সংসার
৪.
#WriterঃMousumi_Akter
আহনাফ নতুন বউ নিয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে গেলো।বিয়ের পর প্রথম নতুন বউ নিয়ে গেলো।যাওয়ার সময় তাদের ব্যাগপত্র গোছানো নিয়ে তারা বিজি।শ্বাশুড়ি মা ছেলেকে বার বার বলছেন আমার বৌমাকে সাবধানে নিয়ে যাবি।ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখ কি মিষ্টি।এত দিনে আমার অন্ধকার সংসার টাতে প্রদিপ জ্বলেছে।আসলে পরের মা কি কখনো মা হয়।ননদ ঘন ঘন নতুন ভাবিকে ডাকছে।যেনো আমি কেউ ই না। যাওয়ার সময় আহনাফ আমাকে বলে গেলো সে রাতেই ফিরে আসবে।না গেলে বিষয় টা খারাপ দেখাচ্ছে।সে নাকি আমাকে ছাড়া কোথাও থাকতে পারবে না।আমিও তাকে যাওয়ার জন্য বললাম।কারণ এটা নিয়ম, আমার কষ্ট হলেও তার যাওয়া উচিত।
আহনাফ শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পর একবার ও আমাকে ফোন দিলো না।এই প্রথম সে আমাকে এত টাইম ফোন না দিয়ে রইলো।সন্ধ্যায় আমি নিজেই তাকে ফোন দিলাম।আমি ফোন দিলে ফোন টা কেটে দিলো সে।আরেক বার ফোন দিলাম আবার ও ফোন কেটে দিলো।আমি তাকে একটা মেসেজ ও করলাম কোনো সমস্যা হয়েছে কি এভাবে ফোন টা কেটে দিলে যে।
আধাঘন্টা পরে সে ফোন ব্যাক দিলো।আমার দেহে যেনো প্রাণ ফিরে এলো তার ফোন পেয়ে।তার ফোন টা রিসিভ করেই আমি কেঁদে ফেললাম।আহনাফ বলে কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?আমি কেঁদে দিয়ে বললাম এত টাইম তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারি না আহনাফ। তুমি ফোন টা কেটে দিচ্ছিলে কেনো?
প্লিজ মন খারাপ করো না।আসলে নতুন নতুন শ্বশুর বাড়ি এসছি।আশ পাশ থেকে অনেক মানুষ আমাকে দেখতে আসছিলো।তাছাড়া মিরা ও পাশে ছিলো।ওই টাইমে তোমার ফোন রিসিভ করলে সবাই প্রশ্ন করতো কে? এটা নিয়ে আবার সিনক্রিয়েট হতো।ব্যাপার টা বাজে লাগতো দেখতে।আর আমি চাই নি তোমাকে নিয়ে কেউ কিছু বলুক।তাই আমি চা খাওয়ার নাম করে রাস্তায় এসেছি তোমার সাথে কথা বলার জন্য।
কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিলো।আমার কথা মানুষের সামনে আজ প্রকাশ করতেও ভয় পাচ্ছে আহনাফ।কষ্টে পেলেও চুপ হয়ে গেলাম।কিছুই বললাম না।
আহনাফ আমাকে বলে প্লিজ সোনা মন খারাপ কর না।এখানের যে সিসুয়েশন আজ আসা হবে না।অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার।তবুও নিয়তি আমাকে যেখানে এনেছে আমার যে এগুলো সহ্য করতেই হবে।মায়ের কথায় কিছু মনে করো না।খেয়ে নিও কাল আসবো।রাতে আবার ফোন দিও।
আহনাফ কে রাতে আরেকবার ফোন দিলাম আমি। আসলে ফোন দেওয়া উচিত না তবুও মন কেমন করছিলো তাই ফোন দিলাম।ফোন টা একজন ভদ্র মহিলা রিসিভ করে বলেন কে আপনি?তার কথায় যেনো রাগ ভর্তি।
‘আমি আশা।মিরা কোথায়?’
‘তুমি কি মিরার সতিন।’
‘সতিন বলছেন কেনো?আমি ওর বোন।’
‘থাক আর বোন হতে হবে না।এতদিন তো স্বামিকে আঁচলে বেঁধে রেখেছিলে।একটা বাচ্চা দিতে পারো নি।নতুন বিয়ে করেছে রাত দুপুরে ফোন দিলে তারা একান্তে কিভাবে সময় কাটাবে।নাকি তোমার সহ্য হচ্ছে না মিরার পাশে নিজের স্বামিকে।তাহলে বিয়ে দিয়েছিলে কেনো?’
