#কাঞ্জি
#পর্ব-২৭
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
ভালোবাসা মরে যায় না। ঠিক তেমনি অবহেলায় সতেজ ও থাকে না।ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়, যোগাযোগে, আদরে, সোহাগে, অভিমানে জিইয়ে রাখতে হয় ভালোবাসাটা। যে মানুষ এসবের কিছুই বুঝলো না সে ভালোবাসার কি বুঝবে।ভালোবাসা ব্যপারটা একটু অন্যরকম। একবার কাউকে ভালোবেসে ফেললে তাকে ভালোবাসা বাদ দেওয়া যায় না।তবে এক তরফা ভালোবাসাটা সম্পর্ক না থাকলেও চলে।সেই মানুষটা সব সময় পাশে পাশে থাকে। তাকে কেউ দেখতে পায় না।কেবল অনুভব করা যায়। অলীকতায় যে হাসায় আবার প্রেমেও ভাসায়।না আছে ছেড়ে যাওয়ার কোনো ভয় আর না আছে হারাবার কষ্ট। কারণ সে হারিয়েছে ইতিমধ্যে। এখন যে আছে সে তো মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে বসবাস করে। তাকে কেড়ে নেওয়া সহজ হয় না।
ওয়াজিফার কথাগুলো শুনে মাথা নিচু করলো আবৃতি। নিজের প্রতি কেমন একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে।সে নিজেও জানতো তাদের কথা। শাহরিয়ার মানিয়ে নিতে পারতো কিন্তু সে চায়নি আবৃতি না থাকলে হয়তো চাইতো।মেয়ে হিসেবে ওয়াজিফা চমৎকার একজন মানুষ।কেবল শিক্ষিতই নয় এই মেয়েটা গুণবতীও বটে। বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে যে কোনো পুরুষ তাকে পছন্দ করবে অথচ এই মেয়েটা এক পুরুষে আসক্ত ছিল।ছিল? নাহ এখনো আছে। দেখতে দেখতে তিনটে মাস পার হয়ে গেছে আবৃতি এবং শাহরিয়ারের বিয়ের। এই তিন মাসে অনেক রকম ঝামেলা করার চেষ্টা করেছে শাহরিয়ারের মা। আবৃতি যেদিন প্রথম শ্বশুরবাড়ি সকালে নাস্তা বানালো সেদিন ঘুম থেকে উঠেছে বেশ বেলা করে।রাতে না কি চারটে ঘুমের মেডিসিন খেয়েছিল।এটা কেউ খেয়াল করেনি বলে ঘুম থেকে উঠে বেশ রাগারাগি করলো।সে ভেবেছিল তাকে হাসপাতালে নিবে অথচ যখন দেখলো তার কিছুই হয়নি তখন সেই রাগটাও পড়েছিল শাহরিয়ারের বাবার উপর। আড়ালে খিলখিল করে হেসেছিল অদিতি এবং রিমঝিম। তাদের মতে ব্ল্যাকমেইল করতে চাওয়া ভদ্রমহিলা ব্ল্যাক আউট হয়ে গেছে।মরার জন্য তো সে খায়নি। খেয়েছিল ভয় দেখাতে যেটা জেগে থেকেও সে করছিল।
ওয়াজিফার দিকে তাকালো আবৃতি। মেয়েটা অনেক শুকিয়ে গেছে। তীক্ষ্ণ নাকে জ্বলজ্বল করা নাক ফুলটায় শেষ বিকেলের রোদ এসে পড়েছে। এই মেয়েটাকে শাহরিয়ারের পছন্দ কেন ছিল না?
“আপু একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
“হ্যাঁ।”
“আমার প্রতি তোমার অনেক রাগ তাই না?”
“একটা সময় হয়েছিল। জঘন্যতম পরিকল্পনাও করেছিলাম।কিন্তু রিজিক বড়ই অদ্ভুত। শাহরিয়ার আমার রিজিকে নেই।”
“আমি যদি সরে যাই?তোমরা আবার এক হবে?”
আবৃতির কথায় তার দিকে তাকালো ওয়াজিফা। সেই দৃষ্টিতে ছিল বড্ড অভিমান।একটা ঢোক গিলে সে বলল,
“না।”
“কেন?আমিই তো তোমাদের মাঝে চলে এসেছি।”
” আমি যাকে চাইতাম সে অন্যকেউ ছিল।তুমি ছেড়ে দিলে যে আসবে সে অন্যকেউ হবে।তোমার গন্ধ গায়ে মেখে আমার কাছে সে আসবে এটা আমি কেন মেনে নিবো?”
