#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৯
দীর্ঘ জার্নির পর অবশেষে বাংলাদেশে পা রাখলো মিহি। নিজের দেশে আসতেই অন্যরকম এক প্রশান্তি ছেয়ে গেলো মিহির হৃদয়ে। আবেগে চোখের কোন ভরে উঠলো। হাতের উল্ট পিট দিয়ে চোখের জলটুকু মুছে নিলোে।শেহরোজ ঈশানের কোলে ঘুমোচ্ছে।কিছু সময় রেস্ট নিয়ে চট্রগ্রাম থেকে এখন আবার ঢাকার বাসে উঠবে।
ঈশান বললো,আজকে রাতটা আমরা এখানেই থেকে যাবো। এক সাথে এতো জার্নি বাবুর শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
– কিন্তু এখানে কোথায় থাকবো?
– দিনদিন আপনার বুদ্ধি হাঁটুতে নেমে আসছে। কোথায় থাকবো মানে!হোটেলে থাকবো।
– আমি আপনার সাথে হোটেলে থাকবো। কিছুতেই না।
– এরজন্যই বলে মেয়েদের মাথায় গোবড় পোড়া থাকে। আরেহহ ডাবল রুম নেবো। এবার আসুন আর হ্যাঁ অন্যদের সামনে আপনি না তুমি বলবেন।
______________________________________________
সাজু বেপারির ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে,আসহায় দৃষ্টিতে সাথী বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,যদি ওইদিন আমরা ফিরে না আসতাম। তাহলে আজ আমার মেয়েটা আমাদের সাথে থাকতো।
সাথী বেগম চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন,না জানি মাইয়াডা আমার কোথায় কেমন অবস্থায় আছে? আইজ একটা বছর মাইয়াডার কোন খোঁজ নাই।
রমিজ রাজ আর আয়রা পাশাপাশি বসে আছে,একটু আগেই আয়রা ভয়ংকর এক কাজ করে বসেছে। রমিজ রাজকে প্রপোজ করে বসেছে। রমিজ রাজ আয়রার থুতনিতে হাত রেখে মুখটা একটু উপরে তুলে বলে,এই আধ বুড়োর মনে প্রেমের রঙ লাগানোর পিছনে রহস্য কি সুন্দরী রমনী?
আয়রার গা ঘিনঘিন করে উঠলো রমিজ রাজের স্পর্শে তবুও শান্ত থেকে বললো,আপনাকে তো আমার আগে থেকেই পছন্দ স্যার। কিন্তু সাহস করে বলতে পারিনি। ভালোবাসা তো আর বয়স দেখে হয়না।
– আমাকে ভালোবাসা এতো সহজ না নির্বোধ মেয়ে। (মনে মনে বলে,আমি এতোটাও বোকা-না)তা হঠাৎ করে আমাকে ভালোবাসার কারণ?
– কোন কারণ নেই।
– কিন্তু আমি যাকে ভালোবাসবো তাকে তো কারণেই ভালোবাসবো।এক কাজ করো আজ আমার একটা বিগ ডিল আছে। সেটা তুমি সম্পূর্ণ করো।
আয়রার চোখমুখে খুশির ঝলক প্রকাশ পেলো। আয়রা বুঝেও অবুঝের মতো বললো,ডিল কিসের ডিল?
