চুপিচুপি ভালোবাসি পর্ব ৯

0
934

#চুপিচুপি_ভালোবাসি (পর্ব ০৯)
#আয়েশা_আক্তার
·
·
·
গ্রামের মাটির রাস্তা দিয়ে হেলে দুলে হেটে চলেছে শাম্মী। ওর একটু পেছনে আমি। আমার পেছন পেছন নির্ভীক ভাইও আসছেন। বাড়ি থেকে বের হয়ে উনার সাথে একটা কথাও বলি নি আমি। উনার সাথে কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই আমার। আজ উনার জন্য আব্বু আমাকে অবিশ্বাস করেছে সেটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কিছুদূর যেতেই শাম্মী তার বন্ধুদের পেয়ে গেল। তাই ওর মধ্যে আর আমাদের সাথে যাওয়ার কোন আগ্রহ দেখা গেলো না। ও চলে গেল ওর বন্ধুদের সাথে খেলবে বলে। আমি কোনদিক না তাকিয়ে আপন মনে হেঁটে চলেছি! কিন্তু সেটা আর হলো না। পেছন থেকে হাতে টান পড়লো! হাতটা যে নির্ভীক ভাইয়াই ধরেছেন সেটা বুঝতে বাকি রইল না আমার। রাগে শরীর কাঁপছে আমার। পেছন দিকে ঘুরে হাত মুচরামুচরি করছি। কিন্তু উনি হাত ছাড়ছে না। আজব তো! এভাবে যখন তখন যেখানে সেখানে আমার হাত কেন ধরেন উনি। আর উনার মধ্যে কি কমন সেন্স বলে কোন ব্যাপার নেই। উনি কি ভুলে গিয়েছেন এটা গ্রাম। কেউ দেখলে কি ভাববে!! চরম বিরক্তি নিয়ে উনাকে বললাম,,

–“কি হচ্ছে কি ভাইয়া! আমার হাতটা ছাড়ুন! এভাবে যখন তখন আমার হাত ধরবেন না আপনি। আর আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন এটা গ্রাম। কোন শহর নয়। এখানে একটা ছেলে একটা মেয়ের হাত ধরেছে দেখলে বা শুনলে সবাই কি ভাববে আর বলবে সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই জানেন আপনি!! আপনাদের ছেলেদের উপর তো কেউ আঙুল তুলবে না যা বলবে আমাদের মেয়েদের বলবে। আমাদের উপর চরিত্রহীনা ট্যাগ লাগিয়ে দিতে একবারও ভাববে না কেউ। সাথে আমাদের বাবা-মায়ের দিকেও আঙুল উঠবে। সেটা নিশ্চয়ই আপনি চান না!!”

নির্ভীক ভাইয়া আসেপাশে তাকিয়ে আমার হাত ছেড়ে দিলেন। তারপর বললেন,,

–“চুপ!! এই তোর জন্যেই বারবার এমন করতে হয়। তুই যদি কথা বলতি তাহলেই তো আমি তোর হাত ধরি না। এই কি সমস্যা তোর? কথা বলছিস না কেন? এতো রাগ দেখানোর মানে কি? এমনতো না যে আঙ্কেল তোকে এতো এতো বকাঝকা করেছেন! তাহলে! আর তুই আমাকে নিজের গ্রাম দেখাচ্ছিস নাকি খালি চরকির মতো চক্কর কাটাচ্ছিস? কোথায় কি আছে কিছুই তো বলছিস না..!!”

অসহ্য! যাকে বলে মামা বাড়ির আবদার! আমাদের গ্রামের কোথায় কি আছে সমস্ত‌ই উনার জানা। এর আগে জিহাদ ভাইয়ার সাথে পুরো গ্রাম ঘুরে দেখেছেন উনি। শুধু শুধু আমাকে খাটানোর জন্য এখন এই সব বলেছেন। আমার সাথে এনার কোন জন্মের শত্রুতা আছে কে জানে? কিছু না বলে পেছন দিকে ঘুরতেই খেলাম এক ধাক্কা।বেশ জোরেই লেগেছে ধাক্কাটা। হাত দিয়ে কপাল ডলতে ডলতে সামনে থাকা ব্যাক্তির দিকে তাকালাম। দেখলাম মারুফা কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর দিকে চোখ গরম করে তাকালাম। সেও রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলা শুরু করলো,,

