#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“তুমি স্বপ্ন নও তোশামণি।বাস্তবে এসেছো।রাত কয়টা বাজে এখন?”
“বিশ্বাস করুন কবীর শাহ আমি স্বপ্ন।এখন রাত দুটো বাজে।”
মিষ্টি কণ্ঠে মিথ্যাটি হজম করেনি কবীর।বরং হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো।ঘড়িতে এখন দুপুর দুটো বাজে।অনেকদিন পর লম্বা একটা ঘুম দিয়েছিলো সে।হুট করে ঘুমের ঘোরে খেয়াল করলো আস্তে করে কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।দৃষ্টি পরিষ্কারর হওয়ার পর বোধগম্য হলো এটা আর কেউ নয় সেই দুষ্ট মেয়েটা।
“দুপুর বেলা এখানে কেন?কাল রাতে যখন বললাম দেখা করো তখন তো খুব বললে শ্যুটিং আছে।”
“আপনার কী মনে নেই যে আর দুটো দিন মাত্র শ্যুটিং হবে।”
ঘুম ঘুম জড়ানো কণ্ঠে কবীর হাই তুলে বলল,
“যাক বাঁচলাম।তবে আমাকে নিজের মতোন এতোটাও গ’র্দ’ভ পেও না যে বাস্তবকে স্বপ্ন ভাববো।সকলের নজর অতিক্রম করে রুমে এলে কীভাবে?”
তোশা লাল লিপস্টিক আভায় জড়ানো অধরযুগল প্রসারিত করলো।মসৃণ চুলগুলো অকারণে সুগঠিত করে বলল,
“হুঁ।আমি লুকিয়ে আসবো কেন?ভয় পাই নাকী?বরং মাথা উঁচু করে এসেছি।তারপর আন্টি ঠান্ডা ঠান্ডা সেমাই নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে।”
“আন্টি কে?”
“আরে আপনার মা।”
কবীরের মনে পড়লো তোশা তার বাবাকে আঙকেল বলে আর মা কে আন্টি।অলস ভঙিতে উঠে বসলো সে।অবিন্যস্ত অবস্থায় তামাটে পুরুষটির রুপ যেন আরো কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।চোখটা ডলে চশমা পরে নিলো কবীর।প্রথম বার এই রুপটা দেখে তোশা আনমনে নিজেকে নিচু সুরে বলল,
“এতো সুন্দর লোকটাকে তুই পটিয়ে নিলি কীভাবে তোশা মেয়ে।”
“তোশামণি?”
চমক ভাঙলো মেয়েটির।থেমে যাওয়া কথাটি পুরো করে বলল,
“আরো শুনেন আঙকেলের সাথে দাবা খেলেও এসেছি।পরে আহনাফ এখানে নিয়ে এলো।ভাববেন না আপনার সাথে দেখা করতে সেই সকাল দশটা থেকে অপেক্ষা করছি।”
“জি লিটল ডেভিল চেরি।আপনি তো আমার সাথে দেখা করতে আসতেই পারেন না।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি?তারপর সব কথা বলবো।আর শুনো সকলের সামনে আম্মু, আব্বুকে আঙকেল /আন্টি বলে ডেকো না।”
“ঠিক আছে।”
তোশা চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রুমটা দেখছে।ওয়াশরুমের দরজা অবধি গিয়ে কী একটা ভেবে ফিরে এলো কবীর।তোশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পুনরায় চলে গেলো।এরকম করার কারণটা জিজ্ঞেস করার সুযোগটুকুও দিলো না।
(***)
কবীরের মা বৃদ্ধা হলে কী হবে?রান্নাবান্নায় বেশ সৌখিন মানুষ।তার বড় বউ মুমতাহিমা সে শ্বাশুড়ীর এই বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে।তাহিয়ার কাছে এই পরিবারটিকে আগে থেকেই ভীষণ ভালো লাগে।ছোটখাটো এবং লোভ হি ং সা বির্বজিত।
“তাহিয়া, তোমার মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি তো দেখতে।অনেক বিয়ের প্রপোজাল পাও নিশ্চয় বুঝি?”
“একদম ভাবী।এসএসসি পাশ করার পর থেকে এমনটা হয়ে আসছে।”
“আগেই বিয়ে দিওনা কিন্তু।দেখবে সোনার ছেলে পাবে।তা কাওকে পছন্দ আছে মেয়ের?”
