#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আমাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার ঠিক কোথা থেকে পেয়েছেন তোশামণি?”
কবীরের মুখ থেকে আপনি ডাকটা নিয়ে বিভোর হলো তোশা।সে সচারাচর জানে মানুষের রাগ উঠলে তবে সে অপর মানুষটিকে আপনি বলে সম্বোধন করে।তার প্রতি কবীরের রাগ তখুনি আসবে যখন সত্যি করে মনে করবে তোশা উপস্থিত আছে।কিন্তু এভাবে এতো সকালে কোনো রমণীকে দেখার আশা না থাকলেও সাক্ষাৎ হওয়াটা তো অপ্রত্যাশিত।এমন বহুজনকে তোশা বোকা বানিয়েছে।পরবর্তীতে উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।বহুজন নয় কবীর শাহ একজন।নিষ্ঠুর মানব।
“জিনদের অনুমতি লাগেনা।”
নেহাৎই কবীরকে বাজিয়ে দেখার জন্য কথাটি বলল।এতে অবশ্য ক্ষতি হলো তোশার।তাকে নিজ থেকে সরিয়ে দিলো কবীর।
“বাসায় যাও।নাটক বহু হয়েছে।”
“আমি নাটক করছিনা।”
“বিষয়টা নতুনরুপ পাক আমি চাচ্ছি না তোশা।প্রথমদিন মজা করছো মেনে নিয়েছি।কিন্তু এভাবে শাড়ী পরে আসা বড্ড বেমানান।”
ধরা পড়লেও দমে যাওয়ার পাত্রী নয় তোশা।তাইতো খুব আত্মবিশ্বাসের সুরে বলল,
“আমার অভিনয়কে কতো নাম্বার দিবেন?একশ দুইশ তিনশ তে?এভাবে চলতে থাকলে হলিউড, বলিউড, টলিউড সব কনফার্ম।আমি তো অডিশনও দিচ্ছি।”
বাজপাখির মতোন শি কা রি দৃষ্টিতে মেয়েটিকে দেখছে কবীর।তার অপরিপক্ক ফলটি এখন পূর্ণরুপে পরিপক্ব হয়েছে।এতো সুন্দর সাজটা নষ্ট করে দিতে মন চাইলো কবীরের।সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে বিধায় এখন ভ য় ং ক র ইচ্ছা জাগছে কীনা।।মূদু শীতল সমীরণে সে কেঁপে উঠলো। নিজের মন পরিবর্তন করার জন্য হুট করে তোশার গালে আস্তে করে চ ড় মারলো কবীর।
“অভিনেত্রীর অভিনয়ের পারিশ্রমিক।”
হতভম্ব তোশার ত্বকে আ ঘা ত না হলেও চড়ের ভারে সে যেন শ্বাস নিতে ভুলে গেলো।এতোটা নির্দয় কোনো ব্যক্তি হতে পারে?অশ্রুতে টইটম্বুর দুচোখ নিয়ে সে দেখছে কবীরকে।অথচ পুরুষটি আরামসে দৌড়াতে লাগলো।কিছু সময় হতভম্ব থেকে আশেপাশে দেখলো তোশা।অনতিদূরে লোকজন হেঁটে যাচ্ছে।ভারী লজ্জা অনুভব হলো যুবতীর।অথচ আশ্চর্যের বিষয় ভালোবেসে জড়িয়ে ধরার সময় এমন লেগেছিল না।অভিমানে,আত্মগ্লানিতে অপ্সরাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো তোশা।পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে ফিরে এলো।কবীর ততোক্ষণ দৌড়ের কারণে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে।অকস্মাৎ তার পিঠে ছোট হাতের কয়েকটা ঘু ষি পড়লো।
“মা র লে ন কেন?মা র লে ন কেন?আমি কী করেছিলাম হ্যাঁ?”
“তোশা কী করছো?”
ঘুরে তোশার দুহাত নিজের হাত দাঁড়া আঁকড়ে ধরলো কবীর।দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“এমনি দিয়েছি।ব্যাথা তো লাগেনি।”
“তাও দিলেন কেন?”
“আমাকে যে দিলে?”
তোশা জবাব না দিয়ে কবীরের মুখ পানে তাঁকিয়ে রইলো।শুভ্র নাকটা চেরী টমেটোর মতোন রক্তিম আভা ছড়াচ্ছে।এইতো চোখে জমা জলরাশি যেকোনো সময় মেদুর গাল গড়িয়ে পড়বে।যুবতী নাক টেনে কবীরের বুকে মাথা ঠেকালো।পুরুষটি ধরে নিয়েছিল হয়তো অভিমান ব্যক্ত করবে।কিন্তু ত্বকে চিকন দাঁতের আভাস পেয়ে থমকে গেলো।ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে আ ঘা ত টি।শান্তসুরে কবীর বলল,
“তোশামণি আমি ব্যাথা পাচ্ছি।এগুলোতে আমার খারাপ লাগেনা?”
নিশ্চুপ তোশা।ক্ষণবাদে ছেড়ে দিয়ে সিক্ত ঢোক গিললো।গলায় নোনতা স্বাদ পেলো অবশ্য।
“আমি র ক্ত ভুলে খেয়ে ফেলছি কবীর শাহ।পেট খারাপ হবে না তো?”
“অবিশ্বাস্য।এই তোমাকে নিয়ে আমি আজই সাইক্রাটিস্টের কাছে যাচ্ছি।আর দেখি দাঁত দেখি।”
নরম ঠোঁট আঙুলের সাহায্যে উপরে উঠালো কবীর শাহ।তোশার ছে দ ন দাঁতে র ক্ত লেগে আছে।
“তুমি নিশ্চয় ভ্যাম্পায়ার।যাও এখুনি বাসায় যাও।তাহিয়াকে আজকে বিচার দিবো।”
“দেন আমার কী তা?মা র লে ন কীসের জন্য?”
“মজা বুঝো না?শয়তান মেয়ে।যাও এখুনি বাসায় যাও।শরীরে বড় হলে কী হবে?দিনদিন আরো বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো।”
তোশা ফিরে যাওয়ার আগে শুধালো,
” র ক্ত খেলে পেট খারাপ হয়না তো?বললেন না যে?আর আপনার উপর অধিকার আছে আমার।হেইট ইউ।হেইট ইউ।হেইট ইউ কবীর শাহ।”
ধুপধাপ পা ফেলে অতি সন্তপর্ণে বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো তোশা।কবীর নিজের ক্ষ ত স্থান দেখে উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।অন্তত এটা বুঝতে পারলো তোশার আবেগ,অনুভূতি খারাপ লাগার পরিমাণ খুব বেশী।তার সামান্য আ ঘা ত মেনে নিতে পারেনি।
(***)
“মেয়েটির নাম তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।বর্তমানে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে।মা-বাবার ডিভোর্স হয়েছে আরো অনেক বছর আগে।নানার বাড়ীতে থাকে।এমনি খুব ভালো, ভদ্র।আপনার সাথে খুব ভালো মানাবে স্যার।”
“বলছো?”
“অবশ্যই।আপনি চাঁদের মতোন দেখতে।”
নিজের লোকের কাছে প্রশংসা শুনে প্রতিকের মুখের উজ্জ্বলতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।শীতাতপ নিয়ন্ত্রণিত কক্ষ হওয়ার পরেও সে ঘেমে উঠেছে।টিস্যু দিয়ে কপালের ঘামটি মুছে বলল,
“অফ স্ক্রীন জুটি কেমন হয় সেটা পরে দেখা যাবে।কিন্তু আপাতত অন স্ক্রীনে দেখি মানুষ কতোটা পছন্দ করে।অভিনয় কেমন?”
