‘প্যারিস ইন দ্য রেইন’
১ – ২ – ৩ – সমাপ্তি পর্ব
______________________
প্যারিস বৃষ্টির দিনগুলোতে নতুন সৌন্দর্যের পরিচয় দেয়। ফুটে ওঠে অলৌকিক মাধুর্য নিয়ে। অক্টোবর রেইনে আলাদাভাবে সতর্ক বার্তা প্রকৃতি পাঠায়। এই মাসটা প্রচন্ডরকম রহস্যপ্রিয় সিয়ামের। সে পারলে মাস জুড়ে ছুটি কাটাত। ছোট ব্যাগ ক্যারি করে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ত। তবে বিষয়টি সহজ নয়। ফার্মেসি কোর্সে সে। বেশ কাঠখোট্টা অবস্থা। পড়াশোনার মারাত্মক চাপ। একটা পার্ট-টাইম জব ও আছে। ছুটি কাটানোর সময় কই? কিন্তু হ্যাঁ! সুযোগ পেলে হাত ছাড়া করে না। ছুটির দিনটা বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে। যেখানে চোখ যায়, ঘুরে আসে। রাতভোর কাটিয়ে সময় মতো কাজে জয়েন করে। সুযোগে সৎ ব্যবহার করে, ক্লাস গুলোও সেরে ফেলে। খুবই জীবন প্রেমী মানুষ সে। এক সেকেন্ড হেলাফেলায় যেতে দেয় না। তার মতে জীবন একটাই! এই জীবনের এক সেকেন্ড ও বিফলে যেতে দেওয়া উচিৎ নয়। বরং জীবন উপভোগ করা উচিৎ, প্রত্যেকটি সেকেন্ডে। খারাপ লাগলে বেরিয়ে পড়বে ঘুরতে। মনটা আনচান করলে চোখ বন্ধ করে চলে যাবে আকাশ দেখতে। আর মিড-নাইট ড্রাইভিং তো আছেই। সিয়ামের সবথেকে পছন্দের কাজ, নাইট ড্রাইভিং। শুনশান সড়কে যখন একঝাঁক অক্টোবর রেইন চলে, তার মধ্যে স্পিডে গাড়ি চালিয়ে প্রকৃতি উপভোগ করাটাও মারাত্মক সুন্দর এবং উপভোগ্য। আফসোস সিয়ামের হুডি তোলা গাড়ি নেই। এই গাড়িটা কেনার খুব সখ তার। কিন্তু পারছে না। আরও দু থেকে তিন’বছর খানেক অপেক্ষা করতে হবে। ওই গাড়ি গুলোর স্টার্টিং রেঞ্জ বেশ হাই! মোটা অংকের টাকা লাগবে। সে দু’বছর ঘুরেফিরে নরমাল গাড়ি কিনেছে। বেশ জোগাড়যন্ত্র করে। বাবার থেকেও লাখ টাকা হাত পেতে নিয়েছে। আবারো চাওয়ার স্পর্ধা তার নেই। এখন টাকাপয়সা জমিয়ে নিচ্ছে। কিছু টাকা ব্যাংকে জমেছে। লাগবে আরও দু’বছর। সময় চলে যাবে দেখতে দেখতে। ইচ্ছে আছে, সখের গাড়িটা কিনবে সে অক্টোবর মাসে। নতুন গাড়ি নিয়ে রাতে নেমে পড়বে রাস্তায়। কোনো এক বর্ষায়। হুডি তুলে দিবে। ভিজবে আর চালাবে গাড়ি। একদম মাঝরাতে। গাড়িতে চলবে তার পছন্দের গান। সঙ্গে একটা সাথী হলে মন্দ হয়না! ভাবতেই হেসে ফেলল। সিয়াম প্রচন্ড রকমের খুঁতখুঁতে স্বভাবের ছেলে। মেয়েমানুষ তার মনের মতো হয় না। এরজন্য ঠিকঠাক একটা রিলেশনশীপে যাওয়া হয়নি। টাইম-পাস ব্যাপারটা তার মারাত্মক অপছন্দের। তার ভাষ্যমতে, পছন্দ করে রিলেশন করবে, এতটা টাইম দিবে একটা মেয়ের পেছনে, সেই মেয়ে যদি সারাজীবনের জন্য তার নাহয়, তাহলে তার সময়গুলো বিফলে গেল না? এইপর্যন্ত যতগুলো মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে, একটাও মনের মধ্যে ঢোকেনি। মনের মানুষ পেলে মন নিজেই সিগনাল দিবে। হৃদয় আনচান করবে। শরীর স্বেচ্ছায় কাজ করবে। একপলক দেখার জন্য রাতবিরেত জেগে কাটাবে। এটাই তো প্রেমের সংকেত! এটাই প্রেমের বার্তা! কই সিয়াম সেই সংকেত বা বার্তা কিছুই তো পেলো না। আদোও কী পাবে?
আজ বর্ষার দিন। সকাল থেকেই রাস্তাঘাট স্যাতলা। আকাশ মেঘলা। প্যারিসের রাস্তাঘাট ফকফকা। চারিপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সবুজ রঙের গাছপালার সমাহার। মাত্র কাজ থেকে বেরিয়েছে সিয়াম। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে আটটায়। কাল কোর্সের একটা ক্লাস আছে। ন’টায়। এখন ফ্ল্যাটে যাওয়া প্রয়োজন। সাওয়ার নিয়ে, পেট ভরে খেয়ে একটা টানটান ঘুম দেওয়া অত্যন্ত দরকার। কিন্তু মন সেই কথা শুনল না। বিপরীত রাস্তা ধরেছে। ড্রাইভিংয়ে বেরিয়েছে। কই যাবে ঠিক জানে না৷ তবে আপাতত একটু ঘুরে আসা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে বলে মন বলছে। এতো সুন্দর ওয়েদার বিফলে যেতে দেওয়া উচিৎ নয়। একদম নয়।
‘প্যারিস ইন দ্য রেইন’ গানটি সিয়ামের খুব পছন্দের। বিশেষ করে বর্ষার দিন গুলোতে, এই গান না ছাড়লেই নয়। এইতো গানটি এখনো প্ল্যা হচ্ছে। এটা তার ফেভারিট প্লে-লিস্টে আছে। কাঁচ নামানো। একহাতে হুইল ঘোরাতে ঘোরাতে অন্যহাত, জানালায়। বৃষ্টি ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে আসছে। একটু ভেজা প্রয়োজন। ভিজলে ভালো লাগত।
প্যারিসে সিয়ামের পছন্দের জায়গা আছে। এখন সেখানেই যাবে। মনস্থির করতেই স্পিড বাড়াল। হাইওয়ে শুনশান। গাড়িঘোড়া নেই। হুট করে দৃষ্টি গেল সূদুরে। আশ্চর্যজনক একটি দৃশ্য চোখে পড়ল। হুইলে থাকা সিয়ামের হাত কাঁপল। একটি মেয়ে হাইওয়ের উপর দাঁড়িয়ে। লাফ দিবে দিবে ভাব তার। সুইসাইড অ্যাটেম্পট করবে নাকি? ও মাই গড! সিয়াম হন্তদন্ত ভঙ্গিতে গাড়ির স্পিড বাড়াল। তীব্র বর্ষণ উপেক্ষা করে মেয়েটির সামনে গাড়ি থামাল। ফ্রান্স ভাষায় চেঁচাল,
‘হ্যালো! এই মেয়ে! আপনি কী করছেন? এক্সকিউজ মি!’
মেয়েটি হয়তো তার গলার স্বর শোনেনি। একই ভঙ্গিতে চোখ বুজে দু’হাত মেলে দাঁড়িয়ে। আশ্চর্য! অদ্ভুত মেয়েমানুষ তো! সিয়াম গাড়ি থেকে নামল। তীব্র বর্ষণে জবজবে ভিজল। কাছাকাছি গিয়ে পুনরায় উচ্চস্বরে ডাকল,
‘এইযে! এই মিস! শুনছেন? নেমে আসুন, ইট’স ডেঞ্জারাস!’
মেয়েটি থতমত খেল যেনো হঠাৎ কারো উচ্চস্বরে। সাথে অজানা মানুষের উপস্থিতিতে ভড়কে গেল। বড়ো বড়ো চোখে ফিরে তাকাল। সোনালী চুলের ফর্সা রূপবতী মেয়ে। চব্বিশ পঁচিশে উর্ধ্বে যাবে না বয়স। লম্বাচওড়া সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। স্লিম নয়। মোটাসোটা! গাল দুটো ফোলা। জলজ্যান্ত একটা পুতুল বলাই যায় তাকে। কালো প্যান্ট, সাদা টপ পরিহিত। পায়ে বুটস। ভেজা শরীরের কাপড়চোপড় আঁটসাঁট হয়ে ল্যাপ্টে। তবে বিদঘুটে একদমই লাগছে না। সিয়াম পুনরায় উচ্চস্বরে ডাকল,
‘হ্যালো। এইযে! আপনি কী মরতে চাচ্ছেন?’
মেয়েটি হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। সেভাবেই দাঁড়িয়ে সম্পুর্ন ফিরল। যেন এভাবে সে এখানে প্রায়শই দাঁড়ায়। অভ্যস্ত। মুখ ভরে হাসল। কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘মরব কেন! এতো সুন্দর জীবন রেখে কেউ মরে নাকি? আমিতো বৃষ্টিবিলাস করছি।’
সিয়ামের সুদর্শন চেহারায় আঁধার নেমে এলো। ভুরু জোড়ার মাঝে ভাঁজ পড়ল তিনটে। বেশ বিরক্ত সে। মনে মনে মেয়েটাকে পাগল ভাবতেও ভুল করল না। ওটা কী বৃষ্টিবিলাসের জায়গা? পাগল মেয়ে কোথাকার। সিয়াম মিনমিনে বলল,
‘ওহ! ওকে দেন এঞ্জয়!’
সে নিজের গাড়ির দিক পা বাড়াল। মেয়েটি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে। কিছু একটা ভেবে পিছু ডাকল,
‘হ্যালো! এইযে শুনুন।’
সিয়াম মহাবিরক্ত বোধ করল। ভদ্রতার খাতিরে ঘুরে দাঁড়াল,
‘ইয়েস?’
‘উঠে আসুন। আমার পাশে।’
‘নো। থ্যাংকস!’
মেয়েটি হাসল। সিয়ামকে মাথা থেকে পা অবদি দেখে বলল,
‘আপনি তো ভিজে গিয়েছেন৷ তাহলে আসতেই পারেন। এসেই দেখুনতো, আমি কেন এখানে দাঁড়িয়েছি। উপভোগ করে দেখুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন। আসুন।’
সিয়ামের বেশরম পা জোড়া নিজের রূপ অনুসরণ করে আগাল। মহাবিরক্ত সিয়াম কপাল কুঁচকে ফেলল মাত্রাতিরিক্ত। রাতবিরেত কোন পাগল মেয়ের চক্করে পড়ল? আশ্চর্য মেয়ের সঙ্গে কী সেও পাগল হলো? নাকি জাদুমন্ত্র করেছে তাকে? মস্তিষ্ক কাজ করার পূর্বেই সে নিজেকে হাইওয়ের উপরে পেল। আশ্চর্য! ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে গেল শরীর। হিমালয়ের বাতাস লেগেছে শরীরে যেন। বাতাসের তীব্রতা প্রখর। বৃষ্টির স্পর্শে আছে বিলাসিতা। একটুখানি স্বর্গে চলে এলো কী? শান্তিতে চোখ বুজে আসছে কেন? শরীর কী হাওয়ায় উড়ছে? মেয়েটি সিয়ামের দিকেই তাকিয়ে ছিল। মুখশ্রীতে লেপ্টে আনন্দ। সে কীভাবে যেন প্রকৃতি প্রেমীদের চিনে ফেলে। এটা তার রক্তে বহমান। সিয়াম চোখ মেলে তাকাল। এবং পরপরই ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠল। চেঁচাল উচ্চস্বরে। মেয়েটি চোখের সামনে লাফিয়ে পড়ল হাইওয়ের নিচে। সাগরের স্রোতে। হাওয়ায় দুলে হাত নাড়াচ্ছে। চিৎকার করে কিছু একটা বলছে। সিয়াম তখনও অবাকের চুড়ান্তে। উচ্চ শব্দে পড়েছে মেয়েটি। পানিতে ডুবতেই উচ্ছ্বাস। সিয়ামকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটি ভেসে উঠল। হাত নাড়াল৷ সাঁতার কেটে কাছাকাছি তীরে যাচ্ছে। সিয়ামের বুকটা এখনো ধড়ফড় করছে। মেয়েটা কী পাগল?