–“ঐ ছেমরি! চোখ কি কপালে নিয়া হাটোস! আজ তোর লাইগা আমার মাথাটা আর একটু হ‌ইলে ফাইটাই যাইত। কোন ধেয়ানে আচিলি যে সামনে এত্ত বড় একখান মাইয়া দাড়ায় আছে সেটা তোর চোহেই পরে নাই!”

শুধু হয়ে গেল এনার ড্রামাবাজি।
–“এক্কেরে থাপরাইয়া মুতায় দিমু বেয়াদব মাইয়া! আমি নাহয় দেখি নাই কিন্তু তুই তো দেখছিলি তাইলে কি তুই ইচ্ছা করে গুতা দিছোস? আমার কপালটা মনে হয় ভাগ হ‌ইয়া গেসে! ঐ তোর মতলবটা কি ছিলো বলতো বোইন! এইভাবে দৌড়ে আসতাছিলিস ক্যান? ব্যাপার কি? তোকে কি পাত্র পক্ষ দেখতে আইছিলো নাকি? পাত্রপক্ষের সামনে না পড়ার জন্য বাড়ি থাইকা পালাচ্ছিলি নাতো?”

–“কিহ! এতো ফাউল কথা ক‌ই পাস তুই?! আমি তো তোকে দেখেই আসতেছিলাম কিন্তু তুই হঠাৎ এইভাবে ঘুরবি সেটা কে জানতো?

আমার পেছনে নির্ভীক ভাইয়া কে দেখে ফিসফিস করে বলল,,
–“নির্ভীক ভাইয়া এখানে কি করতেছে দোস্ত! উনি আমাদের গ্রামে কেন? এই উনি তোর সাথে দেখা করতে আসে নি তো? আর একটা কথা অনেকদিন ধরে ভাবছি জানিস! উনাকে সবসময় তোর আসেপাশে কেন পাওয়া যায় বলতো? ব্যাপার কি??”

এই মাইয়া কোনদিন শোধরাবে না। সবসময় উল্টাপাল্টা কথা না বললে এর পেটের ভাত হজম হয় না মনে হয়। আমি মরি আমার জ্বালায় আর এ আসছে আজাইরা পেচাল পারতে। আমি কিছু বললাম না। উল্টো দিকে ঘুরতেই দেখলাম শাম্মী দৌড়ে আসছে। ও এসেই নির্ভীক ভাইয়ার হাত ধরে টানতে লাগলো। নির্ভীক ভাইয়া শাম্মীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। উনার দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে শাম্মী বলতে লাগলো,,

–“হিরো! তোমাকে আব্বু আর আঙ্কেল ডাকছে। চলো খেয়ে নেবে। অনেক্ষণ ধরেই তো এসেছো! চলো চলো আমার ক্ষুধা পেয়েছে আর তুমি যতক্ষণ না খাবে ততক্ষণ তো আমার ও খাওয়া হবে না। তাই কথা না বাড়িয়ে চলো।”

উনি আর বেশি কিছু না বলে শাম্মীর সাথে চলে গেলেন। আমিও যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম কিন্তু পেছন থেকে মারুফা হাত টেনে ধরলো। উফ আমার হাতটা কি এরা সরকারি প্রপার্টি পেয়েছে নাকি। যখন তখন ধরে ফেলে! আমি ওর দিকে চোখ গরম করে তাকালাম। কিন্তু ওর কোন ভাবান্তর হলো বলে মনে হলো না। ও নির্ভীক ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,

–“ব্যাপার কি বলতো? নির্ভীক ভাইয়া এখানে কেন? আর তোর বোন যেভাবে কথা বলছিলো তাতে তো মনে হয় অনেক দিনের পরিচিত তোরা। কারণ শাম্মী অপরিচিত দের সাথে কথাই বলতে চায় না আর উনার সাথে এতো ফ্রি ভাবে কথা বলল! ঐ কাহিনী কি রে!!”

