কেন আমি ডাকি তারে- পর্ব ২

0
904

কেন আমি ডাকি তারে-২

রেহানের সাথে নিতুর দেখা হলো গভীর রাতে৷
রেহান ঘরে ঢুকে বালিশ নিয়ে ডিভানে শুয়ে পড়ল। নিতুকে কিছু না বলেই৷ বোঝা যাচ্ছে এই ডিভান কাম বেড রেহান রিসেন্ট কিনেছে৷ হয়তো বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেই। শুয়ে পড়ে আবার উঠে বসল একটু পরেই।

-নিতু তোমার সাথে কিছু কথা বলা দরকার। এখন বলব? নাকি সকালে?

নিতু বলল, বলুন।

-তুমি তো জানোই, তোমাকে তোমার ভাবী বলেছে না সায়রার কথা?

-হ্যা বলেছে।

– ভীষণ অদ্ভুত পরিস্থিতি। আমার মায়ের সায়রাকে পছন্দ হয় নি, তিনি সরাসরি বলেছেন, সায়রাকে তিনি মেনে নিবেন না৷ আমি তো জানি, সায়রা আমার জন্য কতটুকু, তাই আমি অনেক ভেবে ঠিক করেছি, বছরখানেকের জন্য একটা বিয়ে করে মাকে বোঝাব, সায়রা ছাড়া কেউ আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

তুমি আমার ফ্যামিলির কারো সাথে ভালো ব্যবহার করবে না।

নিতু বলল, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আপনার একবছর প্রয়োজন, আমারও। তাই বলে অকারণে আমি কেন খারাপ ব্যবহার করব সবার সাথে!

-বিয়ের শর্ত তো এটাই ছিল।

-বিয়ের শর্ত আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক তৈরি হবে না। দুজনের পছন্দের মানুষের সাথে যোগাযোগ ঠিক থাকবে। এক বছর পরে সেপারেশন নিয়ে নিব।

এর মধ্যে কোথাও খারাপ ব্যবহারের কথা ছিল না।

-তাহলে আমার বাড়ির লোক তোমাকে খারাপ ভাববে কিভাবে! কেন আমাদের ডিভোর্স হবে!

নিতু হাই তুলে বলল, অনেক কারণ আছে, আপনি ইম্পোটেন্ট, এটা বলেও হতে পারে!

রেহান নড়েচড়ে বসল, এটা কেমন কথা!

আপনি যেমন আমাকে বললেন, এটা সেরকম একটা কথা। আমার ঘুম পাচ্ছে রেহান৷ চিন্তা করবেন না, আমি কোনোভাবেই আপনার সাথে একবছরের বেশি থাকব না।

রেহান উত্তর দিলো না৷ নিতুর ফোন ভাইব্রেট করছে৷
তুহিন! এত রাতে!

নিতু ফোনটা কেটে দিয়ে মেসেজ দিলো, পরে কথা বলছি।

রেহান হতাশ হয়ে শুয়ে পড়ল। নিতুর কথা শুনেছিল, ভীষণ ভালো মেয়ে। বেশি ভালো হলে তো আবার সমস্যা!
সায়রা একটু চটপটে, আমুদে, ওয়েস্টার্ন পোশাকে কম্ফোর্ট ফিল করে বলে প্যান্ট আর টপস পরেই এসেছিল মায়ের কাছে দেখা করতে! মা বলে দিলেন, এই মেয়ের সেন্স নেই, কোথায় কীভাবে চলতে হয়! এত বড় ফ্যামিলিতে মেয়েটা এসেই আলাদা হতে চাইবে।

সকাল সকাল ঘুম ভাঙল নিতুর। ভারী গয়না খুলে রেখে একটা সুতির জামা পরে নিলো। তারপর দরজা খুলে বের হয়ে দেখল সবাই চা পর্বে ব্যস্ত।

রেহানের মা আরজুমান বেগম বললেন, এত সকালে উঠে গেছ! এসো মা! কিন্তু তোমার শাড়ি গয়না কই? বউ বউ লাগছে না তো!

নিতু গিয়ে বসল। ওকে চা আর ব্রেড টোস্ট দেওয়া হলো। নিতুর খিদেও পেয়েছিল। অল্প করে খাওয়ার পরে আরজুমান বেগম বললেন, চলে তো তোমার ঘরে, দেখি তোমাকে শাড়ি চুড়ি পরিয়ে নিয়ে আসি।

ঘরে ঢুকে তিনি দেখলেন, রেহান ডিভানে ঘুমাচ্ছে।
তিনি বললেন, ও এখানে কেন? বিছানায় কি সমস্যা?

