মিঠা রোদ পর্ব ৩১

0
2533

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমার নায়িকার সঙ্গে ঠিক কীরকম সম্পর্ক আপনার?সুগার গার্ল নাকী সুযোগ নেওয়া?”

“তুমি জানো প্রতীক এই প্রশ্নগুলোর জন্য তোমার অভিনয় ক্যারিয়ার শে ষ করে দিতে পারি।”

“সেটা আপনার ক্ষমতায় আছে জানি মি.শাহ।আমি তো শুধু জানতে চাচ্ছি আমার নায়িকার ব্যাপারে।”

কবীরের গম্ভীর মুখটিতে ফ্যাকাসে রঙ আরো এক ধাপ নিচে নেমে গেলো।তবুও মুখের বিনয়ী ভাব ধরে বলল,

“আমার নায়িকা সম্বোধন হয়তো তোশার ক্ষেত্রে চলে না প্রতীক।তুমি সেন্সিবল পার্সন।সম্পর্ক কী সেটা ধরতে পারবে।তবে সহজ করার জন্য বলে দিচ্ছি মেয়েটি একান্ত আমার আপনজন।”

“ধরতে পারি রিয়েল লাইফে আপনার নায়িকা।”

কবীর ধণাত্বক মাথা নাড়ালো।প্রতীক হুট করে উচ্চশব্দে হেসে উঠলো।যা মটেও ভালো লাগলো না কবীরের।বিষয়টি বুঝতে পেরে স্বনামধন্য প্রযোজক মিনহাজ বড় সুন্দর কণ্ঠে বলল,

“হয়েছে কী মি.শাহ।তোশা আজ সকালে আমাদের সাথে কন্ট্রাক সাইন করে গিয়েছেন।নাটকটির বিপরীতে অভিনয় করবে প্রতীক।এজন্য আমার নায়িকা বলে সম্বোধন করেছে।”

“অভিনয় করবেনা তোশা।ছোট মানুষ ভুলে কারো রায় না নিয়ে করে ফেলেছে।এখুনি কন্ট্রাকটির অস্তিত্ব মিটিয়ে ফেলবেন।”

মিনহাজ জবাব দেওয়ার পূর্বে প্রতীক মুখ ফুটে বলল,

“সম্ভব নয়।তাছাড়া অভিনয় খারাপ কিছু নয়।সাধারণ সামাজিক একটি স্ক্রিপ্ট।কিন্তু ভাবিনি এই কারণে মি.শাহ সব কাজ ফেলে আসবেন।তাহলে অসাধারণ কিছু গল্পে রাখতাম।”

“প্রতীক তুমি অল্প বয়সী যুবক।সেক্ষেত্রে যা কথা বলার প্রযোজকের সঙ্গে হবে।কী বলেন মি.মিনহাজ।আমার বিপক্ষে যাবেন?”

“না না মি.কবীর।প্রতীক তুমি কথা বলো না।আমি অন্য কোনো নায়িকার সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”

প্রতীক নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে কবীরের মুখখানির দিকে তাঁকিয়ে আছে।কঠিক এক ধাঁধার সমাধান হচ্ছে না।তোশাকে যতোটা আজ সকালে সরাসরি দেখেছে তাতে মনে হয় না তেমন খারাপ স্বভাবের কেউ।এক্ষেত্রে কবীরের ইমেজ অনেক ক্লিয়ার।বিশিষ্ট শিল্পপতী হওয়ায় গতবছর টিভিতে এক অনুষ্ঠানে দুজন একত্রে হয়েছিল।তখন যা টুকটাক পরিচয়।ক্ষমতাধর লোক হলেও বিনয়ী তবে প্রখর ব্যক্তিত্বের।সেই লোকটি কীনা অর্ধেক বয়সের মেয়ের সাথে প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে আছে?বিষয়টি গলাধঃকরণ করার মতোন নয়।হালকা বাজিয়ে দেখার জন্য মিনহাজের উদ্দেশ্যে বলল,

“কন্ট্রাক এতো সহজে ভেঙে যাওয়ার সুযোগ থাকলে আমিও আপনার প্রোডাকশন হাউজের সাথে সব ধরণের চুক্তি শেষ করতে চাচ্ছি।”

‘প্রতীক!বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করো।”

মিনহাজের কথার ধারের কাছ দিয়েও গেলো না প্রতীক।উল্টো কবীরের উদ্দেশ্যে বলল,

“অল্প বয়সী মেয়েরা নানা ধরণের এডভেঞ্চার করতে পছন্দ করে।আপনি নিশ্চয় তোশা চৌধুরীর কাছে ঠিক সেরকম কেউ কবীর শাহ।চোখ বন্ধ করে দুনিয়া দেখছে তো।ব্যাপার না আমার সান্নিধ্যে একটা নাটক অভিনয় করুক।পাশা পাল্টে যাবে।”

“স্বার্থ কী তোমার প্রতীক?”