আমি কিছু না বলে ওর হাত ধরে হাঁটা ধরলাম। এখন ওকে হাজারবার বোঝালেও বুঝবে না। তাই ওকে বোঝানোর বৃথা চেষ্টা করেও কোন লাভ নেই। তার থেকে বাড়িতে নিয়ে গেলেই ভালো হবে। আদভিক আঙ্কেল কে দেখলে ও নিজেই বুঝে যাবে নির্ভীক ভাইয়া কেন এসেছেন। ওর হাত টেনে হাঁটছি আর ও বকবক করেই চলেছে। বল, বল করে মাথা খাচ্ছে। তাই এক ধমক দিয়ে বললাম,
–“বাড়িতে চল নিজেই বুঝে যাবি।”

ওকে নিয়ে বাড়িতে আসলাম। তারপর সকলের ভোজন পর্ব শেষ হলো। এতোক্ষণে মারুফা ওর প্রশ্নের উত্তর গুলো পেয়ে গিয়েছে আর ওর মুখ টা হা হয়ে গিয়েছে। ওর হা য়ের সাইজ দেখে মনে হচ্ছে চার পাঁচ কিলো মাছি অনায়াসে ঢুকে যাবে। এতো অবাক হ‌ওয়ার কি আছে কে জানে।

________________________
বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছি আমি। মারুফা বাড়ি চলে গিয়েছে। ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া বইছে চারিদিকে। বলতে গেলে অনেক সুন্দর পরিবেশ। দুহাত মেলে প্রকৃতিকে অনুভব করতে লাগলাম।

–“দুহাত মেলে প্রকৃতকে অনুভব করা আর বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে এলোমেলো ভাবে উরে চলা মুক্ত চুল আর সামনের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা তুমি যে যেকোনো ছেলের হার্টবিট বাড়িয়ে দেওয়ার কারণ হতে পারো সেটা কি তুমি জানো শ্যামবতী..!!”

হঠাৎ এরকম বাক্য শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলাম আমি। কন্ঠটা চেনা কিন্তু কথাগুলো!! পেছনে তাকিয়ে নির্ভীক ভাইয়া কে আবিষ্কার করলাম আমি। কিন্তু উনি আমাকে এমন কিছু বলবেন? আমি কি ঠিক শুনলাম! আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। আমায় এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালেন উনি।

–“কি! এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”

–“একটু আগে আপনি কি কিছু বললেন?”

উনি কোনরকম ভনিতা না করেই বললেন,
–“আমি আবার কি বলবো! আমি কিছু বলিনি! কেন তুই কিছু শুনেছিস নাকি? ঐ কার চিন্তায় ডুবে আছিস বলতো? আজকাল লক্ষ্য করছি তুই কিসব ভাবছিস আবার এখন তো জানলাম কিছু শুনতেও পাচ্ছিস! প্রেম টেম করছিস না তো! এমন কিছু করার কথা মাথাতেও আনবি না!!”

আমি বাকরুদ্ধ! কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম যে এই লোকটা কখনো ভালো কিছু বলতে পারে না। মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল। নিজেই নিজেকে কয়েক দফা বকে নিলাম। আমি কিছু না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর আমার সামনে আইস্ক্রিম দেখতে পেলাম!😳 আমি কি স্বপ্ন দেখছি!! চোখ ডলে আবার তাকালাম। হ্যাঁ আইস্ক্রিম আছে। কেউ একজন আমার সামনে আইস্ক্রিম টা ধরে আছে। হাত অনুসরণ করে লোকটির দিকে তাকিয়েই দেখলাম নির্ভীক ভাইয়া! উনি বললেন,,

–“সকালে বনুকে এটাই দিয়ে দিয়েছিলি না? নিজের এতো প্রিয় জিনিস টা নিজের বোনকে দিয়ে দিলি! সত্যিই অবাক হয়েছি আমি! তুই তো নিজের প্রিয় জিনিস টা কারোর সাথেই শেয়ার করিস না আমি জানি। তাহলে? ছোট বোন বলেই কি এতো ভালোবাসা? আমি এটাও জানি যে তোর মন খারাপ। নে এখন কিছু না বলে এটা খেয়ে ফেল। আর এটা যে তোর পছন্দের ফ্লেভার সেটা আমি জানি!