নিতু বলল, সকালে মনে হয় ওখানে শুয়েছে।

ওহ আচ্ছা আচ্ছা! স্বামীর সাথে কখনো বিছানা আলাদা করবে না। একসাথে থাকতে থাকতেই টান তৈরি হয়। এখন তোমরা নিজেরাই পছন্দ করে বিয়ে করো৷ আগে কী হতো, অচেনা মানুষ ধরে বিয়ে দিয়ে দিতো। তার সাথে থাকতে থাকতে সেই জীবনের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে যেত।দেখি শাড়ি গয়না বের করো, আমি সাজিয়ে দেই।

নিতু লাগেজ খুলল। আরজুমান বেগম নিজেই লাল শাড়িটা বের করে বললেন, এটা পরো, এটা আজকের সকালের জন্য কিনেছিলাম আমি। এটা পরে এসো আমার ঘরে, আমি আরেকসেট গয়না দিচ্ছি। সব সময় পরবে এরকম।

নিতু বলল, সব সময় গোল্ড পরব?

হ্যা, কয়েকদিন তো পরো। তারপর খুলে রেখো।

আরজুমান বেগম বের হয়ে গেলেন। নিতু রেহানের কাছে গিয়ে বলল, শুনছেন, একটু আপনাকে বাইরে যেতে হবে।

রেহান বিরক্ত হয়ে বলল, কেন?

আমি তৈরি হবো। তাই।

রেহান বের হয়ে গেল। নিতু শাড়িটা পরে ঘর থেকে বের হয়ে শাশুড়ীর ঘরে ঢুকল।

রেহান সোফায় শুয়ে ছিল। আঁড়চোখে দেখল, কোনো গয়না পরে নি নিতু, ফর্সা ঘাড়, বাহু, টানা টানা চোখ, মেয়েটা বেশ সুন্দর!
রেহান চোখ নামিয়ে নিলো, নিজেকে নিজে ধিক্কার দিয়ে বলল, সায়রাকে ঠকিয়ে আরেকটা মেয়েকে দেখতে লজ্জা লাগছে না তোর! একবারো নিতুকে অন্য চোখে দেখবি না।
নিতু কিন্তু শর্ত অনুযায়ী তোর আসে পাশেও আসেনি।

নিতুকে আরজুমান বেগম সবসময় পরার মত একসেট গয়না দিলেন। বললেন, এটা আমি গড়িয়েছিলাম, পরা হয় নি। এখন তো অনেক দাম সোনার। তোমার জন্য নতুন বিয়ের গয়না ছাড়া কিনে উঠতে পারি নি। এটা তুমি নাও। সব সময় পরবে।

রেহানের বোন রায়না পাশ থেকে বলল, এটা তো তোমার খুব শখের মা, ভাবীকে আরেকটা দিও।

আরজুমান বেগম বললেন, না। নিতুকে এটাই মানাবে। গয়নাটা নিতুকে খুব মানিয়ে গেল।

ঘরে ঢুকে নিতু দেখল তুহিন ভিডিও কল দিচ্ছে। ও রিসিভ করল।

তুহিন ওকে দেখে বলল, নিতু তোমাকে এমন করে কখনো দেখিনি৷ একদম লাল টুকটুকে বউ লাগছে। আমাদের বিয়ের পরে একদিন এরকম সেজে আমার সামনে বসে থাকবে।
রেহান পেছন থেকে ঘরে ঢুকেছে। তুহিনের কথা গুলে ও শুনে নিলো। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে ওর বিষয়টা ভালো লাগল না।মানে মনে হতে লাগল, আমাদের বাড়ির অন্দরমহলে আরেকটা ছেলে ঢুকে পড়ছে।

রেহান বলল, নিতু ফোনে কথা শেষ হলে একটু শোনো।

নিতু ফোন রেখে বলল, বলুন!

বাড়িতে এভাবে ভিডিও কলে কথা বললে কেউ না কেউ ঠিক জেনে যাবে। আমি চাইনা তোমাকে নিয়ে গসিপ তৈরি হোক। ফোনে কথা বললেও, বিষয়টা একটু নিয়ন্ত্রিত রাখবে।

না, তুমি মনে করো না আমি তোমাকে চাপ দিচ্ছি। তোমার সুবিধা মতই তুমি চলো। কিন্তু আরেকটা পরিবারে এসেছ তো, একটু বুঝে শুনে চলো আরকি!

নিতু মনে মনে বলল, ব্যাপারটা কি হলো, রাতেই তো বলল, খারাপ ব্যবহার করতে। সকালে অন্য সুরে কথা বলছে, বিষয়টা কী!
তবে নিতু তর্ক করল না। চুপচাপ মেনে নিয়ে বাইরে চলে গেল। সবার সাথে গল্প করতে ভালোই লাগছিল। অহেতুক এই আজব চিড়িয়ার সাথে সময় নষ্ট করার দরকার নেই।

চলবে

শানজানা আলম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here