_______
‘প্যারিস ইন দ্য রেইন’
২
শরীরের সর্বাঙ্গ জুড়ে টনটন করছে। ক্লান্তিতে শরীর ঝিমোতে চাচ্ছে। উপলব্ধি করা যাচ্ছে শরীর জুড়ে চিনচিন ব্যথার। ঠান্ডা ও লাগছে ভীষণ। হাঁচি-কাশি শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। নিজের মুখশ্রী আয়নায় দেখলে টকটকে লম্বা লাল নাকটা দৃশ্যমান হতো সবার আগে। ধরনীর বুকে বর্ষণশীল এখনো দণ্ডায়মান। জবজবে ভেজা সিয়াম গাড়িতে উঠে বসেছে। মেয়েটা কোথায় চলে গেল? হাওয়া হয়ে গেল বুঝি? এখানটায় তো থাকার কথা। পূর্বদিকে জঙ্গল। পশ্চিমে সমুদ্র। দক্ষিণেই থাকার কথা। অথচ নেই। নির্ঘাত তার দেরি হচ্ছে। প্যারিসের বুকে একটা রাউন্ড মেরেই ফ্ল্যাটে ফিরতে হবে। গোসল নিয়ে খেয়ে পরপরই বড়ো একটা ঘুম দিতে হবে। সকালে ক্লাস আছে তারপর কাজের শিফট। নাহলে সময় নিয়ে মেয়েটাকে খোঁজা যেতো। নামটা জিজ্ঞেস করা হয়নি! সাহসী মেয়েটার নাম কী? একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য ছিলো মেয়েটির৷ কতো সুন্দর এক অনুভূতি দিয়েছে তাকে। হাইওয়ের উপরে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা এই প্রথম। স্বর্গীয় এই অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ওই মেয়েটির ধন্যবাদ তো প্রাপ্য ছিলোই ছিলো।
__
এক রুপকথার সাম্রাজ্যের অধিকারী ফ্রান্স। আশেপাশের প্রকৃতি নিয়ে, একটি শর্ট ফিল্ম শুয়ে-বসে বানানো যাবে নির্দ্বিধায়। যেখানে চোখ যায় সেখানেই বিশুদ্ধ সবুজের সমাহার। চতুর্দিকে লম্বা-লম্বা গোলকধাঁধা গাছ গুলো সারি বেঁধে আছে। মধ্যে গিয়েছে গিয়েছে লম্বাটে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তা। পাশে সবুজ ঘাসের ভূমি। এই দেশের সৌন্দর্য একেক ঋতুতে একেক রকম। তবে সবথেকে সুন্দর ঋতু শরৎকালীন বর্ষা। এসময়ে প্রকৃতি আলাদাভাবে মুখিয়ে ওঠে। জানান দেয় সুভাসের।
আষাড়ে মাস ও সিয়াম পছন্দ করে। বৃষ্টির মাস নিয়ে নিখুঁতভাবে বর্ননা মনে গেঁথে রেখেছে সে। তার স্বভাব আছে হুটহাট ফাঁকা রাস্তায় শুয়ে পড়ার। বেশিরভাগ বর্ষার দিন গুলোতে। সেইবার তো তীব্র বর্ষণের মধ্যে, পূবদিকের হিমালয় রাস্তায় শুয়ে পড়েছিল। আবেশে উপভোগ করেছিল তীক্ষ্ণ বর্ষণের। একেকটা বৃষ্টির ফোঁটা ছুয়ে দিয়ে ছিল গাঢ়তর পদ্ধতিতে। সেসময় হুংকার ছেড়ে জমিন ঘেঁষে এসে পড়ল এক মার্সিডি। আরেকটুর জন্য বেঁচে ফিরেছিল। নাহলে মার্সিডি তার উপর দিয়েই চলে যেতো। এমন উদ্ভট অনেক কান্ডকারখানাই হয়েছে সিয়ামের সঙ্গে। বলতে বসলে শেষ হবার নয়।
ফ্রান্সের ছেলেমেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক হলেই, ড্রাইভিং শিখে ফেলে। নিজের গাড়ি থাকা এখানে খুব সাধারণ বিষয়। নিজের একটা গাড়ি আছে বলেই বড়লোক তা ভাবা যাবে না। গরীবদেরও নিজেদের একটা গাড়ি থাকে। এখানে হাতেগোনা কিছুদের গাড়ি থাকে না। তারা ট্রান্সপোর্ট বাস কিংবা ট্রেনে চড়ে কিংবা ট্যাক্সি। সিয়াম প্রথমে ট্রেনে চলাফেরা করত। তারপর আলহামদুলিল্লাহ নিজের গাড়ি নিয়ে নিয়েছে। অত্যাধিক ড্রাইভিং প্রেমী তার গাড়ি লাগবেই লাগবে। বাসের অপেক্ষা, ট্রেনের অপেক্ষা তার দ্বারা হচ্ছিল না একপ্রকার। দু’বছরের মাথায় কিনেছেও। গাড়ি কিনে এক মুহুর্ত ছেলেটা শান্তিতে বসেনি৷ ঘুরেফিরে বেরিয়েছে সুযোগ পেলেই৷ নিজের দেশের কোনো জায়গা বাকি রাখেনি। সব ঘুরেফিরে এসেছে। এমনকি প্যারিস শহরেও প্রত্যেকটা জায়গা দর্শন করে ফেলেছে ইতোমধ্যে। প্যারিসের বাইরেও বেশকিছু জায়গা ঘুরেছে। তবে আশেপাশের। দূরে দূরে গিয়ে ঘোরাফেরা হচ্ছে না। হবে কীভাবে? ক্লাস থাকে। জব আছে পার্ট-টাইম৷ সপ্তাহে একদিন ছুটি থাকে। একদিনে কী ঘুরেফিরে আসা যায় নাকি! সিয়াম ভাবছে একটা প্ল্যান করবে। দশ দিনের ছুটি কাটাবে। বেরোবে ঘুরতে। পুরো ফ্রান্স ঘুরবে…ফিরবে…জম্বেশ আনন্দ করবে।
___
ক্লাসের পর ক্লাস। তারপর রাত আটটা পর্যন্ত জব। তারপর একটা মিডনাইট ড্রাইভিং। তারপর লম্বা একটা ঘুম। তারপর আবারো ক্লাস। তারপর জব! এভাবেই দিন কাটিয়ে বেশ ব্যাস্ত সিয়াম। ফুরসত নিয়ে মিডনাইট ড্রাইভিং ও বেচারা উপভোগ করতে পারছে না। চারদিন টানা ব্যস্ত থেকেছে সে। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি পেয়েছে। শনিবার রাতে ফ্ল্যাটে ফিরেই সে সর্বপ্রথম গোসল নিয়েছে। প্যান্ট, টি-শার্ট উপরে জ্যাকেট আর মাথায় ক্যাপ পরে, কাঁধ ব্যাগ গুঁছিয়ে নিয়েছে। গাড়ির চাবি নিয়ে ফ্ল্যাট লক করে, বেরিয়ে পড়েছে ভ্রমণে। অক্টোবর মাস। ঠান্ডা, শীতল এবং সিয়ামের যুক্তির্থে বৃষ্টির মাস। হুট করে ধরনীর বুকে নামে একঝাঁক ঝোড়ো বর্ষণ। হয় আকাশ মেঘলা। চারিপাশে বয়ে যায় ঠান্ডা বাতাস। এইতো সিয়ামের পছন্দের আবহাওয়া। এই আবহাওয়ার মধ্যে ঘুরেফিরে না বেড়ালে সিয়ামের জীবন বৃথা। একদম বৃথা।
হাইওয়েতে গাড়ি উঠতেই সিয়ামের অবাধ্য দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো হাইওয়ের উপড়ে। অত্যন্ত কৌতূহল তার বেহায়া দৃষ্টি জোড়ায়। সেই রাতের অজানা মেয়েটিকে দেখার প্রত্যাশা বুকে। আনমনে ড্রাইভিং স্লো হলো। জানালার কাঁচ নেমে গেল। মাথাটা হেলে এলো। মেয়েটিকে দেখতে পাবে তার আশা সে বিন্দুমাত্র রাখেনি। রাখবে কেন? সবসময় কী কেউ হাইওয়ে উঠে বসে থাকবে নাকি? তবে আশ্চর্যজনক হলেও মেয়েটি আছে। আজ উপড়ে দাঁড়িয়ে নয়। পা দুলিয়ে বসে আছে। হাতে আকর্ষণীয় গিটার। ফ্লোরাল হাঁটু সমান সাদা ফ্রক শরীরে। ধবধবে পা’জোড়া হেলেদুলে, সুর তুলছে যেন। কোমর সমান লম্বা চুলে, ফোলা দুটো স্টাইলিশ বিনুনি গেঁথে আছে। তার গুনগুন এখান থেকে সিয়াম শুনতে পারছে। কী করবে? গাড়ি থামাবে? থামিয়ে গিয়ে কি আগ বাড়িয়ে একটু কথা বলবে? একটা ধন্যবাদ কী দিবে? এভাবেও সেদিনের হঠাৎ দেখাসাক্ষাৎ বেশ কায়দায় ফেলেছিল তাকে। পরদিন থেকে অজানা এই মেয়েটির মুখমণ্ডল চোখের পাতায় ভেসেছে সহস্ররূপে। রাতে এক উদ্ভট স্বপ্ন ও তো দেখল! সেই কী অদ্ভুত স্বপ্ন। বুকের ভেতরটাও তো কেমন আনচান করছিল!
