#পারমিতা
পর্ব—৹৪
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
তার মানে আরফানের আগে পরিচয় ছিলো পারমিতার সাথে।কিন্তু আরফান তো কোনোদিন পারমিতার ব্যপারে কিচ্ছু বলে নি আকাঙ্খার কাছে।
সেটা বলে নি হয়তোবা কোনো কারণে,কিন্তু পারমিতার লাশ….?
এই আট নয় বছরে একটা মানুষকে তো আর মন থেকে একেবারে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।
আরফান নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছে পারমিতাকে।
কিন্তু ও সেটা স্বীকার করলো না কেন,কি লুকাচ্ছে সে নিজের স্ত্রীর কাছ থেকে।
পারমিতা দীর্ঘ নয় বছর আগে মারা গেছে এটা সত্যি,আচ্ছা ওর মৃত্যুর সাথে আরফানের কোনো যোগাযোগ নেই তো।
পারমিতা মারা গেছে কিন্তু ওর লাশ এখনো অক্ষত আছে,ওর লাশের পিরিয়ড হয়,ওর রক্তের এখনো স্বাভাবিক মাত্রা বজায় আছে,এমনকি ওর নার্ভ পর্যন্ত রেসপন্স করতে দেখেছে আকাঙ্খা।
কি হচ্ছে এসব,পারমিতা হাসপাতালের একটা বেওয়ারিশ ছাড়া আর কিছু নয়,কিন্ত এখন জানি কেমন অদ্ভুত আর অযাচিতভাবে পারমিতার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে আকাঙ্খা। এমনটা কখনোই তো হবার কথা ছিলো না।
এ কোন গোলকধাঁধার ভেতরে পড়ে গেলো আকাঙ্খা।কি করে এর ভেতর থেকে বের হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে সে খাটের ওপরে ধপাস করে বসে পড়লো।মাথাটাই কাজ করছে না তার।
এর মধ্যে আরফান বাসায় এসে পড়লো।
—কি ব্যাপার,, তুমি চলে এলে?
—কেন,আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেলে নাকি?
—নাহ!আশ্চর্য হবার কি আছে।এমনি জিজ্ঞাসা করলাম।শরীর ঠিক আছে তো তোমার?
—আমি ঠিকই আছি,তার আগে বলো তুমি কেমন আছো,সকালেও বেশ অসুস্থ দেখে গেলাম,কোথায় গিয়েছিলে সন্ধ্যা বেলা?
—একটু হাঁটতে গিয়েছিলাম বাইরে,!
আচ্ছা ঐ যে মেয়েটা,কি জানো নামটা ভুলে গেছি।ওর লাশের কি অবস্থা?
নিজের শার্ট টা খুলে একটা টি শার্ট পড়তে পড়তে নিজের স্ত্রীকে প্রশ্ন করে আরফান।
—কার কথা বলছো তুমি?
—আরে গতকাল রাতে যার পোস্টমর্টেম করা হলো,যদিও সেটা সম্ভব হয় নি কোনো কারনে!
(বলতে বলতে আকাঙ্খার পাশে বসলো)
—আরে বাহহ!তোমার স্মৃতি শক্তি এতো দূর্বল হয়ে গেলো কবে থেকে আরফান?
—মানে বুঝলাম না,কি বলতে চাইছো বলো তো?
—ইদানীং দেখছি সবকিছু ভুলে যাচ্ছো তুমি,কই আগে তো এমন হয় নি কখনো?
—ও বাবাহ..আজ হয়েছে কি তোমার।আচ্ছা শোনো….
—-মেয়েটার নাম পারমিতা।
আরফানের কথা শেষ না হতেই তাকে উত্তর টা দিয়ে দিলো আকাঙ্খা।সে নিজেও বেশ অবাক হচ্ছে,যে তার পুরনো ওয়ালেটে এখনো পারমিতার ছবি বয়ে বেড়াচ্ছে,অথচ মাত্র এক দিনের ব্যবধানে তার নামটা ভুলে যাওয়া বড্ড অদ্ভুত নয় কি?
আরফান কি নাটক করছে ওর সাথে?নাকি সত্যি ওর কিছু মনে নেই পারমিতার ব্যাপারে।
—ও,, ইয়েস।পারমিতা।খুব আনকমন একটা নাম তাই না?
—হুম,বড্ড আনকমন আর অদ্ভুত ও বটে,শুধু নামটা নয় পারমিতা মেয়েটাই অদ্ভুত,ওর অতীতটা আরো কতো বড়ো অদ্ভুত সেটাই বা কে জানে(ক্ষীন স্বরে বললো আকাঙ্খা)
—কিছু বললে?
—নাহ! কিছু না।
—আচ্ছা,আমি ফ্রেশ হয়ে আসি,এসে দুজনে একসাথে খাবার খাবো।ওকে।
আকাঙ্খা শুধু মাথা নাড়লো,আর কোনো উত্তর দিলো না।
আরফান রুমের বাইরে চলে যায়।
একটু পরে রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে এসে শুয়ে পড়ে আকাঙ্খা।
ভীষন ক্লান্ত লাগছে তার।শোবার একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়ে সে,আরফান ছাদ থেকে একটু পায়চারি করে এসেই দেখতে পেলো তার স্ত্রী ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আর দেরী না করে সেও শুয়ে পড়ে।আগামীকাল আবার সকাল সকাল হসপিটাল যেতে হবে দুজনকেই।
এদিকে আকাঙ্খার মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে,
পারমিতার মৃত্যু যদি আজ থেকে নয় বছর আগে হয়ে থাকে আর যদি ভুলক্রমে হলেও তার সাথে আরফানের কোনো কানেকশন থাকে তবে আগে এটা খুঁজে বের করতে হবে আরফান ঠিক সেই সময়ে কোথায় ছিলো?
আরফানের সাথে আকাঙ্খার বিয়ে হয় ২০১২ এর নভেম্বরে,পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে করে দুজন।
বিয়ের বহুবছর আগে থেকেই আগে দুজন দুজনকে চিনতো বা তাদের ব্যাপারে জানতো এমন নয়,মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে বিয়ে করে
তাদের।
আর পারমিতার মৃত্যু হয় ২০১১সালে।।ঠিক সেই সময়ে আরফান কোন জায়গায় থাকতো,কি কি করতো,ওর লাইফের এমন কোনো পার্ট আছে কিনা যা সবার আজানা,সেটা জানতে হবে।।
তবে যদি কোনো না কোনো ক্লু বেরিয়ে আসে।
নিজের স্বামীকে সন্দেহ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই আকাঙ্খার,কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে কারোর ওপরেই বিশ্বাস রাখা সম্ভব হচ্ছে না।তাছাড়া এই রহস্যের জট খুলতে না পারলে সে নিজেও শান্তি পাচ্ছে না।
ঘুম ভেঙে যেতে এইগুলোই চিন্তা করছিলো আকাঙ্খা জামান।পাশে আরফান পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।
ঘুমালে মানুষকে বেশি নিষ্পাপ লাগে,নিজের স্বামীর দিক থেকে সে যেন চোখ ফেরাতে পারছে না।কতটা ভালোবাসে এই মানুষকে,কতটা বিশ্বাস করে।এক প্রকার নিজের থেকেও বেশী।
কোনোকিছুর বিনিময়ে এই বিশ্বাস আর ভালোবাসা যেন হারিয়ে না যায়।বিশ্বাসের মৃত্যুর থেকে দেহের মৃত্যু অনেক বেশি শ্রেয়।আকাঙ্খার বিশ্বাসের ভীত যেন কোনোদিন ভেঙে না যায়,আরফানকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালোবেসে যেতে চায় সে।
আস্তে আস্তে আকাঙ্খা আরফানের পাশ উঠে যায়।আরফানের পুরোনো কাগজপত্র ঘেঁটে দেখতে হবে,,যদি কিছু জানতে পারা যায়।
রুমের দরজাটা আস্তে করে চেপে দিয়ে স্টোর রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।আরফান ওর সমস্ত সমস্ত পুরনো জিনিসপত্র স্টোর রুমেই ফেলে রেখেছে।এমনকি ওর ছোটবেলার বিভিন্ন ডকুমেন্ট আছে এখানে।এই বাড়িতেই ছোটবেলা থেকে বড়ো হয়েছে সব,তার সবকিছু এখানেই খুঁজে পাওয়া যাবে।
বিস্তর ধুলো জমে আছে সেখানে,নাকে মুখে হাত দিয়ে কাশতে কাশতে ভেতরে ঢুকলো আকাঙ্খা,
হাতে একটা টর্চ লাইট।ঢুকে স্টোর রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিলো।যাতে আরফান কোনোভাবে টের পেয়ে এখানে এসে পড়লেও সরাসরি ধরা না পড়তে হয়।
স্টোর রুমের লাইটটা খারাপ হয়ে আছে,কোনোদিন সারানোর প্রয়োজন বোধ করে নি।এমনিতে দিনের বেলায় আসা হয় না কখনো,সেখানে রাতে এসে এভাবে চুপি চুপি চোরের মতো ঘাটাঘাটি করতে হবে কে জানতো।
টর্চলাইটটা একটা চেয়ারের ওপরে সেট করলো,, তারপর একে একে সবকিছু তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকে আকাঙ্খা।
আরফানের বিভিন্ন সার্টিফিকেট,চিঠি,স্টাম্প, খাম,চিঠি,হাতে আঁকা ছবি,ক্যামেরায় তোলা ছবি ইত্যাদি ইত্যাদি জিনিসপত্রে ভরপুর একটা পুরনো সেলফ।
এটা খুঁজছে তো ওটা খুঁজছে,সেরকম কিছু চোখে পড়ছে না।
আচমকা একটা বহু পুরনো খাম চোখে পড়লো আকাঙ্খার।
খামটার ওপরে একটা এড্রেস লেখা,তারিখ ও উল্লেখ আছে।মনে হচ্ছে এটা কেউ একটা পাঠিয়েছিলো আরফানের কাছে।
ফু দিয়ে ধূলো টা সরিয়ে চোখের সামনে ধরে লেখাগুলো পড়তে লাগলো।
গুপ্তকর্নার,রোড নং ৩৭,,,………(বাদবাকি)
২৩/০২/১১ইং
ওহ গড!এতো পারোমিতার মারা যাবার বছরের কোনো জিনিস।কিন্তু কি আছে এই খামের ভেতরে।
একটা অজানা ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো আকাঙ্খা জামানের।না জানি আবার কি ফেইস করতে হয় তাকে।
তাড়াতাড়ি খামটা খুলে ভেতরের জিনিসগুলো দেখতে থাকে সে।
অনেকগুলো পুরনো ছবি,আর সাথে কিছু পুরনো কাগজপত্র।
ছবিগুলো খুলে একে একে দেখতে লাগলো।
নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না।
দীর্ঘ রুদ্ধশ্বাসের আওয়াজ নিজেই নিজের কানে শুনতে পাচ্ছে আকাঙ্খা।
একের পর এক বেরিয়ে আসছে পারমিতার ছবি।
প্রায় সব ছবিগুলো বিয়ের সাজের,বিয়ের সময়ে কনেরা যেভাবে সাজে ঠিক সেইভাবে সেজে ছবিগুলো তোলা হয়েছিলো।
কিন্তু পারমিতার বিয়ের সাজের ছবি আরফানের কাছে কেন. বড্ড অদ্ভুত ব্যপার!
