#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
দূর্বোধ্য এক অনুভূতিতে বাঁধা পড়েছে কিশোরী তোশা।ক্ষণে ক্ষণে যা তাকে শেষ করে দিচ্ছে।জীবনে হাসিখুশির উজ্জ্বলিত প্রদীপটি যেন আজ নিভন্ত পর্যায়ে এসে ঠেকেছে।সকাল থেকে ঠিকমতো খাওয়া হয়ে উঠেনি।তাহিয়া ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি তেমন একটা খেয়ালও করেনি।পেটের প্রত্যেকটি আনাচে কানাচে এখন তোশাকে খাবার গ্রহণের জন্য আকুতি জানাচ্ছে।কিন্তু আশ্চর্য মেয়েটি এক দানাও মুখে তুলতে পারছেনা।অথচ যাকে ঘিরে এই খারাপ লাগার আয়োজন সেই কবীর শাহ হেসে খেলে বেড়াচ্ছে।বোনের বিয়ে উপলক্ষে আসিফ তার সমস্ত বন্ধুবান্ধবদের ডেকেছে।একসময় তারা কবীরের সিনিয়র ছিল।তারা যে জায়গায় পড়াশোনা করেছে তা মূলত স্কুল,কলেজ একত্রে ছিল।
“রান্না ভালো হয়নি তোশা?”
“ভালো হয়েছে আম্মু।”
“তাহলে জলদি খেয়ে রুমে চলে যাও।একটু পরে সকলে আড্ডার আসর জমাবে।তুমি ছোট এখানে থাকা উচিত হবেনা।”
“তুমি এখানে থাকবে আম্মু?”
“কবীর থাকবে।আমি কিছুসময় আছি।ভয় নেই।তোমার সাথে আপাতত থাকার জন্য একজন মেয়েকে সাথে দিবো আমি।”
“হুহ।”
তোশা মনে মনে ভাবছে সে তো শুধু তার মায়ের কথা শুনতে চেয়েছিল।তবে সেখানে কবীর নামটা কেন যুক্ত হলো?ভয়ংকর অপমান করেছে লোকটা তাকে।সে কখনো আর কথা বলবেনা।মনকে শাসন করে নিলো।ছোট ছোট করে খাবার মুখে দিচ্ছে এহেন সময় একজন মহিলাকে ঘিরে হৈ হৈ করে উঠলো সকলে।তোশা তাকে চিনে।প্রচন্ড রকমের বি ত র্কিত একজন নারী লেখক।নাম রুবা।বয়স আসিফের সমান হবে সম্ভবত।তোশা আগ্রহের সহিত মায়ের উদ্দেশ্যে শুধালো,
“উনি কে হোন আসিফ আঙকেলের?”
“বান্ধুবী।আমাদের সিনিয়র ছিলেন।তখন তো ভালো ছিল।কিন্তু এখন পুরোদস্তর ফেমিনিস্ট।কবীর তো এক কালে রুবা আপু বলতে ফিদা ছিল।”
তোশার শূন্য হৃদয়ে কেউ যেন একরাশ কয়লা ফেলে দিলো।জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।ধীর কণ্ঠে শুধালো,
“কেমন ফিদা ছিল?”
“ফ্লার্ট করতো।বাড়ীতে গিয়ে ঢিল ছুঁড়তো।টিনেজাররা যেমন করে।দেখো আজ আবার যখন দুজনের দেখা হবে তখন ঠিক আগের রুপে ফিরে যাবে।”
“ভালোবাসা ছিল?”
মিষ্টি করে হাসলো তাহিয়া।যা পুরোদস্তুর নিরোর্থক অনুভব হলো তোশার নিকট।খাওয়া বাদ দিয়ে কিশোরী সামনে তাঁকিয়ে রইলো।কবীর শাহ ভীরের মধ্যে একদম রুবার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।তোশা চোখ বন্ধ করে নিলো।কিন্তু কথা গুলো ঠিকই তার কর্ণগোচর হলো।এইতো সেই দৃঢ়, মায়াময় শক্ত কণ্ঠে কবীর বলছে তবে অন্য এক রমণীর উদ্দেশ্যে।
“কী আশ্চর্য আজ জমিনে চাঁদের আগমণ ঘটলো।এই কয়লা হয়ে যাওয়া পাথরটি তো নিজেকে কু র বা ন করতে ভুলবে না সেনোরিটা।”
রুবা উচ্ছাসিত কণ্ঠে বলল,
“কবীর শাহ।তুমি সত্যি নাকী আমি ভুল দেখছি।”
“কী ব্যাপার রুবা।আমাকে নিয়ে কী খুব বেশীই স্বপ্ন দেখেন যে বাস্তবে দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না।”
কুটিল হাসলো রুবা।ঘাড় অবধি সুন্দর করে কাট দেওয়া চুলগুলো নাড়িয়ে বলল,
“তুমি বদলালে না।”
“এতো রুপ দেখে বদলানো যায় বলেন?তবে মন খারাপ হয়েছিল।বিয়ে শেষ হতে চলল অথচ সুন্দরীর দেখা মিললো না।অবশেষে এই অধম এক বিন্দুর পানির দেখা পেলো।”
রুবা সহ আশেপাশের সকল মানুষ উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো।আসিফ তাদের থামিয়ে বলল,
“চুপ থাকো দুজনে এখন।চল রুবা তাহিয়ার সঙ্গে আলাপ করিয়ে আনি।”
“তাহিয়া?ও এখানে কীভাবে?”
