কেন আমি ডাকি তারে- পর্ব ৩

0
819

কেন আমি ডাকি তারে-৩

অফিস থেকে বের হয়ে রেহান সায়রার সাথে দেখা করবে বলে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে। সায়রা আসতে দেরী করছে। রেহান বসে বসে নিতুর ফেসবুক প্রোফাইল স্টক করতে শুরু করল। মেয়েটা ভীষণ সুন্দর। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সৌন্দর্যটা মুখ্য বিষয় নয়, সায়রা অনেক আপডেটেড৷ ফ্যাশনেবল। নিতু তেমন নয়।
এটা ভাবতেই রেহানের মনে হলো৷ সে কেন নিতুর সাথে সায়রার তুলনা করছে। নিতু আপাতত তার স্ত্রী হলেও এটা একটা টাইম পিরিয়ডের জন্য ডিল ছাড়া আর কিছুই নয়৷ রেহান সায়রাকেই ভালোবাসে।

সায়রা এলো প্রায় এক ঘন্টা দেরী করে।
কি খবর? খুব ভালো চলছে দিনকাল?

সায়রার বাঁকা করে বলা কথা রেহানের বুঝতে অসুবিধা হয় না।

এভাবে কেন বলছ? তুমি তো জানো, আমার পক্ষে মা কে ইগনোর করা সম্ভব না। বাবা মারা যাওয়ার পরে মা যেভাবে স্ট্রাগল করে আমাকে আগলে রেখেছেন, আমি তাকে কষ্ট দিতে পারব না।
বাট আই লাভ ইউ সায়রা, আমি তোমাকেও ছাড়তে পারব না।এই কৌশল করা ছাড়া আর কিছুই মাথায় এলো না। আর নিতুরও তো ফিয়ান্সে আছে।

সায়রা কিছু না বলে এদিক ওদিকে তাকালো। সত্যি বলতে রেহানের সাথে তার এ্যাফেয়ার প্রায় বছর দুই চলছে, বিয়েও করত, রেহান ভালো জব করে, অনেক টাকা পয়সাও খরচ করে। সায়রা বলতে গেলে রেহানের উপরই চলছে, দামী হ্যান্ডসেট সহ, জামাকাপড়, কসমেটিকস সবই রেহানের দেওয়া। একটু বোকা আছে ছেলেটা, মিষ্টি করে কথা বললেই খুশি! একটা চুমু খেলে তো আর কথাই নেই! একে বিয়ে করে ইচ্ছে মত চলাফেরা করলেও কিছু বলবে না। সায়রার অনেক ফ্রেন্ডস, সবার সাথে ডে নাইট আউটিংয়েও রেহান কিছু মনে করে নি। সায়রার আরো দুয়েকজন জাস্ট ফ্রেন্ড আছে৷ তারাও সায়রার লাইফস্টাইল মেইনটেইন করতে হেল্প করে৷ এগুলো অবশ্য রেহান জানে না।

সায়রা হঠাৎ বলল, রেহান, তুমি যাকেই বিয়ে করো৷ আমার তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। আমি তোমাকে ভালোবাসি।

রেহান খুশি হয়ে সায়রার হাতটা চেপে ধরল। সায়রা বলল, লুক, নেইলগুলো ভালো লাগছে না? নিউ আর্ট করিয়েছি!

হ্যা, ভীষণ সুন্দর!

ইউ নো বেবি, একটা ডায়মন্ড রিং খুব মানাবে।

রেহান বলল, চলো, আজই নিই!

রিয়েলি, সায়রার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল।

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে ঢুকে রেহান আর সায়রা রিং দেখতে লাগল৷ সায়রা পছন্দ করে নিলো একটা। দেখতে দেখতে রেহানের পছন্দ হলো আরেকটা। রেহান দুটোই নিলো।

সায়রা জিজ্ঞেস করল, এটা কার জন্য নিলে? বউ?

রেহান বলল, পছন্দ হলো, তাই নিলাম। দেখা যাক, মাকেও দিতে পারি।

সায়রা নিজের পছন্দ মত আংটি কিনেই খুশি। ডিনার করতে ঢোকা হলো না৷ সায়রার ফিরতে হলো।

আসলে পাভেলদের গ্রুপের সাথে মাওয়া যাওয়ার কথা। ওখানে একটা রিসোর্টে নাইট আউট করবে। তাই একটু দেরী হয়েছে আসতে। এটা রেহানকে বলার প্রয়োজন নেই। সায়রা চলে গেল। রেহান বাসায় ফিরে এলো।

রেহানের জন্য সবাই অপেক্ষা করছিল। নিতু একটু তাড়াতাড়ি ডিনার শেষ করল, তুহিন কল দিবে।

রুমে ঢুকে রেহান বলল, এত তাড়াতাড়ি ডিনার শেষ করলে, ঠিক মত তো খাওয়া হলো না।

নিতু বলল, অসুবিধা নেই।

হোয়াটসঅ্যাপে কল ঢুকছে দেখে নিতু সাইলেন্ট করল। ইচ্ছে করছে না রেহানের সামনে কথা বলতে।

রেহান বলল, বুঝেছি কিসের তাড়া। কিন্তু খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে কথা বললে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।
আর আমি বাইরে যাচ্ছি। তুমি কথা বলো।

নিতু বলল, না ঠিক আছে, আপনি থাকুন, আমি ম্যানেজ করছি।

কানে ইয়ার ফোন গুঁজে নিতু ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসল। রেহান ডিভানে শুয়ে আঁড়চোখে নিতুকে দেখতে লাগল।

নিতু মাঝে মাঝে হাসছে, ওপাশ থেকে কি বলছে কিছু শোনা যাচ্ছে না। প্রায় আধঘন্টা পরে কথা শেষ হতে হতে রেহান ঘুমিয়ে পড়ল।

নিতু উঠে দেখল, রেহান খুব এলোপাতাড়ি ভাবে শুয়েছে, মনে হচ্ছে ঘাড়ে কষ্ট হচ্ছে।

নিতু কাছে গিয়ে ডেকে বলল, শুনছেন?

রেহান ধরফর করে উঠে বসল৷ কি হয়েছে?

আপনি বিছানায় আসুন। আমার অসুবিধা হবে না।

সিওর?

হ্যা সিওর।

রেহান উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তবে একটা অপরিচিত মেয়ের শরীরের সুবাস তাকে একটু বিভ্রান্ত করে দিলো। অস্বস্তি লাগতে শুরু করল।

রেহান উঠে বসে বলল, নিতু তোমার জন্য একটা গিফট আছে।

নিতু অবাক হয়ে বলল, গিফট?

হ্যা, রেহান আংটিটা বের করে দিলো।

ডায়মন্ড ওয়াল্ডের প্যাকেট দেখে নিতু বলল৷ ডায়মন্ড! কিন্তু কি দরকার ছিল? এত দামী জিনিস! আমি তো আপনাদের গয়নাগুলোই নিব না। সব রেখে দিয়েছি আপনার আলমারিতে।

রেহান বলল, এটা ফেরত দিতে হবে না৷ এটা তুমি রেখো।

নিতু ভদ্রতবশত আংটিটা বা হাতের অনামিকায় পরে নিলো।

রেহান অবাক হয়ে দেখল৷ নেইল আর্ট করা নয়, শুধু মেহেদি দেওয়া নখে। ধবধবে ফর্সা হাতটা কী ভীষণ সুন্দর লাগছে! রেহান চোখ ফেরাতে পারছে না!

চলবে

শানজানা আলম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here