তুমি অতঃপর তুমিই পর্ব-১৮ (প্রথম খন্ডের শেষ পর্ব)

0
5258

তুমি অতঃপর তুমিই
পর্ব-১৮
#Taniya_Sheikh

ইরার মৃত্যুর তিনদিন অতিবাহিত হলো। ইমার ছোটো মামা-মামি কন্যার মৃত্যু শোকে পাথর। ইমা সব ভুলে মামা-মামির সেবা করছে।বড়ো মামি, বড়ো মামাও সারাক্ষণ বিষন্ন মুখে থাকে। আরশাদকে আইসিইউ থেকে বেডে শিফট করা হয়েছে। জ্ঞান ফিরলেও নির্বাক চেয়ে থাকে শুধু। ইমা মাকে নিয়ে গতকাল দেখা করে এসেছে ওদের সাথে। আরশাদের বাবা ওদের দেখে হাউমাউ করে কেঁদেছে। ইমা তাকে সান্ত্বনার কোনো বানীই শোনাতে পারি নি। চুপচাপ চলে এসেছে সেখান থেকে। ইমার মায়ের শরীরও তেমন ভালো যাচ্ছে না। আরশাদকে দেখে আসার পর থেকেই তার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করছে ইমা। সবসময়ই সাথেই ছিল। না সবসময়ই নয়, পাঁচ মিনিট মাকে একা ওয়েটিং রুমে বসিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গিয়েছিল সে। তারপর থেকেই একেবারে চুপ করে আছেন ওর মা৷ জিজ্ঞেস করলেও জবাব দেননি। এতো চিন্তার মধ্যে মা’কে আর খেয়াল করে নি ইমা। ফিরে এসে কতো কাজ সে করেছে। রাতেও কাজ করেছে। কাজ না থাকলেও এটা,ওটা করে নির্ঘুম রাত পার করেছে ইমা। ঘুমালেই ইরা রক্তাক্ত শরীরে চিৎকার করে ওকে বলে,

” তুমি সবার জন্য সব পারো, কেবল আমার বেলায় তুমি চুপ থাকো। বলেছিলাম বিয়ে দিও না। তোমরা শুনলে না। দেখো আমাকে। দেখেছ? খুশি হয়েছ না, বলো? এই রক্তলাল শাড়িতে সুন্দর লাগছে না আমাকে, বলো?” কথা শেষ করেই কী ভয়ানক চিৎকার কানে বাজত ইমার। নিমেষেই ঘুমের ঘোর কেটে যেত। রাতের ভয়,ডর উপেক্ষা করে ছুটে যেত ইরার কবরের পাশে। খুব কাঁদে তখন ইমা। কেউ দেখে না ওর কান্না। সবার চোখে পাষান মূর্তি ও। এতো মানুষ যখন কেঁদে ভাসিয়েছে, ইমা তখন অনুভূতিশূন্যের মতো এটা, ওটা করছে। এমন করলে লোকে তো বলবেই পাষান! ইমা কাউকে বলতে পারে না নিজের কষ্টের কথা। কতোটা বুকচাপা ব্যথা তার বোঝাতে পারে না কাউকে।

মামিকে কিছু খাইয়ে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় ইমা। মামি ঘুমিয়ে যেতেই বাইরের বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়েছে। পুরো বাড়িটা খাঁ খাঁ করছে কী এক শূন্যতায়। আগের মতো নেই কোনো হুল্লোড়, চেচাঁমেচি, হাসির শব্দ। ইমা এই তিনদিনে আয়নার সামনে যায় নি। বিবর্ণ মুখ,উসকোখুসকো চুল, আর নিস্প্রভ চোখের চাহনী। ইমা ধীর পায়ে রুমে আসে। সামনে ড্রেসিং টেবিলটার সামনে দাঁড়িয়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। শুকনো ঠোঁট কিছুটা ফেটে ফেটে গেছে। একটু ফাঁক করতে গেলেই ব্যথা জেগে ওঠে। তবুও সে ব্যথা মনের ব্যথার কাছে কিছুই না। দর্পণে নিজের প্রতিচ্ছবির উপর হাত রেখে শীতল গলায় বলে,

