#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১৫( রহস্যের শুরু)
টিভিতে নিউজে কোন একজন সংবাদ পাঠিকা সংবাদ পড়ছেন, রাতের একটা থেকে চারটা পর্যন্ত টানা চার ঘন্টা ব*ন্ধু*ক যু*দ্ধে*র পরেও আসল অপরাধী কে আটক করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ ফোর্স। হামলাকারীরা ছিলো শক্তিশালী পজিশনে। এই ব*ন্ধু*ক যু*দ্ধে*র ফলে,বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা আহত। আর চারজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সিক্রেট আফিসার এসিপি শাফিন মাহমুদও নিহত হয়েছেন। যানা যায়। আগামী দু’বছর যাবত এই মিশনে কাজ করছিলেন তিনি। তার সহকর্মী ছিলেন তার নিজের ওয়াইফ আয়রা মাহমুদ। আমাদের সহকর্মী আবুল বশার ভাই ঢাকা মেডিকেল থেকে এখন সরাসরি বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরবেন।
আবুল বশার ভাই, জ্বি আমি এখন আছি ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে সেখানে নিজেদের প্রিয় মানুষের লাশ নিতে আশা স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ।
মিহির হাত থেকে গ্লাসটা পরে গেলো। চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে আসছে। আশেপাশে সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মিহি পরে যাওয়ার আগেই মধ্য বয়স্ক একজন লোক মিহিকে আগলে নিলো। জ্ঞান হারানোর আগে স্পষ্ট স্বরে বললো, আমার শাফিনের কিছু হতে পারে না।
______________________________________________
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে নুহাস বলে,আপাতত আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইছিনা। তদন্ত চলছে। পূর্ণ নথি হাতে আসলে আমরা আপনাদের ডেকে সবটা জানিয়ে দেবো।
একজন রিপোর্টর প্রশ্ন করলা, আমরা শাফিন মাহমুদ সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।
– এই মূহুর্তে আপনাদের কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে না।
আয়রা শাফিনের বাসায় এসে তন্নতন্ন করে শাফিন আর মিহির সমস্ত কাপল পিক সরিয়ে নিলো। শাফিনের বলা জায়গা থেকে ডকুমেন্টস সংগ্রহ করলো। শাফিনের ব্যক্তিগত ডায়েরি। কাবিন নামা। সাথে মিহির ডায়েরিও আয়রার হাতে চলে গেলো।
আয়রা নুহাস কে কল করলো,নুহাস মিডিয়া থেকে অনেক দুরে যেয়ে কল রিসিভ করলো,আয়রা বললো, নুহাস স্যারের বাসা থেকে সব তথ্য সরিয়ে ফেলেছি। আর আমার আর স্যারের কাপল পিক রেখে এসেছি। সাথে ম্যারেজ সার্টিফিকেট। আর কি করতে হবে?