“মা বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছেন।তোশা সুন্দরী,বুদ্ধি কম একটা মেয়ে।বাকী কিছু না হলেও চলবে।”

কবীর ঈষৎ হেসে বলল,

“এতোটা ভুল ধারণা যে তোশা তোমার কাছাকাছি চলে এলে সব বদলে যাবে।ও আমার ফিউচার ওয়াইফ।কোনো বন্ধু নয় যে নতুন কাওকে পেয়ে আমাকে ভুলে যাবে।”

ফিউচার ওয়াইফ দুটো শব্দে কিছু একটা ছিল।মিনহাজ ও প্রতীক দুজনের কপালে কিঞ্চিত রেখার উদয় ঘটলো।

“তাহলে নাটকে অভিনয় করতে দেন।কন্ট্রাক বহাল থাকুক।প্রমাণ হয়ে যাক।”

“তোশা আমার কাছে কোনো খেলনার বস্তু নয় যে আমি তোমার সঙ্গে যুদ্ধে নামবো।সে আমার কাছে সম্মানীয় ও বিশ্বাসযোগ্য।”

“ভয় পাচ্ছেন কবীর শাহ?আমি কিন্তু আপনার মতোন কালো নই।এক ধাপ এগিয়ে আছি।”

প্রতীক ভ্রু দুটো খানিকটা উপর নিচে করলো।সামনে বসে থাকা কালো হীরাকে দ্বিধায় ফেলতে পারলে অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে।

“ভয় সেই পায় যার কাছে হারানোর মতোন কিছু থাকে।যে মানুষ আমার সঙ্গে বিন্দু বিন্দুতে জড়িয়ে গিয়েছে সেখানে হারানোর প্রশ্ন আসেনা।আমি জানতে চাচ্ছি না কিছু।আইনী জটিলতা না থাকলে কন্ট্রাকটি বাদ যাবে।একটি নাটকের জন্যই তো।আর যদি ফিরে আসার পথ না থাকে তবে আমি যা বলবো সেভাবে কাজ করতে হবে।”

কবীর উঠে দাঁড়ালো।এমন অসাধারণ বডি স্ট্রাকচার মিনহাজকে বেশ অভিভূত করলো।চল্লিশ বছর বয়সে এমন অনেক নায়ক আছে যারা নিজেকে মেইন্টেইন করতে পারেনা।সেক্ষেত্রে একজন পুরোদস্তুর বিজনেসম্যান হয়ে কবীর নিজের যৌবনকে ধরে রেখেছে যা প্রশংসার দাবিদার।ফিরে যাওয়ার পূর্বে কবীর পুনরায় বলল,

“ভবিষ্যতে যেন আমার নায়িকা বলে সম্বোধন করতে না শুনি প্রতীক।ধূ র্ত তা কিছু মানুষের স্বভাবে জড়িত।আশা করি তুমি এই ভা ই রা স মুক্ত।এবং তোমার মা কে বলবে ভালো পাত্রীর জন্য ঘটকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।এরকম রাস্তাঘাটে যাকে দেখবে তাকে পছন্দ হলে তবে চৌদ্দ শিকের পিছনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।”

(***)

“কবীর শাহ ক্ষমা করে দেন।আর কখনো না বলে কিছু করবো না।এই কবীর শাহ,ফোনটা ধরেন।আমি কিন্তু তা নয় বাসায় চলে আসবো।এরপর..কী হলো?এসএমএস গুলোর জবাব দেন তো।”

