আমার চোখের সামনে আমার মা বাবা খুন হয়েছে ৷আমার বাবার চোখ এখনো আমার দিকে যেন তাকিয়ে আছে ৷ঐ চোখ দুটো আমাকে একটা কথাই বলছে ,
“ওদের কখনো ছাড়িস না মা ৷ যারা তোর চোখের সামনে তোর মাকে ধর্ষন করেছে ৷ তাদের ছাড়িস না ৷”
মৃত্যু যন্ত্রনায় আমার বাবার জিহ্বাটা বেরিয়ে গেছে ৷ মাথার একটা পাশ থেতলে গেছে ৷ যেখান থেকে এখনো টুপটুপ করে রক্ত পড়ছে ৷ চেয়ারের সাথে বাবার শরীরটা বাঁধা ৷ কিন্তু বাবার দৃষ্টি যেন আমার দিকেই ৷
আমার বাবার একটু দূরেই আমার মায়ের দেহটা পরে আছে ৷ আমার মায়েরও চোখ দুটো খোলা ৷মায়ের মাথাটা বিছানার নিচে ঝুলে আছে ৷কিন্তু ঐ খোলা চোখ আমায় বলছে ,
“ওদের ছাড়িস না মা ৷ যারা তোর বাবাকে বিনা দোষে খুন করেছে ৷ তাদের ছাড়িস না ৷”
ফ্লোরে পরে আছে আমার ছয় মাসের ছোট ভাই ৷যাকে নিয়ে একটু আগেও কত খেলেছি আমি ৷ একঘন্টা আগেও কত খুশি ছিলাম আমরা ৷ আমার ভাইটাকে দেওয়ালের সাথে আছাড় মেরে খুন করা হয়েছে ৷ ওর ছোট মগজটা ছিটিয়ে পরে আছে ফ্লোরে ৷মুখটা চেনা যাচ্ছে না ৷ পুরো থেতলানো ৷
আমি সব দেখছি আলমারির ভেতরে বসে ৷ বাবার কিনে দেওয়া নতুন ক্যামেরাটা আমার হাতে ৷ জানি না মা বাবার সাথে আর দেখা হবে কিনা ৷ কিংবা এই ঘটনা কেউ জানবে কিনা ৷ তবুও কিছু ছবি তুলে রাখলাম ৷
হঠাৎ শুনলাম ওরা বলছে ৷এই বাড়ীটাতে আগুন লাগিয়ে দে ৷ সবাই ভাববে আগুনে পুড়ে মরেছে সব ৷ওরা পৈশাশিক হাসি হাসতে লাগলো ৷তারপর বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে ৷
ওরা যেতেই আমি বেড়িয়ে আসলাম আলমারির ভেতর থেকে ৷ মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ মায়ের গলার চিকন চেইনটা খুলে নিলাম ৷এক সপ্তাহ আগে বাবা মাকে গিফট করে ছিল ৷ তারপর বাবার কাছে গেলাম ৷ বাবার খোলা চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ বাবার হাতের একটা আংটি খুলে নিলাম ৷ অতঃপর ছোট ভাইটার কাছে গেলাম ৷ ওর মরা দেহটাকে কোলে নিলাম ৷তারপর ওর কপালে একটা চুমু দিলাম ৷ আমার চোখ থেকে এক ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো ৷আমি রক্ত ভয় পাই খুব ৷ কিন্তু আজ ভয় পাচ্ছি না ৷
হঠাৎ নাকে প্রচন্ড পোড়া গন্ধ পেলাম ৷ ভাইয়ের লাশটা ফ্লোরে রেখে রাইরে এলাম ৷দেখলাম বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে ৷ কিছুক্ষনের মধ্যে হয়তো আগুন ছড়িয়ে যাবে পুরো বাড়ীতে ৷ ওরা চলে গেছে ৷ বাবার লাশের কাছে এলাম ৷ বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম ,
“ওদের আমি ছাড়বো না বাবা ৷ প্রীতিলতা কাউকে ছাড়বে ৷ আমি আবারো ফিরে আসবো বাবা ৷ দেখা হবে আবারো ৷জানি না ভাইয়ার সাথে ওরা কি করবে ? কিন্তু ছাড়বো না ওদের আমি ৷”
আমার প্রানহীন বাবার মুখে যেন হাসি ফুটলো ৷ আমার কল্পনায় আমি তা একে নিলাম ৷ এদিকে আগুন ছড়িয়ে গেছে ৷ প্রীতি উঠে দাড়ালো ৷ আট বছরের ছোট প্রীতি বাড়ীর পেছনের দরজা দিয়ে ছুটতে লাগালো ৷ প্রীতি ছুটছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ৷
বড় ভাইয়ের স্কুলের সামনে প্রীতি দাড়ালো ৷ কিন্তু তার যে আসতে দেরি হয়ে গেছে ৷ তার বড় ভাই আবেশ যে শত্রুদের গাড়ীতেই উঠে গেছে ৷ কি করে ভাইকে বাচাঁবে প্রীতি জানে না ৷ ওরা যে বন্ধু রুপী শত্রু ৷প্রীতি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ৷আর কেউ যে তার রইলো না ৷
বিশাল পর্দায় চৌদ্দ বছর আগের তোলা ছবি গুলো এক এক করে দেখছে প্রীতি ৷আগে এই ছবি গুলো দেখলে সে কাদঁতো ৷ কিন্তু এখন আর কাঁদে না ৷ এখন সে এই ছবি গুলো দেখে শক্তি সঞ্চয় করে ৷মাথাটা একপাশে কাত করে আছে সে ৷হাতে সিগারেট জ্বলছে ৷চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে ৷ চৌদ্দ বছর আগের প্রীতি এখন আর নেই ৷ প্রীতি আগে রক্ত ভয় পেত ৷ কিন্তু এখন সে রক্ত দেখে আনন্দ পায় ৷
চলবে
কপি করা নিষেধ
(হাই আবারো নতুন গল্প নিয়ে হাজির হলাম ৷আসা করি সবাই পাশে থাকবেন ৷)
প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম ৷
প্রথম পর্ব