#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_১২
#লেখিকা_N_K_Orni
রুদ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— আমি তো কালকে যাচ্ছি না। কিন্তু বাবা মা তো যাচ্ছেন।
বলেই সে একটা মুচকি হাসি দিল। এদিকে রাহিয়া ফোন রেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল।
— যাক ভালোই হয়েছে যে ওই রুদ্র আসছে না। ও আসলে আমার সাথে বারবার কথা বলতে চাইত। আর আমি না করলে ভাবত আমি তাকে এখনো পছন্দ করি বলে এড়িয়ে যাচ্ছি।
বলেই সে খুশি হয়ে আবারও বই পড়তে শুরু করল। বেশ কিছুক্ষণ পর মিসেস নাদিয়া ওর রুমে এসে ওকে কালকে বাসায় থাকতে বললেন। কারণ কালকে তার মামা মামি আসবেন। রাহিয়া কিছু না জানার অভিনয় করে রাজি হয়ে গেল। পরদিন সকালে রাহিয়ার মামা আর মামি ওদের বাসায় এলো। রাহিয়া ওনাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে চলে গেল। এরপর তার মামি মিসেস রাহা রাহিয়ার বাবার কাছে গিয়ে বলে উঠলেন,
— আমি আপনার কাছে একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলাম। আসলে আমি চাচ্ছিলাম রাহিয়াকে রুদ্রের সাথে বিয়ে দিতে। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা এটা।
কথাটা শুনে রাহিয়ার বাবা রায়ান বেশ অবাক হলেন। তারপর তিনি শান্ত গলায় বলে উঠলেন,
— উমম! প্রস্তাবটা খারাপ না। কিন্তু আমি এটা মানতে পারছি না। আসলে আমি রাহিয়াকে তার কোনো কাজিনের সাথে বিয়ে দিতে চাই না। তাই আপনার এই প্রস্তাব রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি এর জন্য খুবই দুঃখিত।
— কিন্তু কেন? কাজিনের সাথে বিয়ে দিলে কি সমস্যা? আমার রুদ্র কতো ভালো একটা ছেলে! এরকম ভালো ছেলে আপনি আর পাবেন না। আপনার কাছে এমন সুযোগ নিজে থেকে আসছে। আর আপনি এই ছোট একটা কারণে না করে দিচ্ছেন?
কথাটা শুনে রায়ান মনে মনে বলে উঠলেন,
— কেমন ভালো তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। এমন ছেলের কাছে আমি কখনোই আমার মেয়েকে দিব না।
— দেখুন আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার পক্ষে আপনার কথা রাখা সম্ভব না।
কথাটা শুনে মিসেস রায়া রেগে ওখান থেকে উঠে বেরিয়ে গেলেন। মিসেস নাদিয়াও ওখানে ছিলেন। কিন্তু উনি কি বলবেন বুঝে উঠতে পারলেন না? মিসেস রায়াকে চলে যেতে দেখে ওনার পেছনে পেছনে ওনার স্বামীও ওনার দিকে গেলেন। তিনি মিসেস রায়ার কাছে এসে বললেন,
— উনি যখন চাচ্ছেন না রাহিয়ার সাথে রুদ্রের বিয়ে দিতে তাহলে তুমি ওনাকে এতো জোর করছ কেন?
— আমিও তো সেটাই জানতে চাই যে উনি না করছেন কেন? কাজিনের বিষয়টা অজুহাত মাত্র। উনি অন্য কোনো কারণে বিয়েতে রাজি হননি।
— হলেও তাতে সমস্যা কোথায়? ওনার মেয়েকে উনি কার কাছে বিয়ে দিবেন সেটা সম্পূর্ণ ওনার ইচ্ছা। দেশে তো আরও মেয়ে আছে। তুমি রাহিয়ার পেছনে কেন পড়ে আছো?
— কিন্তু উনি না কেন করলেন?
— আচ্ছা এসব বিষয় নিয়ে পরে ভাববে। এখন চলো।
বলেই উনি মিসেস রায়াকে নিয়ে গেলেন। বিকালের দিকে ওনারা দুজন ফিরে গেলেন। যাওয়ার আগে তিনি রায়ান সাহেবকে আলাদা ডেকে নিয়ে বললেন,
— আমিও দেখব যে আপনি রাহিয়াকে কার সাথে বিয়ে দেন। আমার ছেলের জন্য রাহিয়াকে বলেছি সেটাই আপনার মেয়ের অনেক ভাগ্য। একে তো বয়স হয়েছে তারপর আবার ছোট মেয়েকে আগে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। আমিও দেখব কোন ভালো ছেলে আপনার মেয়েকে বিয়ে করে? সে কি আমার রুদ্রের থেকে ভালো হতে পারবে?
কথাটা শুনে তিনি মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
— আচ্ছা অপেক্ষা করতে থাকেন আপনি। আমি খুব তাড়াতাড়ি রাহিয়ার বিয়ে দিব তাও আবার রুদ্রের থেকে অনেক ভালো ছেলের সাথে। তখন আপনাকে আমি খবর দিব এসে দেখার জন্য।
— হুম আমি অপেক্ষা করব।
বলেই মিসেস রায়া মুখ ঘুরিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। দূর থেকে মিসেস নাদিয়া এসব দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এদিকে রাহিয়া এসব বিষয়ে কিছুই জানে না। সে তো জানেই না মিসেস রায়া এ বাড়িতে এসেছিলেনই তার আর রুদ্রের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। সন্ধ্যার পর মিসেস নাদিয়া ওনার রুমে গিয়ে ওনার স্বামীর পাশে এসে দাঁড়ালেন। রায়ান ওনাকে দেখে বলে উঠলেন,
— কিছু বলবে?
— বলছি রুদ্রের সাথে রাহিয়ার বিয়ের কথা হলে কি সমস্যা হবে? ও তো খুবই ভালো ছেলে।
— সবসময় বাইরে থেকে যেটা দেখা যায় সেটাই সত্যি হয় না। রুদ্রকে দেখলে এমন মনে হলেও ও একদমই ভালো ছেলে না। ও আমার মেয়ের যোগ্য না। আমি কখনোই ওর মতো একটা ছেলের কাছে আমার মেয়েকে দিব না। তাই তুমি এই বিষয়ে আর কথা বলো না।
— কিন্তু কেন? তোমাকে কে বলেছে রুদ্র খারাপ ছেলে? ওকে কোন দিক থেকে তোমার খারাপ মনে হয়?
— সব দিক থেকেই।
— আমি বলছি যে রুদ্র আর রাহিয়া তো ভালো বন্ধু। তাই ওদের বিয়ে হলে সম্পর্কটা ভালো হবে, ওরা একে অপরকে বুঝবে।
— একদমই না। ভালো বন্ধু হলেই যে বিয়েটা সুখের হবে এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর রুদ্রের সাথে রাহিয়া কখনোই ভালো থাকবে না। এখানে অনেক বিষয় আছে যেগুলো তুমি জানো না। আমি ওর সাথে আমার মেয়ের কখনোই বিয়ে দিব না। তাই এই বিষয়ে কথা বলা এখানেই বন্ধ করে দেও।
— হ্যাঁ তুমি তো চাও আমার সাথে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক খারাপ হোক তাই এটা করছ। বারবার রুদ্রের নামে উল্টাপাল্টা কথা বলে যাচ্ছ বিয়েটা না দেওয়ার জন্য। আচ্ছা যা ইচ্ছা তাই করো।
বলেই মিসেস নাদিয়া রেগে ওখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। তিনি ওখান থেকে একবারে রাহিয়া রুমে চলে এলেন। রাহিয়া তার মাকে দেখে মুখ তুলে বলে উঠল,
— আম্মু কিছু বলবে?
রাহিয়া এখনো কিছু জানে না। তাকে কেউ এসব বিষয়ে বলেইনি। তাই সে স্বাভাবিক চোখ করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। মিসেস নাদিয়া বিছানায় বসতে বসতে বললেন,
— তোর বাবা আমার কোনো কথাই শোনে না।
কথাটা শুনে রাহিয়া হাসতে হাসতে বলল,
— কেন? বাবা আবার তোমার কোন কথাটা শোনেনি?
মিসেস নাদিয়া এবার ওকে সব ঘটনা খুলে বললেন। সেই সাথে একটু আগে ওর বাবার কথাগুলো বললেন। এসব কথা শুনে সাথে সাথেই রাহিয়ার মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল।
— রাহিয়া তুইই বল রুদ্র কতো ভালো ছেলে! ও তোর জন্য একদম পারফেক্ট।
রাহিয়া এবার কিছুটা শান্ত স্বরে বলে উঠল,
— না আম্মু। বাবা ঠিকই বলেছেন। রুদ্র আমার জন্য একদমই পারফেক্ট না।
রাহিয়ার এই রকম কথা শুনে মিসেস নাদিয়া অবাক হয়ে বলে উঠলেন,
— কিন্তু তোরা দুজন তো ভালো বন্ধু ছিলি?
— হুম। এজন্যই আমি জানি ও ভালো ছেলে না। ও আমার যোগ্য না। তাছাড়া আমি ওকে সেই ভাবে পছন্দ করি না। তাই আমি ওকে কখনোই বিয়ে করব।
— কিন্তু কেন?
— কেন মানে? আমি চাই না তাই। আমি ওকে কখনোই বিয়ে করব না। আমার জন্য যদি আর কোনো ছেলে না থাকে, তাহলে আমি সারাজীবন অবিবাহিত থেকে যাব। কিন্তু তবুও কখনো ওকে বিয়ে করব।
মেয়ের এই ধরনের কথা শুনে তিনি বুঝলেন রুদ্র সত্যিই তার মেয়ের জন্য পারফেক্ট না। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে নাহলে ওনার মেয়ে এমন করতেন না। তাই তিনি আর ওকে এই বিষয়ে কোনো কথা বললেন না। ওকে শান্ত হতে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। দুইদিন পর বিকালের দিকে রাহিয়ার বাসায় ওদের এক আত্মীয় এলেন। তিনি মিসেস নাদিয়ার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বলে উঠল,
— শুনলাম রাহিয়া নাকি ফিরে এসেছে? তা ওর খারাপ লাগছে না যে ওর আগেই ওর ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গেল।
ওনার হঠাৎ এমন কথায় মিসেস নাদিয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। তখন সেই মহিলা আবারও বলে উঠলেন,
— শোনো একটা ভালো কথা বলি। মেয়ের তো বেশ বয়স হয়ে গেল। তারপর আবার তার আগে তার ছোট বোনের বিয়ে দিয়ে দিলে। ওর আবার কোনো সমস্যা নেই তো? থাকলে আমাকে বলতে পারো?
কথাটা শুনে মিসেস নাদিয়া বেশ বিরক্ত হয়ে গেলেন।
— এসব আপনি কি বলছেন? ও বাইরে ছিল তাই বিয়ে দেওয়া হয়নি। আর নিরার জন্য ভালো ছেলে পাওয়ায় ওর বাবা দ্রুত ওকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
— ওহ। সেটা হলেই ভালো। তাহলে এখন এতো দেরি করছ কেন? যত দ্রুত পারো বিয়ে দিয়ে দেও। একে তো ছোট মেয়েকে আগে বিয়ে দিয়ে দিয়েছ তারপর আবার বড়ো মেয়ের বয়স দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এরকম হলে পরে আর বিয়ে দিতে পারবে।
কথাটা শুনে মিসেস নাদিয়া মুখে কিছু বললেন না। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন,
— ভালো হয়েছে রাহিয়া বাসায় নেই। ও এসব শুনলে খুবই রেগে যেত।
দূর থেকে রায়ান সাহেবও এসব কথা শুনে ফেললেন। তিনি এসব শুনে ওনার অপরাধবোধ হতে লাগল। মেয়ের কথা ভেবে তিনি খুবই অনুতপ্ত হলেন। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন,
— আমি তো এসব বিষয় আগে ভেবে দেখিনি। আমি মেয়ের একদিকে ভালো করতে গিয়ে অন্য দিক খারাপ করে ফেলেছি। আমার রাহিয়ার আগে নিরাকে বিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। বিয়ের বয়স হওয়া সত্ত্বেও তার আগে তার ছোট বোনকে বিয়ে দেওয়া আমার একদমই ঠিক হয়নি। এতে নিশ্চয়ই রাহিয়া খুবই কষ্ট পেয়েছে। আমার উচিত ছিল আগে রাহিয়াকে বিয়ে দেওয়া। আমি না বুঝেই রাহিয়াকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এবার আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। এভাবে চুপ করে বসে থাকলে হবে না।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )