প্রেমপ্রেয়সী পর্ব ১১

0
788

#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_১১
#লেখিকা_N_K_Orni

সেখানে লেখা ছিল, ” বর্তমানে তোমার আশেপাশে একটু বেশিই ছেলেরা ঘোরাঘুরি করছে দেখছি। তাদের কেউ হাত ধরছে, কেউ জড়িয়ে ধরছে, আবার কেউ পড়ে যাওয়ার আগে ধরে ফেলছে। এগুলো আমার একদমই ভালো লাগছে না। আশা করি এরপর থেকে তুমি ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। নাহলে এরপর যেটা হবে সেটা তোমার জন্য একদমই ভালো হবে না। ”
লেখাটা রাহিয়া মনে মনে কয়েকবার পড়ে নিল। তারপর সে কাগজটা আগের মতো ভাঁজ করে পাশে রেখে দিল। সে চোখ বন্ধ করে লেখাগুলোর কথা ভাবতেই তার চোখের সামনে সকালের পর ঘটে যাওয়া সবকিছু ভেসে উঠতে শুরু করল।

ফ্লাস ব্যাক

রাহিয়া সময় অনুযায়ী সাবার বলা জায়গায় চলে গেল। ওখানে তার কিছু ফ্রেন্ডদের দেখা হলো। তাদের মধ্যে দুজন ছেলে বন্ধুও ছিল। ওরা দুজনই রাহিয়া আর সাবার হাত ধরেছিল। আর ওদের মধ্যে একজন তো রাহিয়াকে জড়িয়েও ধরেছিল।

রাহিয়া আর সাবা একটু ঘোরাঘুরি করছিল। হঠাৎ সাবা ওকে অপেক্ষা করতে বলে একটু অন্য জায়গায় গেল। এরপর রাহিয়া ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে না থেকে একটু হাঁটছিল। হঠাৎই সে কারো সাথে ধাক্কা খেল। হঠাৎ এমন ধাক্কা খাওয়ায় সামনের ব্যক্তি হাতে থাকা পানির বোতল নিচে পড়ে গেল। আর সেখান থেকে কিছুটা পানি রাহিয়ার ড্রেসের নিচের অংশে পড়ে গেল। সে যখন ড্রেস ঠিক করছিল তখন সামনে থাকা ব্যক্তি তাকে বলে উঠল,

— আমি খুবই দুঃখিত। আমি দেখতে পারিনি।

কথাটা শুনে রাহিয়া সামনের দিকে তাকাতেই দেখল একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। এরপর সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,

— সমস্যা নেই। আমার ড্রেসের তেমন কিছু হয়নি।

বলেই সে চলে যেতে নিল। কিন্তু নিচে পড়ে থাকা পানিতে পা রাখায় সে পড়ে যেতে নিল। তখনই ওই লোকটা ওকে ধরে ফেলল। হঠাৎ কেউ এভাবে ধরায় রাহিয়া খুবই অস্বস্তিতে পড়ে গেল। কিন্তু সামনের লোকটা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। একটু পর সে ধীরে ধীরে রাহিয়াকে সোজা করে বলে উঠল,

— আপনি ঠিক আছেন তো? আপনার কোনো সমস্যা হয়নি তো?

রাহিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— না কোনো সমস্যা হয়নি।

বলেই সে নিচের দিকে তাকিয়ে দ্রুত ওখান থেকে চলে গেল। আর পেছনে থাকা লোকটা ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। রাহিয়া কিছুটা সামনে যেতেই তার সাবার সাথে দেখা হলো। সাবা ওকে দেখে বলে উঠল,

— কিরে ওই দিকে কোথায় যাচ্ছিস? তোকে তো আমি ওখানে থাকতে বলেছিলাম। ওখানে কি হয়েছে যে ওই দিকে যাচ্ছিস?

— কিছুই না। আর আমি ওই দিকে তোর কাছে যাওয়ার জন্য যাচ্ছিলাম। চল বাকিদের কাছে যাই। ওই দিকে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।

সাবা ওই দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে বলল,

— আচ্ছা।

বলেই ওরা দুজন ওখান থেকে চলে গেল। দেখতে দেখতে প্রায় বিকাল হয়ে গেল। সবাই এখন বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাহিয়াও বাসায় যাওয়ার কথা বলল। তখন যেই ছেলেটা সকালে রাহিয়াকে জড়িয়ে ধরেছিল সে বলে উঠল,

— রাহিয়া চলো আমি তোমাকে তোমার বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসি।

কথাটা শুনে রাহিয়া সাথে সাথে বলে উঠল,

— তার কোনো দরকার নেই। আমি যখন একাই এসেছি তাহলে আমি একাই বাসায় যেতে পারব। আমার একা যেতে কোনো সমস্যা হবে।

তখন পাশ থেকে সাবা বলে উঠল,

— দিহান তো ঠিকই বলছে। রাহিয়া ও যখন তোকে বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসতে চাচ্ছে তাহলে তুই না করছিস কেন? এই দিহান তুই ওকে ওর বাসায় পর্যন্ত দিয়ে আয়।

কথাটা শুনে রাহিয়া কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠল,

— আচ্ছা।

রাহিয়ার এই উত্তর শুনে দিহান খুবই খুশি হয়ে গেল। এরপর রাহিয়া আগে যেতে শুরু করল। তখন সাবা দিহানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল,

— দেখলি তো কীভাবে রাজি করিয়ে দিলাম? এতো সুন্দর সুযোগ সবসময় আসে না। পরে আমাকে ট্রিট দিবি কিন্তু।

কথাটা শুনে দিহান মুচকি হেসে বলল,

— অবশ্যই। এখন আমি আসি রাহিয়া অপেক্ষা করছে।

বলেই সে দৌড়ে রাহিয়ার পেছনে যেতে লাগল। এরপর সে রাহিয়াকে তার বাসার একটু আগে নামিয়ে দিল। সে তাকে বাসার সামনেই নামিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু রাহিয়া অনুরোধে একটু আগে নামিয়ে দিল। রাহিয়া ইচ্ছা করেই একটু আগে নেমেছে। কারণ সে চায় না তার পরিবারের কেউ দিহানের সাথে তাকে দেখে উল্টাপাল্টা ভাবুক। এরপর রাহিয়া নিজের মতো করে বাসায় চলে এলো।

বর্তমান

একটু আগের সব ঘটনা মনে করে রাহিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপর সে নিজেই নিজেকে বলতে লাগল,

— কে এই লোকটা? আমার বিষয়ে এতোকিছু জানল কীভাবে? আমি কখন কি করছি এসব কীভাবে জেনে যাচ্ছে? এই লোকটা কী আমাকে অনুসরণ করছে বা আমার উপর নজর রাখছে?

কথাটা বলে সে পরক্ষণেই আবার বলে উঠল,

— যদি সে সত্যিই আমার উপর নজর রাখে? তাহলে এখন আমার কি করা উচিত? আমি এর থেকে নিজেকে দূরে সরাবো কীভাবে? আমি তো এসব কথা কাউকে বলতেও পারছিনা। এখন আমার কি করা উচিত? আমি কি এটা সাবাকে একবার বলে দেখব? বলা কি ঠিক হবে? উফফ! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

কিছুক্ষণ পর রাহিয়া নিজেকে শান্ত করে বলে উঠল,

— আচ্ছা এখন এসব বিষয় থাক। আমি এসব নিয়ে পরে ভাবব। এখন মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। না বুঝে উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেললে পরে আমাকেই বিপদে পড়তে হবে। তাই এখন যা হচ্ছে হতে দেই। পরে তেমন কিছু হলে দেখা যাবে।

এসব বলেই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপর সে কাগজটা রাখার জন্য পাশে তাকাতেই দেখল বক্সের ভেতরে অনেকগুলো চকলেট আছে। কাগজটা পেয়ে সে এতো চিন্তাভাবনা করছিল যে এর নিচে যে চকলেট আছে সেটা সে খেয়ালই করেনি। কিন্তু রাহিয়া এবার আর চকলেট দেখে খুশি হলো না। কারণ সে এসব বিষয় নিয়ে খুবই চিন্তায় আছে। তাই সে কাগজটা চকলেটের উপরে রেখে বক্সটা বন্ধ করে দিল। তারপর এটাকেও অন্য একটা জায়গায় রেখে দিল।

রাতে রাহিয়া বসে বসে বই পড়ছিল। তখন তার ফোনে একটা কল এলো। সে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই তার মুখে বিরক্তি ফুটে উঠল। কারণ রুদ্র কল দিয়েছে। রাহিয়া একবার ভাবল ধরবে না। পরে কিছু একটা মনে করে ফোনটা ধরে কানে দিল। তখনই রুদ্র ওপাশ বলে উঠল,

— রাহিয়া তোমার সাথে কিছু কথা ছিল। আসলে অনেক দিন আমাদের কথা হয় না।

— হুম বলো।

রাহিয়া মুখে এই কথা বললেও সে মনে মনে বলল,

— আমার সাথে আবার এর কি কথা? মন চায় একে ব্লক করে দেই অথবা এর কল ইগনোর করি। কিন্তু তাহলে ও ভাববে আমি তাকে এখনো ভালোবাসি আর তার উপর রাগ করে আছি। তাই আমি ওর সাথে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু তাই বলে এমনভাবে কল দিয়ে যাবে।

— রাহিয়া তুমি কি কালকে বাসায় থাকবে?

— কেন? হঠাৎ এই প্রশ্ন করছো কেন?

— আসলে তুমি তো অনেক দিন পর দেশে ফিরেছো। আর আম্মু অসুস্থ থাকায় তখন নিরার বিয়েতে যেতে পারেননি। তাই তোমার সাথে দেখাও হয়নি ওনার। তারপর আম্মু আর বাবা একটু কাজে গিয়েছিলেন। কালকেই ফিরেছেন ওনারা। ওনারা এখন চাচ্ছিলেন কালকে তোমার সাথে দেখা করতে। তাই তুমি যদি কালকে বাসায় থাকো তাহলে ওনারা একটু ওখানে যেতেন।

— শুধু ওনারা আসবেন?

— হ্যাঁ, শুধু ওনারা যাবেন। আমার অফিস না থাকলে আমিও যেতাম।

কথাটা শুনে রাহিয়া খুশি হয়ে মনে মনে বলে উঠল,

— ওহ। তার মানে শুধু মামা আর মামি আসবেন, রুদ্র আসবে না। ভালোই হয়েছে।

— না আমি বাসায়ই থাকব। তুমি ওনাদের আসতে বলে দেও।

— হুম বলে দিব।

— আচ্ছা আমি এখন রাখি।

বলেই রাহিয়া কলটা কেটে দিল। রুদ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— আমি তো কালকে যাচ্ছি না। কিন্তু বাবা মা তো যাচ্ছেন।

বলেই সে একটা মুচকি হাসি দিল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here