“সেরকম নেই।”
“তোমরা এসেছো দেখে ভীষণ ভালো লাগলো।সারাদিন একা থাকি তো।তাছাড়া তোশার সাথে আলাপটা হয়ে উঠেনি।সেদিন অল্প সময়ের জন্য দেখলাম।কী যে কান্না মেয়েটির।”
মুমতাহিমা হালকা সুরে হেসে ফেললো।তাহিয়া বিষয়টিতে একটু বিব্রতবোধ করলো।কথাবার্তা মসৃণ করার উদ্দেশ্যে বলল,
“বৃষ্টিও দেখতে মিষ্টি।যদি সম্ভব হয় তবে আমাদের কল্লোলকে দিয়ে নিবো।”
“কল্লোল?বিষয়টা ম’ন্দ হবেনা।ছেলেটা ভালো বুদ্ধিদীপ্ত।কিন্তু একবার যে শুনেছিলাম তোশাকে নিতে চায় তোমার ভাবী।”
“ওদের বিয়েটা ঠিক হবে বলে আমার মনে হয়না।তাছাড়া তোশা কল্লোলকে ভাই/বন্ধু ব্যতীত অন্য চোখে দেখতে নারাজ।”
“হুম বুঝলাম।এমন আবেদন যদি সত্যিই তোমার ভাই-ভাবীর থেকে আসে তাহলে অন্তত আমার কোনো আপত্তি থাকবেনা।”
“দেখা যাক।”
তাহিয়া ও মুমতাহিমা নানা রকমের আলাপ করতে লাগলো।কিন্তু কেউ একবারও খেয়াল করেনি দরজায় দাঁড়িয়ে সমস্ত কথা বৃষ্টি শুনেছে।যাকে পছন্দ করে তাকে পরিবারও পছন্দ করে এমন খুশি সব মেয়ের ভাগ্যে জুটেনা।মন প্রাণ জুড়িয়ে গেলো তার।খুশিমনে নিজের বান্ধুবীদের সাথে বিষয়টা আলাপ করতে যাবে তখুনি সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকা তোশার প্রতি নজর পড়লো।বৃষ্টির মনের ভেতর শব্দ করে মেঘ ডেকে উঠলো।নিজের ভেতরকার আ ক্রো শ দমন করতে না পেরে তোশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
“কী বৃষ্টি পড়াশোনার কী খবর?”
“তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে আমার তোশা।”
“কী কথা?”
“এসো আমার সঙ্গে।”
অনেকটা বলপূর্বক তোশাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি।নিজের রুমে এসে দরজাটা চাপিয়ে তোশাকে সামনে দাঁড়া করালো।
“চাচুর সাথে তোমার সম্পর্কটা শেষ করে দিবে আজ এবং এখুনি।লজ্জা করেনা মুখ উঠিয়ে এই বাড়ীতে আসতে।”
তোশার শুভ্র কপাল কুঞ্চিত হলো।গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে বলল,
“কী বলতে চাও?”
“আমি কল্লোল ভাইয়াকে পছন্দ করি ধরে নাও ভালোবাসি।মা আর তাহিয়া আন্টি তার সাথে বিয়ে নিয়ে আলাপ করছে।”
“এটা তো ভালো কথা।”
“হতো যদি তুমি না পরগাছা হতে।”
“কী?আমি পরগাছা?”
“হ্যাঁ তাই।যখন চাচুর সাথে তোমার সম্পর্কের কথা চলবে আমি হলফ করে বলতে পারি কেউ কল্লোল ভাইয়ার সাথে আমার বিয়েটা মানবেনা।ফুফাতো বোন হয়ে যাবে মামী শ্বাশুড়ী।কতোটা ডিজগাস্টিং ব্যাপার।যদিও সেই অবধি যাবে কীনা তোমাদের কিছু সন্দেহ।”
বৃষ্টির কথায় মুখের রঙ বির্বণ হতে লাগলো তোশার।নিজের চিরপরিচিত বাচ্চাসুলভ কথাগুলোর বাহিরে গিয়ে শুধালো,
“তুমি কে?”
“আমি কে জানো না?”
“জানি।কিন্তু আমাদের সম্পর্ক থাকবে কী থাকবে না সেই বিষয়ে তুমি বলার কে?কতোটা অধিকার দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে তোমাকে?”
“আমি চাচুর খুব আদরের।ছোট থেকে তার মেয়ের অভাব পূরণ করেছি।”
“বেশ।সেই সম্পর্ক এক জায়গায় আর আমি এক জায়গায়।নিজের পছন্দের জন্য সব শেষ করতে বলতে পারো।অথচ আমি কেন করবো এমনটা?আমি তাকে ভালোবাসিনা?কিংবা সে?”
