#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“মেয়েদের লাজুকলতা হওয়া উচিত।যাকে ছুঁয়ে দেওয়ার পূর্বেই কুঁকড়ে যাবে।এটা কোন ধরণের বিহেভিয়ার মেয়ে?”
কবীর বড্ড ঠান্ডা মাথায় কথা বলছে।এই যুবতী মেয়েটিকে সামলাতে গিয়ে যে নাকানিচুবানি খাচ্ছে সে তার ব্যাখা হয়না।তোশা আস্তে করে কবীরের বুকে মাথা রেখে বলল,
“সুগার গার্ল তারা হয় যারা সহজ বাংলায় বে শ্যা।আমি কী তাই?কেন এমন কথা শুনতে হয়?আপনাকে তো অন্যায়ভাবে চাইনি।শুধু আপনি আমার বাবা-মায়ের বন্ধু তার সাথে সম্পর্ক রাখায় আমি টাকার বিনিময়ে নিজেকে বি ক্রি করা মেয়েদের সমতুল্য হয়ে গেলাম?সমবয়সী থেকে আজকাল যারা বিয়ের আগে সব করে ফেলছে তাও বাদ যারা বান্ধুবীদের সাথে কথা বলার রাখঢাক রাখেনা।খারাপ ভাষায় গালি দেয়।উদ্ভট পোশাক পরে তারা সকলে পিওর?একমাত্র আপনাকে ভালোবাসায় এসব শুনতে কেন হবে?আমি আপনি কবে কোথায় নোংরামি করেছি?আজ তাই সেটা করে ফেললাম।কারণ আমি তো সুগার গার্ল।”
কবীরের তামাটে বর্ণের কপালে রেখার উদয় ঘটলো।প্রচন্ড বিতৃষ্ণা নিয়ে শুধালো,
“কথা গুলো কে বলেছে?”
“বৃষ্টি।এসব শুনতে হবে দেখে আমাকে পাত্তা দেননি তাইনা?”
“কান্না থামাও।এদিকে এসো।”
বুক থেকে তোশার মাথাটা উঠিয়ে আজলায় তুলে নিলো কবীর।কী মায়াময় মুখখানি।অশ্রুতে সিক্ত হওয়ায় বৃষ্টিতে ভেজা ফুলের মতোন লাগছে।কবীর শক্ত লম্বা আঙুলগুলো তোশার অশ্রু দ্বারা ভিজিয়ে নিয়ে তাকে টেনে ভেতরের বিছানায় বসালো।সে কিন্তু মেয়েটির পাশে বসলো না।বরং মেঝেতে বসে হাত দুটো মুঠোতে ভরে নিলো।
“আমি কিছু কথা বলবো তোশা।মনোযোগ দিয়ে শুনবে।কান্নাটা থামাও আগে।”
“বলেন।”
“তুমি কোন ক্লাস থেকে পছন্দ করো আমাকে?ক্লাস নাইন?আমিও কিন্তু ঠিক সেসময় থেকে তোমাকে পছন্দ করা শুরু করি।ফলস্বরুপ ইগ্নোর করা,বকা দেওয়া, পাত্তা না দেওয়া।যখন দেখা হলো তোমার সাথে তখন আমি ভীষণ একাকিত্বে ভুগছিলাম।দিশার সাথে বিচ্ছেদের কথাটা আমার থেকে উঠেছিল না প্রথমে।বরং সে চেয়েছিল আমরা আলাদা হয়ে যাই।কারণটা খুব সাধারণ।আজকে জীবনে যা আছে তা পাওয়ার আগে খুব স্ট্রাগল করতে হয়েছে।দিশার বক্তব্য ছিল সেসবের জন্য কষ্ট করতে করতে আমার ও ছেলের প্রতি মায়া তার নেই।আহনাফের যখন বয়স আরো কম তখন দিশার সঙ্গে দেখা করতে গেলে খারাপ ব্যবহার করতো।আমিও পরে শক্ত হয়ে কোর্ট থেকে পারমিশন নিয়ে রাখি যাতে দিশা আহনাফের কাছে এলে যেকোনো স্টেপ নিতে পারি বা না আসতে পারে।এইযে ঝামেলা এতে হলো কী?আমরা বাবা-ছেলে একা হয়ে গেলাম।আর যখন মানুষ একা থাকে তখন ভালো কারো সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।আমি কখনো ভাবিনি যে মেয়েটি জন্মের সময় আমি পরিপূর্ণ যুবক সেই বাচ্চাটা আমাকে ভালোবাসার কথা আবেদন করবে।এটা ভাবনার বাহিরে ছিল।তোমার অনুভূতিকে অল্প বয়সী আবেগ,স্বপ্ন,বাচ্চামো কতোকিছুর নাম দিয়েছি।বন্ধুর মেয়েকে ভালোবাসবো?বিয়ে করবো?কী হীন কাজ।পরে মনে হলো তোমাকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় দিকে বাঁধা নেই।সম্পর্কে জড়ানো যায়।কিন্তু সমাজ?”