দ্বিধাদ্বন্দে ভোগা সিয়ামের চলন্ত গাড়ির সামনে, খুব হুট করে মেয়েটি এসে দাঁড়াল। প্রচন্ড আচমকাই এসেছে। সিয়াম তখনো ভাবনায় বিভোর। মেয়েটিকে লক্ষ্য করতে, দেরি করে ফেলেছে। তৎক্ষণাৎ ধড়ফড়িয়ে স্লিপ খেয়েছে হুইল থেকে হাত জোড়া। পরপর তীক্ষ্ণ ড্রাইভার সে সময়মতো ব্রেক কষেছে দক্ষতার সহিত। খুব ভালো ড্রাইভার বলেই না পেরেছে কন্ট্রোল করতে। অন্যকেউ হলে নির্ঘাত এক্সিডেন্ট! আজ মেয়েটি হসপিটাল থাকতো আর সে জেলে। পাগল, বেয়াদব, উদ্ভট মেয়েমানুষ! এক্ষুনি একটা শক্তপোক্ত কথা সিয়াম তাকে শোনাবে!
___________
‘প্যারিস ইন দ্য রেইন’
৩
মনের কার্নিশে রাখা শক্তপোক্ত ধমকটি, শেষমেশ সিয়াম দিতে পারলো না। খুব নরম মনের অধিকারী কি-না! সচরাচর সে উঁচু গলায় ও তেমন কথা বলে না। ধমক তো বেশ দূরের বিষয়। তবে অচেনা মেয়েটিকে চোখ রাঙিয়েছে। গরম চোখে তাকিয়ে, সাংঘাতিক তেড়েমেরে বলেছে,
‘আর ইউ ব্লাইন্ড? আর ইউ ম্যাড?’
অচেনা-অজানা রহস্যময় সাহসী মেয়েটি হাসল। প্রাণচাঞ্চল্য হাসি। গোলাপি ঠোঁট জুড়ে সহস্র ভাজ। সিয়ামের সরলতম দৃষ্টি সেখানটায় পড়ে, অসরল বনে গেল কেমন! তড়িঘড়ি করে সে দৃষ্টি সরিয়ে সামান্য কাশল। মেয়েটির ঠোঁট সুন্দর। বিধাতা নিজ হাতে ওই ঠোঁট এঁকেছেন যেন! কী সুন্দর আকৃতি! চারিপাশে নজর ঘুরিয়ে পুনরায় মেয়েটির মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত করল সিয়াম। প্রাপ্য ধন্যবাদটুকু ফ্রান্স ভাষায় জানাল,
‘সেদিনের জন্য ধন্যবাদ। আমি উপভোগ করেছি। অ্যান্ড, আপনি ওভাবে লাফিয়ে কেন পড়লেন? খুব ভয়ংকর কিছু হতে পারতো। ইট ওয়াজ সো ডেঞ্জারাস।’
‘হয়নি তো।’
স্বচ্ছল কন্ঠের মেয়েলী স্বর। নিদারুণ নিষ্ঠুর সেই স্বর, বাঘিনী তীরের ন্যায় ছুটে এসে সিয়ামের নরম হৃদয়ে গেঁথে গেল। কোকিল ফিসফিসিয়ে কিছু বলে গেল বুঝি?
মেয়েটি দু’পা এক’পা ফেলে এগোল। সিয়ামের সামনা-সামনি এসে দাঁড়িয়েছে। দুজন মুখোমুখি। মেয়েটি নিজের বক্তব্য ধরে পুনরায় বলল,
‘সমুদ্রে বোট রয়েছে। সেইফটি বোর! সবসময় থাকে। আমার জন্য সেটা বরাদ্দ। চিন্তার কিছু নেই।’
‘তাহলে আপনি প্রায়শই এমন করেন?’
‘আমার ভালো লাগে। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে। জল শরীরে নিয়ে উঁচু থেকে নিচুস্তরে পড়ার অনুভূতি, আমার বেশ লাগে।’
সিয়াম বোঝার ন্যায় মাথা দোলাল। বলার মতো আর কিছুই পেলো না। তার মস্তিষ্ক শুন্যে। খানিকক্ষণ ভাবল আর কী বলা যায়! না.. কিছুই পাচ্ছে না। না পেয়ে যাবার জন্য উদ্বিগ্ন হলো,
‘আপনাকে হয়তো ডিস্টার্ব করছি। ভাগ্যে থাকলে আবারো দেখা হবে আমাদের।’
‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’
সিয়াম থতমত খেল। ভড়কে গেল পা-জোড়া। অচেনা-অজানা পুরুষকে তুমি করে সম্বোধন করতে নেই মেয়ে! আপনাকে কেউ শিখায়নি? ভদ্রতা জানেন না? মনে মনে আওড়াল। ঠিক ফিরে তাকাল। মেয়েটি বলল,
‘আমি একজন ভালো সঙ্গিনী। সঙ্গ দিতে পারি। নেবে আমাকে? আমি ঘুরতে যেতে চাই।’
হতভম্ব হওয়া বুঝি বাকি ছিল! সিয়াম অবাকের চুড়ান্তে গিয়ে চুপসে আছে। বাক্যের ত্রুটি দেখা দিয়েছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। সময় নিয়ে শুধালো,
‘আপনি কীভাবে..মানে আপনি কীভাবে শিয়র হচ্ছেন, আমি ঘুড়তে যাচ্ছি?’
‘আমি মানুষ চিনে ফেলি। তাদের দেখে বুঝে ফেলি। আমি মনে পড়তে জানি স্যায়াম!’
সিয়াম চমকে উঠল। পায়ে শূন্যতা অনুভব করল।চোখের কোটর হতে মণি বেরিয়ে আসবে প্রায়! শ্বাস-প্রশ্বাস গলায় আটকে রইল। সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন মেয়েটিকে আর মানুষ মনে হলো না! খুব অদ্ভুত কিছু! কে এই মেয়ে? নাম জানল কীভাবে সিয়ামের? ঠান্ডার মধ্যেও সিয়ামের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। মাত্রাতিরিক্ত কুঁচকে আছে ভুরু জোড়া। মেয়েটি হয়তো সিয়ামের ভয়ের কারণ বুঝেছে। বুঝতেই উচ্চস্বরে হাসল। সময় নিয়ে বলল,
‘তুমি কি আমায় ভয় পাচ্ছ? পেয়ো না প্লিজ!
আমি তো বললাম। আই ক্যান রিড পিপলস। সিম্পল। এখন বলো আমাকে নেবে সঙ্গে? ট্রাস্ট মি আই’ল বি আ গুড কম্পানিয়ন।’
___
‘হাও ডু ইউ নো মাই ন্যাইম..হাও?’
‘ক্যান উই টক এবাউট দিস লেইটার, স্যায়াম?’
‘…..শি..শিয়র!’
___
সারি বেঁধে দু’ধারে উঁচু হেড-লাইটস। হেডলাইটস টপকে গিয়েছে বিশুদ্ধ সবুজের সমাহার। সুনশান ঘুমন্ত রাস্তা। আঁধারে আকাশে অসম্ভব সুন্দর চাঁদ উঠেছে। চাঁদের চারিপাশে হাজারো নক্ষত্র। বাতাস ছেড়েছে প্রকৃতি। রাস্তার মোড়ে, বাপ-পাশে সাইনবোর্ড। প্যারিস শহরের দক্ষিণের রাস্তা এটা! নিরিবিলি হিমশীতল ভূমির রাজ্য। দু’ধারে যাচ্ছে গাছের কোলাকুলি। চাঁদ আড়াল হয়েছে গাছের পেছনে। আঁধার হয়েছে চারিপাশ। সমুদ্র যাচ্ছে সুদূর দিয়ে। গাড়ি টপকে চলে গেল আরেকটি গাড়ি। সিয়াম নিষ্পলক তাকিয়ে আছে সামনে। বুকটা এখনো ধড়ফড় করছে। হৃদপিণ্ড কাঁপছে। ভয় সে পেয়েছে। এখনো পাচ্ছে বলা যায়! তখন মুখের উপর না করতে পারল না। কেন? হুয়াই? এতো প্রচেষ্টার পর ও মুখ দিয়ে বেরোলো,
‘চলুন।’
শিট! সিয়াম এতটা বোকা কবে থেকে হলো? তার নাম কীভাবে জানে সেই প্রশ্নত্তর ও জোরপূর্বক নেবার চেষ্টা করল না। কেন? যদি এই মেয়ে সাংঘাতিক কিছু একটা হয়? পরমুহূর্তেই মেয়েটির সরলতম মুখমণ্ডল ভেসে উঠল চোখের পাতায়। এমন নিষ্পাপ মানুষ আদোও খারাপ হতে পারে?
মেয়েটির কৌতুহল বিহীন চোখজোড়া বাইরের প্রকৃতিতে আড়ষ্ট ছিল। এবার মাথা ঘোরাল সে। সিয়ামকে খুটিয়ে খাটিয়ে দেখছে বুঝি? সিয়াম না তাকিয়েও বুঝতে পারছে। অপ্রস্তুত তাকে জানাল,
‘আমি লিজা। ইউ ক্যান কল মি লিজ! কাছের মানুষ আমাকে লিজ বলে ডাকে।’
আজ সিয়ামের দফায় দফায় অবাক হবার পালা। বেচারা শুধু বেকুবের মতো চমকাবে। আর সিয়াম কী কাছের কেউ? কাছের তো নয়। তাহলে লিজ ডাকার অনুমতি কেন দিলো? সিয়াম শত প্রশ্ন মনে নিয়ে নিজ ভাষায় আওড়াল,
‘সুন্দর নাম।’
‘হ্যায়। মাম্মাম ত্যেই বলে!’
এই মেয়েটা আর কতশত দফায় অবাক করাবে সিয়ামকে? দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল! বাংলা ও বুঝে! আবার বলছেও। এই উদ্ভট বাংলা কোথা থেকে শিখল? লিজা যেমন সত্যিই মন পড়তে জানে। সে হতাশ সুরে বলল,
‘আম্যার মাম্মাম ব্যাংলাদেশ থেকে৷ আর ড্যাড ফ্রান্স।’
‘বাংলাদেশ গিয়েছেন কখনো?’
লিজা সিয়ামের চোখে চোখ রাখল,
‘স্যায়াম আম নট ফিলিং ওয়েল। লেটস টক এবাউট দিস আ লিটল বিট লেইটার?’
সিয়াম দাঁতের সাহায্যে ঠোঁট চেপে ধরল। মনে মনে আওড়াল, এই মেয়ে! একটু পর বলবা মানে কী? এক্ষুনি বলো! রাইট নাও। আর ওই মুখে আমার নাম বলো না মেয়ে! সুন্দর নামের মান ইজ্জত সব খেয়ে দিচ্ছ!
____
গাড়িটা প্যারিস শহরের শেষপ্রান্তে এলো। সমুদ্রের ঢেউয়ে তখন চলছে তোলপাড়। আকাশে জমেছে মেঘ। চাঁদ হারিয়েছে। বাতাসে বাতাস ছুঁয়েছে। গাছগাছালির শীতল ঝাপটা উথলে পড়ছে। আবহাওয়া তীব্রতর ঠান্ডা। প্রকৃতি বেসামাল। সিয়াম গাড়ি ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। সূদুরে, সমুদ্রের চূড়ায় বসে লিজা। পিঠে আছড়ে পড়া সোনালী চুলগুলো উড়ছে। একমনে সিয়াম সেই চুলের রিমঝিম দেখল। লিজার কি মন খারাপ? কেন খারাপ? কী কারণ? সিয়াম লম্বা শ্বাস নিল। এগিয়ে চলল লিজার দিক। গিটার ও মেয়েটা সঙ্গে নিয়ে এসেছে। পাশেই রেখেছে। সিয়াম গিটারের পাশে বসল। তার আর লিজার মধ্যে গিটার। সেও মনোযোগ সহকারে সামনে তাকাল৷ কাছ থেকে সমুদ্রের উচ্ছ্বাস দেখায় মগ্ন হলো। লিজা সমুদ্রে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই, নিজ ভাষায় পারমিশন চাইল,
‘আমি কি একটি গান গাইতে পারি?’
‘অবশ্যই৷ কেন না?’
‘মন খারাপ হলে, গান গাইতে ইচ্ছে হয়।’
‘শুরু করুন তাহলে।’
‘আমি অন্যের জন্য কখনো গান গাইনি স্যায়াম। তবে আজ গাইব৷ তোমার পছন্দের গানের নাম কী?’
সাবলীল কথা। খুব সাধারণ বাক্য। অথচ সিয়ামের হৃদয়ে হিমশীতল বাতাস বয়ে গেল কেন? বক্ষের ভেতরটা খানিক কাঁপল বুঝি? টগবগ করছে রক্তসঞ্চালক। ঠোঁট ঘেঁষে এসেছে মনোমুগ্ধকর হাসি। মেঘলা আসমান হতে আচমকক এক ফোঁটা জল এসে পড়ল ধরনীর বুকে। তারপর দুটো। পরপর অনেক গুলো। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কিন্তু কোনো নড়চড় নেই লিজার। সে একইভাবে বসে। সিয়াম ও গা ছাড়া ভঙ্গিতে বসে থাকল। নিজের পছন্দের গানের নাম জানাল,
‘প্যারিস ইন দ্য রেইন’
৪
বর্ষণের মাত্রা বেড়েছে। অদূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়ানো দু’একজন মানুষ, এদিক-ওদিক ছুটে ছাউনি খুঁজে নিয়েছে। সিয়াম তাদের ছুটা-ছুটি দেখছিল। কান পেতে শুনছিল বর্ষণের ভেজা-ভেজা শব্দ। দূর আকাশ হতে জল নেমে আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের বুকে। শুব্দ তুলছে গাঢ় করে। সে-মূহুর্তে কর্ণধারে প্রবেশ করে গিটারের অগোছালো টুংটাং শব্দ। আনমনে দৃষ্টি ফেরায় সিয়াম। লিজা কাঠ রঙের হলদেটে গিটার খানা স-যত্নে বোলাচ্ছে। দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে অদূরে অবস্থিত সাগরের পানে। দেখছে স্রোতের উচ্ছ্বাস, তোলপাড়। কাছ থেকে শুনছে তাদের রিমঝিম। যা কর্ণকুহরে প্রবেশ করে গানের সুর হয়ে। মূহুর্তে মস্তিষ্ক শীতল হয়। বক্ষের ভেতরটা শান্ত হয়। চোখ বুজে নেয় লিজা। গিটারের অগোছালো টুংটাং এবার সুরে পরিনত হয়। কান খাড়া হয় সিয়ামের। গাঁ ছাড়া ভাব সরিয়ে সোজা হয়। লিজার দিকটায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেয়। লিজা ঠোঁট না নাড়িয়ে গলা দিয়ে সুরেলা গায়…
‘Uh uoo uoo…..’
এবার ঠোঁট নাড়ায়। ইংরেজি গানটা চমৎকার কন্ঠে গেয়ে ওঠে,
‘Cause anywhere with you feels right
Anywhere with you feels like
Paris in the rain
Paris in the rain
We don’t need a fancy town
Or bottles that we can’t pronounce
Cause anywhere, babe
Is like Paris in the rain
When I’m with you ooh ooh ooh
When I’m with you ooh ooh ooh
Paris in the rain
Paris in the rain ‘
মুগ্ধ হয় সিয়াম। জ্বলজ্বল নয়নে তাকিয়ে থাকে লিজার গোলাপি ঠোঁটের দিকে। সেই ঠোঁট জোড়া নড়েচড়ে গাইছে। সুরেলা ভঙ্গিতে গাইছে। নাড়িয়ে তুলেছে সিয়ামের পুরুষালি হৃদয়। থমকাতে বাধ্য করেছে তার মস্তিষ্ক। গানের সুর হারিয়ে যেতেই যেন মুগ্ধতা কাটে। মাথা দুপাশে দুলিয়ে, হাসে। গলায় একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে কঠিন ইংরেজিতে বলে, ‘মনোমুগ্ধকর। খুবই সুন্দর গলা আপনার লিজা। আপনি সারাদিন গাইলে মানুষ সারাদিন শুনতে চাইবে।’
লিজার শীতল চোখজোড়া হঠাৎ আনন্দে ছেঁয়ে গেল বুঝি? সে তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে মাথা ঘুরিয়ে দৃষ্টি রাখে সিয়ামের পানে। অবাক’করা খুশিতে জানায়, ‘তোমার প্রশংসা শুনতে ভালো লাগছে। আমাকে খুব মুল্যবান অনুভূতি দিচ্ছে। সিয়াম তুমি আমার গলার প্রশংসা আরেকবার করবে?’
সিয়াম হাসে। দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখেই মুগ্ধতায় ডুবে বলে, ‘আপনার গলার স্বর হৃদয়ে হিমশীতল বাতাস বইয়ে দেয়। অন্তর কাঁপিয়ে তুলে। ভালোবাসার মানুষ পাওয়ার আকাঙ্খা তীব্র হয়। প্রেম-প্রেম তৃষ্ণা পায়। ভেতরের লালিত পশু জানায়, এই মুহুর্তে প্রেম করা দরকার। খুব করে একটি জীবনসঙ্গিনীর প্রয়োজন। তার হাতে-হাত রেখে দীর্ঘদিন চলাচল করাটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠেছে।’
লিজা দীর্ঘক্ষণ চেয়ে রয়। সিয়ামের ভেজা মুখশ্রী হাতড়ে কিছু একটা খুঁজতে চায়। তাকে হয়তো বুঝতে চায়? বৃষ্টিতে ভেজা সিয়ামের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে গেল যেন। চোখা ফেরানো দায় হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টিতে ভেজা চাপ-দাঁড়ি ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কপালে লেপ্টে থাকা দুষ্টু চুলগুলো তার নরম দু-হাতে উঠিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। এ-পর্যায়ে সিয়াম নজর ফিরিয়ে নেয়। পুরুষ-মানুষ হয়েও এভাবে দীর্ঘক্ষণ, তাকিয়ে থাকায় লজ্জা পেয়ে বসল। এলোমেলো দৃষ্টি এদিক-ওদিক ঘোরাতে লাগল। পরমুহূর্তেই থমকে গেল লিজার বাক্যটুকু শুনে,
‘উড ইউ লাইক টু ডেট মি সিয়াম?’