আমি রীতিমত অবাক! এটা উনি কিভাবে জানেন? আচ্ছা এই ছোট ছোট কেয়ার গুলোর মানে কি? উনাকে বোঝা সত্যিই বড় দায়। অন্তত আমি তো বুঝতে পারবো না কখনো।

–“কেন দিচ্ছেন এটা আমায়? আমার মন খারাপ থাকলে আপনার কি?”

–“তোর মন খারাপ থাকলে চুপিচুপি আমার মনটাও খারাপ হয়ে যায়।”

–“মানে?”

–“কিছু না। এটা নে! গলে যাচ্ছে তো..!!

🍁

ক্লাসে বসে নিলার সাথে কথা বলছিলাম আমি। কিছুদিন পরেই আমাদের পরীক্ষা শুরু হবে। এতো টেনসন আর নিতে পারছিলাম না আমরা তাই একটু অন্যবিষয় নিয়ে কথা বলছি। খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার নিয়ে কথা বলছে নিলা। জানার কৌতুহল টা বেড়েই চলেছে। ঠিক সেই সময় আমার কৌতূহলে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে কেউ একজন একটা প্যাকেট আমার আমার ডেস্কের উপর রাখলো। হঠাৎ করে এমন হওয়ায় বেশ বিরক্ত হলাম আমি। কে এই হারে বজ্জাত দেখার জন্য ওপর দিকে তাকালাম আমি। আর যাকে দেখলাম তাকে দেখে মুহূর্তেই রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। আমার সামনেই নির্বিকার চিত্তে দাঁড়িয়ে আছেন নির্ভীক ভাইয়া।

–“আপনি এখানে কি করছেন ভাইয়া?”

–“আমার ব‌উকে নিতে এসেছি! পাঁচ মিনিটের মধ্যে গিয়ে কমন রুম থেকে রেডি হয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে আয়।”

–“মানে? কে আপনার ব‌উ? আর আমি কেন আপনার সাথে যাবো? আমি যাবো না।”

উনি ফিসফিস করে বললেন,,
–“কেন তুমি জানো না! তুমিই তো আমার ব‌উ সোনা! (তারপর একটু জোরে বললেন) বেশি কথা না বলে যা বলছি তাই কর। তা নাহলে!!😡

😳 মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে নাকি উনার। আমি আবার উনার ব‌উ হলাম কবে? মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে আমার। প্রচুর রাগ উঠছে উনার উপর।চরম রাগে উনাকে কিছু একটা বলবো তার আগেই উনি বলা শুরু করলেন,

–“যা বলছি তাই কর নাহলে আঙ্কেল কে বলবো তুই কলেজ বাদ দিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাস।” বলেই গডগড করে চলে গেলেন উনি।