– তুমি এখন ওগুলো সেফ জোনে রেখে। বিধবা হওয়ার শোক পালন করো। আপাতত এটাই সবচেয়ে বড় কাজ।কিছুদিন পর থেকে আমরা মেইন মিশন শুরু করবো।
– স্যারের ওয়াইফের সাথে দেখা হয়েছিলো।
– কোথায় আছে মিহি? ওর এখন কি অবস্থা ওকে তুমি সাথে রাখোনি কেন?শাফিন কিন্তু বারবার মিহিকে দেখে রাখার কথা বলেছে।
– আমার ছোট একটা ভুল হয়ে গেছে নুহাস। আমি ম্যাডামের সাথে রুড ব্যবহার করে ফেলেছি।
– কাজটা একদম ঠিক করোনি।তুমি এবার অভিনয়টা ঠিকঠাক করো। আমি মিহির খোঁজ করছি। না জানি এই সংবাদ দেখার পর ওর মনের উপর দিয়ে কি যাচ্ছে।
আয়রা কল কেটে দিয়ে নিচে এসে মিহির খোঁজ করে কিন্তু খুঁজে পেলো না। বাসায় এসে নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে সাদা শাড়ী পড়ে নিয়ে সোজা চলে গেলো ,হসপিটালে চোখে পানি আর মুখের ভঙ্গিতে দেখে বোঝার উপায় নেই এটা পুরোটাই নাটক।
পুলের উপ কমিশানার রমিজ রাজ। বললো,আমাদের কাজটা খুব সুক্ষ্ম ভাবে করতে হবে। কারণ মিডিয়ার নজর এখন আমাদের উপরে তাই প্রত্যেককে এলার্ট থাকতে হবে। সমান্য ভুল বড় বিপদ বয়ে আনতে পারে।নুহাস বলল স্যার কাজটা খুব রিস্কি তবুও চেষ্টা করবো নিখুঁত ভাবে করার।
রমিজ রাজ বললো, আয়রা মাহমুদের জন্য সব রকম সুবিধার ব্যবস্থা করো। আর আমাদের অফিসারদের লাশ তাদের স্বজনের কাছে হস্তান্তর করো। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাদের দাফনের ব্যবস্থা করো। আর প্রত্যকে নিহত পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব সরকারি কোষাগার থেকে নেয়া হবে। সেই ব্যবস্থা করো। ডেথ সার্টিফিকেট গুলো নিজ দায়িত্বে রাখবে। যখন চাইবো সাথে সাথে দেবে।
নুহাস বললো,জ্বি স্যার সব হয়ে যাবে।
______________________________________________
জ্ঞান ফিরতেই মিহি নিজেকে হাসপাতে আবিষ্কার করলো। দ্রুত উঠে কাউকে কিছু না বলে বেড় হবে, এমন সময় ফাহিন বলল,কোথায় যাচ্ছিস?
মিহি ফাহিনের দিকে ঘুরে বলে,আমার শাফিনের কাছে আমাকে যেতেই হবে।
– পাগলামো করিস না।তোর কোন অস্তিত্ব এখন নেই।
মিহি কোন কথা না বলে একটা সিএনজি নিয়ে সোজা চলে আসলো হসপিটালে। এসে শাফিনের খোঁজ করতেই একজন বললো,এসিপি শাফিন মাহমুদের লাশ তার ওয়াইফ আয়রা মাহমুদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে দুপুরে। মিহি নার্সের গলা চেপে ধরে বলে,আর একবার যদি আমার শাফিনকে মৃত বলেছিস তাহলে তোকে আমি মে*রে ফেলবো। সুমু মিহির হাত থেকে নার্সকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,এমন করিস না। এখন ধৈর্য ধরতে হবে যে।
মিহি সুমুকে জড়িয়ে ধরে বলে, ওরা আমার শাফিনকে মৃত বলছে,অন্যের হ্যাসবেন্ড বলছে। কি করে ধৈর্য ধরবো বল?
সুমি চল আমার সাথে পুলিশ স্টেশনে। মিহি পুলিশ স্টেশনে এসে সবার কাছে শাফিনের কথা জিজ্ঞেস করছের,কেউ কোন উত্তর দিচ্ছেনা। তবে একজন পুলিশ অফিসার বললো,আপনাকে আমরা চিনিনা। অযথা ঝামেলা করলে একদম লকআপে আটকে রাখবো। এমন সময় নুহাস আসলো। নুহাসকে দেখে মিহি নুহাসের কলার ধরে বলে,বল আমার শাফিন কোথায়? কি করেছিস আমার শাফিনের সাথে?
– এখানে সিনক্রিয়েট করবেন না ম্যাডাম এটা পুলিশ স্টেশন।
– আর কেউ না জানুক তুই তো জানিস আমি শাফিনের কে? আমার শাফিনকে আমি দেখতে চাই।
শুধু কিছু কথা বলেই চলে যাবে। ডিস্টার্ব করবো না।তোদের এসপি সাহেবকে। কথা দিচ্ছি।
নুহাস মিহির হাত ছাড়িয়ে মিহির কানের কাছে মুখ এনে বলে,যদি সত্যি শেষবারের মতো শাফিনের দেখা পেতে চাও। তাহলে ভদ্র মেয়ের মতো এই এড্রেসে চলে যাও পনেরো মিনিটের মধ্যে আমি আসছি।
মিহি নিমিষেই যেন চুপসে গেলো,রওনা হলো নুহাসের দেয়া ঠিকানায়। দু’হাতে মাথা চেপে ধরে আছে মিহি। কি হচ্ছে তার সাথে এসব? এগুলো কি কোন বাজে স্বপ্ন। কিছুই বুঝতে পারছে না। সব কিছুই ধোঁয়াশা। কেমন যেনো এক রহস্য জ্বালে আটকে পরেছে মিহি। এতোদিনের সম্পর্ক কখনো জানতে পারলো না শাফিন কি করে?আজ যখন জানতে পারলো ততক্ষনে সব শেষ। শাফিনের লাইফে সে এক অস্তিত্বহীন প্রানী। যার কোন অস্তিত্ব নেই শাফিনের লাইফে।কি করে নিজেকে শান্ত রাখবে? কি বলেই বা সান্ত্বনা দেবে। তবে কথায় আছে অল্প শোকে কাতর।অধিক শোকে পাথর। মিহির অবস্থা এখন ঠিক সেরকম।
নুহাসের দেয়া ঠিকানায় পৌঁছে, মিহি স্তব্ধ হয়ে যায়। একটা কবর স্থান। এক পা,সামনে এগেতেই দু’পা পিছিয়ে আসে। সুমুকে ফাহিন খবর দিয়ে নিয়ে এসেছিল। সুমু মিহিকে ধরে বলে,সামনে চল।
মিহি এলোমেলো পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে কবরের সামনে। আধারে সূর্য ডুবে সেই কখন ধরণী অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। আসে পাশে ল্যাম্প পোস্টের আধো আলো। অসমায়ের মেঘে ঢেকে আছে দূর আকাশের তারা।থেমে, থেমে,মেঘের গর্জনে কেঁপে উঠছে শহর। কবর স্থানের গেটের সামনে এসে হাঁটু মুড়ে বসে পরলো মিহি।
কি করে নিজেকে ক্ষমা করবে,আজ শেষ মূহুর্তে ও দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হলো। এতো কিছুর পরেও হুট করে শাফিন মিহিকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। সেই স্পর্শ এখনো শরীরে লেগে আছে। অথচ মানুষটা আর নেই।
কেউ মিহির কাঁধে হাত রাখলো, সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই মিহির। চোখ থেকে বিরামহীন অশ্রু ঝরছে। চোখের সামনে বারবার শাফিনের চেহারাটা ভেসে উঠছে। মাটিতে দু’হাত দিয়ে চিৎকার করে বলে, কেন ছেড়ে গেলে আমাকে? কেন? জোড়ে জোড়ে বিলাপ করে বলে, তুমি মরতে পারোনা। কিছুতেই না।
কাঁধে হাত রাখা ব্যক্তি মিহিকে বলে, এখানে এরকম করতে পারবেনা। মিডিয়ার লোকজন যখন তখন চলে আসতে পারে। তাদের কি জবাব দেবো।
মিহি কান অব্দি হয়তো কোন আওয়াজ পৌঁছচ্ছে না।
নুহাস উপায় না পেয়ে মিহির হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে একটা কবরের পাশে,কবরটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে নতুন কবর। নুহাস মিহির হাত ছেড়ে দিয়ে বলে তোমার কাছে পাঁচ মিনিট সময় তারপর এখান থেকে বের হতে হবে।
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
স্যাড রিডিং 😥