তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব ১৪

0
457

#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১৪

নিশির বিয়ের তৃতীয় দিন আজ শুক্রবার বিয়ে হয়েছে আজ রবিবার মাঝে শনিবারটা কেটেছে। আজ এই বাড়ি থেকে লোকজন রিফাতদের বাড়িতে যাবে তার জন্যই রেডি হওয়ার তোরজোর চলছে। এই বাড়ি থেকে মোট বারো জন যাবে নুশা নুশার বাবা নিশাত সায়ানের আম্মু আব্বু সায়ানের একদম ইচ্ছে নাই যাওয়ার কিন্তু নুশার জন্য যেতে হচ্ছে নুশাকে বারণ করেছে না যাওয়ার কিন্তু নুশা তো নুশাই সে তো যাবেই বোনের শ্বশুর বাড়ি সেই সাথে নুশার বেস্ট ফেন্ড হওয়ায় ইমাও যাবে । দুইজন আজ এক রকম ড্রেস পরেছে। দুইজনকে পিছন থেকে একরকম চেনা সম্ভব না সহজে । দুইজনের মাঝে একটু তফাৎ নুশা ইমার থেকে একটু লম্বা । দুইজন গ্রিন থ্রী -পিছ পরেছে সায়ান হোয়াইট শার্ট ব্লাক পেন্ট কোট পরেছে নিশাত হোয়াইট শার্ট নেবি কোট পেন্ট পরেছে এদের দুই জনের মাঝেও সায়ান একটু লম্বা ।

দুইটা গাড়ি একটায় বড়রা যাবে আরেকটাই ছোট রা যাবে। নিশাত সায়ান নুশা ইমা আরো দুইটা মেয়ে আরেকটা ছেলে উঠেছে সব গুলোই নুশার কাকাতো ভাই বোন এই গাড়িতে আর অপর গাড়িতে নুশার আব্বু সায়ানের আব্বু আম্মু আরেকটা মহিলা আরেকটা পুরুষ যেটা নুশার চাচা আর চাচি লাগে। বড়দের গাড়িতে আলাদা করে ড্রাইবার দেওয়া থাকলেও ছোটদের গাড়িতে নিশাত ড্রাইবারের কাজ করছে ।
এক ঘন্টার মতো সময় লাগলো রিফাতদের বাড়িতে পৌঁছাতে । গাড়ি রিফাতদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো রাস্তা থেকে একটু ভিতরে রিফাত দের বাড়ি রাস্তায় নেমে সেটুকু হেটে যেতে হয় । এক এক করে সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে যেতে লাগলো প্রথমে সব বড়রা তারপর ছোটরা । এতোক্ষণ নিশাত ড্রাইভ করলেও এবার নিশাতের জায়গায় সায়ান বসে সবাইকে নামিয়ে গাড়িটা সাইট করার জন্য কিছুটা সামনের দিকে চলে গেলো ।

সবাই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থেকে সায়ানের আসার অপেক্ষা করছে। রাস্তার অপজিটে একটা দোকান আছে আর সে দোকানে শুভ বসে ছিলো পরপর দুইটা গাড়ি সে খেয়াল করেছে কিন্তু ভিতরের মানুষ গুলো না দেখতে পেলেও এটা ঠিক বুঝতে পারছে যে রিফাত ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে এসেছে আর রিফাতের শ্বশুর বাড়ির মানুষ বলতে নুশাও এসেছে তাই আর দেরি না করে বসা থেকে উঠে দাড়ালো আর নুশাদের দেখতে পেলো । নুশাকে দেখে ডাক দিতেই যাবে কিন্তু কিছু একটা মনে করে মুচকি হাসি দিয়ে রাস্তা পার হয়ে নুশাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় এতোক্ষণ শুভকে কেউ খেয়াল করে নাই৷ শুভ সবাইকে বলে উঠলো,
-কেমন আছেন আপনারা সবাই এটা বলে নুশার কানে কানে বলে উঠলো, আপনি কেমন আছেন মিস আহমেদ ।
সবাই শুভকে দেখে হেসে বলে উঠলো ,,,
-আমরা সবাই ভালো আছি আপনি কেমন আছেন।
-জি আপনাদের সবার দোয়ায় আমিও খুব ভালো আছে তা এখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো ভিতরে চলেন ।
শুভর কথা শুনে ইমা বলে উঠলো,
-আসলে ভাইয়া আমরা সায়ান ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছি । উনি আসলে তারপর আমরা সবাই মিলে এক সাথে যাবো।

