#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
” সুশীল সিনিয়র, এতো রাতে অন্যের বাড়ীর সামনে কী?”
পরিচিত নারী কণ্ঠ শুনে থতমত খেয়ে গেলো কল্লোল।গাঢ় অন্ধকারে একবার চারিধারে চোখ বুলিয়ে দেখলো।বড় কালো রঙের গেইট দিয়ে মাথা বের করে আছে বৃষ্টি।কল্লোলের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,
“বাড়ীতে আসেন।চাচ্চু আপনাদের সকলের একুশটা বাজাবে।গাড়ী দারোয়ান ভেতরে নিয়ে আসবে।”
কল্লোল এগিয়ে গিয়ে শুধালো,
“তোশা ধরা পড়লো কীভাবে বৃষ্টি?”
“সেটা ওকে জিজ্ঞেস করুন সুশীল সিনিয়র।”
বৃষ্টির সম্বোধনে বিরক্ত হলো কল্লোল।সে আর মেয়েটি একই মেডিক্যালে পড়াশোনা করছে।সিনিয়র হয়েও কোনোপ্রকার য ন্ত্র ণা কিংবা ফরমাইশ না দেওয়ার দরুণ তাকে সুশীল সিনিয়র বলে ডাকে নতুনরা।যদিও সকলে নয় বৃষ্টি একটু বেশীই।
“কবীর আঙ্কেল রেগে আছে কেন?ও না হয় একটু আহনাফের রাগ ভাঙাতে এসেছিল।”
“দিনে কী আমাদের বাড়ীতে প্রবেশ নিষেধ নাকী?”
“তা নয়।আসলে তোশার সব আবদার পূরণ করি আমি।”
“কেন?”
প্রশ্নের বিনিময়ে মনকাড়া হাসলো কল্লোল।যা বৃষ্টির অন্তকরণের ভেতর প্রবেশ করলো একদম।উষ্ণ শ্বাস ফেলে তাকে ভেতরে নিয়ে গেলো মেয়েটা।সেখানে সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে আহনাফ ও তোশা।পাশেই কবীর সর্বোচ্চ কঠিন কণ্ঠে শুধালো,
“কল্লোল তোমার ফুফাতো বোন যদি তোমাকে বাঘের খাঁ চা য় যেতে বলে তাহলে সেটাই করবে তুমি?”
“নাহ তেমন করবো কেন?”
“তাহলে এতো রাতে কেন নিয়ে এসেছো ওকে?রাস্তায় কতো ধরণের মানুষ আছে জানো?রাত প্রায় দেড়টা বাজে।”
“দুঃখিত আঙকেল।ওর সব চাওয়া পূরণ করা হয়।”
“তবুও..।”
হুট করে কবীরের বাবা উঠে দাঁড়ালো।গম্ভীর সুরে সকলের উদ্দেশ্যে বলল,
“এখন রাত দেড়টা বাজে।কবীর সব কথা সকালে হবে।ওদের বাড়ীতে পাঠানোর দরকার নেই।তাহিয়াকে ফোন করে বলে দাও।আর শুনো কবীর।ফজরের নামাজের সময় তুমি আমার সাথে মসজিদে যাবে।”
“জি আব্বু।”
“বৃষ্টি নিজের রুমে নিয়ে যাও তোশাকে।আর কল্লোলকে গেস্ট রুমে থাকতে দাও।”
সাহেদের ইশারা বুঝে কবীরের মা আহনাফকে বুকে জাপটে ধরে নিজেরর রুমে নিয়ে গেলো।এই বাড়ীর সদস্য সংখ্যা কম।সেই কারণে জটলাও কম হয়েছিল।বৃষ্টির সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব আছে তোশার।এই কারণে মাথা নিচু করে পিছনে হাঁটতে লাগলো।কিন্তু রুমে প্রবেশ করার পূর্বে হাতে টান অনুভব হলো।
“বৃষ্টি তুমি ঘুমাও।তোশার সঙ্গে আমার কথা আছে।”
মিনমিনে সুরে তোশা বলল,
“আমি যাবো না।”
“চ ড় এখনও খাওনি দেখে মুখে মুখে তর্ক করছো।চলো আমার সাথে।”
তোশাকে লম্বা টান দিয়ে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো কবীর।বৃষ্টি দীর্ঘ একটা হাই তুলে নিজের বিছানায় চলে গেলো।
“আপনি এমন কেন কবীর শাহ?বৃষ্টি কী ভাববে বলেন তো।”
“দিশা আর বৃষ্টির সঙ্গে কতোটা ভালো সম্পর্ক সেই আইডিয়া তোমার নেই মেয়ে।তুমি যে আমার জন্য এমন করো সেটা বহু আগে থেকে বৃষ্টি জানে।তবে ও সরাসরি আমাকে এসে জিজ্ঞেস করেছিলো।”
“আপনি কী বলেছিলেন?”