সিয়াম ভড়কে ওঠে। ধুকপুক শব্দ করে হৃদয়। কয়েক মূহুর্তের জন্য বাকরুদ্ধ হয়। ঢক গিলে বড়ো করে। চেয়ে রয় লিজার পানে অনিমেষ ভঙ্গিতে। লিজা ও তার জবাবের আশায় চুপ করে অপেক্ষা করে। খুব সময় নেয় সিয়াম। তীব্র বর্ষণ উপভোগ করতে চোখজোড়া বন্ধ করে। ঠোঁট জুড়ে ঘেঁষে আসে অমায়িক হাসি। বৃষ্টির শব্দে হয়তো লিজার তার জবাব শুনতে পারবে না ভেবে, আওয়াজ তুলে উচ্চস্বরে জানায়…
‘ইয়েস। আই উড লাভ টু ডেট ইউ লিজা।’
বিচলিত নয়ন শান্ত হয় লিজার। বুক ভরে শ্বাস নেয়। হাসে তার ঠোঁট, তার চোখ। ক্ষনে-ক্ষনে দীর্ঘ হতে থাকে হাসির রাখে। একপর্যায়ে শব্দ করে হাসে। হাসে সিয়াম ও।
______
সিয়াম ভীষণ নির্ভরশীল মানুষ। কামিটম্যান্ট খুব গাঢ় করে নিয়ে ফেলে। জীবনের একটা জায়গা কামিটম্যান্ট কারীকে দিয়ে ফেলে। লিজার ক্ষেত্রে একই বিষয়। যখন থেকে বলেছে ‘আই উড লাভ টু ডেট ইউ’ তখন থেকে লিজা তার দায়িত্ব বনে গিয়েছে যেন। গাড়িতে ওঠার সময় দরজাটা সে খুলে দিয়েছে। লিজার ঠিকানা অনুযায়ী ড্রপ করেছে। যতক্ষণ লিজা নজরের বাইরে না গিয়েছে, ততক্ষণ সে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাড়িতে ফিরে কল করেছে। বাড়িতে গিয়েছে কি-না শিয়র হয়ে নিয়েছে। সকালে ক্লাসে ক্লাসে যাওয়ার পূর্বে কল করেছে। ‘গুড মর্নিং’ জানিয়েছে। দুপুরে ওয়ার্কিং-লাঞ্চ খাওয়ার পূর্বে একটা কল দিয়েছে। রাতে ড্রাইভিং বেরোবার পূর্বে একটা কল করেছে। সারাদিনে মোট তিনটা কল করেছে সিয়াম। লিজা তিনটা কলই রিসিভ করেছে। কল ধরে জানিয়েছে,
‘আমি দাঁড়িয়ে ব্রিজের ওপর।’
‘ব্রিজের ওপর?’
হাসে লিজা। বলে, ‘হ্যাঁ। তবে রেলিঙের ওপর নয়।’
‘দ্যাটস গুড। আসছি।’
ব্রিজের ওপর গাড়িটা উঠতেই সিয়াম লিজাকে দেখতে পায়। লিজা ফ্লোরাল হোয়াইট ফ্রোক পরে। একদম পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে। বুকের ভেতর থেকে কেউ সজোরে চিৎকার করে জানাচ্ছে, ‘ওটা তোমার গার্লফ্রেন্ড সিয়াম।’ সিয়াম সমানে মাথা দোলায়। অনিমেষ তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে, ‘ইয়েস। দ্যাটস মাই গার্লফ্রেন্ড।’
সিয়াম গাড়ি থামায়। দ্রুততার সহিত নেমে আসে। লিজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। উপলব্ধি করে লিজার চোখজোড়া লাল। মেয়েটা কাঁদছে। সিয়াম ধড়ফড়িয়ে ওঠে। লিজার দু-কাঁধ ধরে নিজের দিক ফেরায়। নরম চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করে, ‘কী হয়েছে? কাঁদছ কেন?’
লিজা মাথা তুলে তাকায়। পরমূহুর্তে হামলে পড়ে সিয়ামের পুরুষালি প্রসস্থ বুকের মধ্যখানে। সিয়াম আগলে নেয় বুকে। অনুভব করে বুকে হিমশীতল বাতাস বয়ে চলেছে। বড্ড শান্তি লাগছে। সেভাবেই দাঁড়িয়ে রয় দুজন অনেকক্ষণ। একসময় লিজাকে আঁকড়ে ধরে গাড়িতে বসায়। নিজে ওপর পাশে উঠে বসে৷ হালকা-পাতলা কাঁদায় নাক লাল লিজার। সিয়াম চিন্তিত দৃষ্টিতে বারংবার তাকাচ্ছে। তবে প্রশ্ন করছে না আর। শুধু কান্না করতে নিষেধ করছে। লিজা শুনল। চোখ পিটপিট করে বলে,
‘খিদে পেয়েছে।’
সিয়াম রাস্তা পালটায়। হোয়াইট হাউজের রাস্তাটা ধরে। এটা সিয়ামের পছন্দের রেস্টুরেন্টে। সেখানে গিয়ে লিজার পছন্দের খাবার গুলো অর্ডার করে। বেশ তৃপ্তি নিয়ে খায় লিজা। সিয়াম তখনো ডিনার করেনি। তাই সেও করে নেয়। খানাপিনা শেষ করে দুজন নিরিবিলি পার্কে গিয়ে বসে। লিজার মাথা সিয়ামের কাঁধে। চুপ-চাপ দুজন সেভাবেই রয়। সেই রাতে কান্নার কারণ লিজা খুলে বলে না। সিয়াম ও আর প্রশ্ন করে না।
____
তাদের ডেটিংয়ের আজ তিন-মাস। সিয়াম সম্পুর্ন কিছুই জানে লিজার। কখনো খোঁজ নেবার চেষ্টা-টুকু করেনি। তার মতে লিজার সময় হলে নিজেই জানাবে। সেই অপেক্ষায় বসে সিয়াম। সেদিন রাতে বন্ধু শুধায়,
‘আর ইউ ডেটিং সাম-ওয়ান?’
বন্ধুর রসিক গলার স্বরে হাসে সিয়াম। জানায়, ‘ইয়েস।’
‘হু’জ দ্যাট লাকি গার্ল?’
‘নো। আম দ্যা লাকি ম্যান।’
‘দেখা করাবি না?’
সিয়াম ভাবে। ফোনটা বের করতে নিয়ে বলে, ‘জিজ্ঞেস করি আগে। ওয়েট।’
একটু সাইড হয়ে কল করে লিজাকে। লিজা দুবার রিং হতেই ধরে। সিয়াম প্রশ্ন করে, ‘তুমি কী ফ্রি? আমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চাও? আসলে ওরা আমাকে পাগল করে ফেলছে, তোমাকে দেখবে বলে।’
‘অবশ্যই। কেন নয়?’
‘এই ফ্রাইডে’তে ডেট ফেলি? ইন ইভিনিং?’
‘পারফেক্ট।’
বেশ নামি-দামি রেস্টুরেন্ট প্রাইভেট রুম বুকিং দেয় সিয়াম। ভালো মানের টাকা মুহূর্তে হাত ছাড়া হয়। বাংলাদেশের তুলনায় তারা একটু বড়লোক হলেও, প্যারিস শহরে তারা সাধারণ মানুষ মাত্র। অভিজাতীয় রেস্টুরেন্টে প্রাইভেট রুম সচরাচর বুকিং করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে বছরে একদিন হলে কম্প্রোমাইজ করাই যায়। স্যুট-কোট পরে বেশ সুদর্শন পুরুষ সেজেছে সে। গাড়ি নিয়ে লিজার দেয়া ঠিকানায় এসেছে। লিজা দাঁড়িয়ে। আজ খুব সুন্দর ভাবে পরিপাটি হয়ে আছে। সাদা লেডিস স্যুট পরেছে। উঁচু হিল, লম্বা সোনালী চুলগুলো স্ট্রেইট করে ছেড়ে রেখেছে। সবসময় থাকে। তবে আজ একটু বেশি সুন্দর লাগছে। নজর ফেরানো যাচ্ছে না। লিজা গাড়িতে ওঠে বসে। হেসে কিছু একটা কথা বলতে থাকে। নজর ঘুরিয়ে সিয়ামের দিক তাকাতেই কথাবার্তা থমকে যায়। ছেলেটা এক-নজরে তাকিয়ে। ঠিক তার ঠোঁট জোড়ার পানে। বুকটা ধক করে ওঠে লিজার। পরমুহূর্তেই সিয়াম মাথা এগিয়ে আনে। ন্যুড লিপস্টিক দেয়া ঠোঁট জোড়ায়, নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। মজে ওঠে লিজার ঠোঁটের নেশায়। লিজা থরথর করে কাঁপছে। তাকে জাপ্টে নেয় সিয়াম। নরম তুলতুলে কোমরে হাতটা শক্ত করে পেঁচিয়ে নিয়েছে। তাদের তিন-মাসের ডেটে আজই এমন কাণ্ড করেছে সিয়াম। চুমুটা তাদের মধ্যে হয়নি এর আগে। লিজা আশায় থাকলেও সিয়াম এই পদক্ষেপ নেয়নি। মেয়ে হয়ে সে-তো আগ বাড়িয়ে চুমু খেতে যেতে পারে না, তাই না?
_____
সিয়ামের চারজন বন্ধু ইতোমধ্যে রুমটায় বসে। তিনজন পুরুষ একজন নারী। তারা চারজনই ফ্রান্স। এখানেই জন্ম তাদের। গ্লাসের দরজা ঠেলে সিয়াম ঢুকতেই তাড়া হৈচৈ করে ওঠে। তবে পেছনে লিজা ঢুকতেই তাদের হৈচৈ বন্ধ হয়ে যায়, অদ্ভুত ভাবে। বন্ধুদের এমন অদ্ভুত আচরণে বাকরুদ্ধ সিয়াম। পাশে দাঁড়ানো লিজাকে বসিয়ে সে বলে,
‘কী হলো? পরিচয় হবি না? এই হচ্ছে লিজা। মাই গার্লফ্রেন্ড। লিজা এরা আমার বন্ধু।’
লিজা হাসে। হাত নেড়ে বলে, ‘হায়।’
ইতস্তত গলায় তার বন্ধুদের ‘হ্যালো’ শোনা যায়। একপর্যায়ে বন্ধু জ্যাক ওঠে দাঁড়ায়। সিয়ামকে আলাদা নিতে চায়। লিজা তৎক্ষণাৎ বলে,
‘ইউ ডোন্ট হেভ টু টেল হিম। আমি বলব। প্লিজ সিট ডাউন। ডিনার শেষ করি আমরা।’
সিয়াম লিজার পাশে বসে। হাতটা তার লিজার পেছনে লেদার সোফাটার উপরে। সেই সিন-টুকু দেখে আরেকদফা অবাক হয় বন্ধুদের একেক সদস্য। সিয়াম গলা নামিয়ে বলে,
‘কী হয়েছে?’
লিজা মাথা নাড়ায়, ‘তারা আমাকে চেনে হয়তো। আমার পরিচয় তোমাকে জানাতে চাচ্ছে। আমি চাচ্ছি আমার পরিচয় তুমি আমার থেকেই জানবে। তাদের থেকে নয়।’
মাথা দোলায় সিয়াম। ডিনার শেষ করে লিজাকে নিয়ে বেরোয়৷ গাড়ি রেখে দুজন শুনশান রাস্তা ধরে হাটে। লিজা একসময় দাঁড়িয়ে যায়। মুখোমুখি হয় সিয়ামের। সময় নিয়ে কম্পিত গলায় বলে, ‘আই লাভ ইউ স্যায়াম।’
‘আই লাভ ইউ মোর।’
একই সময় নিজের অনুভূতি বলে দেয় সিয়াম। লিজার দৃষ্টি নরম হয়। নাক গরম হয়। কান্না আসবে আসবে ভাব। সিয়াম হাত ধরে বলে,
‘আমি তোমার পরিচয়ের কেয়ার করি না লিজা। শুধু তুমিটাকে আমি চিনি, শুধু তুমিটাকেই চাই।’
লিজা শান্ত হয়। বলে, ‘মানুষজনের কাছে আমি অসাধারণ কেউ। কিন্তু তোমার কাছে আমি সাধারণ থাকতে চাই স্যায়াম।’
‘তুমি যেভাবে চাও। তেমনটাই হবে।’
লিজা খোলামেলা বিষয়টা না বললেও সিয়াম জেনে যায়। সে যেই হোটেলে কাজ করে, সেই হোটেলের বর্তমান মালিক লিজা। বন্ধুদের কাছ থেকে পুরোটাই জেনে নেয়। দু-বছর পূর্বে একটি প্ল্যান ক্রাশে লিজার বাবা-মা, পৃথিবী ত্যাগ করেন, সম্পত্তির একমাত্র অধিকারী মেয়েকে একা ফেলে। তাদের মৃত্যুর পর একা হয়ে যায় লিজা। আত্নীয় স্বজন, প্রতিবেশী.. আপনজন সবাই পিছু লেগে পড়ে তার। সবার একটাই উদ্দেশ্য আর তা হচ্ছে তার হাতে থাকা কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি
হাতিয়ে নেয়া। লিজার ফুপুর পরিবার নিজের ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কান পরামর্শ নানা ভাবে দিচ্ছে৷ লিজা সবকিছু বুঝেও না বোঝার মতো করে রেখেছে। এসব শুনে সিয়ামের খেয়াল হয়, কীভাবে লিজা তার নাম জেনেছে। মনে মনে হাসলো। কষ্ট অনুভব করলো, লিজার জন্য। মেয়েটার আপন বলতে এখন কেউ নেই। সিয়াম একটা শপথ নিলো। লিজা চাইলে সে সারাজীবন তার ছায়া হয়ে থাকবে। আপনজন হয়ে থাকবে।
এবং তার শপথ সত্যতা দেখায়। বছরের পর বছর যায়, সিয়াম তার লিজার ছায়া হয়েই থেকে যায়। দুজন বাংলাদেশ টু ফ্রান্স ঘুরেফিরে বেড়ায়। একসময় লিজার ব্যবসার সঙ্গে লিজার ব্যবসাও সে সামলায়।
সমাপ্তি….
‘নাবিলা ইষ্ক’
‘প্যারিস ইন দ্য রেইন’
___________________