সংসার
৫.
#WriterঃMousumi_Akter
আহনাফ সন্ধ্যার আগে ফেরার কথা বলে সাত দিন হয়ে গেলো আর ফিরে আসলো না।রোজ আমাকে ফোন দিয়েছে ফোন দিয়ে বিভিন্ন শান্ত্বনা ও দিয়েছে।এই প্রথম তাকে ছাড়া সাত টা দিন যেনো আমার জীবনে সাত বছর আহনাফ কে দেখি নি।সাত দিন পরে ফিরে এলো শ্বশুর বাড়ি থেকে।আহনাফ এসেই আমার কাছে অনেক হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলো।কিন্তু দিনে দিনে একটু একটু করে অশান্তি বাড়তে থাকলো।টুকি টাকি মান অভিমান নিয়ে চলছিলো দিন।তবে সব সময় আহনাফ কে পাশে পেয়েছি।আমার মন খারাপে সময় দিয়েছে।
বিয়ের দু’মাস পরেই মিরার প্রেগ্ন্যাসির নিউজ কানে আসে।সেদিন আমি পৃথিবীতে সব থেকে বেশী খুশি হয়েছিলাম।কারণ আমার মনে হচ্ছিলো এই সন্তান আমার হবে।এই সন্তান আমাকেও মা বলে ডাকবে আহনাফ কে বাবা ডাকবে।পুরা ফ্যামিলিতে যেনো খুশির মাতোয়ারা।এত খুশি আমি আহনাফ কে আমি কোনদিন হতে দেখি নি।একটা মানুষ প্রকৃত পক্ষে খুশি হলে কেমন লাগে সেদিন আহনাফ কে দেখে বুঝেছিলাম।
আহনাফের ওই খুশিটা যেনো ভোলার মতো নয়।
আমি ওইদিন দেখেছিলাম আহনাফ মিরার কপালে চুমু দিয়ে বলছে থ্যাংকিউ আমাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ খুশি আর উপহার টা দেওয়ার জন্য।আমার অপূর্ণ জীবন কে তুমি পূর্ণতায় ভরিয়ে দিয়েছো।আমি তোমাকে বিয়ে করার আগে এই সুখ টা অনুভব করতে পারিনি যে একটা পুরুষের বাবা হওয়ার আনন্দ টা কত বেশী আনন্দের।
সেদিন বুঝেছিলাম আমার সাথে আহনাফ ভাল থাকলেও তৃপ্তিতে ছিলো না।তাহলে ওর মনের আবেগ এভাবে প্রকাশিত হতো না।আসলে এটা হয়তো আমার ই অক্ষমতা।
সেদিন আহনাফ মিরা কে নিয়ে বাইরে গেলো অনেক শপিং করলো খাওয়া দাওয়া বাইরে থেকেই করে আসলো।আমার খোজ আর সেদিন নিলো না।
রাতে বাড়িতে এসে আমাকে বলে আশা তুমি আজ খুশি হও নি।আমি বললাম আজ আমি অনেক খুশি অনেক বেশী খুশি।আমাদের সন্তান হবে আহনাফ।আহনাফ আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে দেখো আমাকে মিরার পাশে থাকতে হবে তোমার পাশে বেশী থাকলে ওর মানসিক আঘাত লাগবে।এটা বাচ্চার জন্য ক্ষতির কারণ হবে।সেদিন থেকে আহনাফ একটু একটু করে দূরে যেতে লাগলো।বাইরে থেকে আর আমার জন্য খাবার আসে না।আহনাফ আর আমার খাবারের খোজ নেই না।অফিস থেকে ফোন দিয়েই মিরা খেয়েছে কিনা ওর গোসল হয়েছে কিনা সেদিকেই বিজি।কারণে অকারণে মিরার জন্য গিফট এসেছে।মিরাকে দেওয়ার জন্য আমার অত টা কষ্ট লাগে নি যত টা লাগতো আমার প্রতি অবহেলা দেখে।
