মিঠা রোদ পর্ব ৩৩

0
2910

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“এমন কেন হয় মনের ভেতর অনেক কথা থাকে কিন্তু সেগুলো মুখে আসেনা।প্রশ্নগুলোর জবাব আছে।”

“তবে বলতে পারছো না।তাইতো?”

তোশা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।বারান্দার দিকে হওয়ায় মৃদু আলো পরিবেশকে উজ্জ্বল করেছে।সাহেদ পুনরায় গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“আমার বয়স জানো কতো?বর্তমানে পঁচাত্তর বয়স।শরীরের চামড়া ঝুলে গিয়েছে।চোখের দৃষ্টি ঘোলাটে হয়েছে।তোমার থেকে অভিজ্ঞতা বেশী এটা তো মানো মা?”

“জি।”

“জবাব সেই সব প্রশ্নের থেকেও থাকেনা যেগুলো উত্তর সঠিকভাবে গোছানো হয়না।”

“না জবাব আছে তো।”

“তাহলে বলো।”

আন্দোলিত হয়ে উঠলো তোশার ছোট্ট মন।বুকের ভেতর লাব-ডাব শব্দের তীব্রতা বাড়ছে।বড় করুণ সুরে সে শুধালো,

“যদি জবাব না দিতে পারি তাহলে আমাকে মেনে নিবেন না?”

“আমি সেটা বলিনি।কারণ যারা সংসার করবে তাদের সমস্যা না হলে আমার কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু সংসার টিকতে হবে আগে।যে ভালোবাসার দোহাই দিবে সেটা কবীর ও দিশার মধ্যেও অনেক ছিল তোমার বাবা-মায়ের মধ্যেও ছিল।কিন্তু দিনশেষে সকলের পথ ভিন্ন।আমি কখনো চাইবো না বয়সের কঠিনতম সময়ে এসে আমার ছেলেটা একা থাকুক কিংবা দ্বিতীয়বার বিচ্ছেদের য ন্ত্র ণা পাক।”

“আমি এমন না।কবীর শাহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জীবনে।”

“থাকতে পারে।কিন্তু সবসময় হবে এমন তো নয়।”

নীরবতার চাদরকে অবলম্বন করলো তোশা।বয়সে বড় কেউ যে সহজে ছোট বয়সীদের প্রশ্নের বেড়াজালে আঁটকে ফেলতে পারে তা ক্ষণে ক্ষণে টের পাচ্ছে তোশা।যদি এখানে না আসতো তবে এমন প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হতে হতো না।সাহেদ মেয়েটির মনের কথা বুঝতে পারলো।হালকা কেশে বলল,

“আমার কাছে অথেন্টিক দার্জেলিং টি আছে খাবে?বেশ ভালো বানাই।এরপর না হয় আলোচনা করা যাবে।”

তোশা ঈষৎ হেসে উঠলো।উপর নিচে মাথা দুলিয়ে সাহেদের পিছনে যেতে লাগলো।

(***)

সাধারণ ঘরোয়া পোশাকে অফিসে কবীরকে প্রবেশ করতে খুব কম দেখেছে সকলে।সর্বদা পরিপাটি হয়ে থাকে এই তামাটে লৌহ মানবটি।তবে আজ যেন ব্যতিক্রম হলো।ঘন্টা দুয়েক জিম করে সোজা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের অফিসে চলে এসেছে।যদিও পিছনে সুন্দর যুবতীকে এক নজর দেখার স্বার্থটা সবথেকে বেশী।

পিয়ন লোকটিকে পানি আনতে বলে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো কবীর।মিনিট দুয়েক পরে তাহিয়া ভেতরে প্রবেশ করলো।পিছনে মায়ের আঁচল ধরে ছোট্ট কন্যাটিও আছে।নীল রঙা ড্রেসটিতে অপরাজিতা লাগছে।

“তাহিয়া,তোমার মেয়ের ভার্সিটি নেই?সারাদিন এমন ঘুরাঘুরি করে কেন?”

“আছে।কিন্তু এখন সে বায়না করেছে বড় হবে।এই কারণে রোজ অফিসে এসে বিষয়গুলো বুঝতে চেষ্টা করে।”

কবীরের দৃঢ় কপালে কয়েকটি রেখার উদয় ঘটলো।এমনিতে সেদিন বাড়ীতে তার বাবা সাহেদের সঙ্গে তোশার ঠিক কী কথা হয়েছে সেটা এখনও জানতে পারলো না।সকালে বাবাকে ডাকতে গিয়ে দেখে তখনও আলোচনা চলছে দুজনের মধ্য।উপরন্তু তোশার ব্যবহারে বেশ পরিবর্তন এসেছে।

“এই মেয়ে বড় হবে?আমার বিশ্বাস হয়না।”

যুবতী তোশা মায়ের আড়ালে চোখ রাঙায় প্রিয় মানুষটিকে।কিন্তু কবীর শাহ তাতে ভয় পায় নাকী?বরং উল্টো সুর ধরে বলল,

“তোশামণিকে শাসন করো তাহিয়া।অভিনয়ের ব্যাপারটা ভুলে যেওনা।আর শেখার সময় আছে।অসময়ে কিছু হয়না।”

“থাক না কবীর।একটু-আধটু থাকুক আমার সাথে।”

“তাহলে শেখা হবেনা।তুমি ওকে কিছু করতেও দিবে না।উল্টো সময় নষ্ট হবে।পড়াশোনায় ঝামেলা হবে।”

