#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“পুরুষ মানুষেরা ভালোবাসি,বিয়ে করবো কথাটি আসলে এমনিই বলে।গভীর কোনো ভিত্তি নেই যার।দেখবে এটা তাদের জন্য অনেক সহজ।”
“নিজে পুরুষ হয়ে এভাবে বলতে পারলেন প্রতীক স্যার?”
“তোশা যা সত্য।”
তোশা বিশ্বাস করলো না।আজ তার শ্যুটিং এর শেষ দিন।চুলগুলো সুন্দর করে বিন্যস্ত করে শুধালো,
“তাহলে কী এই পৃথিবীতে বিবাহিত বলতে কোনো পুরুষ থাকতো?আপনিও এমন নিশ্চয়।”
নিজের প্রশংসা করার দরুণ প্রসঙ্গটি উঠিয়েছিল প্রতীক।গলাটি পরিষ্কার করে বলল,
“আমি সাধারণ নই।যাকে পছন্দ করি মন থেকে বলি।জানো তো আমার পছন্দের আছে একজন।”
“তাই?সে কে?”
প্রতীক অনেকটা সাহস নিয়ে বলতে যাবে ঠিক তখুনি গেট দিয়ে কয়েকটি গাড়ীর প্রবেশ ঘটলো।আজকে তারা একটি স্টুডিও এর ভেতরে শ্যুটিং করছে।পরপর থামা গাড়ীগুলো অতি সহজে সবার দৃষ্টি কেঁড়ে নিলো।তোশাও ব্যতীক্রম নয়।সে অবাক হয়ে দেখছে গাড়ী থেকে নামা এলেমেলো পুরুষটিকে।উল্লাস!বর্তমানে সিনেমা জগতে সবথেকে বড় সুপারস্টার।এবং সকলের প্রিয় মুখ।তোশা নিজেও এই ছেলেটির অভিনয় পছন্দ করে।কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবনকে নয়।উল্লাসকে দেখে প্রতীক বিষন্ন কণ্ঠে বলল,
“পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য এসে গিয়েছে।এই ছেলেটা কীভাবে যে এতোটা জনপ্রিয়তা পেলো।”
তোশা চোখটা প্রতীকের পানে ঘুরিয়ে শুধালো,
“কেন?সমস্যা কী?উল্লাস তো ভালো অভিনেতা।”
“ব্যক্তিগত জীবনে উদ্ভট আর এলেমেলো মানুষ।সারাক্ষণ ভ্যাপিং করে।গাঁ থেকে কোলনের সাথে এ’ল’কোহলের গন্ধ আসে।ধরি মাছ না ছুঁই পানি টাইপ প্লে’বয়।আরো শুনতে চাও?”
“বুঝলাম।কিন্তু ব্যক্তিগত জীবন দিয়ে কী হবে যদি অভিনয় ভালো হয়?”
“তোমার জন্য একটা অফার এসেছিল বিপরীতে এই উল্লাস কাজ করতো।আমি পরামর্শ কিংবা না জানিয়ে না করে দিয়েছি।”
“এমনিতেও আমার কবীর শাহ এরপর অভিনয় করতে দিবেনা।”
“রিয়েলি?তোমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হলো না তাতে?মানে পার্টনার হিসেবে তোমার নিজস্ব ভালোলাগা নেই।অভিনয় পছন্দ তোমার তাইতো?”
“সেরকম..।”
“না বলতে নিশ্চয়।কিন্তু এটা তোমার মনের কথা নয়।”
“আমার মনে কী চলে তা আপনি কীভাবে বলবেন?কবীর শাহ কখনো আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি।তার একটি জিনিস পছন্দ নয়।সেটা আমি করবো না।”
“তোমাদের মেয়েদের সবথেকে বড় সমস্যা কী জানো?ছেলেদের কথাগুলো মেনে নেওয়া।তাছাড়া মি.শাহ বিশ বছরের বড় তোমার।কিছু তো মিলেনা।দেখো জীবনের অনেকটা সময় পড়ে আছে।এসব টাকাওয়ালা লোকেদের সঙ্গে প্রকৃত সুখ পাবেনা।”
তোশা ভীষণ নির্বিকার হয়ে প্রতীককে দেখছে।একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই আবার সুগার গার্ল শব্দ মোড়ানো অ’স্ত্র তার দিকে ছুঁড়ে দিলো।কিন্তু এবার মেয়েটির মনে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে।মন খারাপ করবে?নাকী এড়িয়ে যাবে?
“প্রতীক স্যার,আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বলার কোনো অধিকার আপনাকে দিয়েছিলাম বলে মনে আসছেনা।”
“আরে তোশা রাগ করো না।ভালো এর জন্য।”
“নিশ্চয় আমার মা-বাবা মা’রা যায়নি।তারা বিষয়টি দেখবে।টাকার কথাটি উঠলো তখন বলতে হয় আপনি কেন অভিনয় ছেড়ে বৈরাগী হচ্ছেন না?”
অন্য কোনো বাক্য শোনার পূর্বে জায়গাটি ছেড়ে সিঁড়ির দিকে যেতে লাগলো তোশা।দোতালায় ছোট্ট একটি নিরিবিলিতে বসার জায়গা আছে।অনেক গুলো সাংবাদিক নেমে আসছে দোতালা থেকে।উল্লাসের পিছনে গিয়েছিল তারা।তোশা নতুন মুখ হওয়ায় কেউ কোনো আগ্রহ দেখালো না।কিন্তু হলুদ রঙা শাড়ী পরিহিতাকে একবার পিছন ফিরে দেখে নিলো অবশ্য।
উষ্ণ পরিবেশ হলেও ঈষৎ বাতাস আছে।ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে নিলো তোশা।মন খারাপ কিংবা ভালো নয়।সকলের থেকে দূরে থাকার উদ্দেশ্যে সে এখানে এসেছে।ফোনটা বের করে কবীর শাহ এর নাম্বারে ডায়াল করলো।রিসিভ হলে মিষ্টি করে শুধালো,
“পালিয়ে বিয়ে করতে কেমন লাগে?”
কবীর ভ্রু কুঁচকালো।সামনে তার বিদেশি ক্লায়েন্ট বসে আছে।তবুও প্রিয় নারীর সঙ্গে কথা বলার লোভ কী সামলানো যায়?
“নিশ্চয় ফ্রি এখন আপনি তোশা ম্যাডাম।”
“এটা উত্তর হলো?”
“চলেন না পালিয়ে যাই।এরপর কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার মতোন দূরে পাহাড়ে চলে যাবো।আপনি কষ্ট করে টাকা নিয়ে আসবেন তাতেই চলে যাবে দিন।”
কবীরের সামনে বিশ্বের অন্যতম মানি মেকার পার্সনরা বসে আছে।তাদের সামনে ফোনে কথা বলায় উচ্চ শব্দে হাসি অসৌজন্যমূলক আচরণ হিসেবে গণ্য হলেও কবীর না হেসে পারলো না।সকলে তার দিকে অদ্ভূতভাবে তাঁকালো।বিনিময়ে নিজেকে ধাতস্থ করে সে বলল,
“কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমায় দুজনের হ্যাপি এন্ডিং হয়না।কিন্তু এই শাহ তার চৌধুরীর সাথে সুন্দর একটি এন্ডিং চায়।বুঝলেন।”
“এভাবে বলবেন না আমার লজ্জা লাগে।”
“বেলাডোনা রাখছি। তুমি সুন্দর করে শ্যুটিং শেষ করো।”
“আর একটু কথা বলেন।”
“ব্যস্ত।”
কবীরের ফোনটা কেঁটে গেলো।মন খারাপ হয়ে গেলো তোশার।কিছুটা অদৃশ্য বাতাসের উদ্দেশ্যে করে বলল,
“সে কেন বুঝেনা তার সঙ্গে কথা বলতে ভীষণ ভালো লাগে আমার।ষোল বয়সের প্রেমিকের মতোন সারাক্ষণ কল, ম্যাসেজ দিতো যদি।”
তোশা আনমনে বললেও সে একা ছিলনা অবশ্য।কড়া কোলনের(পারফিউম টাইপ) সুগন্ধে বিমোহিত হলো সে।পাশে ধোঁয়া উড়তে দেখে চমকে উঠে সেদিকে তাঁকালো।উল্লাস একমনে ভ্যাপিং করছে।এলেমেলো সত্যিই মানুষটা।এক হাত ডিভানের উপর রাখা।তোশাকে তার দিকে তাঁকাতে দেখে হাতের ভ্যাপটা সেধে বসলো।হকচকিয়ে উঠলো তোশা।
“আমি এসব খাইনা।”
উল্লাস হাতটা গুটিয়ে ব্লেজারে কিছু একটা খুঁজলো।ভীষণ স্বল্পভাষী ছেলেটা।একটু পর সিগারের প্যাকেট এগিয়ে দিলো।আঁতকে উঠে তোশা বলল,
“আমি এটাও খাইনা।”
“ওহ।কিন্তু আমি তো আ’ফি’ম টানিনা।বললে আনিয়ে দিবো।”
কতোটা সহজ সরল প্রস্তাব।তোশার কপালে ভাঁজ ও দুঠোঁটের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হলো।এই নায়কটা আসলেও উদ্ভট তো।
“এগুলো কী বলছেন?জানেন আমি কে?”
“প্রেমিকের কাছ থেকে পাত্তা না পাওয়া প্রেমিকা।”
“নাহ।”
“তো কে?”
“তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”
“ভীষণ পঁ’চা নাম।”
“ধুর কোথাও শান্তি নেই।”
তোশা উঠে যেতে নিলে উল্লাস ধোঁয়া উড়িয়ে বলল,
“দুই ঘন্টার জন্য অজ্ঞান হয়ে যা মেয়ে।যার এটেনশন পাওয়ার জন্য মন খারাপ করছিস।তখন এটেনশনের চোটে বিরক্ত হবি।”
“এই এই সাহস কে দিলো তুই বলার।”
উল্লাস জবাব দিলো না।বরং নির্বিকার নিজের কাজ করছে।হুট করে তোশার মনের শয়তানটাও নড়েচড়ে বসলো।কৌতুহলী হয়ে বলল,
“দুই ঘন্টার জন্য অজ্ঞান হওয়া যাবে?”
উল্লাস পুনরায় দেহে অনুসন্ধান করলো।খানিক বাদে হাতে কোলন স্প্রে এর ছোট একটি বোতল উঠে এলো।
“নাকের কাছে দুবার স্প্রে কর।বেশী করিস না।”
তোশা বোতলটি নিতে গিয়েও নিলো না।হাত গুটিয়ে বলল,
“আমি কেন নিবো?”
উল্লাস মৃদু হেসে ঝড়ের গতিতে উঠে এসে তোশার নাকের সামনে স্প্রে করে মুখটা চেপে ধরলো।পুরুষালি শক্তির কাছে নিরুপায় হয়ে তোশা হাসফাস করতে লাগলো।ক্ষাণিকবাদে চেতনা হারালো সে।নিরিবিলি হওয়ায় কেউ দেখলো না কী হলো।তাকে আস্তে করে ডিভানে বসিয়ে ফোনটা তুলে নিলো উল্লাস।একটু আগে লুকিয়ে পাসওয়ার্ড দেখে নিয়েছিল।তাছাড়া বোকাসোকা মেয়েরা যে ১-৮ পর্যন্ত ডিজিটের পাসওয়ার্ড দেয় সেই বিষয়ে বেশ অবগত কবীর।ডায়ালের শুরুতে কবীরের নামটা দেখে মুচকি হাসলো।
তোশার কল আবার আসতে দেখে কবীর একটু অবাক হলো।সাধারণত ব্যস্ত বললে মেয়েটা কখনো দ্বিতীয়বার ফোন করেনা।
“হ্যালো লিটল চেরী।কী হয়েছে?”
“আপনার লিটল চেরী আপাতত অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।আপনি জলদি আসুন।”
“কে? কে আপনি?তোশা কোথায়?”
“আমি উল্লাস।”
যতোটা শশব্যস্ত হয়েছিল কবীর ঠিক ততোটা শান্ত হয়ে গেলো।স্বস্ত্বির সঙ্গে বলল,
“তোশা কোথায় উল্লাস?”
“অজ্ঞান হয়ে আছে।”
“এটা বলো না তুমি স্প্রে করেছো ওর উপর।”
“হুঁ।”
“কেন?তুমি কী এখনও বাচ্চা?”
“আপনি আসবেন নাকী আমি রেখে চলে যাবো?দুজনে একত্র হয়ে ঘুরবেন তা না কাজ পাগল হয়ে থাকেন।আমার সখী মন খারাপ করছিলো।”
“সখী কে?”
উল্লাস ঘুমন্ত তোশাকে দেখে বলল,
“নাম তো বলল তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”
চিৎকার করে কবীর বলল,
“প্লিজ দুজনে বন্ধুত্ব করো না।তোমরা দুটো উপরের লেভেলের বুদ্ধিমান মানুষ।”
“আপনি ইনডায়রেক্ট নিজের প্রেমিকা আর এই এলেমেলো উল্লাসকে পাগল বললেন?”
“আমি ডাইরেক্ট বললাম।তোশার কাছে থাকো আসছি।”
কবীরের পাগল বলাকে একটুও গায়ে মাখলো না উল্লাস।ফোনটা রেখে বরং নরম মনে তোশার উদ্দেশ্যে বলল,
“সখী তোশা,
তুই আমি এক রকম?হুঁ আমি এতো বোকা না।আবার তোর মতোন ভালোও না।তোর সঙ্গে বন্ধুত্ব অদ্ভূত হবে।”
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।কতোদিন পর লিখলাম।সকলে সুন্দর করে রেসপন্স করিয়েন তো।আগামীকাল নতুন পর্ব পাবেন।উল্লাসকে কেমন লাগলো?