সেদিন শ্বাশুড়ি মা আমাকে ভুল ভাল বুঝিয়ে নিজের ছেলের বিয়ের জন্য আমাকে রাজি বানালেন।উনার কথা মেনে নিয়ে সেদিন আমি জীবনের সব থেকে বড় ভুল করেছিলাম।একটা বাচ্চা কিনে আনলেও সুখি থাকতাম।কিন্তু শ্বাশুড়ি মা আমাকে ইমোশনাল ব্লাক মেইল করে বিভিন্ন ধরনের কথার প্যাচে ফেলে নিজের ছেলের বিয়ে দিলেন।আসলে নিজের মা আর পরের মা কখনো এক হয় না।
প্রতিবার আমাদের ম্যারেজ ডে আহনাফ বন্ধু কলিগ সবাই কে দাওয়াত করে অনেক বড় ভাবে সেলিব্রেট করে।আমি সারাদিন অপেক্ষা করছি আহনাফ আমাকে এসে হয়তো কিছু একটা উপহার দিবে।আহনাফ সেদিন ও একটা শাড়ি এনেছিলো।আমি হাত বাড়িয়ে নেওয়ার পরে বলে এটা মিরা কে দাও ও অন লাইনে পছন্দ করেছে।
আমি বললাম আমার জন্য কিছু আনো নি।আহনাফ বলে কেনো তোমার শাড়ি নেই।আমি তবুও বললাম আজ আমাদের ম্যারেজ ডে আহনাফ। তুমি তো সব বার ই আমাকে উপহার দাও।আহনাফ বিরক্তি নিয়ে বলে বিয়ের এত বছর পরে কি এগুলার সময় আছে।তাছাড়া কাজের চাপে খেয়াল ই নেই।বলেই আমার হাতে ২০০০ টাকা দিয়ে বলে একটা কিছু কিনে নিও।
সেদিন হালকা হেসে কষ্ট টা উড়িয়ে দিলাম।এটাই কি আহনাফ।ভালবাসা কি সত্যি এভাবে রং বদলায়।টাকা ই কি সব।
দিনে দিনে আহনাফের আমার প্রতি অবহেলা বাড়তেই থাকে।এখন আর আহনাফ ভুলেও আমার ঘরে আসে না।যদিও আসে তার মন আমার কাছে থাকে না।মন থাকে মিরার কাছেই।কেমন যেনো ছট ফট করে এসে।কেমন যেনো অন্য মনস্ক থাকে।সারাক্ষন ফোনেই বিজি থাকে।আগে আমি পাশে থাকলে ও ফোন ই অফ রাখতো।আর এখন আমার কাছে এসে ফোন চেপে সময় কাটায়।এখন আর আমার সাথে কিছু শেয়ার করে না।আহনাফের বুকে মাথা রাখলে ও আমাকে সরিয়ে সরিয়ে দেই।আমার রুমে আসলে ৫-৭ মিনিট পরেই আবার বেরিয়ে যায়।যদিও একদিন ঘুমোতে আসে বেড ছেড়ে ফ্লোরে ঘুমোয় তার নাকি গরম লাগে।যে মানুষ টা সারারাত আমাকে বাতাস করতো আজ সে আমার কাছে আসলে গরম অনুভব করে অথচ মিরাকে বুকের সাথে আগলে রেখে ঘুমোয়।
এভাবেই মিরার ডেলিভারির সময় এগিয়ে আসে। হসপিটালে ফুটফুটে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেই মিরা।বাচ্চাকে একটা বার কোলে নেওয়ার সুযোগ হলো না।কেউ আমাকে পাত্তাই দিলো না।মিরার বাবার বাড়ির মানুষ জন আহনাফের ফ্যামিলির সবাই মিলে হসপিটাল মাতিয়ে রেখেছে।ওখানে যেনো আমি বাইরের কেউ।ওদের মাঝে বড্ড বেমানান আমি।