“কথাটা তো সঠিক।”

কবীর যেন এই বাক্যের অপেক্ষায় ছিল।হালকা কেঁশে শুধালো,

“আমার অফিসে থাকুক।সেইফ থাকবে এবং বুঝবেও ভালো।”

“ঠিক।কিন্তু ভুল তো করবে অনেক।”

“ভয় নেই তাহিয়া।তোমার মতোন আমিও এই দস্যুকে শাসন করতে পারিনা।অনুমতি থাকলে একটু পর ওকে নিয়েই আমি মেইন অফিসের জন্য বের হবো।”

কবীরের প্রস্তাবে তাহিয়া অকপটে রাজি হয়ে গেলো।কিন্তু তোশা গাইগুই করতে লাগলো।কবীরের সন্নিকটে থাকলে যে তার উদ্দেশ্য সফল হবেনা।কিন্তু মায়ের মুখের উপর মানা করতে পারলো না।ঘন্টা দুয়েক পর কবীরের সঙ্গে প্রধান অফিসের দিকে যাত্রা শুরু করলো।এখন তামাটে পুরুষ পুরোপুরি গোছানো মানুষ।কোথাও যেন খুঁত নেই।ড্রাইভার না থাকায় বেশ সুবিধা হলো তোশার।

“আপনি অনেক চালাক কবীর শাহ।কতোটা সতর্ক ভাবে আম্মুকে বুঝিয়ে দিলেন।এখন নিশ্চয় আমাকে সেক্রেটারী করবেন।এরপর অফিস রোমান্স।”

পুলকিত হয়ে উঠলো তোশার মন।কিন্তু এই ভাবনায় এক সমুদ্র পানি ঢেলে দিয়ে কবীর বলল,

“না ম্যাডাম।আপনি আপাতত বেসিক শিখবেন তাও আমার ম্যানেজারের থেকে।শুধু কীভাবে মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে হয় এটা শেখাবে।অন্যকিছু ভবিষ্যতে।”

“কেন?তাহলে তো আমি আম্মুর সাথে ভালো ছিলাম।”

“আগে বলো মাথায় এসব ভূত কোথায় থেকে এলো?এই মেয়ে এতো চিন্তা কীভাবে করো তুমি?আব্বু বলেছে এসব?”

তোশা জ্ব লে উঠে বলল,

“আঙ্কেলের নামে উল্টোপাল্টা ভাবলে খবর আছে।”

“তাই?আব্বুর সাথে এতো মিল হলো তোমার।বেশ, ভাববো না কিছু।তবে সেদিন রাতে কী বলেছে সেটা বলো আগে।”

তোশা নতমস্তকে শুধালো,

“আমার নামে এতোগুলো টাকা কেন রেখেছেন আপনি?”

হাসিখুশি কবীরের মুখটা নিভে গেলো।সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তাহলে কাজ করতে চাও?আব্বু বলেছে তাইনা বিষয়টা?”

“নাহ-হ্যাঁ।কারণ আছে অন্য।কিন্তু আপনি এতো কেন করেন আমার জন্য?”

“শুনতে চাও?”

“হুঁ।”

গাড়ীটা একপাশে থামিয়ে দিলো কবীর।টান দিয়ে মেয়েটিকে নিজের কাছে নিয়ে এলো।দুজনের উষ্ণ শ্বাস একত্রিত হয়ে উঠলো।খোঁচা শক্ত গাল দ্বারা তোশার নরম গালে আলতো স্পর্শ করলো কবীর।মৃদুমন্দ কণ্ঠে বলল,

“তোমার ভবিষ্যত সুরক্ষিত করে দিলাম।”

“টাকা থাকলে ভবিষ্যত সুরক্ষিত হয়?”

“কিছুটা বেলাডোনা।ভীষণ ভালোবাসি।”

তোশার মন জুড়ে নির্মল বাতাস বয়ে গেলো।কিন্তু আ’হত কণ্ঠে বলল,

“যদি ভবিষ্যত আপনি না হোন তাহলে টাকার সুরক্ষা দিয়ে কী করবো আমি?”

“থাকবো না কেন?”

“জানিনা।আমার খুব ভয় করছে কবীর শাহ।মনে হচ্ছে সামনে অনেক কঠিন কিছু হবে।”

“ভয় নেই।যতোটা কঠিন হবে সামলে নিবো আমরা।”

কবীর মেয়েটিকে নিশ্চিন্ত করতে পারলো না এই কথায়।সে বুঝতে পারছে তার বাবা কিছু একটা বলেছে যার প্রতিফলনে তোশার এমন ভয়।হুট করে মেয়েটা চোখ তুলে তাঁকালো।কী সুন্দর সজীব মুখটা।কবীর শক্ত আঙুল গুলো দ্বারা গালে হাত বুলিয়ে নিলো।চোখ দুটো বন্ধ করে স্পর্শ গুলো অনুভব করতে করতে তোশা বলল,

“কবীর শাহ চলুন আজ, এখুনি বিয়ে করে ফেলি।তা নয় মনে হচ্ছে আমি আপনাকে কখনো পাবো না।”

চলবে।

এডিট ছাড়া পর্ব।সর্বোচ্চ রেসপন্স করবেন।

গরমে পাঠকদের কী খবর?আমার জীবন শেষ মনে হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here