“যা সত্য।যদিও তোমাকে আমার সাথে ও একটুও মানেনা।কিন্তু কার্টেসী মেইন্টেইন করছে এই যা।”
মুখটা গোলাকৃতি করে তোশা বলল,
“ও বুঝেছি।কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“তোমাকে শাস্তি দিতে।”
দোতালা থেকে তিনতলায় উঠে একটি অন্ধকারময় ঘরে প্রবেশ করলো দুজনে।মৃদু আলো জ্বলে উঠলো কক্ষে।সুসজ্জিত ভাবে বইগুলো বিন্যস্ত দেখে তোশা বুঝতে পারলো এটা লাইব্রেরি।ভাবনার সঙ্গে তার হাতেও টান লাগলো।সে লুটিয়ে পড়লো শক্ত দৃঢ় কঠিন বুকটায়।মেয়েটির থুতনি শক্ত করে চেপে ধরে কবীর শুধালো,
“এতো ভুল করছো কয়টার জন্য শাস্তি দিবো বলো?দেখো কালকে বাবা আমাকে কী কী বলে।আমি চাচ্ছি সাধারণভাবে দুজনের সম্পর্ক গড়ে উঠুক।কিন্তু তুমি সেটা চাওনা।কেন?”
“কে বলল চাইনা?এই কারণে তো রাগ কমানোর জন্য এসেছি।আপনিও তো অপ্সরাদের বাসায় গিয়েছিলেন।”
“ধরা পড়েছিলাম এভাবে?তোমরা যে রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করে এলে সেটা রাতে কতোটা ডেঞ্জারেস হয় জানো?”
“জানি তো।ব্যাথা পাচ্ছি।”
“কেন এতোগুলো যন্ত্র ণা দাও আমাকে?বুঝো না কেন?”
কবীর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তোশাকে।অতি নরম এই মেয়েটা তার সব ধরণের চাহিদার সীমা শেষ করে দিচ্ছে।নিশ্চুপে আস্তে করে তোশা বলল,
“কথা না বললে খুব খারাপ লাগে।অভিনয় করবো না তো।রাগ করবেন না আর।”
“সেটা সম্ভব না।কারণ যে কন্ট্রাকে গিয়েছো।ওটা বাদ যাবেনা।”
“আপনার না খুব ক্ষমতা।তাহলে?”
“চেষ্টা তো করলাম।দেখি আরো কয়েকদিন।এজন্য কিছুটা শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম তোমাকে।অথচ কী একটা কাজ করলে।আব্বু ক্লাস নিবে আমার।”
“ভালো হবে।”
“যখন তোমার কথা জিজ্ঞেস করবে তখন কী বলবো?আহনাফের রাগ ভাঙাতে আসবে সেটা মটেও বিশ্বাসযোগ্য না।”
“কবীর শাহ ভয় পাচ্ছে।”
ঈষৎ আলোয় কন্যাটির মুখ দেখে মৃদু হাসলো কবীর।লম্বা আঙুলগুলো আলতো করে গালে বুলিয়ে দিলো।হালকা উষ্ণ পরিবেশও কেঁপে উঠলো তোশা।মেদুর গালে রক্তিম আভা লেপ্টে আস্তে করে শুধালো,
“এখন আমি ট্রু লাভ’স কিসটা পেতে চলেছি তাইনা?”
“মটেও না।যতোপ্রকার দস্যু তস্করের মতোন চিন্তাভাবনা।এখনও খুব ছোট আপনি।ওয়েট।তুমি না পনের মিনিট আগেও কতো কাঁদছিলে।”
“ভয় পেয়েছিলাম।বৃষ্টি কী ভাববে বলুন তো।”
“সমস্যা কী তোমার?কখনো তো লজ্জা পাওনা।আজ এমন করছো কেন?”