এরপরের ছবিগুলো পারমিতার ডেডবডির,সে যখন সদ্য মারা যায় সেই সময়কার তোলা ছবি।
সবার শেষের ছবিটা দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলো না আকাঙ্খা।তার সারা শরীর ভাইব্রেট হতে শুরু হলো।
পারমিতা আর আরফানের একসাথে ক্যাপচার করা একটা ছবি,যেখানে দেখা যাচ্ছে পারমিতা জরিয়ে ধরে আছে আরফানকে,দুজন বেশ অন্তরঙ্গ।পারমিতার মুখে হাসির ঝলক স্পষ্ট।অজস্র ধুলোময়লার মাঝে সেই হাসি এখনো এতোটুকু ম্লান দেখাচ্ছে না।
আকাঙ্খার আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না,আরফান সবটা জানে,কিন্তু ও না জানার ভান করে আছে।কিছু তো একটা চলছে ওর ভেতরে,কিন্তু কি সেটা?
ও নিজের মুখে স্বীকার করবে না এটা নিশ্চিত আর স্বাভাবিক ও বটে।নিজের অন্ধকার অতীত কোনো মানুষ নিজের মুখে স্বীকার করতে চায় না,আরফান তার ব্যতিক্রম নয়।
এখন যা করার আকাঙ্খাকেই করতে হবে।এই রহস্যর সমাধান তাকেই করতে হবে।
না আর দেরী করা চলবে না,
খামের ওপরে লেখা এড্রেসটা আবারো ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলো সে।
কাল সকালেই এই ঠিকানা খুঁজে সেখানে যেতে হবে,ওই জায়গা থেকে খাম এসেছে তার মানে পারমিতা, আরফানকে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই চিনতে পারবে,এটাও হতে পারে পারমিতার পরিবারের লোকজন বসবাস করে এখনো সেই জায়গায়।হয়তো তারা অন্য কোথাও শিফট করে নি।
তাদের খুঁজে বের করতে পারলে আর কোনো সন্দেহর অবকাশ থাকবে না।
ঠিক কি হয়েছিলো পারমিতার সাথে,কেন সে মরেও আছ পর্যন্ত মরতে পারলো না,আর এসবের সাথে আরফানের কানেকশন কী?
কাল সবটা পরিস্কার হবে আকাঙ্ক্ষার কাছে।।
এই রহস্যের বোঝা আর বয়ে বেড়ানো সম্ভব নয়।
পরেরদিন সকাল,পুরো শহর যখন আবার কর্মব্যস্ততায় মুখরিত হয়ে উঠতে লাগলো……
–
–
–
আকাঙ্খা আরফানকে এখনো কিছু বুঝতে দেয় নি।সে তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে নিজে একটা জরুরী কাজের অজুহাত দেখিয়ে গুপ্ত কর্নারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
একটা বিষয় ঠিক বুঝলাম না,গতকাল এতো দীর্ঘ করেও এপিসোড করা সত্ত্বেও রেসপন্স কমে গেলো কেনো।আমি কখনোই গল্পের রিয়েক্ট বা কমেন্ট নিয়ে মাথা ঘামাই না,কিন্তু বিনা কারনে এভাবে রিচ ডাউন হয়ে গেলে সেটা সত্যিই ইগনোর করা যায় না।গল্প সবাই কম বেশী পড়ে,অথচ রেসপন্স না করেই চলে যায়।এরকম হলে কষ্ট করে নতুন এপিসোড আপলোড করে কি লাভ?এই এপিসোডটা দেখবো,যদি রেসপন্স অসন্তোষজনক মনে হয় তবে হতে পারে আজকেই পারমিতার শেষ সম্প্রচার।🙂
চলবে…….