#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_১০
#লেখিকা_N_K_Orni
রাহিয়া ফোনটা ধরে কানে দিতেই সাবা অপর পাশ থেকে বলে উঠল,
— রাহিয়া আমার তোকে কিছু বলার আছে।
— হুম বল। তোর বলার পর আমিও তোকে কিছু বলব। আমারও তোকে কিছু বলার আছে।
— হুম বলব। কিন্তু তার আগে তুই বল যে আমার কথা রাখবি। নাহলে আমি কিন্তু বলব না আর তোকেও বলতে দিব না।
— আচ্ছা আমি ভেবে দেখব। বিষয়টা যদি আমার কাছে ভালো মনে হয় তাহলে আমি অবশ্যই রাখব। এখন তুই কথাটা বল।
— আমরা দুজন তো অনেক দিন পর দেশে ফিরেছি। ওখানে যাওয়ার পর আমাদের কোনো ফ্রেন্ডদের সাথে আর দেখাও হয়নি। তাই আমাদের ফ্রেন্ডরা ঠিক করেছে কালকে একসাথে দেখা করবে। আমাদের তো অনেক দিন দেখা হয় না। সবাই চায় তুইও আসিস। তুই না এলে আমরা সবাই খুবই মন খারাপ করব।
কথাটা শুনে রাহিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠল,
— আচ্ছা আমি ভেবে দেখব।
— আসলে আমার আর তোর জন্যই এসবের আয়োজন। আমরা না গেলে ভালো দেখাবে না। তুই প্লিজ চল।
— আমি বলেছি তো ভেবে দেখব। আমি তো আর না বলিনি যার কারণে তুই এতো অস্থির হচ্ছিস। আমার যদি কোনো কাজ না থাকে তাহলে আমি অবশ্যই যাওয়ার চেষ্টা করব।
— আচ্ছা। তাহলে তুই কিন্তু কোনো কাজ রাখবি না কালকে। এবার তুই কি বলতে চেয়েছিলি সেটা বল।
সাবার শেষের কথাটা শুনে রাহিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর সে সাবাকে নিরার রুদ্রকে নিয়ে বলা কথাটা বলল। সে শুধু রুদ্রের বিষয়ের কথাটাই বলল। কিন্তু তার সাথে হওয়া আর বাকি কথাগুলো সে বলল না। কারণ যতই হোক নিরা তার ছোট বোন। সে অন্য কারো কাছে নিজের ছোট বোনের বিষয়ে বাজে মন্তব্য করতে পারে না। তাই সে শুধু রুদ্রকে নিয়ে বলা কথাটা বলল। তার এসব কথা শুনে সাবা খুবই অবাক হয়ে গেল।
— তুই সত্যি বলছিস? তার মানে নিরা রুদ্র ভাইয়াকে কখনো ভালোবাসেনি। ও ওনার সাথে শুধুমাত্র ভালোবাসার নাটক করেছে তাও আবার তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। শুধুমাত্র তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য ও ওনার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেল?
— হ্যাঁ।
— কিন্তু কেন? ও এগুলো কেন করেছে? তোকে কষ্ট দিয়ে ওর কি লাভ হবে?
— জানিনা।
— রাহিয়া তোকে আমার কিছু বলার আছে। যেহেতু সবকিছু তুই জানতে পেরে গেছিস তার মানে বুঝতেই পারছিস রুদ্রের কোনো দোষই নেই। তাহলে কি তুই এখন আবার ওকে নিজের জীবনে আনতে চাচ্ছিস?
রাহিয়া কথাটা শোনার সাথে সাথে বলে উঠল,
— কখনোই না। আমি আর কখনোই ওর সাথে নিজের জীবন জড়াতে চাই না। যতই ওর দোষ না থাকুক, আমি ওকে নিয়ে আর কখনোই ভাবতে চাই না। তাই তুই এসব উল্টাপাল্টা চিন্তাভাবনা বন্ধ কর।
— হুম বুঝলাম। আর আমি খুব খুশি তোর কথা শুনে। তোর ওর সাথে নিজেকে জড়ানো আর উচিত হবে না।
— হুম এখন রাখি। পরে কথা বলব তোর সাথে।
— আচ্ছা। আর কালকে কিন্তু তুই আমাদের সাথে যাবি। আমি একটু পরেই তোকে সময় আর জায়গা ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি। মনে রাখবি তোকে কিন্তু যেতেই হবে।
— আচ্ছা।
বলেই সে কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা পাশে রাখল। তখনই তার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসার শব্দ এলো। সে বুঝতে পারল ম্যাসেজটা সাবা করেছে। সে ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজটা দেখে নিল। পরদিন সকালে রাহিয়া ঠিক করল সে যাবে। তাই বাসার সবাইকে এই বিষয়ে বলে দিল। যেহেতু দুপুরের আগে যেতে হবে তাই রাহিয়া ব্রেকফাস্ট করে তৈরি হয়ে নিল। তারপর নির্দিষ্ট জায়গার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। রাহিয়া ওখানে গিয়ে খুব ভালো একটা সময় কাটালো। অনেক দিন পর ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা হওয়ায় সে খুব খুশিও হলো। কিন্তু তার বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গেল। সে বাসায় ফিরে বাসার ভেতরে ঢোকার সময় একটা লোকের সাথে দেখা হলো। এটা সেই লোক যে ওইদিন তার কাছে পার্সেল ডেলিভারি করেছিল। সে বাসার ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে এক নজর লোকটার দিকে তাকিয়ে নিল। তারপর মনে মনে বলতে লাগল,
— এই লোকটা আবার কি দিতে এসেছে? আমার জন্য না তো? না আমার জন্য কেন হবে? মনে হয় অন্য কারো হবে।
সে বাসার ভেতরে ঢুকতেই লোকটা তার কাছে এসে তাকে ডাক দিল।
— আগের দিনের পার্সেলটা আপনার ছিল তাই না?
