প্রীতিলতা আসবে বলে ( সিজন ৩ পর্ব ৭+৮)

0
630

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
পার্ট :৭
সিজন :৩

বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেছে ৷গতকাল শান্ত আর জবার বিয়ে হয়েছে ৷এক প্রকার জোর করেই জবাকে বিয়ে করেছে শান্ত ৷প্রীতিও শান্তকে কিছু বলে নি ৷কেউ যদি নিজের ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে একটু কঠোর হয় হোক ৷

অন্যদিকে প্রীতি নিজের রুমে বসে কিছু কেসের তথ্য দেখতে ছিল ৷হঠাৎ করেই তার ফোনটা বেজে উঠলো ৷কিছুটা বিরক্ত হলো প্রীতি ৷কিন্তু ফোন দাতার নাম দেখেই প্রীতি হালকা হাসলো ৷ফোনটা তুলতেই অপর পাশ থেকে বললো

কেমন আছিস মা ৷

এইতো ভালো আছি ৷আপনারা কেমন আছেন ৷

আমরা মরে গেলেও তো তোর কিছু যায় আসে না ৷

দয়া করে আর কখনো এসব কথা বলবেন না ৷আমার কষ্ট হয় এসব শুনতে ৷

সিলেট থেকে যাওয়ার পর একবারও এসেছিস এই বুড়ো মা বাবাকে দেখতে ৷

তোমাদের ভালোর জন্য আমি চলে এসেছি ৷আমি থাকলে তোমাদের বিপদ হতে পারতো ৷তোমরা ছোট থেকে আমায় বড় করেছো ৷লেখাপড়া করিয়েছো ৷মৃত্যুর হাত থেকে বাচিঁয়ে এনেছো ৷আর কি চাই বলো ৷আমি চাই তোমরা ভালো থাকো ৷আমার জীবনের সবটুকু ভালো দিয়ে হলেও ভালো থাকো ৷

আমাদের কেন নিজের মা বাবা ভাবতে পারিস না মা ৷কেন বারবার মনে করিয়ে দিস যে আমরা তোকে লালন পালন করেছি ৷

আমি এমন এক রাস্তার পথিক ৷যে রাস্তায় মৃত্যুরা থাবা মেরে বসতে পারে ৷আর মৃত্যু একবার ডাক দিলে আমার যেতে কষ্ট হবে ৷তাই নিজের জীবনে আর কাউকে জড়াতে চাই না ৷প্রীতি বাম হাতে চোখে আসা পানি মুছে বলল

বাদ দাও এসব কথা ৷আগে বলো রোদ কেমন আছে ৷

তুই যাওয়ার পর ওর অসুখ লেগেই আছে ৷ওকে কয়েক দিন তোর কাছে নিয়ে রাখবি মা ৷ছেলেটা বড্ড কাদেঁ তোর জন্য ৷

কয়েক দিনের জন্য না শুধু ৷ওকে আমার কাছেই পাঠিয়ে দাও ৷আমি ওকে ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব ৷আর হ্যা রাতে কথা হবে ৷হাতে অনেক কাজ ৷এখন রাখি কেমন ৷

প্রীতি ফোন কাটতেই তার মোবাইলে নির্ঝরের কল এলো ৷প্রীতি ফোনটা রিসিভ করলো না ৷ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেল ৷গত দুই দিন ধরে লোকটা ওকে জ্বালিয়ে মারছে ৷প্রীতির খুব রাগ হতে লাগলো নির্ঝর নামক মানুষটার ওপর ৷ফোনটা আবারো বেজে উঠলো ৷এবার বেশ কিছুটা রাগ হয়েই প্রীতি ফোনটা রিসিভ করলো ৷প্রীতি ফোনটা রিসিভ করে বলল

কি ব্যাপার বারবার এভাবে কল কেন করছেন ৷

আপনার সাথে আমার কথা আছে প্রীতিলতা ৷

কি কথা বলুন ৷

আপনি ঐ দিন চলে গেলেন কেন ৷

ইচ্ছে হয়েছে তাই ৷

আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে প্রীতিলতা ৷ একটু দেখা করবেন আমার সাথে ৷আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ৷নিমতলায় একবার আসুন প্রীতিলতা ৷