“সমাজের জন্য আজকে আমার শুনতে হচ্ছে কবীর শাহ।এমন কেন সবাই?”
“এই বোকা মেয়ে কেঁদো না।আমার কথাগুলো শুনো।তোমাকে আমার বিছানায় নিয়ে যাওয়া এক দুই সেকেন্ডের ব্যাপার।এটা কী জানো?প্রচন্ড আবেগী তুমি।ক্লাস নাইনে থাকতে দূরে সরানোর জন্য আমাকে বিয়ে করতে বললাম।তুমি রাজী হলে না প্রথমে।কিন্তু দুই রাত পরেই মেনে নিতে সেটা জানো?”
“কবীর শাহ।”
“থামো।কথাটা মিথ্যা নয়।এরপর যুবতী হয়েছো।নিজের মধ্যে পরিবর্তন পেয়েছো অনেক।কিন্তু আমাকে মস্তিস্ক থেকে সরাতে পারলে না।অদ্ভূতভাবে আমিও না।শেষে বুঝে গেলাম যেমন হোক আমি তোমাকে ভালোবাসি।স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চায় মন। পুরুষদের মন কিন্তু অনেক জটিল হয়।সহজে কাওকে সারাজীবন পাওয়ার মতোন মানসিকতা রাখেনা।আজকাল বছরের পর বছর সম্পর্ক থাকার পর ভেঙে যায়।সেখানে আমার তোমাকে ছাড়ার কোনো ইচ্ছা নেই।ইনফ্যাক্ট থাকবেও বা কেন?তুমি আমার জীবনে দ্বিতীয় নারী তোশামণি।এবং শেষ নারীও।যাকে মলিন হৃদয়ে কখনো স্পর্শ করিনি।চাইনি।”
তোশার মনে একরাশ সুখ দোলা দিয়ে গেলো।শুভ্র মুখটায় লজ্জারা হানা দিয়ে বসলো।অধরযুগল বিস্তৃত করে বলল,
“আপনার মুখে প্রেমের কথা মানায় না কবীর শাহ।আপনি গম্ভীর,অহংকারী হয়ে ঘুরবেন।ইগ্নোর করবেন এটাই শান্তির।”
“ভেবে বলছো তো?এখন থেকে আরো বেশী করে ইগ্নোর করবো।”
তোশার চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে গেলো।মুখ ভেঙিয়ে বলল,
“করে দেখেন।কেঁদে ফেলবো।”
“তাই?”
“হ্যাঁ।এতো কাঁদলে আমাদের বিয়েতে কী কাঁদবো?”
কথাটি বলেই তোশার মুখটি মলিন হয়ে উঠলো।কবীর নিজের কথাগুলো সম্পূর্ণ করার নিমিত্তে বলল,
“পৃথিবীতে কে না ভালোবাসাকে চায় বলো?যে নারীকে স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করা সম্ভব।তার উপর ভালোবাসি তাকে পেতে কেন চাইবো না আমি?ভালোবাসা পেতে এই কবীর শাহ ও চায়।ধরে নিলাম তোমার অল্প বয়সী চিন্তা ভাবনা।আমার তো না।একজনকে হারিয়ে কেন সারাজীবন কষ্ট পাবো?আমি পিওর ব্যবসায়ী।দুঃখের সঙ্গে ডিল করলে প্রোফিট আসবেনা।এখন আসি যারা কোনোকিছুকে বিকৃত করে।ধরো এক জায়গায় ক আছে আমি খ বলে খুব মজা নিলাম।নিজের আত্নাকে তৃপ্ত করলাম।কিন্তু আদৌতে খ হবে বিষয়টা?তাহলে মিথ্যা প্রচার হলো না?তেমন হোক টাকার লোভী অথবা মানুষ দেহ লোভী। অসম বয়সের কারো সম্পর্ক বা বিয়ে হলে কেন মানুষ মেনে নিতে পারেনা?শেষে সম্পর্কতে তারা থাকবে তো।কিন্তু কারো কারো মন্তব্যে মনে হয় বিয়েটা সারা দেশকে নিয়ে করছে।সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু কাপল আছে যারা এমন অসম বয়সী।তারা বেশ ফেমাস।তাদের পোস্টের কমেন্ট বক্সে ঢুকলে মনে তারা বিয়ে করে অন্যায় করে ফেলেছে।আর সবথেকে মজার ব্যাপার কী জানো?মেয়েদের এতো বাজে বাজে মন্তব্য করে মোট কথা তাদের এইযে প্রস্টিটিউট লেভেলে নিয়ে যেতেও মুখে আঁটকায় না।এইযে মন্তব্যকারী মানুষরা তারা আসলে কী চায়?আমার বুঝে আসেনা।এবং কতোটা যে ফ্রাস্টেটেড নিজেদের লাইফে।কারো বিন্দুমাত্র কিছু দেখলে হোক ভালো মন্দ।রঙ মিশিয়ে মজা নিবে।বাকস্বাধীনতার সর্বোচ্চ খারাপ উপায়ে ব্যবহার করে এমন ভাব করবে শেষে I am the purest person in the world. এদের মন মতো না হলে তোমার বিপদ।সেসব কথা যাক।তুমি-আমি দুজনকে পছন্দ করি পাওয়ার অধিকার রাখি।আর কে না চায় ভালোবাসার মানুষকে পেতে?ভবিষ্যতে গিয়ে এমন মন্তব্য বহু পাবে।আড়ালে হাসবে মানুষ।কিন্তু শেষটায় আমি থাকবো তোমার সাথে।আমার চোখে বিশুদ্ধ নারী তুমি।কেঁদো না।বৃষ্টির সঙ্গে কথা বলবো আমি।কিন্তু মাথায় রাখবে আমরা সবাইকে জবাব দিতে গেলে কিংবা যারা ঘটনা বিকৃত করে মজা নিতে পিছপা হয়না তাদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হলে তাদের মতোন ভাষা আর মানসিকতা হতে হবে।সমান সমান লড়াই যে।আর ধরে নাও না পজেটিভ বিষয়।সুগার মানে চিনি আর গার্ল মানে মেয়ে।তুমি মিষ্টি মেয়ে তোশা।”
উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো তোশা।কতোটা না নিখুঁতভাবে তার মনের ঝড়টা থামিয়ে দিলো এইযে তার বাবার বন্ধু।উহু,তোশার কবীর শাহ।যাকে সে ভালোবাসে।সমাজের নিয়ম অতিক্রম করে কামনা করে।এবং সবসময় করবে।
“বুঝেছি আপনার সব কথা।সত্যিই যে সমাজে পাপ করে ফিরে এসে নতুন জীবনযাপন করা দায় কি’বা ধ’র্ষ’ক নয় ধ’র্ষি’তা’র শুনতে হয় সেটাকে তোয়াক্কা করা নিজেকে কষ্ট দেওয়ার সমান।”
“তবে এভাবে আঙকেল আন্টি ডেকো না আম্মু-আব্বুকে আড়ালে হলেও।ভবিষ্যতের বিষয় পরে।কেমন বুঝলে?আর অন্যায় কিছুও করবেনা।যা একটু আগে করলে।But…
কবীর নিজ প্রাণের নিকটবর্তী হলো।ফিসফিস করে বলল,
“কিছু বলতাম।থাক না বলি।”
তোশা কথাটি বাড়ালো না।কবীরের কণ্ঠে কিছু একটা ছিল।সে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আসছি আমি।”
“যাও।আমার খুদা লেগেছে অনেক।মাকে বলো তো খাবার উপরে পাঠাতে।”
“তবে আপনি আনরোমান্টিক লোক।কিন্তু নীতিবান।”
“এতো প্রশংসা করো না মেয়ে।পরে ভুল গুলো বড় হয়ে নজরে আসবে।”
কবীরের হাসিমাখা মুখটা দেখে একরাশ শান্তি পেলো তোশা।মনটা শান্ত করে বের হয়ে গেলো।তোশা যাওয়ার মিনিট খানেক বাদে লে তাহিয়া রুমের বাহির থেকে ভেতরে আসার অনুমতি চাইলো।নিজেকে গুছিয়ে কবীর বলল,
“সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছি আমি তাহিয়া।হঠাৎ এখানে?”
“আন্টি আসতে বলল।তোমার বিয়ে নিয়ে কথা বলবে।”
“তুমি ভীষণ বা জে ঘটক তাহিয়া।গতবার মোটামুটির সংসার দেখিয়েছো।”
কথাটি হজম করে তাহিয়া শুধালো,
“কী ব্যাপার কবীর?ভীষণ খুশি লাগছে তোমাকে।তোশা কী এসেছিল এখানে?”
মিথ্যা কবীর বলতে চায়না।তাই সত্যিটা বলল।তবে সাধারণভাবে।
“এসেছিল।কেবল বের হলো।”
“ইদানীং ভীষণ অবুঝ হয়ে যাচ্ছে তোশামণি।”
“কেউ কেউ অবুঝ হওয়া ভালো।পৃথিবীর সকলে বুঝদার হলে সবটা যান্ত্রিকতায় রুপ নিবে।তোশা না হয় সারাজীবন অবুঝ ফুল হয়ে থাকলো।”
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সর্বোচ্চ রেসপন্স করবেন পাঠকেরা।আমি দাঁতে দাঁত পি ষে আপনাদের জন্যই লিখছি।সেক্ষেত্রে আপনাদের ভালোবাসা আমার দেওয়া জবাব হবে।