#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আমার ভয় লাগছে।আশেপাশে কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে।”
“কোনো ভয় নেই।দেখো আমি আলো নিয়ে এসেছি।”
মেয়েটির বুকের স্পন্দন অনুভব করতে পারছে কবীর।এখনও তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।সন্ধ্যার শীতল বাতাস তাদের স্পর্শ করে গেলো।মিষ্টি একটা সুগন্ধে সম্মোহিত হয়ে উঠলো কবীরের পুরুষ মন।আনমনে তোশার চুলে নাক ঠেকিয়ে জোরে নিশ্বাস নিলো।পরক্ষণে হুশ ফিরলো তার।বলিষ্ঠ হাতে মেয়েটিকে সোজা দাঁড়া করালো।নরম গালে দৃঢ় হাতটি ঠেকিয়ে শুধালো,
“এতো দূর কীভাবে এসেছিলে?দেখি তাঁকাও তো আমার দিকে।”
দুটো দৃষ্টির পরস্পর মিলনে প্রথমবারের মতোন পুরুষটিকে দেখলো তোশা।মেয়েটা খেয়াল করলো কয়দিন পূর্বে স্বপ্নে যে মানুষটিকে দেখে পেটের ভেতর সহস্র প্রজাপতি উড়ে গিয়েছিল।সেই স্বপ্ন মানবের সাথে বাস্তবে সামনে দাঁড়ানো মানুষটির বহু মিল আছে।হাত বাড়িয়ে কবীরের গাল ছুয়ে দিলো সে।
“চলো তোশা।তাহিয়া অপেক্ষা করছে।কীভাবে এলে এখনও কিন্তু বললে না।”
“আম্মু বকবে অনেক।”
“আমি আছি তো।”
“আপনি কী সেই কবীর শাহ?ওইযে আম্মুর বন্ধু।”
“ঠিক ধরেছো।তোমাকে শেষবার দেখেছিলাম যখন জন্ম নিলে।যদিও ওটা প্রথমবার ছিল।”
কবীর এক হাত দিয়ে তোশাকে নিজের সাথে মিশিয়ে গাড়ীতে নিয়ে গিয়ে বসলো।মুহুর্তেই কমিউনিটি সেন্টারের জন্য যাত্রা শুরু হলো তাদের।নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে নিয়েছে তোশা।মেয়েটার খুব কৌতুহল হচ্ছে পুরুষটিকে নিয়ে।আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি এতোদিন কোথায় ছিলেন?”
“লন্ডনে।কেন তাহিয়া কখনো বলেনি?”
“উহু।”
খুব বেশী সময় লাগলো না বিয়ের জায়গাটিতে পৌঁছাতে।কবীরের গাড়ীতে তোশাকে দেখে দৌড়ে এলো তাহিয়া।মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো।কপালে বড় একটা চুমো দিয়ে তাহিয়া শুধালো,
“তোশামণি কোথায় গিয়েছিলে তুমি?আর কেন?”
চঞ্চলা কিশোরীর চোখদুটো আশেপাশে ঘুরছে।কারণ ইতিমধ্যে বিয়ে বাড়ীর সকলে গেটের কাছে সমাবেত হয়েছে।এরমধ্যে মেহরাবকে দেখে তোশার চেহারায় অনুভূতির পরিবর্তন ঘটলো।সে কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে মেহরাব ইশারায় না করে দিলো।সকলের দৃষ্টি সেদিকে না থাকলেও কবীর বিষয়টা দেখলো।তবে বুদ্ধিদীপ্ত এই পুরুষটি তাহিয়াকে বলল,
‘তাহিয়া তোশামণি ভয় পেয়েছে।ওকে এখন এতো প্রশ্ন করো না।আর বিয়েটা হয়ে গেলে দুজনে আমার সাথে যাবে।কেমন?”
“তবে কবীর আমার জানা প্রয়োজন।ও বের হলো কেন?”