নির্ঝরের করুন আবদার প্রীতি ফেলতে পারলো না ৷রাজী হয়ে গেল ৷জামা কাপড় পরে বেড়িয়ে গেল নিজের চিরচেনা মানুষটার সাথে দেখা করতে ৷একটা রিকশায় করে নিমতলা চলে গেল প্রীতি ৷রিকশা থেকে নামতেই কিছুটা দূরে কালো শার্ট আর জিন্স পরা একটা যুবককে বাইক নিয়ে বসে থাকতে দেখলো ৷প্রীতি ভাড়া মিটিয়ে হাটা দিল ঐ দিকে ৷ প্রীতি নির্ঝরের পেছনে দাড়াতে নির্ঝর বলল

পেছনে কেন দাড়িয়ে আছেন প্রীতিলতা ৷সামনে আসুন ৷

প্রীতি চমকালো ৷তাকে না দেখেও কিভাবে নির্ঝর তার অস্তিত্ব টের পেল ৷ তবে কি এখনো নির্ঝরের মনের কোথাও না কোথাও সে আছে ৷প্রীতি নির্ঝরের সামনে যেয়ে দাড়ালো ৷কিন্তু একি এই লোকটার এই অবস্থা কেন ৷লোকটা কি কেদেঁছে ৷চোখমুখ এমন কেন হয়েছে তার ৷প্রীতি নির্ঝরে দিকে তাকিয়ে বলল

আপনার এই কি অবস্থা সূর্য সেন ৷

আমার এই অবস্থা আপনি করেছেন প্রীতিলতা ৷

আমি আবার কি করেছি ৷

আগে বলুন আপনি কেন আমার ফোন ধরেন নি ৷আপনি জানেন আমার কিছুই ভালো লাগছিল না আপনাকে ছাড়া ৷

কেন ভালো লাগে নি ৷

আমি জানি কিছু ৷শুধু জানি আপনি আমার সাথে রোজ কথা বলবেন ৷তাতে যাই হোক ৷আমি এক প্রীতিলতাকে হারিয়েছি ৷আরেক প্রীতিলতাকে হারাতে পারবো না আমি ৷একজনকে হারিয়ে আমি মৃত লাশ হয়ে গেছি ৷আপনার মতো বন্ধু হারিয়ে আমি মরতে চাই না ৷

আমি বুঝি আপনার বন্ধু ৷

নির্ঝর মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালো ৷

প্রীতি হালকা হাসলো ৷তারপর হাত দিয়ে নির্ঝরে মাথার চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল

এর জন্য আপনি কাদঁবেন বাচ্চাদের মতো ৷কিছুটা থেমে প্রীতি বলল আমার একটা ইচ্ছে আছে পূরন করবেন ৷

একবার বলুন শুধু ৷

আপনি বিয়েতে আমার পছন্দ মতো পোশাক পড়বেন ৷সাবরিনাকেও আমি নিজের হাতে সাজাতে চাই ৷আমার এই আশাটা পূরন করবেন প্লিজ ৷

আপনাকে আমার খুব কাছের মনে হয় প্রীতিলতা ৷আর কাছের মানুষের ইচ্ছে অপূর্ন রাখতে নেই ৷আপনার যেমন ইচ্ছে ৷

সাবরিনা আপনাকে অনেক ভালোবাসে তাই না নির্ঝর ৷

হুমম খুব ৷

আপনি অনেক সুখী হবেন ৷এতটাই সুখী হবেন যে নিজের অতীতটাও মনে থাকবে না ৷

নির্ঝর আর কিছু বললো না ৷আকাশের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল

চলুন আপনাকে বাড়িতে পৌছে দেই ৷

মাত্রই তো আসলাম ৷

আপনাকে কেন জানিনা দেখতে ইচ্ছ করে ছিল খুব ৷তাই আসতে বলা ৷আর হ্যা পরশু সাবরিনার সাথে আমার আংটি বদল ৷তাই কাল শপিং করতে হবে ৷আপনি কাল আমার সাথে থাকবেন ৷

প্রীতি মাথা নেড়ে সায় জানালো ৷কিন্তু আর কিছু বললো না ৷

নির্ঝর বাইকে উঠে প্রীতিকে বলল
আপনিও আমার পিছনে বসে পড়ুন ৷

আমার বাইকে উঠতে ভয় করে অনেক ৷প্রীতি নির্ঝরের একটু কাছে যেতে ছোট একটা মিথ্যে কথা বলে দিল ৷

নির্ঝর মুচকি হেসে বলল একবার বসুন তারপর আর ভয় লাগবে না ৷

প্রীতি নির্ঝরের পেছনে বসতেই নির্ঝর বলল

এবার আমাকে শক্ত করে ধরুন ৷তারপর কাধেঁ মাথা রেখে চোখবন্ধ করে রাখুন ৷দেখবেন আর ভয় করছে না