— হ্যাঁ।
— আজকেও আপনার জন্য একটা পার্সেল এসেছে।
কথাটা শুনে রাহিয়া অবাক হয়ে বলে উঠল,
— আজকেও! আপনি নিশ্চিত তো এটা আমার জন্যই এসেছে? আপনার কোথাও ভুলও তো হতে পারে।
— না আপনার জন্যই এসেছে। আগের দিন যেই নামে এসেছিল আজকেও সেই নামে এসেছে। যেহেতু পার্সেলটা আপনার তাই বলছিলাম যে আপনি যদি এখান থেকেই নিয়ে যেতেন তাহলে আমাকে আর কষ্ট করে উপর পর্যন্ত যেতে হতো না। আসলে আমার এরপরেও অন্য জায়গায় ডেলিভারি দিতে হবে তো।
— আচ্ছা আপনি আগে আমাকে পার্সেলটা দিন। যদি বেশি ভারী না হয় তাহলে আমিই নিয়ে যেতে পারব।
— আচ্ছা।
বলেই লোকটা তার দিকে একটা বক্স এগিয়ে দিল। বক্সটা একটু ছোট হওয়ায় সে সেটা নিয়ে নিল।
— সমস্যা নেই। এটা আমি নিজেই নিয়ে যেতে পারব। এটা নিয়ে যেতে আমার কোনো সমস্যা হবে না।
— আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার জন্য আমাকে লিফট পর্যন্তও যেতে হলো না।
বলেই লোকটা চলে গেল। রাহিয়া একবার ওনার যাওয়ার দিকে তারপর হাতের বক্সটার দিকে তাকালো। সে দেখল বক্সের উপরে তারই নাম দেওয়া আছে। কিন্তু আজকেও ওখানে কে পাঠিয়েছে বা এই বিষয়ে কিছুই লেখা নেই। তখনই তার চোখ তার হাতের ঘড়ির দিকে গেল। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে বক্সের দিকে আর মনোযোগ দিল না। সে ওটা নিয়ে পরে ভাববে ভেবে দ্রুত হাঁটতে শুরু করল। সে বাসায় গিয়ে প্রথমে তার রুমে চলে গেল। সে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় বদলে নিল। তারপর বিছানায় এসে বসতেই তার চোখ গেল ওখানে থাকা সেই বক্সটার দিকে। সে বক্সটা হাতে নিয়ে মনে মনে বলে উঠল,
— এসব আমাকে কে দিচ্ছে? এটা নিয়ে দ্বিতীয় বার আমাকে এসব দিল। কিন্তু আমাকে এসব দিয়ে তার লাভ কি? সে কি আমাকে পছন্দ করে? যদি পছন্দই করে তাহলে সরাসরি বলতে কি ক্ষতি? পেছন থেকে এসব করে কিছুই হবে না?
বলেই সে মুখ বাঁকালো। তারপর বিছানায় বসে বক্সটা হাতে নিয়ে বলে উঠল,
— যাইহোক, এখন বক্সটা খুলে দেখি। দেখি এর ভেতরে কি আছে?
বলেই সে বক্সটা খুলল। সেটা খুলতেই তার চোখে আবারও একটা কাগজ পড়ল। সে কাগজটা হাতে নিয়ে বলে উঠল,
— আবারও কিছু লিখে পাঠিয়েছে। এর সমস্যা কি? একে তো এতো বড়ো কাগজ দেয় কিন্তু ভেতরে মাত্র দুই লাইন লেখা থাকে, তারপর আবার দূর থেকে প্রোপোজ করে সামনেও আসে না। যাইহোক, আমার তো এসব পেতে অনেক ভালো লাগে। কে দিয়েছে তাতে আমার কি? কিন্তু অচেনা কারো কাছ থেকে এসব নেওয়া কি ঠিক? নাহ, আগে কাগজটা খুলে দেখি এতে কি লেখা আছে? এসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে।
এরপর রাহিয়া কাগজটা খুলে নিজের সামনে ধরতেই কিছু লেখা তার সামনে ভেসে উঠল। সে লেখাগুলো পড়তেই তার চোখ দুটো বড়ো হয়ে গেল। সে কাগজটা থেকে চোখ সরিয়ে নিজের আশেপাশে তাকাতে লাগল। তারপর আবারও কাগজটা খুলে নিজের সামনে ধরে ভালো করে দেখতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যে সে বেশ কয়েকবার লেখাগুলো পড়ে ফেলল। সেখানে লেখা ছিল, ” বর্তমানে তোমার আশেপাশে একটু বেশিই ছেলেরা ঘোরাঘুরি করছে দেখছি। তাদের কেউ হাত ধরছে, কেউ জড়িয়ে ধরছে, আবার কেউ পড়ে যাওয়ার আগে ধরে ফেলছে। এগুলো আমার একদমই ভালো লাগছে না। আশা করি এরপর থেকে তুমি ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। নাহলে এরপর যেটা হবে সেটা তোমার জন্য একদমই ভালো হবে না। ”
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )