#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_৯
#লেখিকা_N_K_Orni
রুদ্র থমথমে মুখে চেয়ারে বসে আছে। আর তার সামনের টেবিলে একটা খোলা ডায়রি পড়ে আছে। তখন তার ফোন বেজে উঠল। সে ফোনটা ধরে কানে দিতেই অপর পাশের ব্যক্তি তাকে বলে উঠল,
— রুদ্র কল দিয়েছিলি? আমি ছিলাম না রুমে। পরে এসে দেখলাম তুই এতোবার কল দিয়েছিস।
রুদ্র রুমের চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে বলল,
— হ্যাঁ। আসলে আম্মু আর বাবা বাসায় নেই। তারা একটু কাজের জন্য অন্য জায়গায় গেছে। তাই রাতে আমি বাসায় একটাই থাকব। তোর যদি তেমন কোনো কাজ না থাকে তাহলে আমার বাসায় চলে আয়।
— সেটা না হয় আসব। কিন্তু তুই হঠাৎ আমাকে ডাকছিস কেন? বাসায় একা আছিস তাই ভু*তের ভয় পাচ্ছিস নাকি?
কথাটা শুনে রুদ্র কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠল,
— সেটা পেলেও কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু বিষয়টা অন্য কিছু। আসলে আমি একটু অদ্ভুত অনুভব করছি। আমার চারপাশের পরিবেশটা কেমন অন্য রকম লাগছে। তাই তোকে আশার জন্য বলছি। এছাড়া তোকে আমার একটা ঘটনাও বলার আছে।
— উমম! বিষয়টা রহস্যময় লাগছে। আচ্ছা তুই অপেক্ষা কর। আমি অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই আসছি।
— হুম তুই আয়। আমি অপেক্ষা করছি।
বলেই রুদ্র ফোনটা কেটে দিল। সে ফোনটা টেবিলের উপর রাখার সময় তার চোখ গেল টেবিলের উপরে থাকা খোলা ডায়রিটার দিকে। তখন সে তার সামনে থাকা সেই ডায়রির খোলা পাতার উপরে হাত বুলিয়ে দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।
— যার জন্য আমি আমার ভালোবাসাকে হারিয়েছি তাকে আমি কিছুতেই ছাড়ব না। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব প্রতি*শোধ নেওয়ার জন্য। আমি তাকে কিছুতেই ছাড়ব না। তার করা ভুলের জন্য আমি আমার ভালোবাসাকে হারিয়েছি।
তখনই সে কোনো একটা আওয়াজ শুনল। সে দ্রুত ডায়রিটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো। তার আশেপাশে ভালো করে দেখতে। রুমে কিছু দেখতে না পেয়ে সে রুম থেকে বেরিয়ে গেল কিসের শব্দ হয়েছে সেটা দেখার জন্য। সে রুম থেকে বের হয়ে বাসায় অন্য জায়গাগুলো খুঁজে দেখতে লাগল।
এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চারপাশ পর্যবেক্ষণ করার পরও যখন কাউকে দেখতে পেল না তখন সে রুমে ফিরে এলো। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডায়রিটা অন্য একটা জায়গায় রেখে দিল। তারপর সে যখন বসতে যাবে তখনই তার বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। তাই সে না বসেই উঠে দাঁড়ালো। তারপর কিছুটা কৌতুহল নিয়ে দরজা খুলল। সে দরজা খুলে সামনে তার বন্ধুকে দেখতে পেল যাকে একটু আগে সে ফোন করে বাসায় আসতে বলেছিল। তাকে দেখতে পেয়ে সে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল।
— তুই তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি।
কথাটা শুনে তার বন্ধু ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
— তাই নাকি? আচ্ছা এখন চল তোর রুমে যাই। তোর কাছ থেকে সেই ভুতের গল্পটা তো শুনতে হবে।
— আরে তুই যা ভাবছিস তেমন কিছুই না।
— হুমম! সেটা তো একটু পরেই দেখা যাবে।
এসব বলতে বলতে তারা রুমের দিকে চলে গেল। পরদিন সকালে রাহিয়া ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে শুনল নিরা আজকেই চলে যাবে। কিন্তু সে এর জন্য কেমন প্রতিক্রিয়া দিবে বুঝতে পারল না। সে খুশিও হলো না আবার তার খারাপও লাগল না। ব্রেকফাস্ট শেষ করে সে রুমে এসে বসে রইল। তখনই ওর রুমে নিরা এলো।
— কিরে আমি চলে যাচ্ছি বলে তুই বেশ খুশি নাকি? তোর তো অনেক বেশি খুশি হওয়ার কথা।
কথাটা শুনে রাহিয়া মুখ তুলে তাকালো। নিরার এমন কথা শুনে তার মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠল। তাই সে বিছানা থেকে নেমে নিরার একদম সামনে এসে দাঁড়াল। ওকে এভাবে এসে দাঁড়াতে দেখে নিরা আবারও বলে উঠল,
— এভাবে মুখ করে আছিস কেন? তোর তো খুশি হওয়ার কথা? আমি তো ভুল কিছু বলিনি।
— সমস্যা কি তোর?