“তোমাদেরটা নো ং রা।”
হুট করে তোশার বড় রাগ উঠে গেলো।এই একটা শব্দ সে আর নিতে পারছেনা।
“মুখ সামলে কথা বলো বৃষ্টি।তা নয় ফল ভালো হবেনা।”
“বাহ?ন্যাকা সাজা মেয়েটি হু’ম’কিও দিতে জানে?দারুণ তো।”
বৃষ্টির কণ্ঠে বিদ্রুপ মিশে আছে।তোশা কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে পুনরায় বৃষ্টি বলল,
“তুমি যে সু’গা’র গা’র্ল সেটা কিন্তু দেখেই বোঝা যায়।সুন্দর চেহারার ভালো ফায়দা নিতে জানো।”
“বৃষ্টি আর একটা কথা বললে মে রে ফেলবো।”
মুমতাহিমার এহেন হুমকিতে দুটো মেয়েই কেঁপে উঠলো।বৃষ্টি মনোবল না হারিয়ে বলল,
“মা জানো চাচু কতোটা অন্যায় করছে।সে..।”
কথাটি সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই বৃষ্টির গালে চ ড় বসিয়ে দিলো মুমতাহিমা।সে কখন এসেছে কেউ খেয়াল করেনি।
“মা তুমি।”
“তোশা নিচে তোমার মায়ের কাছে যাও।বৃষ্টির কথা শুনতে হবেনা।”
থমথমে মুখে তোশা জবাব দিলো,
“জি ভাবী।”
মুমতাহিমা আশ্চর্য হয়ে গেলো।সকলের সামনে যে মেয়েটা তাকে আন্টি ডেকেছে আড়ালে সম্বোধন বদলে গেলো।তোশা চলে গেলে বৃষ্টির গালে আরো একবার হাত চালিয়ে নিলো মুমতাহিমা।
(***)
অসময়ে কাক ডাকছে।কবীর সেই ছোটবেলা থেকে কাকের ডাক পছন্দ করেনা।কেমন যেন গা কেঁপে বিরক্তি ছড়িয়ে পড়ে শরীরে।গোসল করে বারান্দায় এসে সবেমাত্র দাঁড়িয়েছে সে।দুপুর দুটো অবধি ঘুমানোর আশ্চর্য এক ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেয় সব পুরুষ।কবীরও ব্যতিক্রম নয়।একবার কলেজে থাকতে সে বিকেল পাঁচটা অবধি ঘুমিয়েছিল।ব্যস ওমনি পরিবারের মানুষ ভেবে নিলো ঘুমের ঔষধ খেয়েছে ছেলেটা।ডাকাডাকিতে সাড়া দিচ্ছিলো না যে এজন্য।পরে কবীরের মামা এসে দুই বালতি পানি ঢেলে জাগিয়েছিল।এবং মে রে ছিল ও খুব।অতীত মনে হতেই কবীর হেসে ফেললো।সবেমাত্র যৌবনপ্রাপ্ত সময়গুলো কতোটা না মধুর ছিল।হুট করে দরজা খোলার শব্দ হলো।তোশা জোরে জোরে পা ফেলে কবীরের সামনে এসে দাঁড়ালো।মেয়েটা রেগে আছে।দেখতে কৃষ্ণচূড়ার মতোন স্নিগ্ধ লাগছে।
“কী ব্যাপার তোশামণি?এতো রেগে কেন?”
তোশা কথায় জবাব দিলো না।পাশে বেতের চেয়ারে দাঁড়িয়ে নিলো।লম্বায় খাটো হওয়ায় পাছে কার্যসিদ্ধি না হয়। কবীরের টি-শার্টের কলার ধরে কাছে টেনে আনলো।আশেপাশে অবশ্য তোয়াক্কা করলো না।মুহূর্তেই তোশা জীবনে অন্যতম চাওয়া ট্রু লাভ’স কিসটা আদায় করে নিলো।তবে তা ক্ষণ মুহুর্তের জন্য।কবীর ঠোঁটে ভেজা ভাব নিয়ে এখনও বোঝার চেষ্টায় আছে ঠিক কী হলো?
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সর্বোচ্চ রেসপন্স করবেন পাঠক।
আর যারা সমালোচনা করবেন তারা জুন মাসে করিয়েন।আমার আট তারিখ থেকে পরীক্ষা।হ্যাঁ অনেকে যারা ক্লিয়ার বুঝতে পারেননি তাদের জন্য।তোশা নিজ থেকে কবীরকে চুম্বন করেছে।সাহসী পদক্ষেপটার কারণ কী হতে পারে বলে মনে হয়?