চলবে

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা : আফরিন ইসলাম
পার্ট : ৮
সিজন :৩

খোলা আকাশের নিচে আর মুক্ত বাতাস ঘেরা পরিবেশে ভালোবাসার মানুষটার ঘাড়ে মাথা রাখতে কার না ভালো লাগে ৷ হোক সেটা ক্ষনিকের জন্য ৷তবুও ভালোবাসার মানুষের কাছে থাকতে খুব ভালো লাগে ৷ প্রীতি খুব শক্ত করে নির্ঝরকে ধরে রাখলো ৷নির্ঝরের কাধেঁ মাথা রেখে সময়টা অনুভব করতে লাগলো ৷ক্ষনিকের কাছে আসা যদি প্রেমিকা হৃদয়কে প্রশান্তি দেয় তাহলে ক্ষতি কি ৷ তবুও পিপাসা কাতর হৃদয়ে একটু সুখের সময় হয়ে আসুক ভালোবাসা ৷

কিছু সময় পর নির্ঝরের বাইক থেমে গেল ৷নির্ঝর বলল

আপনার বাসাটা কোথায় প্রীতিলতা ৷আপনার এলাকায় তো চলে এসেছি ৷কিন্তু এখন কোন দিকে যাব ৷

প্রীতির কোনো হুশ নেই ৷সে চোখ বন্ধ করে এখনো সময়টা অনুভব করছে ৷প্রীতির সাড়া শব্দ না পেয়ে নির্ঝর পেছনে তাকালো ৷আর প্রীতি এখনো নির্ঝরের কাধেঁ মাথা দিয়েই আছে ৷নির্ঝর হাতটা প্রীতির মাথায় রেখে ডাক দিল ৷

প্রীতি আপনি কি ঘুমিয়ে গেছেন ৷আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন আপনি ৷

নির্ঝরের কথায় প্রীতির হুশ ফিরলো ৷ সে খানিকটা থতমত খেয়ে গেল ৷তবুও নিজেকে সামলে নিল সে ৷ প্রীতি নিজের চুল ঠিক করে কিছুটা হাসলো ৷তারপর বলল

আপনাকে আর যেতে হবে না ৷আমি নিজেই যেতে পারবো ৷ আপনি এবার যেতে পারেন ৷ আমার বাসা কাছেই ৷আপনি আর কষ্ট করবেন কেন ৷

ঠিক আছে আপনি যেমন ভালো বোঝেন ৷আর হ্যা কাল কল করলে এখানে চলে আসবেন ৷আমরা একসাথে শপিং যাবো ৷

ওকে ৷

নির্ঝর আর কথা বাড়ালো না ৷ প্রীতিকে নিজের খেয়াল রাখতে বলে নির্ঝর রওনা দিল বাড়ীর দিকে ৷ আর প্রীতি নির্ঝরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল ৷

নির্ঝর চলে যেতেই প্রীতির মোবাইলে একটা কল এলো ৷প্রীতি ফোনটা রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে বলল

প্রীতি মা আমি ফাদার বলতে ছিলাম আশ্রম থেকে ৷

জ্বি ফাদার বলুন ৷বাচ্চাদের চিকিৎসার কি খবর ৷

বাচ্চাদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে ৷কয়েক জনের চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে ৷

খুব ভালো ৷ওদের স্কুলের কাজ কেমন চলছে ফাদার ৷

ঐটাও শুরু হয়ে গেছে ৷তুমি একদিন এসে দেখে যাও মা ৷

যাব একদিন সময় করে ৷এখন রাখছি কেমন ৷

প্রীতি ফোনটা রেখে সিআইডি অফিসের দিকে রওনা দিল ৷নির্মম ভাবে খুন করা খুনীকে খোজাঁ হচ্ছে ৷প্রীতিও সেই খুনীকে খুজছে ৷মানুষ কখনো নিজের ছায়াকে বন্দি করতে পারে না ৷কিন্তু সেই ছায়ার পিছনেই মানুষ যখন ছুটে চলে তখন ৷তখন তা নিজেকে আড়াল করার এক অভিনব কৌশল হয়ে দাড়ায় ৷অপরাধী অপরাধ করে ৷আবার অপরাধীকে ধরতেও চায় ৷ যেমনটা এখন প্রীতি করে যাচ্ছে ৷

রাত ঘড়িতে বারোটা ৷প্রীতি নিজের ঘরের বারান্দা থেকে কৌশলে বের হয়ে গেল ৷বাড়ী থেকে সরাসরি বের হতে গেলে সবার নজরে পড়বে ৷কেউ যাতে সন্দেহ না করে তাই লুকিয়ে বেড়িয়ে পড়লো প্রীতি ৷বাড়ী থেকে কিছুটা দূরে রাখা বাইকটাতে উঠে গেল ৷বাইকটা স্টার্ট দিয়ে নিজের উদ্দেশ্য পূরনে চলে গেল ৷প্রীতির বাইকটা যেয়ে থামলো বিশাল একটা বিল্ডিং এর সামনে ৷বিল্ডিংটা এখন অন্ধকারে ঢাকা ৷প্রীতি গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো দারোয়ান ঘুমিয়ে আছে ৷ দেওয়াল টপকে অতি সাবধানে ভেতরে ডুকলো সে ৷তারপর নিজের ব্যাগ থেকে কিছু জিনিস বের করলো ৷প্রীতি খুব সাবধানের সাথে চাবি ছাড়াই তালা খুলে ফেললো নিজের কলা কৌশলকে কাজে লাগিয়ে৷তারপর ভেতরে ঢুকে খুব সাবধানে দরজা লাগিয়ে দিল ৷কারন আর যাই হোক ধরা সে পড়বে না কোনো মতেই ৷

প্রীতি সিড়ি দিয়ে চার তলায় চলে গেল ৷সিসি টিভি যেখানে আছে সেখান থেকে প্রীতি যায় নি ৷তারমধ্যে অন্ধকার থাকায় কাজটা একটু সহজ হয়েছে তার জন্য ৷প্রীতি পুরনো ফাইল রাখার জন্য যেই স্টোর রুম আছে ঐখানে চলে গেল ৷প্রীতি তার প্রয়োজনীয় ফাইলটা খুজতে লাগলো ৷খুজতে খুজতে এক সময় সে হাপিয়ে গেল ৷এত এত ফাইল খুজে সেই ফাইলটা পেল না সে ৷দিশেহারা হয়ে যখন প্রীতি নিজের চুল খামচেঁ ধরল ৷ঠিক সেই সময় তার চোখ গেল সবার উপরে থাকা একটা ফাইলের দিকে ৷ফাইলটা ধুলোয় ঢেকে গেছে ৷প্রীতি পাশে থাকা ছোট টুল টা দিয়ে উপরে উঠলো ৷তারপর ফাইলটা নামিয়ে আনলো ৷হাত দিয়ে উপরে পরে থাকা ধুলো গুলো সরিয়ে নিল সে ৷তারপর ফাইলটা খুলতেই তার চোখ চকচক করে উঠলো ৷হ্যা এটাই সেই ফাইল যার জন্য আশরাফ খান তার বাবাকে ছাড়ে নি ৷যেটার জন্য তার বাবাকে মরতে হয়ে ছিল ৷চৌদ্দ বছর আগে এই ফাইলটাই তাদের বাসা থেকে নিয়ে এসে ছিল আশরাফ খান ৷ এই ফাইলের প্রতি পাতায় তার বাবার সাথে করা অন্যায়ের প্রমান আছে ৷প্রীতি ফাইলটা নিজের ব্যাগে ভরে নিল ৷প্রীতি নিজের মুখটা ঢেকে নিল ৷তারপর বেড়িয়ে গেল ৷সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু সমস্যা হলো যখন সে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচ তলায় এলো ৷তার সামনে গার্ড দাড়িয়ে আছে বন্দূক নিয়ে ৷মূলত প্রীতি ভেতরে যাওয়ার অনেকক্ষন পরে গার্ডের ঘুম ভেঙ্গে যায় ৷সে ঘুম থেকে উঠে ভেতরে আসে পানি খেতে ৷কিন্তু একি তালা যে খোলা ৷তাহলে কি ভেতরে কেউ আছে ৷গার্ড দ্রুত আশরাফ খানকে কল করে ৷আর নিজে বন্দুক নিয়ে দাড়িয়ে থাকে ৷কারন ক্রিমিনাল আর যাই হোক তাকে পালাতে হলে নিচেই আসতে হবে ৷কেননা উপর থেকে পালানোর কোনো রাস্তা নেই ৷গার্ড প্রীতিকে বলল

আর এক পা নড়লে একদম গুলি করে দেব ৷ স্যার এসেই তোর ব্যবস্থা করবে ৷

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here