তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি লেখক-এ রহমান পর্ব ২২

0
835

#তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২২

রাস্তায় দাড়িয়ে পকেটে হাত গুঁজে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ইভান। হালকা ঠাণ্ডা বাতাস সাথে সাথে বিদ্যুতের ঝলকানি। বৃষ্টি হবে হবে ভাব। হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকাল। প্রায় ৮ টা বাজে। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে সে। আজ একটা মিটিং ছিল তাই বের হতে দেরি হয়ে গেছে। গাড়ি এসে সামনে দাঁড়ালো। গাড়িতে বসে ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করলো
–এতো দেরি হল যে আসতে?

–ম্যাডামকে এক জায়গায় পৌঁছে দিয়ে আসতে একটু সময় লাগলো।

ড্রাইভারের উত্তর শুনে ইভান ভ্রু কুচকে ফেলল। এই সময় তার মা কোথায় গেলো। একটু ভেবেই ফোনটা বের করে মায়ের নাম্বারে কল করলো। ফোনটা ধরেই আফসানা হ্যালো বলতেই ইভান জিজ্ঞেস করলো
–তুমি কোথায় আম্মু?

–ঈশানের শ্বশুর খুব অসুস্থ। তাই আমরা সবাই রুমাদের বাসায় এসেছি। তোমার আব্বুও এসেছে। তোমার আচমা খালা এসেছে বাসায়।

মায়ের কথা শুনে ইভান ছোট্ট করে ‘ওহ আচ্ছা’ বলেই ফোনটা কেটে দিলো। ফোনটা কেটে যেতেই স্ক্রিনে ঈশার হাস্যজ্জল ছবিটা ভেসে উঠলো। সেটা দেখেই ইভানের মনটা ভালো হয়ে গেলো। একটু ভেবে ঈশাকে ফোন দিলো। পর পর দুইবার ফোন দিলেও ঈশা রিসিভ করলো না। ইভান ভাবল সবার সাথে আছে তাই ব্যস্ত। ফ্রি হলে নিজে থেকেই ফোন দিবে। তাই আর ফোন না দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীরটা ছেড়ে দিয়েছে। মাথাটাও ধরেছে। কিছুক্ষন ঘুমাতে পারলে ভালো লাগত। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ থাকতেই বাসায় পৌঁছে গেলো ইভান। গাড়ি থেকে নেমে দরজার সামনে এসে কলিং বেল বাজাতেই আচমা এসে দরজা খুলে দিলো। ইভান কে দেখে খুশি হয়ে বলল
–ইভান বাবা কেমন আছো?

–ভালো আছি খালা। তুমি কেমন আছো?

–খুব ভালো। আপা বাসায় নাই। ঈশান বাবার শশুর বাড়ি গেছে।

ইভান আর কোন কথা বলল না। ভিতরে ঢুকে গেলো। সোজা ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লো। গ্লাসে পানি ঢেলে দিলো আচমা। ইভান একটু হাসল। এই মহিলাটা ইভান কে ছোট থেকে বড় করেছে। ইভানের মা বাসায় না থাকলে এই মহিলা বাসায় থাকতে চলে আসে। কতো খেয়াল রাখে দুই ভাইয়ের। একদম নিজের সন্তানের মতো। কৃতজ্ঞতা শব্দটা তার জন্য অনেক ছোট। আসলে তার এই মমতার কোন তুলনা হয়না। পানিতে চুমুক দিতেই ইভানের চোখ পড়লো সোফায়। ভ্রু কুচকে এলো। গ্লাসটা টেবিলে রেখে আচমাকে জিজ্ঞেস করলো
–খালা ঈশা এখানে কেন?

আচমা ঈশার দিকে তাকাল। গুটি সুটি হয়ে সোফায় ঘুমাচ্ছে। একটু হেসে বলল
–ইফতি বাবা আর ঈশা মামনি বাসায় আসার আগেই সবাই চলে গেছে। তাদের বাড়িতে কেউ নাই। তাই সবাই আসা পর্যন্ত এখানেই থাকতে বলছে।

কথা শেষ করে আচমা রান্না ঘরে চলে গেলো। ইভান ঈশার পাশে গিয়ে বসলো। চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ ক্লান্ত। কলেজ থেকে এসে ড্রেসটাও চেঞ্জ করেনি। ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত ঈশার চেহারা দেখে ইভানের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আচমা কে দেখে জিজ্ঞেস করলো
–কিছু খেয়েছে খালা?

–শুধু চা খাইছে। আমি জোর করছিলাম। মুখেই দেয়নি কিছু। বলে মাথা ব্যাথা।

ইভান ঈশাকেই দেখছে। আচমা বলল
–বাবা আমি সব রান্না করে রাখছি। আমি আমার ঘরে গেলাম। কিছু লাগলে ডাকবে।

ইভান হেসে ‘আচ্ছা’ বলতেই আচমা চলে গেলো। কিছুক্ষন ঈশাকে মন ভরে দেখে নিয়ে কোলে তুলে নিলো। নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো। এসিটা অন করে দিয়ে ঈশার গায়ে পাতলা কাথা ঢাকা দিলো। আলমারি থেকে নিজের কাপড় বের করে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ওয়াশ রুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে ঈশার পাশে বসলো। এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে পাশেই শুয়ে পড়লো। ঈশাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। ঈশাও ইভানের বুকে গুটি সুটি হয়ে লেপটে গেলো। ইভান হেসে ঈশার কপালে একটা চুমু দিলো। নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলল। ক্লান্তির কারনে সেও মুহূর্তেই ঘুমিয়ে পড়লো।

—————–
ঘুমটা হালকা হতেই ঈশা খেয়াল করলো কেউ যেন তাকে চেপে ধরে আছে। ক্লান্তিতে জড়ানো শরীরে চেষ্টা করেও চোখ খুলতে পারছে না সে। হালকা মিষ্টি গন্ধ নাকে আসছে। কিছু বুঝতে না পেরে চোখ খুলেই ফেলল। পিটপিট করে তাকাল। অন্ধকার চারিদিকে। চোখটা ডলে নিয়ে ভালো করে তাকাতেই দেখল ইভানের এক হাত তার পিঠে আর আরেক হাত কোমরে। ঈশা শুকনো ঢোক গিলল। ইভান এখানে কিভাবে আসলো? চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখে বুঝতে পারলো সে ইভানের ঘরে। ইভানের শরীরের উষ্ণতাটা খুব বেশী মনে হচ্ছে এখন। ইভান কে হালকা সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো। জোর জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠিক করতেই ইভান আবার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে ঘাড়ে নাক ডুবালো। ঈশা কেঁপে উঠলো। ইভান নাক ঘোষতে ঘোষতে জিজ্ঞেস করলো
–কি হলো? ঘুম ভেঙ্গে গেলো কেন?

ঈশা নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল
–কি…কিছু না। আমি এখানে কিভাবে আসলাম।

ইভান ঈশার ঘাড়ে থুত্নি রেখে আরও জোরে চেপে ধরল। বলল
–তুই সোফায় কেন শুয়েছিলি? বাসায় এতো ঘর থাকতে সোফায় ঘুমানোর কি দরকার ছিল?

ঈশা এবার একটু শান্ত হল। নামান কণ্ঠে বলল
–শুয়ে টিভি দেখছিলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি।

ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিলো। পাশে ফোনটা হাতে নিয়ে বলল
–আচমা খালা বলল তুই নাকি কিছুই খাস্ নি? মাথা ব্যথাও আছে নাকি? কমেছে?

বলেই পানির গ্লাসটা ঈশার দিকে এগিয়ে দিলো। ঈশা মাথা নাড়িয়ে পানিটা একটু খেয়ে গ্লাসটা ইভানের দিকে এগিয়ে দিলো। ইভান ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা বলল
–কয়টা বাজে?

–১১ টা।

ঈশা একটু চিন্তিত হয়ে গেলো। এতক্ষন ঘুমিয়েছে সে। বুঝতেই পারেনি। ইভান বুঝতে পেরে বলল
–কি ভাবছিস?

ঈশা চিন্তিত হয়েই বলল
–এতক্ষন তো চলে আসার কথা ছিল। এতো দেরি হওয়ার কথা তো না।

ইভান একটু হেসে দুষ্টুমির সুরে বলল
–দেরি করলেই তো ভালো।

ঈশা তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। ইভান একটু হেসে ঈশাকে বিছানার সাথে চেপে ধরল। ঈশা আচমকা এমন কাণ্ডে পুরোই জমে গেলো। নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল
–কি করছ ছাড়ো আমাকে।

ইভান আরও শক্ত করে চেপে ধরল। ঈশার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। ঠিক সেই সময় ইফতি দরজায় নক করলো। ইভান মুখ তুলে আবার বিওরক্তিকর একটা শব্দ করে বলল
–এরকম একটা ভাই থাকলে জিবনে আর শত্রুর দরকার পড়ে না। মনে হচ্ছে আমার রোমাঞ্চের সময়টাতেই ওর সব কাজ লেগে যায়। দেখা যাবে আমার বাসর ঘরেও ঠিক বিরক্ত করতে চলে এসেছে। আজ তো ইফতিকে আমি…

ইভান কথাটা শেষ করার আগেই ঈশা হেসে ফেলল। ইভান রাগ করে বলল
–আগে ইফতিকে দেখি তারপর তোকে দেখবো। অপেক্ষা কর।

বলেই উঠে গেলো। দরজা খুলে ইফতিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে বলল
–ভাইয়া ঈশান ভাইয়ার শশুর মারা গেছে। আজ কেউ আসবে না। কাল আসতে আসতে মে বি দুপুর হয়ে যাবে। ঈশাকে এখানেই থাকতে বলেছে।

কথাটা শুনে ইভান মনে মনে খুশি হল। ইফতি আবারো বলল
–খেতে আসো। আচমা খালা ডাকছে। ঈশা নাকি ঘুমাচ্ছিল। উঠেছে?

ইভান স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–তুই যা আসছি।

বলেই ঈশার পাশে এসে বসলো। কিছু একটা নিয়ে ভাবছে সে। ঈশা তাকে চিন্তিত দেখে বলল
–কি হয়েছে? কোন সমস্যা?

ইভান ঈশার দিকে তাকাল। শান্তভাবে বলল
–ভাবছি ইফতিকে একটা ট্রিট দিবো।

ঈশা ভ্রু কুচকে বলল
–এখনি তো কতো কিছু বললে। এখন কি এমন হল যে ট্রিট দিতে চাইছ?

–এতো ভালো একটা নিউজ দেয়ার জন্য ওর সমস্ত ভুল মাফ। আমি ওর উপরে খুব খুশী।

ঈশা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাল। বলল
–কি এমন খুশির কথা আমিও একটু শুনি।

ইভান হাসল। দুষ্টুমি করে বলল
–তুই শুনলে তো এখনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলবি। আমি এই রিস্ক নিতে পারব না।

–জ্ঞান হারিয়ে ফেলবো মানে? কি এমন কথা যেটা শুনলে খুশিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবো?

ইভান ঠোট টিপে হেসে বলল
–খুশিতে না ভয়ে।

ঈশা ভ্রু কুচকে তাকাল। ইভান স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–ঈশান ভাইয়ার শশুর মারা গেছে। আজ রাতে কেউ আসবে না। তোকে এখানেই থাকতে বলেছে।

ঈশা আঁতকে উঠলো। অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
–মারা গেছে মানে?

ইভান একটু বিরক্ত হয়ে বলল
–মারা গেছে মানে কি? জন্ম হলে মৃত্যু তো হবেই। উনি অনেক অসুস্থ ছিল। অনেকদিন থেকেই অসুস্থ অবস্থায় আছে। যাই হোক আমি সেটা ভাবছি না। আমি অন্য কথা ভাবছি।

–কি ভাবছ?

ঈশার কৌতূহলী কথা শুনে ইভান তার দিকে একটু এগিয়ে গেলো। গভির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল
–আমি ভাবছি আমার শশুরের কথা। জামাইকে এতো বিশ্বাস করে? বিশ্বাস করে মেয়েকে সারা রাতের জন্য তার দায়িত্তে দিয়ে গেলো? উনি তো বিয়ের কথা জানেন না। তারপরেও এতো বিশ্বাস! আই এম ইম্প্রেসড!

বলেই ঈশার দিকে এগিয়ে গেলো। ঈশা তাকে দুই হাতে ঠেলে দিয়ে বলল
–একদম কাছে আসবে না। আমার আব্বু আম্মু তোমার উপরে বিশ্বাস করে আমাকে এখানে রেখে গেছে। আর তুমি সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিচ্ছ? ওরা তো আর জানেনা তোমাকে বিশ্বাস করে কি ভুল করেছে।

ইভান ঠোট কামড়ে বলল
–প্রবলেম নেই তো। তার মেয়েকে কি আমি খেয়ে ফেলবো? উনি যখন ফেরত নিতে চাইবে তখনই দিয়ে দিবো। শুধু এই সময়টার দায়িত্বটা পালন করবো ভালো ভাবে। খুব ভালো খেয়াল রাখবো। আফটার অল তার মেয়ের সব কিছুর দায়িত্ব তো আমারই।

ইভান কথা শেষ করে ঈশার দিকে আর একটু ঝুকে গেলো। ঈশা পিছনে খাটের সাথে লেগে গেলো। দুই হাত ইভান কে বাধা দিতে দিতে চিৎকার করে বলল
–তোমাকে আমার দেখা শোনার দায়িত্ব দিয়েছে। আর তোমার মনে এসব চলছে? আব্বু যদি তোমার মনের কথা জানত তাহলে তোমাকে জেলে ভরে দিতো।

–তাই নাকি? আর ওনার মেয়ে তো একদম দুধে ধোঁয়া তুলসী। তোর আব্বু যখন জানবে যে মেয়ে জামাইকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলেছে তখন ঠিক কি হবে সেটাই দেখার ইচ্ছা আমার। আর বিয়ে করা এরকম সুন্দরি বউ সামনে থাকলে জামাইয়ের মনে অনেক রকম কিছুই আসতে পারে সেটাই স্বাভাবিক। এটা তোর আব্বুও বোঝে। এখানে আমার কোন দোষ নেই। সব দোষ তার মেয়ের।

ঈশা ভ্রু কুচকে রাগি চোখে তাকাল। ইভান হেসে উঠে দাঁড়ালো। দুষ্টুমি করে বলল
–এখনি এতো ভাবিস না। আগে খেয়ে আসি। সারা রাত পড়ে আছে। খাওয়া শেষ করে নাহয় ভেবে দেখবো।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here