ইমাার বলতে বলতে ততক্ষণে সায়ান এসে সকলের সামনে হাজির। সায়ান কে দেখে শুভ তার ডান হাত সায়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
-হ্যালোঁ ড. সায়ান চৌধুরী কেমন আছেন ।
সায়ান শুভর হাতের দিকে তাকিয়ে তার হাতটাও এগিয়ে দিয়ে শুভর হাতের সাথে হাত মিলিয়ে বলে উঠলো ,,
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আর তুমি কেমন আছো।
-জি আলহামদুলিল্লাহ তো আসেন আপনার জন্য সবাই এখানে দাঁড়িয়ে আছে ।
-অহ হ্যাঁ চলো সবাই । বলে সাযান হাটতে লাগলো , সায়ানের সাথে সাথে সবাই হাটতে লাগলো। নুশা আর ইমা পিছনে আর নুশার পাশে শুভ হাঁটতে লাগলো আর নুশাকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করতে লাগলো । সায়ান সবার সামনে হওয়ায় কিছু শুনতে না পারলেও হটাৎ করেই হাঁটার মাঝে পিছনে ঘুরে নুশার আর শুভর দিকে তাকাতেই রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফেললো যেনো সব রাগ তার হাতের মুষ্টিতে জমা করেছে সঠিক টাইমে মুষ্টি টা খুললে তার হাত তার কন্ট্রোল হারাবে। বাড়ির সামনে বড় উঠান এখানে বেশ কয়েকজন চেয়ারে বসে আছে সব পুরুষ মানুষ কিছু মানুষকে নুশা চিনলেও প্রায় বেশি মানুষকেই সে চিনে না । শুভ এখনো নুশার পাশে দাড়ানো মেয়েদের মতো বকবক করেই যাচ্ছে নুশার কাছে অসয্য লাগছে । কিন্তু কি আর করার আপুর শ্বশুর বাড়ির মানুষ খারাপ আচরণও করতে পারছে না তাই অসয্য হয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে আর হুম না উওর দিচ্ছে৷। নুশার সাথে ইমাও প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে এতো কথা বলতে পারে ছেলে মানুষ আল্লাহ । নুশা অসহায় চোখে সায়ানের দিকে তাকায় সায়ান চেয়ারে বসে মোবাইল দেখছে নুশা সায়ানের এমন আচরন দেখে অবাক না হয়ে পারলো না। নুশাকে এমন ছেলেদের সাথে কথা বলতে দেখেও চুপচাপ কি ভদ্র ছেলের মতো বসে আছে । না নুশাকেই কিছু একটা করতে হবে এই শুভর হাত থেকে বাচতে আর তা হলো এখনি নুশাকে সায়ানের কাছে যেতে হবে কারন এখন সায়ানের কাছে গেলে শুভ তার পিছু ছাড়া বন্ধ করবে কেননা এখন যদি নুশা বোনের কাচে যায় সেখানেও যাবে তাই নুশা আর দেরি না করে শুভর দিকে তাকিয়ে আঙুল দিয়ে এশারা করে বললো,
– একমিনিট ,,,!!

এটা বলে তাড়াতাড়ি সায়ানের কাছে এসে দাড়ালো আর হাত কচলাতে লাগলো৷। সায়ান নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলেও নুশা উপস্থিতি সে ঠিকই বুঝতে পেরেছে শুধু নুশার কথা শুনার অপেক্ষায আছে । নুশা হাত কচলাতে কচলাতে একবার মাথা তুলে ইমা আর শুভর দিকে তাকায় । শুভ একাই দাড়িয়ে আছে তার দিকে প্রশ্ন চোখে ইমা দুরে নিশাতের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। নুশাকে এমন চুপচাপ দেখে সায়ান মাথা তুলে দেখে নুশা শুভর দিকে তাকিয়ে আছে যেটা দেখে সায়ানের আরো রাগ উঠে গেলো তাই বলে উঠলো,
-এখানে কি,,? এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো কথা বলে শেষ হয়নি৷ তাই এখানে এসেও তাকিয়ে আছো। তোমাকে এখানে আসতে কে বলেছে দুর থেকে দেখে কি লাভ এতোক্ষণ তো কাছে দাড়িয়ে থেকেই দেখতেছিলে তাহলে এখানে এসে দুর থেকে দেখার মানে কি..?

সায়ানের এমন কথায় কেঁপে উঠলো নুশা আর ঐদিক থেকে মুখ সরিয়ে সায়ানের দিকে তাকালো সায়ান এখনো মোবাইলে গেমসে ব্যস্ত । নুশা কাপা কন্ঠে বলে উঠলো,

-ভাইয়া আসো ভিতরে যাই াপুর সাথে দেখা করে আসি।
নুশার কথা শুনে সায়ান গেমস টা বন্ধ করে নুশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-তুমি যাও তোমাকে বাদা দিচ্ছে কে৷। তুমি একা না যেতে পারলে তোমার আশিক কে নিয়ে যাও।

নুশা সায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

-ভাইয়া উনি আশিক না তো উনার নাম তো শুভ। তোমার সাথে তো তেমন কথা হযে উঠেনি তাই হয়তো নাম জানো না তাই না ভাইয়া। আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নাই আমি তো বলেই দিছি ।

সায়ন রাগী চোখে নুশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
– আজাইরা মানুষের নাম জেনে রাখা আমার একদম দরকারী না৷ তাই আমাকে না বলে তার সাথেই নিশির সাথে গিয়ে দেখা করে আসো।

নুশা সায়ানের রাগী লুক দেখে ইনোসেন্ট মুখ করে বলে উঠলো,
-ভাইয়া তুমি আসো,,,। আমি উনার সাথে যাবো না।

সায়ান আবার খেলায় মনোযোগ হয়ে বলে উঠলো,
-ইমাকে নিয়ে যাও ।
-ভাইয়া । ইমাকে নিয়ে গেলে শুভ উনিও আমাদের সাথে যাবে প্লিজ ভাইয়া তুমি চলো।

নুশার কথা শুনে সায়নের মেজাজ তেতএিশ হয়ে গেলো মোবাইল বন্ধ করে দাড়িয়ে পকেটে মোবাইল রেখে নুশার হাত ধরে বাড়ির ভিতর যেতে লাগলো । আর নুশা সায়ানের সাথে হাঁটত হাটতে মিন মিন করে বলা শুরু করলো,
-ভাইয়া আস্তে মানুষ কি বলবে। একটু আস্তে হাটো পরে যাবো তো৷। সায়ান কোনো রুমে না গিয়ে একবারে ছাদের দিকে অগ্রসর হলো ভাগ্য ভালো কারো সামনে পরেনি তারা ।

শুভ দূর থেকে নুশা আর সায়ান কে লক্ষ করছিলো হটাৎ সায়ান নুশাকে এভাবে নিয়ে যাওয়াতে তাদের পিছনে যেতে যাবে ঠিক তখনই রিফাত শুভকে ডেকে বলে উঠলো,

-রিপাত এদিকে আয় তো ,,,,
কি আর করার রিফাতের ডাকে নুশাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রিফাতের কাছে চলে গেলো৷।

অপর দিকে সায়ান নুশাকে ছাদে এসে ছাঁদের দরজা দিয়ে দরজার মাঝে নুশাকে আটকে ধরলো। সায়ানের একহাতে নুশার এক হাত সায়ানের হাতের উপর আবার নুশা আবার তার আরেক হাত দিয়ে সায়ানের হাত সরাতে লাগলো কিন্তু সায়ান যেভাবে ধরেছে দশটা নুশাও তা ছাড়াতে পারবে না । সায়ানর আরেক হাত নুশার মাথার কাছে দরজায়, সায়ান নুশার দিকে ঝুঁকে নুশার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠলো,

-অনেক হয়েছে আর সয্য করতে পারছি না। নিজেকে েতো কন্ট্রোল করতে চাই তারপরও পারি না৷। তুই কেনো বুঝতে পারছ না আমি তোর সাথে অন্য কাউকে কল্পনা করতে পারি না। তুই কি আমাকে একটুও বুঝতে পারছ না। তোর আসক্তিতে সেই কবেই আমি আসক্ত হয়ে গেছি৷। আমি হযতো আমার মনের মধ্যে থাকা ভালোবাসাটা সবার সামনে প্রকাশ করতে পারি না। কিন্তু বিশ্বাস কর নুশা রানী আমি তোকে প্রচন্ড ভালো বাসি। তুই ছাড়া আমার এই জিবন খুবই অসহায় আমাকে বাঁচতে হলে তকে আমার দরকার । আমার প্রতিটা শ্বাস নিশ্বাসে তুই মিশে আছিস । তোকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা মূল্য হীন। আর কিভাবে বুঝাবো বল ।
সিফাত যখন বলেছিলো তুই আর সিফাত রিলেশনে আছিস বিশ্বাস কর নুশা রানী আমার নিচের মাটি যেনো সব সরে যাচ্ছির কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । তোর সাথে সব সময় রুড বিহেভিয়ার করতাম তুই যাতে আমাকে ভয় পেয়ে আমার কথা শুনে কোনো ছেলের সাথে কথা না বলোস৷ । তোকে তো আমি সেই ছোট্ট কাল থেকে ভালো বাসি নিজের বউয়ের চোখে দেখি যেটা আজ পর্যন্ত আর কোনো নারীর দিকে সেই চোখে তাকাইনি আর কখনো তাকাতেও চাইনা। তোকে তো অনেক আগেই বলে দিতে পারতাম যে আমি তোকে ভালোবাসি কিন্তু তোর ভবিষ্যতের কথা মনে করে লেখাপড়ার চিন্তা করে কিছু বলি নাই । আর বাকী রইলো নিশির সাথে আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর বিয়ের দিন তোকে কেনো বিয়ে করতে চেয়েছি এর দুইটা কারন এক একবার বিয়ে ভাঙ্গলে কেউ বিয়ে করতে চাইবে না তখন রিফাত আর নিশি এক হতে পারবে আর আমার ভয় হচ্ছিল তোকে জানিয়ে বিয়ে করলে তুই যদি বিয়ে না করোস আমাকে এমনিতেই তুই আমাকে মাফিয়া বলে ডাকতি তার উপর সিফাতের সাথে রিলেশনে ছিলিস তাই তোকে হারানোর ভয়ে বাধ্য হয়ে এবাবে বিয়ে করতে চাইছি ।

এতোবড় একটা রচনা বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে নুশার হাত ধরে দরজার কাছ থেকে নুশাকে সরিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে গেলো সায়ান৷ আর নুশা সে তো এখন স্টপ মোডে আছে৷ তার সারা দুনিয়া যেনো ঘুরতেছে এখনি যেনো পরে৷ যাবে সে৷। কি বলে গেলো সায়ান এসব তার মাথা ফাকা হয়ে আসছে। কি করবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না চোখের পলক একবারও ভালো করে ফেলছে না । জীবন্ত লাশের মতো দাড়িযে আছে৷। তার কাছে যে এখন সায়ান আর দাড়িয়ে নাই সেই দিকে তার একদম খেয়াল নাই তার মাথায় তার ব্রেনে এখন শুধু সায়ানের বলা কথা গুলো ঘুরাঘুরি করছে ।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here