তোশা খুব সন্তপর্ণে কবীরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।সে কীভাবে বলবে যে মানুষটার স্পর্শ তাকে মাদক-প্রভাবিত করে দিচ্ছে।চাওয়া পাওয়া প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাচ্ছে।কানের পিঠে চুলগুলো গুঁজে নিয়ে বলল,
“আপনার রুমটা দেখার অনেক ইচ্ছা।সেখানে নিয়ে যাবেন আমাকে?”
“কেউ দেখলে বিষয়টা খারাপ হবে।আমি কথা বলতাম না খারাপ লাগতো তাইনা?”
হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো তোশা।
“খুব খারাপ লাগতো।”
“আর কখনো এমন যোগাযোগ বন্ধ করবো না।ভুলে গিয়েছিলাম আমি তুমি তোশা।যাও এখন রুমে যাও।কাল সকালে কথা হবে।”
কবীর চলে যেতে নিলে তোশা তার টি-শার্টের কোণা ধরে আঁটকে ফেলে বলল,
“যেতে মন চাচ্ছে না।আরেকটু থাকি আপনার সাথে?”
নি:সংকোচ, ভয় বিহীন আবদার।তবে কবীরের মস্তিস্ক সায় দিচ্ছে না।সে যৌবন পুড়ে যাওয়া পুরুষ।তোশার সঙ্গে অন্যরকম অনুভব হয়।
“প্লিজ থাকি না কবীর শাহ।আমরা গল্প করবো।”
“ঠিক আছে।কিন্তু শুধু বিশ মিনিট।”
(***)
ক্ষণবাদে বৃষ্টির রুম পর্যন্ত কবীর তোশাকে এগিয়ে দিয়ে গেলো।সে ফিরে যেতেই রুমের দরজায় আস্তে করে টোকা পড়লেো।তোশা জেগে ছিল দেখে দরজাটি খুলে দিলো।ওপাশে কবীরের বাবা সাহেদ দাঁড়িয়ে আছে।নিজেকে গুছিয়ে তোশা বলল,
“কিছু বলবেন আঙকেল?”
“বের হয়ে এসো।কথা আছে।”
“কী কথা?”
চঞ্চল তোশা তৎক্ষনাৎ বের হয়ে এলো।একটু দূরে সাহেদ গিয়ে থামলো।মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
“আমার ছেলেকে ভালোবাসো তুমি?ওর সাথে কেমন সম্পর্ক?বিয়ে হয়েছে দুজনের?”
ভয় পেয়ে গেলো তোশা।মৃদু মৃদু ঘাম জমেছে কপালে।কিন্তু সাহস করে জবাব দিলো,
“ভালোবাসা আছে দুজনের।বিয়ে এখনও হয়নি।”
“বেশ।তবে তুমি একটা কারণ দেখাও আমার ছেলের যোগ্য কীনা তুমি।ভেবো না টিপিক্যাল বাবার মতোন কথা বলছি।শুধু আমি জানতে চাই কোন সাহসে আমার একমাত্র নাতি ও ছোট ছেলেকে তোমার হাতে তুলে দিবো?তুমি নিজেই তো মায়ের হাতে ভাত খাও।বাস্তবতা বির্বজিত কিংবা সবসময় ফ্যান্টাসী জগতে ভুগতে থাকা একজন মেয়ে কী আদৌ কবীর শাহ এর মতোন মানুষের যোগ্য?ভালোবাসার কথা বলবেনা।এছাড়া যুক্তি দিয়ে বলো।তোমার সময় দুই মিনিট।”
তোশা নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে সাহেদকে দেখছে।সে খুব করে বলতে চাচ্ছে আমার পড়াশোনা ভালো,বাবা-মায়ের ভালো পরিচয় আছে।কিন্তু এসব কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।আদৌ কী এই গুণগুলো কবীর শাহকে পাওয়ার মতোন যোগ্যতা রাখে অথবা আহনাফের মা হওয়ার?
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সর্বোচ্চ রেসপন্স করবেন পাঠকেরা।আজকের পর্ব নিয়ে কী মতামত আপনাদের।তোশা কী সত্যিই যোগ্য না?