“তাহিয়া!আমাকে বিশ্বাস করো।”
উষ্ণ শ্বাস ফেললো তাহিয়া।এক জীবনে কবীর নামক এই বন্ধুটি তার কাছে সবথেকে ভরসার জায়গা।ডিভোর্সের পর থেকে কেমন আগলে রেখেছে ছায়ার মতোন।মেয়েকে নিয়ে তাহিয়া ভেতর দিকে পা বাড়ালো।হুট করে তোশা বলল,
“মা আমি তাকে থ্যাংক ইউ বলিনি।”
“কাকে?”
মুখে কোনো জবাব দিলো না তোশা।বরং দৌড়ে গিয়ে কবীরকে পুনরায় জড়িয়ে ধরলো।পুরুষটি একটু বেশীই লম্বা।পেশিবহুল শরীর।নিয়মিত শরীর চর্চার দরুণ বেশ বড়সড় দেখা যায়।সেই তুলনায় তোশা নেহাৎই বাচ্চা মেয়ে।চল্লিশ কেজি ওজনের ছিমছাম দেহটাকে হেসে জড়িয়ে ধরলো কবীর।মেয়েটির মাথা তার বুকের অর্ধেক অবধি ঠেকেছে।
“কী হলো তোশামণি?”
“থ্যাংক ইউ।”
“বাহ।তুমি তো ভালোবাসা দেখাতে জানো।”
মাথা উঠিয়ে কবীরকে উজ্জ্বল আলোতে পুনরায় দেখলো তোশা।নাহ সত্যিই বড় মিল আছে স্বপ্নের সঙ্গে।
(***)
মেহরাবের রোগা শরীরটা ক্ষণে ক্ষণে ঘেমে উঠছে।ভীর থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে সে।তখন তোশাকে নিয়ে বের হওয়ার পর ভুলে ওকে রেখে সে বন্ধুদের সঙ্গে চলে এসেছিল।
পরবর্তীতে মেয়েটির খোঁজ পড়ায় মনে এসেছে।আচমকা প্রচন্ড ভারী একটা হাত তার ঘাড়ের উপর পড়লো।গলা একদম কনুই দিয়ে চেপে ধরলো কেউ।মেহরাব চিৎকার করে উঠলো।
“চিল্লাবে না ছেলে।আগে বলো তোশার হারিয়ে যাওয়ার পিছনে হাত আছে কীনা।”
মেহরাব ভয় পেলেও বহু কষ্টে জবাব দিলো,
“কে তোশা?”
“তোশাকে চিনো না?লাল রঙের লেহেঙ্গা পরা গোলগাল সুন্দর মেয়েটা।”
কবীর নিজ মুখে তোশাকে সুন্দরী বলে একটু বিব্রত বোধ করলো।একটা বাচ্চাকে মেয়েকে তার চোখে অন্য রকম সুন্দর লাগা শোভনীয় নয়।
“ও তো লেহেঙ্গা না ফ্রক পরেছে।”
“একদম না।ওটা লেহেঙ্গা।”
“আরে না ফ্রক।আমি কতো জিএফকে কিনে দিয়েছি।”
“লেহেঙ্গা।”
“ফ্রক।”
রাগ উঠে গেলো কবীরের।মেহরাবের গলা আরেকটু জোরে চে পে ধরলো।চিৎকার করে ছেলেটা বলল,
“লেহেঙ্গা ওটা।আপনি ঠিক।”
“তোশাকে চিনো দেখছি।”
“আজ পরিচয় হলো।”
“বাহিরে তুমি নিয়ে গিয়েছিলে তাইনা?”
“হ্যাঁ।খারাপ মতলব ছিলনা কিন্তু।”
“রেখে এলে কেন?”
“ভুলে গিয়েছিলাম ওর কথা।”
কবীর আশ্চর্য হয়ে ছেলেটির গলা ছেড়ে দিলো।মেহরাব ছিটকে সরে মানুষটিকে দেখলো।এমন লম্বা চওড়া সুদর্শন পুরুষ সিনেমা কিংবা একশন মুভিতে দেখেছে সে।শার্টের উপর দিয়ে বাইসেপস গুলো ছুঁয়ে বলল,
“ওরে বাবা।এগুলো আসল।”
“তুমি কীভাবে একটা মেয়ের কথা ভুলে গেলে?জানো দুনিয়া কেমন?যদি কিছু হতো।”
“সরি ভাইয়া।”
“তোমার ভাইয়া লাগি আমি?”
“আরে ভাই বানিয়ে নিয়েছি।”
কবীর বিরক্ত হয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।ছেলেটা পা গ লা টে ধরণের।তাছাড়া মানুষ বিষয়টা জানলে তোশাকে ভুল বুঝবে।পিছন পিছন মেহরাব এসে বলল,
“বস ফোন নাম্বার দাও।তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।একবার দাও।কোথায় থাকো সেটা তো বলো।”
“আমাকে তোর বন্ধু মনে হয়?সর এখান থেকে।”
“শুনো তো বস।”
কবীর থামলো না।বড় বড় পা ফেলে সামনে হাঁটা ধরলো।অজান্তে মনটা ভালো হয়ে গেলো তার।কারণটা কী তোশা?কথাটি ভাবতেই অদ্ভূত লাগলো কবীরের নিকট।
(***)
এক ফালি মিঠা রোদ তোশামণির মুখের উপর এসে লুটোপুটি খেতে লাগলো।হাত দিয়ে মুখে ছায়া করলো সে।বিরক্তিতে ঘুম ভেঙে গেলো তার।ঘুমঘুম চোখে উঠে বসলো।স্থান কাল ভুলে জোরে জোরে চিল্লিয়ে বলল,
“আম্মু আম্মু জানালা গুলো বন্ধ করে দাও।আমি আরো ঘুমাবো।”
“তাহিয়া বাহিরে গিয়েছে।ঘুমাচ্ছিলে এজন্য ডাকেনি।”
পুরুষ কণ্ঠ শুনে ঘুম ছুটে গেলো মেয়েটির।আলুথালু চুলগুলো হাত দিয়ে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দিলো।কবীর দাঁড়িয়ে আছে সামনে।পুরুষটির শরীরে ঘামে ভেজা টি শার্টটি লেপ্টে আছে।গলায় থাকা এডামস এপেল শুকনো ঢোক গেলার সঙ্গে উঁচু নিচু হচ্ছে।তোশার বড় লোভ হলো সেটি ধরার জন্য।কবীর তাকে তাড়া দিয়ে বলল,
“এগারটা বাজে।ঘুমিয়েই যাচ্ছো।উঠবে কী?”
“নাহ।আরো ঘুমাবো।”
“এতো ঘুমালে খারাপ লাগবেনা?”
“রাতে ঘুমাতে পারিনি আমি।”
“কেন?”
“বাসাটা কেমন ভয়ংকর।”
কবীর চারিধারে চোখ বুলালো।গাজীপুরের এই বাসাটায় খুব বেশী থাকা হয়না।এজন্য কিছুটা নির্জন।
“ভূতের ভয় পাচ্ছিলে?”
“কীভাবে বুঝলেন?”
“আমি মনের কথা বুঝতে পারি।”
“মিথ্যা।”
হেসে ফেললো কবীর।বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে ভীষণ ভালো লাগে তার।মেয়েটা তার চোখে সেরকমই।এগিয়ে এসে তোশার সামনে বসে তার চুলগুলো এলেমেলো করে দিলো।আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টি সাধারণ হলেও কবীরের মন কেমন যেন করে উঠলো।অগোছালো যুবতী মেয়ে।পরনের কাপড় এলেমেলো হয়ে আছে।গা দিয়ে পূর্বের মতোন মিষ্টি গন্ধ।নরম ত্বকে স্পর্শ করার দরুণ কবীরের অ স হ্য কর অনুভূতি হলো।এরকম আগেও হতো।যখন তার প্রাক্তন স্ত্রীকে মনেপ্রাণে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার বিনিময় করতো।তবে একই অনুভূতি তোশাকে স্পর্শ করার পর কীভাবে এলো?
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকলে রেসপন্স করবেন।জানেন তো সেরা কমেন্টকারীদের মধ্যে ভাগ্যবান একজন বই উপহার পাবে।