” তুমি আসছ না কেন শান? আমি যে ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যাচ্ছি। প্লীজ তাড়াতাড়ি আসো।”

সিঙ্গাপুরের একটি হসপিটালে অচেতন মঈন খানের হাত ধরে বসে আছে শান। সেই রাতেই ইমার্জেন্সি তাকে ঢাকা ফিরতে হয়েছিল। বড়ো বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে হঠাৎ। ল্যাব এইডে রাখা হয়েছিল একরাত। সেখান থেকে পরদিন সিঙ্গাপুর। বড়ো বাবার অসুস্থতায় পুরো পরিবার ভেঙে পড়ে। শানের কোনো হুশ ছিল না আশেপাশের চিন্তা করার। ইমরোজকে কল করে ইরার খোঁজ করার কথা সে আগেই বলেছিল। কিন্তু তারপর আর কোনো খোঁজ শান নিতে পারে নি। পরিস্থিতিই তাকে ইমার খোঁজ নেওয়ার অবসর দেয়নি। একদিকে মঈন খানের অসুস্থতা অন্যদিকে শায়লা খানের অসহায়ত্বের কান্না। শায়লা খান সেই প্রথম শানের সাথে ভালো ব্যবহার করেছে। পুরো দুইদিন শানের হাত ছাড়ে নি। সিঙ্গাপুর সাথে করে নিয়ে এসেছে। শান এতোকিছুর মাঝেও চেষ্টা করেছিল ইমার খোঁজ নেওয়ার,কিন্তু সেখানে আরেক বাধা হয়ে দাঁড়াল মোবাইল। শানের মোবাইল হঠাৎ করে নিখোঁজ বলতে গেলে চুরিই হয়েছে। ইমার মোবাইল নাম্বার মুখস্থ রাখেনি সে। অন্যদিকে ইমরোজের টাও না। সুতরাং ইচ্ছা থাকলেও সে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না এমুহূর্তে। তিলে তিলে কষ্ট পাচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত ইমার বিরহে।

” শান, বাবা,কোথায় তুই?”

শান মাথা তুলে দরজার দিকে তাকাল। শায়লা খানের চোখে মুখে আতঙ্ক দেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শান। এই তিনদিন আগেও শান ভাবে নি, শায়লা খান কোনোদিন তাকে মা বলার সুযোগ দেবে, অথচ আজ শান তাকে মা বলতে পারে। শান একটু নজরের আড়াল হলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শায়লা খান। এই যেমন এখন পড়েছে। মিনিটের ব্যবধানে ছুটে এসেছে শানের খোঁজে। উঠে দাঁড়ায় শান। বড়ো মা’কে ধরে আবার ফিরে আসে পাশের কেবিনে। বেডে শুইয়ে দিতেই শানের হাত ধরে শায়লা বলে,

” আমাকে ছেড়ে কোথাও যাস না বাবা।”

” কোথাও যাচ্ছি না। আপনি ঘুমান।”

পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই চোখ বোজে শায়লা খান। মা-বাবার এই দুঃসময়েও মাহিব দূরে। একবার মাত্র এসেছিল হাসপাতালে। একনজর দেখে, কিছুক্ষণ মায়ের সাথে ঝগড়া করে চলে গেছে। তারপর থেকেই কেমন ভয়ে ভয়ে থাকে শায়লা খান। শানকে বার বার বলে, মাহিবকে সে ত্যাজ্য করবে। এমন কুসন্তান পেটে ধরে সে পাপ করেছে। শান যেন তাকে একা ফেলে না যায়। এই কথা না বললেও শান কোনোদিন এদের এই অবস্থায় ছেড়ে যেত না। জন্ম না দিক তবুও এদেরকেই পিতা -মাতা, এদের পরিবারকে পরিবার ভেবেছে। এদের এই চরম মুহূর্তে মাহিবের মতো সব ছেড়ে, গায়ে বাতাস লাগিয়ে নিজের স্বার্থের কথা ভাবত না কোনোদিন। পরের জন্যে নিজেকে বিলিয়ে ভেতরে ভেতরে এক অজানা ভয়ে দিন পার করতে লাগল শান। মন প্রাণ ছুটে যাচ্ছে ইমাকে একনজর দেখবে, ও কেমন আছে জানবে বলে। কিন্তু সে আশা কেবলই আশা হয়ে বুকে লুকিয়ে আছে। এখানে কেউ এমন অবস্থায় নেই, যাকে সে মনের কথা বলে হালকা হবে। সবার কষ্ট দূর করতে গিয়ে নিজের কষ্টে জ্বলছে সে। বড়ো মায়ের বিছানায় মাথা রাখতেই ক্লান্ত শরীরে ঘুম নেমে এলো শানের। ঘুমের রাজ্যে হাস্যোজ্জ্বল এক চঞ্চল তরুনী তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। একটু একটু তাকে ছোঁবে বলে এগোচ্ছে শান। চোখের সামনে ধোঁয়াশা, কুয়াশা হয়ে গেল হঠাৎ।

” ইমাপু, তোমাকে ফুপি ডাকছে।”

সাজ্জাদ কথাটা বলেই ছুটে চলে গেল। আজকাল সামনে আসে না সাজ্জাদ। কারো সাথে তেমন কথাও বলে না। সুযোগ পেলেই ইরার কবরের পাশের গাছটায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদে। ইমা রুম ছেড়ে বাইরে এসে দাঁড়ায়। সর্বদক্ষিণের কৃষ্ণচূড়া গাছটা খুব পছন্দের ছিল ইরার। মন খারাপ হলেই সেখানে গিয়ে বসে থাকত। আর এখন চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে। চোখের কোনের জল টুকু মুছে নিচে নেমে আসে ইমা। মায়ের রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে। আগুন জ্বলা দুটি চোখ ইমার দিকে স্থির। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ইমা। এগিয়ে মায়ের দিকে যেতেই, ওর মা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাথাড়ি চড় নেমে আসে ওর উপর। ইমা স্তম্ভিত। বিভা মারতে মারতে একসময় ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। হাতের মধ্যে তখনও ইমার ছেঁড়া চুল জড়ানো। সামনে উপুড় হয়ে পড়ে আছে ইমা। অসাড় শরীরে অশ্রুসিক্ত চোখে চেয়ে আছে মায়ের দিকে। কী দোষে শাস্তি পেল তাই যেন ও দু’চোখ জানতে চাইছে। বিভা তারপর যা বললো, তা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না ইমার এই দূর্বল মন। সর্বশক্তি দিয়ে হেঁচড়ে শরীরটাকে মায়ের পায়ের কাছে এনে দু’হাত জোড় করে কাকুতি করে। বিভার কঠিন চাহনী সে কাকুতি বিন্দুমাত্র গ্রাহ্য করল না। গতকাল ঐ মেয়ে আবার এসেছিল তার সামনে। রাক্ষুসী! হ্যাঁ রাক্ষুসী ফিরে এসেছে বিভার দুয়ারে। তার স্বামী-পুত্র খেয়ে এবার এই একমাত্র অবলম্বনটাকে শেষ করবে বলে পিছু নিয়েছে। বিভা কোনোদিন এমন হতে দেবে না। সে অনেকদূরে চলে যাবে। তার মেয়েকে এই মৃত্যুপুরীর ছায়া থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে। বিভা কপাল চাপড়ে ইমার মুখে দিকে ঝুঁকে বলে,

” হতভাগী, দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে, তুই ঐ শানকেই কেন আপন করতে গেলি? ও যে তোর জন্য মরণ ফাঁদ। আমার ইমতিয়াজকে খেয়েছে ওরা। তোরেও মেরে ফেলবে। আমার ইরা, তুই জানিস ইরা কেমনে মরছে? জানিস না। আমি জানি। ঐ পিশাচী আমারে বলছে। আমার ইরা! কী কষ্টটাই না দিয়ে মারছে ওরে। তোরেও মারব বলে হুমকি দিয়ে গেছে। আমি তোরে মরতে দেব না। আমার তুই ই তো আছিস। তোর কিছু হইলে আমি কেমনে বাচুম। আমরা এই খানে থাকব না। অনেকদূর চলে যাব। যাবি না বল?”

ইমা মাথা নাড়ায় ও যাবে না। বিভা ঠোঁট চেপে কাঁদে। ইমার অসাড় দেহ বুকে জড়িয়ে চাপাস্বরে বলে,

” আমি তোরে মরতে দেব না রে মা। ওরা তোকে মেরে ফেলবে বিশ্বাস কর। আমার কথায় রাজি হ মা। রাজি হ। নয়ত,,”
————————————————————————————————-
ইমা চোখের সামনে ঝাপসা দেখে। ধীরে ধীরে দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসে ওর।

একসপ্তাহ পর দেশে ফেরে শান। মঈন খানের অবস্থা আগের থেকে ভালো হওয়ায় শায়লা খানও স্বাভাবিক হয়েছেন৷ শান তখনই ইমা সম্পর্কে সবকথা খুলে বলে তাকে। শায়লা খান অনুশোচনা করে সব শুনে। শানকে দ্রুত দেশে ফেরার আদেশ করেন। নিজের হাতের বালাজোড়া দেন ইমাকে পুত্রবধূ স্বীকার করে। দেশে ফিরে ধুমধাম করে ইমাকে বরণ করার কথাও বলেন তিনি। শান দেশে ফিরেই ছুটে আসে ইমার মামার বাড়ি। হিসেবে কয়েকদিন! কিন্তু শানের কাছে মনে হচ্ছে একযুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে সে ইমাকে দেখে নি। বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে গেট ঠেলে ভেতরে ঢোকে।

” শান,” দোতলার কড়িডোর থেকে চিৎকার করে ডাকে ইমা। দৌড়ে সিঁড়ি দিকে ছোটে। কী হাল হয়েছে ওর ইমার। শান দু’হাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে। সিঁড়ি মাড়িয়ে নিচে আর আসে না ইমা। এতোক্ষণ লাগে নিচে আসতে! শান শঙ্কিত চোখে এগিয়ে যায়। এগিয়ে যেতে যেতে,

” স্যার, এসে পড়েছি।” ড্রাইভারের ডাকে চোখ মেলে তাকায় শান। এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল সে। গাড়ির ভাড়া চুকিয়ে নেমে দাঁড়াল ইমার মামার বাড়ির সামনে। ঠিক একটু আগে যেমন দেখেছিল। বুকটা দুরুদুরু করছে কেন যেন। নিজেকে সামলে গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকল।

” আপনি?”

শানকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখেই সাবিহা এগিয়ে এলো। শান সাবিহার কথার জবাব দেওয়ার আগে দোতলার দিকে তাকাল। কিছু নেই সেখানে। সাবিহা সামনে হেঁসে ভ্রু কুঁচকে বললো,

” কাকে খুঁজছেন? ইমাকে?”

শান চোখ সরিয়ে সাবিহার দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ বলার পূর্বেই সাবিহা মুখ ভেংচে বললো,

” কী আর বলব? মানুষের সামনে মানসম্মান আর রাখল মা -মেয়েতে। মাইয়্যা তো ছাইড়া দিয়া রাখত। কী জানি, কী করছে! কার লগে! মুখ দেখাইতে পারব না বইলা রাতের আন্ধারে পলাইছে। যাওনের আগে চিঠি ফালাই থুইয়া গেছে তাগো যেন না খুঁজি। তা আপনি কারে খোঁজেন? মা না মাইয়্যারে?”

শেষ কথাটা বিদ্রুপ করে বলে সাবিহা। শান অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাতেই সাবিহার মুখ চুপসে যায়। দ্রুত সামনে থেকে কেটে পড়ে সে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না শান। হাত -পা কাঁপছে রীতিমত। ইমা নেই। কোথায় গেছে? কী হয়েছিল ওর সাথে? এসব আবার তার দুঃস্বপ্ন নয়ত। হ্যাঁ!সে এখনই হয়ত জেগে উঠবে। তারপর দেখবে তার সামনে হাসি মাখা মুখে দাঁড়িয়ে আছে ইমা। ঠোঁট ফুলিয়ে এগিয়ে এসে বলবে,

” কাইষ্টা কোথাকার! এতোদিন কোথায় ছিলেন? যান কথা নেই আপনার সাথে।”

“ইমাআআআআ,,,,”

সাবিহা সচকিতে ঘুরে তাকায় চিৎকার শুনে। পাগলের মতো শানকে উপরে উঠতে দেখে হায়ঃহায়ঃ করে লোক জড়ো করে। ইমার রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে শান। কিছুই নেই রুমে। শূন্য! এই চারদেয়ালে কোথাও কিছু নেই। তার ইমা নেই। হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে শান। বাড়ির লোক উপরে আসার আগেই সেখানে সাজ্জাদ এসে উপস্থিত হয়। শানের সামনে মাথা নুয়ে দাঁড়ায়। শান ওর দিকে তাকাতেই একটা চিঠি ফেলে দৌড়ে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়। চিঠিটা হাতে নিয়ে বসে আছে শান। দরজায় ভীর করেছে সাবিহা সহ আরও অনেকে। সবার চোখে কৌতূহল। শান ধীরে ধীরে চিঠির ভাঁজ খুলল।

” কী বলে সম্বোধন করব আপনাকে?
ধোঁকাবাজ নাকি বিশ্বাসঘাতক!
যাই বলি হয়ত কম হবে। কী চমৎকার অভিনয় করেছেন।ওয়াও! এই চিঠি যখন আপনার হাতে তখন আমি অন্যকারো, নয়ত না ফেরার দেশে। এমন যত্ন করে ধোঁকা দিয়েছেন যে, বাঁচার ইচ্ছেটাই মরে গেছে। জানি না এই চিঠি কোনোদিন পাবেন কী’না। কারন এখন তো আমার প্রয়োজন আপনার শেষ। যা হোক! কথা এবং সম্পর্ক এখানেই শেষ আমাদের। আর যেন দেখা না হয় ইহজনম অথবা পরজনমে।”

চিঠিটা হাতের মুঠে দুমড়ে মুচড়ে উঠে দাঁড়ায় শান। দরজার দিকে ঘুরতেই সবাই সরে যায়। এলোমেলো পায়ে,উদভ্রান্ত বেশে রাস্তায় নামে। আকাশে হঠাৎ বজ্রপাত। ঘনকালো মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশ। সবাই ছুটোছুটি করছে। শান মাঝ রাস্তা ধরে হাঁটছে। বৃষ্টি নামল প্রবল বেগে। শান হেঁটে চলছে গন্তব্যহীন। জীবনের সব হিসেব তার এলোমেলো। স্বপ্নের পৃথিবী তার দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে। বিনা দোষে সে আজ বিশ্বাসঘাতক। বাঁচার মাধ্যম হারিয়ে অর্ধমৃত। টালমাটাল পায়ে চলতে না পেরে ফুটপাতের উপর ধপ করে বসে পড়ে শান। দু’হাতে মুখ ঢেকে বৃষ্টির তালে তাল মিলিয়ে নয়নজলে ভাসল তার পৃথিবী। হাত থেকে পড়ে যাওয়া চিঠিটা বৃষ্টির পানিতে ভাসতে ভাসতে দূরে হারিয়ে গেল। তার জীবনে “তুমি” বলে যে ছিল, সে হারিয়ে গেল। এখন তুমি বলতে কিছুই নেই তার, কেউ নেই। তুমি অতঃপর বিরাট এক শূন্যস্থান।

[ গল্পটার প্রথম খন্ড শেষ। দ্বিতীয় খন্ড সুযোগ- সুবিধা মতো ইনশাআল্লাহ ভবিষতে পেয়ে যাবেন। যতো প্রশ্ন রেখেছি এই খন্ডে সবটার জবাব পাবেন দ্বিতীয় খন্ডে। ভালো থাকবেন সবাই ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here