর্কে জানা ছিলো না? হয়তো বা না। ইলমা আমার সামনে একটা কেক ধরতেই সেটা কেটে একে একে সবাইকে খাইয়ে ইফতি ভাইয়াকে খাওয়াতে যাবো তখনই ছোটো চাচ্চু বললো,
– সত্যি আজকের সারপ্রাইজটা মনে হয় ইভার জন্য একটু বেশিই সুন্দর আর বড় ছিলো।
– হুম দেখতে হবে না প্ল্যানটা কার। ইফতির মাথায় যে এতো বড় প্ল্যান ছিলো তা কখনো কল্পনাও করতে পারি নি (নওশিন আপু)
-প্ল্যান? কিসের প্ল্যান? (আমি)
-আমাদের এখানে আসাটা ছিলো শুধুই একটা প্ল্যান। আমি আর তোর দুলাভাই তো বিদেশ যাবো এখোনো আরও এক বছর আছে। আগে আমাদের ভিসা তো রেডি করতে হবে তাই না? আসলে আমাদের প্ল্যান ছিলো তোর বার্থডে সিলিব্রেট করা। আর এইসব কিছুর প্ল্যান করেছিলো আমাদের ইফতি (নওশিন আপু)
নওশিন আপুর কথায় আমি হাতে কেকের পিস নিয়ে ইফতি ভাইয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছি। কিন্তু ইফতি ভাইয়ার চাহনি ছিলো সম্পূর্ণ শূন্য। যেনো কোনো এক কষ্ট তার মনে জমা রয়েছে।
———————————————————————————————-
রাত ঠিক দুটো বাজে। একে একে বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে পড়তেই ইফতি রওনা দিলো তার রাগ দমন করতে। সে জানতে চায় কেনো তার বাইশ বছরের ভালোবাসাকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে? এক নিস্তব্ধ ও নির্জন জায়গায় পৌঁছাতেই ইফতি দেখতে পেলো তার সেই চিরচেনা ব্যক্তিটাকে। তাকে দেখে নিজের রাগকে আটকাতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে তার শার্টের কলার টেনে ধরলো।
– কেনো? কেনো এমন করলি তুই? কেনো আমার বাইশটা বছরের ভালোবাসাকে কেড়ে নিলি? কেনো আমার সাথে এতো বড় শত্রুতা করলি? তোকে নিজের ভাইয়ের মতো বন্ধু ভেবেছিলাম। তোকে নিজের সকল গোপন কথা শেয়ার করেছিলাম। ভরসা করে তোর সাহায্য নিয়ে আমি পিয়নের কাছ থেকে চিঠি পাঠাতাম কেননা আমি চেয়েছিলাম যদি ও চিনে ফেলে আমি সেই ব্যাক্তি যে কিনা ওকে চিঠি দিতাম তাহলে বার্থডে সারপ্রাইজটা নষ্ট হয়ে যেতো। চেয়েছিলাম ইভাকে আজ ওর বার্থডেডে সারপ্রাইজ হিসেবে জানাবো যে আমি ওর সেই প্রেমিক পুরুষ। ওর বার্থডে সারপ্রাইজটা দেওয়ার জন্য ওর দু দুটো মাস কথা না বলে কতটা কষ্টে থেকেছি জানিস? আর তুই কি করলি? আমার সকল সারপ্রাইজ সকল অপেক্ষাকে শেষ করে দিলি। ইভাকে নিয়ে আমার সকল মনের ইচ্ছে আর আকাঙ্খা প্রকাশ করেছিলাম তবুও কেনো ধোঁকাবাজি করলি?
– হয়েছে থাম তুই। অনেক প্রকাশ করেছিস নিজের ভালোবাসা। এবার আমি প্রকাশ করবো। ইভাকে আমি ভালোবাসি শুনেছিস। যেদিন ইভার কলেজের ক্যাম্পাসে ওকে প্রথম দেখি সেদিন থেকেই ওর প্রেমে পড়ে যাই আমি। এখন থেকে আমিই ওর সবকিছু। এখন যদি তুই ওকে বলতে যাস যে তুই সেই চিঠি দেওয়া প্রেমিক তাও কিন্তু ইভা কখনোই তোকে ভরসা করবে না। কেননা তুই হচ্ছিস ওর সবচেয়ে বড় শত্রু। ও তোকে আগে ভালোবাসলেও এখন প্রচুর ঘৃণা করে তোকে জানিস? কেননা এখন তো ও জানে ওর আগের ভালোবাসার সেই মানুষ আসলে ওকে ধোঁকা দিয়েছে। ও জানে আসলে তুই রিলেশনে আছিস তাও আবার সুহাসিনীর সাথে। এজন্য যতই তুই ইভাকে সত্যিটা বলিস না কেনো ইভা তোকে মিথ্যাবাদী ভেবে ততই ঘৃণা করবে।
– তুই ভালো করেই জানিস যে সুহাসিনীর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই তবুও কেনো এসব বলছিস?
– দেখ ইফতি তোর এসব কথার এখন কোনো মূল্যই ইভার কাছে নেই। ইভা এখন শুধুই আমার। তোর বাইশ বছরের ভালোবাসা এখানেই শেষ।
-শুভভভভভভভ
-চিৎকার করিস না ইফতি। আমি তো তোর ভাইয়ের মতোনই বন্ধু। আমার জন্য এতোটুকু ত্যাগ করতে পারবি না? তাছাড়া তোর জন্য তো সুহাসিনী আছেই। ওকে নিয়ে হ্যাপি থাক। জানিস যেদিন থেকে জানতে পেরেছিলাম সুহাসিনী তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেদিন থেকেই প্ল্যান করেছিলাম সুহাসিনীকে তোর পিছে লাগিয়ে ইভাকে নিজের করে নিব। একারণেই প্ল্যান করে সুহাসিনীকে ইভার কলেজে পাঠিয়ে এটা বলাই যে তোর সাথে সুহাসিনীর মেডিকেলে ভর্তির পর থেকেই রিলেশন। তারপর? তারপর আর কি। তোর প্রতি ইভার জঘন্যতম ঘৃণা জন্মায়। আসলে মেয়ে মানুষ তো একারণেই অভিমানের পাল্লাটা একটু বেশিইই। এখন তোকে ইভা একজন প্রতারক ভাবে বুঝেছিস।
শুভর কথা শুনে ইফতির চোখ ছলছল করে উঠে। শুভর কলার থেকে হাতটা আলগা করতেই শুভ দূরে সরে যায়।
– আচ্ছা তাহলে আল্লাহ হাফেজ আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু। শেষমাসে তুই আমার শালা হলি। ভাবতেই আনন্দে বুকটা নেচে উঠছে। এবার তাহলে আমি যাই। বায় বায় শালাবাবু।
কথাগুলো বলেই শুভ তার পকেটে দুই হাত গুজে চলে যায়। আর এদিকে ইফতি সেখানটায় ঠায় হয় দাড়িঁয়ে রয়। নিজের প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে ভরসা করে যে কাজটা দিয়েছিলো সে কাজটাই সে কেড়ে নেয়। এতো বড় ধোঁকা দেয়। ভাবতেই কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে ইফতির। তাহলে কি ইফতি তার বাইশ বছরের ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলবে? এতোই সহজে?
চলবে,,,,,,,,,,,,,,