– অতোটা অবুঝ তুমি নও। তাই এসব ন্যাকামি বাদ দিয়ে সোজা চলে যাবে পাওয়ার হাউস। মনে রেখে এসব কাজে রিস্ক আছে।যদি পুলিশ ইনফরমেশন পাও তাহলে নিজেকে পুলিশ বলে পরিচয় দেবে।আর হ্যা মাথার রেখো ওটা কিন্তু ভিন্ন থানা। তাই নিজেকে সিক্রেট অফিসার হিসেবে পরিচয় দেবে। যদি কাজটা ঠিকঠাক করতে পারো তাহলে তোমার ভালোবাসার উত্তরে ভালোবাসা। আর না হয় সেসব মরিচিকা।
______________________________________________
মিহিকে হোটেল রুমে রেখে বাহির থেকে দরজা লক করে চলে গেছে ঈশান। যাওয়ার সময় বলে গেছে আপনার একটা ভুল স্টেপ আপনার বেবির মৃ*ত্যু*র কারন হতে পারে। সেই ভয়ে মিহি চুপচাপ বসে আছে।কয়েকবার টেলিফোনের সামনে যেয়েও ফিরে এসেছে।
ঈশান হোটেল থেকে বের হয়ে চলে আসলো চট্রগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখান থেকে বিমানে করে ঢাকা আসলো।আজ রাতের ডিলের ব্যপারে ইনফরমেশন আছে ঈশানের কাছে। মূলত এম,কে মাফিয়া সম রাজ্যাের কিং। ভারত, বাংলাদেশ সব বড় বড় চোর কারবারিতে তার হাত রয়েছে। ঈশানের কাঁধেই রয়েছে এম,কে, কে ধরার দ্বায়িত্ব। তাই সহজেই ঈশান মিহির প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।রাত প্রায় ন’টা পার হয়েছে। ঈশান গার্ডের ছদ্ম বেশে আগেই পৌঁছে গেছে পাওয়ার হাউস। অপেক্ষার প্রহর গুনছে সঠিক সময়ের।
আয়রা নুহাসকে বলছে,আচ্ছা কোন ভাবে রমিজ রাজ এম,কে নয়তো?
– হতেও পারে আবার না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ একজন মাফিয়া ডন রমিজ রাজের মতো কেউ হতে পারে না।
– তাও ঠিক কথা বলেছেন, চেহারটা কেমন বিদঘুটে।
– তুমি কি ঠিক মতো কাজটা করতে পারবে?
– ভরসা নেই নাকি? এতো বড় বড় কাজ করে ফেললাম আর এটা তো সাধারণ কাজ।
– কনফিডেন্স ভালো তবে ওভার কনফিডেন্স ভালো না। বি কেয়ার ফুল। আর হ্যা সব ক’টার চেহারা ভালো করে দেখে আসবে।
আয়রা পাওয়ার হাউসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
______________________________________________
এরিকা শাফিনের সামনে বেশ কিছু পত্রিকা রেখে বলে,আপনার মৃত্যুর দিন থেকে এক মাসের পত্রিকা সংগ্রহ করতে পেরেছি। শাফিন পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছে আর অবাক হচ্ছে। কত সুন্দর নির্মমভাবে একজন জীবত মানুষকে মৃত বানিয়ে দিয়েছে।আরো কিছু পত্রিকা ঘাটতেই চোখ আটকে গেলে একটা সংবাদে। মিহির নিখোঁজ সংবাদ। পত্রিকার পাতায় গোটা গোটা অক্ষরে লেখা। সিক্রেট অফিসার শাফিন মাহমুদের স্ত্রী দাবী করা মেয়েটি আগামীকাল রাত থেকে নিখোঁজ। ধারণা করা হচ্ছে মেয়েটি হয়তো মাফিয়া চক্রের কেউ।
পত্রিকা বন্ধ করে নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো শাফিন। মনে মনে আওড়ালো তোমার গায়ে যারা আচর কাটবে তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না।মূহুর্তেই শাফিনের চোখ রাগে লাল হয়ে গেলো। কপালের রগ গুলো ফুলে উঠলো।
এরিকা শাফিনের সামনে এসে বলে,রিলাক্স মিস্টার মাহমুদ। এতো হাইপার হবেন না।
– শাফিন চিৎকার করে বলে, কিভাবে রিলাক্স থাকবো মিস আমাকে বলতে পারেন। যাকে সুরক্ষা করার জন্য এতো কিছু করলাম। শেষ পর্যন্ত আমার জন্য তাকে বিপদ পরতেই হলো। আপনাকে যে কাজটা করেছি সেটা করেছেন।
– হুম আমি এলিজা সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি। এলিজা ড্রা*গ*স সাপ্লাই করে। বিভিন্ন দেশের মা*দ*ক পা*চা*র চক্রের সাথে যুক্ত।
– আমার পাসপোর্ট আর যাবতীয় কাগজ সংগ্রহ করতে পেরেছেন?
– না পারিনি। তবে আজ রাতে কাজটা হয়ে যাবে।কারণ আমরা এখন এলিজার বাসায় অবস্থান করছি। তাই কাজটা করা সহজ আমাদের জন্য। তবে এলিজাকে কোন ভাবে বাসা থেকে দূরে রাখতে হবে। আর সেই কাজটা আমি করবো। আর আপনি নিজে খোঁজ করবেন আপনার পাসপোর্ট। পাসপোর্ট হাতে আসলে আমি ইমার্জেন্সি ভিসার ব্যবস্থা করে দিতে পারবো।এছাড়া সম্ভব না।
– ওকে আপনি শুধু এলিজাকে দূরে কোথায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুণ বাকিটা আমি দেখছি। কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে শাফিন আবার ম*রা*র মতো পরে রইলো।
এলিজা ভিতরে এসে বলে,আগামীকাল থেকে তোমার ছুটি।
– কেন?
-তুমি কি ভেবেছো আমি তোমাকে চিনতে পারিনি।
– যদি চিনে থাকো তাহলে কেন বের করে দিচ্ছ।
– আমার কাউকে প্রয়োজন নেই। আমি একা থাকতে চাই। আর সেখানে নিজের রক্তের বোন আমার সাথে থাকবে অসম্ভব।
– মনে করো আমি তোমার কেউ না। আমি পেশায় একজন ডাক্তার। আর তোমার একজন কর্মচারী।
– একদম বাজে কথা বলবে না। তুমি চলে যাবে মানে চলে যাবে। যে দেশে বাবা, মা সন্তানের সাথে যোগাযোগ রাখে না খোঁজ নেয়না সেখানে চোখের সামনে নিজের বোনকে সহ্য করার কোন প্রশ্নই ওঠেনা।
-আচ্ছা আমি চলে যাবো। তার আগে আমার সাথে তোমাকে যেতে হবে।
– কোথায় যাবো?
– আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না শুধু তোমাকে কিছু জিনিস দেখাবে। শহরের বাহিরে যেতে হবে।
– ঠিক আছে এখনি চলো।
– তুমি অপেক্ষা করো আমি পেশেন্টকে ইনজেকশন পুশ করে আসছি।
এলিজা বের হয়ে চলে যেতেই এরিকা একটা কাগজে ঠিকানা লিখে দিলো সাথে কিছু টাকা দিয়ে শাফিনকে বললো, আমাদের ফিরতে চার ঘন্টার মতো লাগবে তারমধ্যে যা করার করবে।কাজ হয়ে গেলে এই ঠিকানায় চলে যাবে। বলেই বেরিয়ে গেলো।
এলিজা সিকিউরিটি গার্ডকে বলে গেলো কেউ যেনো বাসায় না প্রবেশ করে।
______________________________________________
দিন পার হয়ে রাতের মধ্য ভাগ তবুও ঈশানের কোন খোঁজ না পেয়ে মিহি চিন্তিত হয়ে পরে। কি করবে না করবে বুঝতে পারছে না। চিন্তা হচ্ছে ঈশানের জন্য ঈশান না ফিরে আসলে কি হবে মিহির।মনে মনে বলছে আমি কি আমার নতুন কোন বিপদে পরলাম। আমার কি ঈশান মুখার্জিকে বিশ্বাস করা ঠিক হয়নি!
এখন আমি কি করবো।এই মূহুর্তে ধৈর্য ধরা ছাড়া আর তো কোন উপায় নেই। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেনো চোখ লেগে গেছে মিহির। হঠাৎ কারো চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায় মিহির। ফায়ার এলান বাজচ্ছে। তার মানে হোটেল আগুন লেগেছে। মিহির আত্মা শুকিয়ে গেলো।শেহরোজ কে বুকে জড়িয়ে ধরে দরজার সামনে এসে আওয়াজ করতে লাগলো।
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন। বাসায় মেহমান ছিলো। তাই লেখার সময় পাইনি। অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত। এরচেয়ে বড় পর্ব চাহিয়া লজ্জা দিবেন না।
হ্যাপি রিডিং 🥰