উনার কথা গুলো খুব বুকে লাগলো আমার।মানুষ এমন ও নিষ্টুর হয়।আমি নম্রভাবে বললাম আমি মিরার কাছে প্লিজ ফোন টা দিন।
এমন সময় পাশ থেকে মিরা বলে মা তোমার জামাই এর মুড়ি ঘন্ট খুব পছন্দের।ওকে মুড়ি ঘন্ট রান্না করে দিও সকালে।তোমার জামাই না মা খাবার খুব ই বেছে খান।
বাহ!একদিনেই মুড়ি ঘন্ট ফেভারিট সেটা জেনে গিয়েছে।
‘তখন মিরার মা বলে এই নে তোর ফোন।’
‘কে ফোন দিয়েছে।’
‘জামাই এর আগের পক্ষের বউ।’
‘মিরা ফোন টা নিয়ে বলে যা বলার বলুন।’
ওর কথা গুলো খুব রুড।
‘মিষ্টি হেসে বললাম খেয়েছো বোন।”
‘আপনি কি এটা শুনতেই ফোন দিয়েছেন।’
‘না আসলে আহনাফের শরীর ভাল না।অতিরিক্ত মশলা জাতীয় খাবার দিও না।ওর সমস্যা হবে।’
‘আপনার কি মনে হয় আমি কি ওকে মেরে ফেলবো।ওর ভাল মন্দ আপনি একাই বুঝেন।আমি ওর ভাল চাই না।দেখুন ও আমার ও হাজবেন্ড তাই ওর ভাল মন্দ আমাকেই বুঝতে দিন।এতদিন তো অনেক বুঝেছেন ওর ব্যাপারে এখন একটু বিরতি দিন।’
পাশ থেকে কয়েকজন বলাবলি করছে সতিন এর সাথে এত কিসের কথা।সতীন কে এত লাই দিও না।সতিন কখনো ভাল হয় না।আর নিজের স্বামিকে আচলে রাখার চেষ্টা করো বুঝেছো।নিজের অধিকার আদায় করে নাও।
ঠিক তখন ই আহনাফ বলে আমার ফোন টা কোথায়? মিরার কানে ফোন দেখে আহনাফ বলে কেউ কি ফোন দিয়েছিলো।মিরা হুহু করে কেঁদে উঠে বলে দেখো তোমার ফোন টা রিসিভ করেছি বলে তোমার বউ আমাকে যা তা বলছে।
আহনাফ বলে আশা যা তা বলেছে।কি বলো?আশা তো এমন মেয়ে নয়।
পাশ থেকে একজন মহিলা বলে বাবারে বাবা শুনেছিলাম আগের বউ বাড়িতে থাকে না।আবার থাকলেও নাকি সে মোমের মতো নরন।সে নিজেই বিয়ে দিয়েছে তাহলে এখন বাজে ব্যবহার করছে ক্যানো?আমাদের মিরাকে আর ও বাড়িতে পাঠানো ঠিক হবে।মিরার বাবা যে কি ভেবে সতিন দেখে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে।মেয়েটাকে কিছুই খাইয়েও তো মেরে ফেলতে পারে।
আহনাফ বলে দেখুন আপনারা সব জেনে বুঝেই বিয়ে দিয়েছেন।আশা কে নিয়ে এমন মন্তব্য করবেন না।আশা এ ধরনের মেয়ে না।আশার একটা বাচ্চা হয় না বলে তাকে মানুষ কম কথা শুনাই নি।একটা বাচ্চার জন্য নিজের স্বামিকে বিয়ে পর্যন্ত দিয়েছে সো তার কষ্ট টাও বুঝুন।
মিরা হুহ করে কেঁদে বলে আমার কি এতটুক অধিকার নেই তোমার ফোন টা রিসিভ করার।আমার কি এতটুক অধিকার নেই।
আহনাফ বলে অবশ্যই আছে।আমি কি না করেছি।
তাহলে তোমার বউ আমাকে কেনো বললো আমি যেনো তোমার ফোন না ধরি।তোমার সব কিছুতে তার অধিকার।
আহনাফ আর কিছুই বললো না।
মিরার বলা মিথ্যা শুনে আমি অঝরে কেঁদে যাচ্ছিলাম।মানুষ এমন ও হয়।আমাকে আহনাফের চোখে খারাপ বানাতে এত আয়োজন।
আহনাফের জন্য বুকটা চিরে যাচ্ছিলো।তাকে খুব মিস করছিলাম।তার কন্ঠটা শুনতে ইচ্ছা হচ্ছিলো।
আমি আবার ও কিছু সময় পর তাকে ফোন দিলাম।সে একটা মেসেজ পাঠালো এখন ফোন দিও না প্লিজ।আমি তাও ফোন দিলাম কিন্তু সে ফোনটা কেটে দিলো।
আমি ভাবতেও পারিনি এমন টা হবে।আহনাফের জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট ছিলাম আমি।আর আজ সে ফোন টা অফ করে দিলো।
খুব মনে পড়ছে সেদিনের কথা আহনাফের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিলো।আমি বার বার ফোন দিচ্ছিলাম ওর পিএ ফোনটা কেটে দিচ্ছিলো।আহনাফ যখন জানতে পেরেছিলো ফোন টা আমার পিএ কি অনেক বকাঝকা দিয়ে বলেছিলো আমার জীবনে আশার থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ আর কোন কিছু নেই।মিটিং এর থেকে আশাই আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সো ওর ফোন এলে সরাসরি আমাকে বলবে।
সে দিন টা কি আজ এত সহজেই মিথ্যা হয়ে গেলো।এভাবেই কি আমার ভালবাসা একটু একটু করে হারিয়ে যাবে।
কেনো বুকের মাঝে তোলপাড় করে ভেঙে চুরে গুড়িয়ে যাচ্ছে।কেনো জ্বলে পুড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে।আহনাফ তুমি ছাড়া যে কেউ নেই আমার।
ভালবাসার মানুষ কে ভাগ করে নেওয়াটার যন্ত্রণা একটা মেয়েই ভাল বোঝে।
চলবে,,,,
(সবাই গঠন মূলক কমেন্ট করবেন।নিরব পাঠক যারা আছেন তারাও প্লিজ কমেন্ট করবেন।এতে লেখিকার লেখার আগ্রহ বাড়ে)