ফোনটি অনবরত ভাইভ্রেট হচ্ছে।কবীর উজ্জ্বল হতে থাকা স্ক্রীনের পানে তাঁকিয়ে আনমনে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে।তোশা নামক মেয়েটি গত দুদিন ধরে অনবরত ফোন, ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছে।এমনকি আজ অফিস অবধিও চলে এসেছিল।কিন্তু কবীর দেখা করেনি।মিটিং এর বাহানায় দুই ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে পরবর্তীতে বাড়ী চলে যেতে বাধ্য করেছে।তোশার সঙ্গে এরকম করার কারণ খুব সাধারণ।মেয়েটি বড় বেশী বুঝে।যখন কবীর শুনলো অভিনয় করবে ঠিক তখুনি ফোনে অনেকগুলো কড়া কথা শুনিয়েছে।এবং গত দুদিন ধরে কথা বলেনা।এতে যদি মেয়েটা একটু জব্দ,একটু শুধরে যায়।বাচ্চামো করা বন্ধ করে।ঘড়িতে এখন রাত বাজে একটা।কবীর বারান্দায় ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।চারিধারে অন্ধকারে ডুবে আছে।তোশা বিশ মিনিট ধরে কোনো ফোন দিচ্ছে না।কবীর ধরে নিলো মেয়েটা ঘুমে।হুট করে নিচে কোনো একটা শব্দ হলো।কবীর ল্যাপটপটা কোল থেকে সরিয়ে রেখে নিচে তাঁকিয়ে দেখতে পেলো কেউ একজন আহনাফকে ধরে গেটের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে।ছোটখাটো ছিমছাম শরীরটা চাদরে আবৃত।শীতল হয়ে গেলো কবীরের শরীর।ছেলেটি তার প্রাণ।বড় বড় পা ফেলে কবীর নিচে নামছে। যেটা দূর থেকে দেখলে লাফানো মনে হবে।মাত্র দুই মিনিট পরেই অপরিচিত শরীরটির ঘাড় চেপে ছেলেকে নিজের দিকে টেনে নিলো সে।

“কে তুই?আমার ছেলের সঙ্গে কী তোর?নয়ন,নয়ন।লাইট অন করো এখানের।”

নয়ন কবীরের বাড়ীতে দারোয়ান হিসেবে থাকে।চেয়ারে বসে ঝিমিয়ে নিচ্ছিলো।চকিত হয়ে মুহুর্তেই মনিবের কথায় লাইট টিপে উজ্জ্বল করে দিলো চারিধার।কবীরের হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামার শব্দে সকলে জাগ্রত হয়ে গেছে।অপরিচিত মানুষটি হুট করে কাঁপছে।কবীরের নাকে চেনাপরিচিত সুবাস এলো।মাথার কিছু একটা আসতেই শীতল স্রোত বয়ে গেলো শরীর জুড়ে।শক্ত মনটা বারবার বলছে শয়তান মেয়েটা যেন না হয়।কিন্তু ভুল প্রমাণ হলো কবীর।নতমুখী তোশা তার দিকে ঘাড়ে হাত দিয়ে ফিরে দাঁড়ালো।

“এখানে কী করছো দুজনে?এতো রাতে তাও?তোশা এই বাড়ীতে কীভাবে এলে?জবাব দাও।”

কবীরের এতো রাগান্বিত কণ্ঠ কখনো শুনেনি আহনাফ।সে ছোট্ট করে বলল,

“আব্বু।”

“চুপ।বাঁদর দুটো।”

ব্যস বাবার ভয়ে কেঁদে দিলো আহনাফ।এই সেই কান্না নয় বরং চিৎকার করে কান্না।নিজের প্রাণ প্রিয় আইসক্রিমের ছোঁয়ায় কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।মুহুর্তেই ফর্সা বাচ্চাটি লাল হয়ে উঠলো।কবীরের রাগ কয়েকশো গুণ বেড়ে গেলো এতে।চিল্লিয়ে বলল,

“তোশা গালের মধ্যে দশ টা চ ড় না খেতে চাইলে এখুনি বলবে এখানে কী করো?কীভাবে এলে?উত্তর মন মতো না হলে বে’তের বাড়ী পরবে পিঠে।”

কবীরের হুমকি শুনে আহনাফকে জড়িয়ে ধরে কেঁপে উঠলো তোশা।মুখ দিয়ে ‘আম্মু’ ডাকটি বের হয়ে এলো।ওদিকে বাড়ীর সকলে উপস্থিত সেখানে।ধরা পড়ে যাওয়া কিংবা ভয় পেয়ে কেঁদে দিলো তোশা।উষ্ণ শ্বাস ফেলে কবীর নিজের কপালে হাত দিলো।এদিকে দুই দস্যু একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে।দর্শক বাড়ীর সকলে।আড়চোখে নিজ বাবার দিকে তাঁকালো কবীর।যে বড় নির্বিকার হয়ে আছে।মনে মনে কবীর নিজের উদ্দেশ্যেই বলল,

“চল্লিশ বছর বয়সে বাবার কাছে কীনা শেষমেশ প্রেমিকা নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে।এর থেকে দস্যুটার উপর রাগ না করা ভালো ছিল বোধহয়।”

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সর্বোচ্চ রেসপন্স করবেন পাঠকগণ।দেখি পরের পর্বে কী হবে বলে মনে হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here