আহনাফের মা কে বললাম মা বাবুকে একটু কোলে দিবেন আমার।আহনাফের মা আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বলেন এখানে কি তোমার।বাড়ি যাও গিয়ে রান্না করে হসপিটালে ভাত পাঠাও।কোলে নেওয়া তো আর চলে যাচ্ছে না।সাত দিন হসপিটালে রান্না করে খাবার পাঠালাম।
ওরা হসপিটাল থেকে আসার পরে আমি মিরাকে বললাম বাবুকে একটু আমার কাছে দাও মিরা।
মিরা বললো ভুলেও আমার ছেলের কাছে আসবে না।ও আমার ছেলে।তোমার কখনো সন্তান হয় নি তুমি যদি আমার ছেলের কোনো ক্ষতি করো।কি ভেবে মিরাকে আহনাফের সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম আর কি হচ্ছে।মানুষ কেনো এমন করে।সামান্য একটু মানিয়ে নিলেই তো হয়।
প্রতিটা দিন আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো।বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার জন্য বুকের মাঝে কি যে হাহাকার করতো।সুযোগ পেলেই গোপনে কোলে নিতাম।মিরা দেখলেই অশান্তি করতো।এমন কি আহনাফ ও ও সন্তান কে সেভাবে আমার কোলে দিতো না কারণ মিরার আপত্তি ছিলো।আহনাফ সন্তান পেয়ে আমার অভাব ভুলে গেছিলো।কিন্তু আমি আহনাফ কে হারিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছিলাম
আমি বুঝতে পারছিলাম আহনাফের ফ্যামিলিতে আমি একজন বাড়তি মানুষ। আমার কোনো প্রয়োজন ওদের কাছে নেই।আহনাফ ওর ছেলে ছাড়া এক মিনিট ও থাকতে পারে না।
মিরা বাবার বাড়ি গেলে আহনাফ আমার ঘরে আসলেও ছটফট করে।সারাক্ষণ ভিডিও কলে ছেলের সাথে কথা বলে।একটা সম্পূর্ণ ফ্যামিলি পেয়েছিলো আহনাফ।
আমি আহনাফ কে বলি আহনাফ তুমি কি আমাকে আর ভালবাস না।আমার কাছে আসলেও নিচে গিয়ে ঘুমোও।তোমাকে ছাড়া বড্ড কষ্ট হয় আমার।তুমি কেনো আমার সাথে এখন এমন করো।আহনাফ কে এগুলা বললে সে আরো বিরক্ত হয়ে যায়।কোনভাবে যেনো আমার উপস্হিতি ওর সহ্য হয় না।
একদিন আহনাফের ছেলে বেড থেকে পড়ে যায় আমি দ্রুত গিয়ে তাকে তুলে কোলে নিই।কিন্তু সম্পুর্ন দোষ আমাকে দেওয়া হয়।আহনাফ ভীষণ ভাবে আমার গায়ে হাত তোলে।জীবনে প্রথম আমাকে মারলো।
সেদিন আমি বুঝেছিলাম আমার জায়গা কোথায়?আহনাফের জীবনে মনে কোথাও যেনো আমি আর নেই।আমার থাকাটাই বড় অশান্তির কারণ।
আহনাফের ছেলের বয়স এক বছর হয়ে গিয়েছে।মিরা এখান আমাকে ডিভোর্স না দিলে সংসারে থাকবে না।
সংসার নামক জিনিস টাই আমার কপালে সইলো না।
চলবে,,
(আশার জীবনেও বদল আসবে,জীবন এভাবে যাবে না।সবার ই দিন বদলে যায়।অনেক আপু মেসেজ দিয়েছে ওদের অনেক কষ্ট হয় এটা পড়তে কিন্তু তাও এই স্টোরি টা ওরা পড়তে চাই।আমি খুব দ্রুত এটা শেষ করে দিবো।তবে আশার পুরা জীবনী দেখাবো)