“তুমি তো মুভ অন করতে পারোনি।”
“কে বলে পারিনি?এই যে সবার সাথে হাসছি, অফিস করছি, রান্না করছি। আমি ঠিক আছি।”
“তোমার চোখ মুখ বলে দেয় তুমি ভালো নেই।তোমার শুকনো ঠোঁট বলে দিচ্ছে কতোটা অসহায় তুমি।একমাত্র আমার জন্য।”
“নিজের উপর দোষ টেনে নিও না।আমি তার পছন্দ কখনোই ছিলাম না।যদি থাকতাম তাহলে তৃতীয় ব্যক্তি আসতো না।এখন আমি তোমাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি আবৃতি। আমাকে নিয়ে এসব চিন্তা বাদ দাও।নিজের সংসার করো।স্বামীকে অন্যের হাতে তুলে দিবে এমন কথা বলো না।তোমার মতো সবাই এমন ভাগ্যবতী না।তুমি যা পেয়েছো তার জন্য আমি সারা জীবন আরাধনা অধ্যাবসায় করেও পাইনি।তাই আগলে রেখো।”
” মামী বলছিল বিয়ের প্রস্তাব এলে না করে দিয়েছো তুমি।”
“একদিন বিয়েটাও করে নিবো। সব গুছিয়ে নিবো।”
ওয়াজিফা হয়তো কান্না লুকিয়ে রাখতে পারবে না বলেই ওখান থেকে উঠে চলে গেল।আবৃতি পিছন থেকে দেখতে পেল মেয়েটা বড্ড দ্রুত হাঁটছে। রুমে প্রবেশ করার পূর্বে দুই হাতে একবার চোখ মুখ মুছলো। দীর্ঘ শ্বাস ফেলল আবৃতি।কারণ তার মতো করে হয়তো সে নিজেও কোনো দিন শাহরিয়ারকে ভালোবাসতে পারবে না। বড্ড অভিমান হলো তার। কি হতো যদি এই মেয়েটা তার ভালোবাসাটা পেতো?মেয়েটা হয়তো হাসতে জানতো, তার চোখে মুখে হাসি লেগে থাকতো।এইযে দক্ষিণা বাতাসে আজ মেয়েটার দম বন্ধ হয়ে আসছে সে হয়তো এই বাতাসে অপেক্ষা করতো শাহরিয়ারের জন্য। যেমনটা সে করছে।শাহরিয়ার ফিরলো আরো ঘন্টা দুই পর। যখন মাগরিবের আজান হবে। আজ তারা ওয়াজিফাদের গ্রামের বাড়ি এসেছে। নতুন বৌয়ের সবাই প্রশংসা করছে।কিন্তু অদ্ভুত বিষয়, ওয়াজিফা আশেপাশে এলেই প্রশংসার পরিমান বেড়ে যাচ্ছে। আবৃতি শাহরিয়ারকে নিয়ে তামাশার ছলে এডাল্ট কথার ঈঙ্গিত দিচ্ছে।ওয়াজিফা চাইলে রিয়্যাক্ট করতে পারতো। সবার সামনে আবৃতিকে ছোটো করতে পারতো কিন্তু মেয়েটা মাথা নিচু করে কেবল মাটির চুলোয় রান্নাটা করে গেল। রান্না শেষ হতেই আবৃতি দেখতে পেল তার দুই চোখ লাল হয়ে আছে। একজন এটা নিয়ে তামাশা করে বলল,
“শাহরিয়ার বউ নিয়ে আসছে তাই কান্না করে চোখ মুখ লাল করে ফেলছো কান্না করে?”
বোকার মতো হাসলো ওয়াজিফা। তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওয়াজিফার মা জবাব দিলো,
“না চাচী।সারা বছর গ্যাসে রান্না করে তো।এখানে এসে মাটির চুলোতে একটু সমস্যা হয় আর কি।”
মেয়েকে হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলেন ভদ্রমহিলা। দরজা আটকে দিয়ে সে মায়ের বুকে আছড়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“মা আমার দম বন্ধ লাগতেছে। মা আমার বুকের ভিতর এমন কেন লাগতেছে?”
চলবে( এডিট ছাড়া। আমরা সবাই কারোর না কারোর জীবন গল্পে খল চরিত্র।অথচ এই খল চরিত্রগুলো তৈরী হয় আমাদের কারণেই। যারা গল্প পড়েন রেসপন্স করবেন। এখন কিন্তু নিয়মিত দিচ্ছি)
#ছবিয়াল: ankita