কথাটা শুনে নিরা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
— আমার কি সমস্যা তুই জানিস না? আমার সমস্যা হচ্ছিস তুই।
— আমিও তো সেটাই জানতে চাই। কি সমস্যা তোর আমাকে নিয়ে? আমি তোর সাথে কি এমন করেছি যে আমার সাথে সবসময় এমন করিস? আমি তো তোর জন্য রুদ্রের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। তারপরও তুই কেন এমন করিস? আর তুই কালকে যেন কি একটা বলতে চাচ্ছিলি? কিন্তু পরে থেমে গেলি মায়ের জন্য।
রাহিয়ার এসব কথা শুনে নিরা কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল। তাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে রাহিয়া তার মুখের দিকে একবার তাকাল। তারপর সে দরজার বাইরের চারপাশ একবার ভালো করে দেখে দরজা বন্ধ করে দিল। সে নিরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
— এবার বল তুই আমাকে কেন সবসময় এমন ভাবে দেখিস? আমি কেন তোর জীবনে সমস্যা? আমি তোর কি ক্ষতি করেছি?
— ক্ষতি করেছিসই তো। তুই পৃথিবীতে এসেই আমার ক্ষতি করেছিস। তুই এসেছিস বলেই আমার এতো সমস্যা। তুই না এলে আমার কোনো সমস্যাই থাকত না।
কথাটা শুনে রাহিয়া ভ্রু কুচকে বলে উঠল,
— মানে? তুই এসব কি বলছিস? আমি পৃথিবীতে এসে তোর কি সমস্যা করেছি? আমি তো তোকে সবসময় ছোট বোনের মতোই দেখেছি, মানে ছোট বোনের মতোই ভালোবেসেছি। তারপরও তুই এই কথা কেন বলছিস?
— সবাই তোকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসে। সবাই সবকিছুতে তোকে সবার আগে প্রাধান্য দেয়, তোর পছন্দ অপছন্দের খেয়াল রাখে। কয়েক প্রজন্মের পরের প্রথম মেয়ে সন্তান বলে তোকে সবাই একটু বেশিই আদর যত্ন করে। মা, বাবা এমনকি রাহাত ভাইয়াও তোকে বেশি ভালোবাসে।
— নিরা তুই কি পা*গল হয়ে গেছিস? এসব তোর ভুল ধারণা। মা বাবা আমাদের দুজনকেই সমান ভালোবাসে সাথে ভাইয়াও।
— একদমই না। সবাই তোকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তুই না এলে আমি এই পরিবারের প্রথম মেয়ে হতাম। তখন এসব কিছু আমি উপভোগ করতাম, সবাই আমাকে বেশি ভালোবাসত। এজন্যই আমি তোকে এতো বেশি অপছন্দ করি।
— এগুলো খুবই অযৌক্তিক কারণ নিরা। তোর আমাকে অপছন্দ করার জন্য কিছু যৌক্তিক কারণ খোঁজা উচিত ছিল।
নিরা তার এই কথায় পাত্তা না দিয়ে আবারও বলে উঠল,
— আর তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই আমি রুদ্রের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলাম। আমি জানতে পেরেছিলাম তুই ওকে ভালোবাসিস। তাই ওর সাথে আমি সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলাম যাতে তুই কষ্ট পাস। আসলে আমি তো ওকে কখনো ভালোই বাসিনি। আমি এসব শুধু তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য করেছি। কারণ আমি তোকে খুবই হি*ংসা করি। আর হ্যাঁ, এখন তুই চাইলেই রুদ্রকে পেতে পারিস। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।
বলেই সে দরজা খুলে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আর রাহিয়া ওখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রাতে রাহিয়া তার রুমে বসে ছিল। নিরা তার স্বামীকে নিয়ে বিকালেই চলে গেছে। কিন্তু সে সকালের ওই ঘটনার পর থেকে নিরার সাথে আর দেখা করেনি। সে এখনো ওসব নিয়েই ভেবে যাচ্ছে। হঠাৎ ফোনে কল আসায় সে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে এলো। সে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল সাবা কল দিয়েছে। সে ফোনটা ধরে কানে দিতেই সাবা অপর পাশ থেকে বলে উঠল,
— রাহিয়া আমার তোকে কিছু বলার আছে।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর এতোদিন গল্প না দেওয়ার জন্য আমি খুবই দুঃখিত। )