“মোটামুটি চলে।”
“তবে পরবর্তী নাটকে তোশাকে নিয়ে নাও।কিন্তু আমি যে অন্যরুপে পছন্দ করেছি সেটা যেন না জানে।”
“কখনো জানবেনা স্যার।আপনার শ্যুটিং শুরু হবে।”
“ওকে।আমি আসছি একটু পর।”
ব্যক্তিটি চলে গেলো প্রতীক ল্যাপটপের স্ক্রীনে পুনরায় তাঁকালো।সেখানে হাসৌজ্জ্বল তোশার একখানা ছবি রয়েছে।যেটা আজ থেকে তিন মাস আগের তোলা।কোনো এক অডিশন হুট করে দিয়েছিল মেয়েটা।তেমন ভালো অভিনয় না করার কারণে আগেই রি জে ক্ট হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে তোশার ছবিটা অজান্তে প্রতীকের সামনে চলে আসে।ওইযে প্রথম দেখার প্রেম।সেটা হয়ে গিয়েছে তার মধ্যে।প্রতীক আনমনে নিজের সঙ্গে বলল,
“দেখা হতে হতে প্রেমটা হয়ে যাবে তোশা চৌধুরী।এখন কবে দেখা হবে সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।”
(***)
“আহারে তোশা।তোমার কবীর শাহ একটু বেশীই অভিজ্ঞ।তাকে বোকা বানানো এতো সহজ হবেনা মনে হয়।আর ছোট্ট করে চ ড় টা দিয়েছে।দূর থেকে আমি দেখেছি।এমন তো কতো টিকুকে দেই আমি।এতো কাঁদার কী হলো?”
“বুঝবি না তুই।আমার কষ্ট হচ্ছে।কবীর শাহ একটুও ভালোবাসে না।”
“সেটা তো আমরা সকলে জানি।নতুন কিছু বল।”
তোশা সকাল থেকে কেঁদে যাচ্ছে।তার ভাষ্যমতে এতো সেজে যাওয়ার পরেও মজা করেও কীভাবে কবীর চ ড় টা দিলো?মায়া হলো না?অপ্সরা এতো বোঝানোর পরেও মানছেনা।তোশার যে আবেগ বেশী সেটা সে জানে।
“কান্না থামাবি তুই তোশা?”
“উহু,কবীর শাহ যতোক্ষণ অবধি না বলবে আমার সঙ্গ না দিবে ততোক্ষণ অবধি থামবেনা।”
“এটা কখনো হওয়ার নয় তুই জানিস।”
“তাহলে থামাবো না।”
“অসুস্থ হয়ে পড়বি তো।”
“তুই তাকে কল করে বল তোশা খুব কাঁদছে।”
হকচকিয়ে অপ্সরা জবাব দিলো,
“অসম্ভব।”
“না তুই ও আমাকে ভালোবাসিস না।”
অপ্সরা আরো কিছুসময় মেয়েটির কান্না দেখলো।পরবর্তীতে সহ্য করতে না পেরে তোশার ফোন দিয়ে কবীরকে কল করলো।পুরুষটি যতো সীম চেঞ্জ করুক না কেন?তোশা প্রত্যেকবার নাম্বার ম্যানেজ করে নিতো।দীর্ঘ চার মিনিট কথা বলার পর অপ্সরা বিরস মুখে বলল,
“তোর কবীর শাহ আসছে।রেডী থাকতে বলেছে।”
তোশার মুখে যেন মিঠা রোদের আভাস দেখা গেলো।সে এতো কান্নার মধ্যে হাই তুলে বলল,
“যাক অভিনয় কাজে লাগলো।তুই ও বুঝতে পারলি না যে আমি নাটক করছিলাম।হুহ আমার অভিনয়ের পারিশ্রমিক কীনা চ ড়?আজকে সারাদিন নাকানিচুবানি খাওয়াবো।হ্যাঁ রে আসতে কতোক্ষণ?”
অপ্সরা বারংবার চোখের পলক ফেললো।সে বুঝোছিল তোশা কার্যসিদ্ধির জন্য এমন করছে।পরক্ষণে মেয়েটির চোখের পানি দেখে মায়া হয়েছিল।দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে অপ্সরা বলল,
“কবীর শাহ লোকটা তোর এসব নাটক বুঝেও কেন যে কিছু বলেনা।আমি হলে সোজা কাজী অফিসে নিয়ে যেতাম।অন্তত মানসিক শান্তি তো থাকতো।”
চলবে।