আমি আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছি। কি বলে এই ছেলে! আমার ই কলেজে এসে আমাকেই ধমকি দিয়ে গেলো! আবার আমারি বাবাকে আমার সম্পর্কে উল্টো পাল্টা বলবে? একবার ভাবলাম যাবো না দেখি কি করে? আর উনি বললেই আব্বু বিশ্বাস করবে নাকি? আমার আব্বু আমাকেই সবথেকে বেশি বিশ্বাস করে হুহ শয়তান পোলা! আজ আমি ক্লাস করবো! দেখি ঐ নির্ভীক বজ্জাত কি করে? কিন্তু পর মুহূর্তেই কয়েকদিন আগের ঘটনা মনে পড়তেই নেতিয়ে গেলাম আমি। এই ছেলেকে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। আব্বুকে এরকম কিছু বলতে এর কোন রকমের সমস্যা হবে না। আর আব্বু ও এর কথা সুন্দর করে বিশ্বাস করে নিবে। আব্বু উনার কথা এতো বেশি বিশ্বাস করেন যে মাঝে মাঝে মনে হয় উনি আব্বুর একমাত্র ছেলে আর আমরা দুই বোন বানের জলে ভেসে এসেছি। ধুর ভাল্লাগে নাহ!! কি আর করা বাধ্য হয়ে প্যাকেট টা নিয়ে কমন রুমের দিকে পা বাড়ালাম। ক্লাসের সবাই আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। কি সব ভাবছে কে জানে? এমনিতেও উনাকে নিয়ে কম কিছু হয় নি?সবাই নিশ্চয়ই ভাবছে উনি আমার বয়ফ্রেন্ড! কি লজ্জাজনক ব্যাপার! কিন্তু এখন এসব ভাবার সময় নেই। কমন রুমে গিয়ে প্যাকেট টা খুলে দেখলাম একটা সাদা রঙের ফুল স্লিভ গাউন। উপরে গোল্ডেন স্টোনের কাজ করা। সাথে একটা স্কার্ফ। ড্রেস টা বেশ সুন্দর! কলেজ ড্রেস পাল্টে ঐ প্যাকেটে থাকা ড্রেস পরে স্কার্ফটাকে হিজাবের মতো করে পরে বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাইরে আসতেই দেখি বেস্টু মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে অবাক হলাম আমি! ওর ক্লাসরুম তো কমনরুমের উল্টো পাশে। তাহলে ও এখানে কি করছে? আর মুখ কালো করেই বা কেন দাঁড়িয়ে আছে? জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি নির্ভীক ভাইয়ার সাথে আয়াত ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। ওর এভাবে মুখ কালো করে থাকার কারণটা আমার আর বুঝতে বাকি রইল না। ওর সাথেও যে কিছুটা আমার মতো ঘটনাই ঘটেছে সেটা এতোক্ষণে বুঝে গিয়েছি আমি। কি আর করার দুইজন মিলে গাছের দিকে পা বাড়ালাম। ওখানে যেতেই নির্ভীক ভাইয়া আমার সামনে এসে বলল,,

–“বাহ এই ড্রেসটা তো বেশ মানিয়েছে তোকে। পুরো পেত্নী লাগছে। যে দেখবে সেই হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাবে।”

ওনার এই গা জ্বালানো কথাটা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার। রাগের চোটে বলেই বসলাম,,
–“এইরকম করার মানে কি ভাইয়া? আর সবার সামনে এরকম করার মানে কি? ক্লাসের সবাই কি না কি ভাবছে এখন? আমি যাবো না।”

উনি এবার আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে দাড় করিয়ে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বললেন,
–“আমার বউকে আমি নিয়ে এসেছি, তাতে কার শ্বশুরের কি হ্যাঁ? তোকে আমি যখন খুশি যেখানে খুশি নিয়ে যাবো তাতে কেউ কিছু বলবে না। সবাই জানে আমি আমার ব‌উকে নিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমি দারোয়ান কে বলেছি তুই আমার ব‌উ! এখন উনি তো আর জানেন না যে আমাদের সম্পর্ক টা ঠিক কেমন! আর তুই আমার সাথে না গেলে জানিসই আমি কি করবো!(বাঁকা হেসে)”

এতটুকু বলেই উনি একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন।আর আমি বোকার মত দাঁড়িয়ে আছি। এটা কি হলো। এই লোকটা কি কখন আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না! আমি অসহায় মুখ করে আমার বেস্টু মারুফার দিকে তাকালাম। ওর মুখেও অসহায়ত্ব স্পষ্ট। কি ভয়ানক ব্যাপার!! এখন আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কোন ফাঁক ফোকর পেলেই পালাবো।,,,,!!

______________
পুরোনো কথাগুলো করে আনমনেই হেঁসে উঠলাম আমি। কিভাবেই না আমাকে জ্বালিয়ে মারতো এই ছেলে। এখনও জ্বালিয়েই চলেছে। কে জানতো সেদিন মজা করে বলা ব‌উ আজ সত্যি হয়ে যাবে।
·
·
·
চলবে………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here