“সে বহু কথা।আয়।”
রুবার সঙ্গে সরাসরি পরিচয় হতে হবে দেখে তড়িঘড়ি করে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে নিলো তোশা।কবীরের মুখে বলা একেকটি বাক্য তাকে য ন্ত্র ণা দিচ্ছে।হয়তো শুধুমাত্র একান্তে সেসব পাওয়ার আশা জাগে মনে।যা পূরণ হয়না।প্রস্থানের সময় কবীরের সঙ্গে চোখাচোখি হলো তার অবশ্য।কিন্তু অনুভূতির বিনিময়?সেটা কখনো হবে?”
(***)
গভীর রাত দুটো।সকলের সঙ্গে আড্ডায় এতোটা সময় কখন চলে গিয়েছে বুঝতে পারেনি কবীর।তাছাড়া সে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিল তোশার কথা ভুলে থাকতেও।রুমের কাছে এসে সে থমকে দাঁড়ালো।পাশে তাহিয়াদের রুম যেটির দরজাটি হালকা খোলা।খটকা লাগলো কবীরের।যদিও ভেতরে উঁকি দেওয়া কোনো সভ্য মানুষের কাজ হবেনা কিন্তু নিজেকে দমন করতে পারলো না।বিছানায় একান্তে শুধু তাহিয়াকে শুয়ে থাকতে কপালে মৃদু ভাঁজ পড়লো।ওয়াশরুমটাও যে ফাঁকা সেটি বোঝা যাচ্ছে। মুহুর্তেই ঘাম ছুটে গেলো কবীরের।হালকা নেশা আছে তার।তবুও হন্তদন্ত হয়ে নিজের রুমে এসে দেখলো সেটিও ফাঁকা।
“তোশা তুমি কী ভেতরে আছো?”
জবাব পেলো না পুরুষটি।তৎক্ষনাৎ বের হয়ে গেলো রুম থেকে।অবশেষে আধা ঘন্টার গোপন অভিযানের পর মেয়েটির দেখা মিললো ছাদে।আজ তাকে সুন্দর করে শাড়ী পরিয়ে দিয়েছিল তাহিয়া।হলুদ রঙা মিষ্টি পাখি লাগছিলো।এই কিশোরীকে কখনো শাড়ী পরলে ছোট লাগেনা।কবীরের কী হলো কে জানে?পিছন থেকে তোশাকে খুব শক্ত করে আলিঙ্গন করলো।
“এখানে কী করছো তুমি?জানো রুমে না দেখে ভয় পেয়েছিলাম।”
কুণ্ঠিত হয়ে তোশা জবাব দিলো,
“আম্মু ঘুম থেকে উঠেছে?”
“নাহ।”
“রুমে ভালো লাগছিলো না।”
“তাহলে আমার কাছে আসতে।তবুও একা কেন ঘুরাঘুরি করছো।”
“আপনি আমার কে যে আপনার কাছে যাবো?”
কবীর অবাক হয়ে নিজ বক্ষের সঙ্গে লেপ্টে থাকা অভিমানী কিশোরীকে দেখলো।তৎক্ষনাৎ স্মরণে এলো সে সত্যিই কেউ না।ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।গম্ভীর সুরে বলল,
“রুমে ফিরে চলো।”
“একটু পরে।”
“মন খারাপ কিছু নিয়ে?”
“হুহ।”
“সেটা কী?”
“শুনে কী করবেন?আপনার জন্য তো বহু রুবা আছে।এক তোশার কথা না শুনলেও চলবে।”
“জেলাস?”
কঠিন মুখে ফিরে তাঁকালো তোশা।আবারও অনুভূতিকে অপমান করছে ব্যক্তিটি।
“মি.শাহ।আপনি আমার অনুভূতিকে ইনসাল্ট করার সাহস পান কোথা থেকে সবসময়?”
ভ্রু কুঞ্চিত হলো তামাটে পুরুষটির।অধরে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল,
“তুমি ভীষণ রহস্যময়ী বেলাডোনা।যাকে এই কয়লা বুঝতে পারছেনা।”
তোশা অশ্রুপূর্ণ দৃষ্টিতে মানুষটিকে দেখলো।ভালোবাসি সে আর বলবেনা।বরং এখন থেকে দূরে দূরে থাকবে।চলে যেতে নিলে তার আঁচলখানা ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো কবীর।প্রাণভরে মেয়েটির গায়ের উষ্ণ সুগন্ধ গ্রহণ করলো সে।
“তোশামণি,তুমি বড় অসময়ে আমার জীবনে এলে।যদি তা না হতো বিশ্বাস করো সবথেকে ভালোবাসা দিতাম তোমাকে।”
“আপনি নিষ্ঠুর কবীর শাহ।”
কবীর পুনরায় সেই ভুলটি করলো।তবে এবার তোশা সজ্ঞানে রয়েছে।আস্তে করে তপ্ত অধর দুটো তোশার কপালে ঠেকালো।মিষ্টি একটি বাতাস এসে স্পর্শ করে গেলো তাদের।কবীর আনমনে বলল,
“আমি দেশ ছাড়বো তোশা।যদি এখন তোমার থেকে দূরে না যাই তবে পাগল হয়ে যাবো।জানো হালকা নেশা করেছি একটু আগে।সেই কারণে এমন নিজেকে খুলে দিচ্ছি তোমার কাছে।নেশা কেঁটে গেলে আবার বাস্তববাদী হয়ে পড়বো।”
“কেন যাবেন কবীর শাহ?আমাকে ভালোবাসেন আপনি?উত্তরটি কী হ্যাঁ নয়?”
“হয়তো আবার হয়তোবা না।বাদ দাও এসব কথা।এখন শুধু এই সময়টুকুকে উপভোগ করো।”
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকলে রেসপন্স করবেন সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে।