#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৪
ফাহিন বলে,তুই একদম আগের মতোই আছিস?
– তোর কি ধারনা এই মিহি পাল্টে যাবে। সেসব কথা ছাড় আগে বল এখানে কি করছিস?
-কি করছিস মানে? এটা আমার আফিস।
– তারমানে সেই ব্যস্ত স্যার তুই? আয় তোর কান টেনে দেই।
– ওয়েট, ওয়েট চৌধুরী বাড়ির বউ আমার অফিসে কি করে?
– সে এক বিশাল কাহিনী। বাদ দে তুই বল তোর দিনকাল কেমন যাচ্ছে।
– বাদ দেবো মানে? বিশাল কাহিনী শুনবো চল তুই আমার কেবিনে। মিহির হাত ধরে ফাহিন নিয়ে গেলো নিজের কেবিনে। অফিসের একটা মেয়ের হাত ধরে নিজের কেবিনে নিয়ে যাচ্ছে। সেটা দেখে সব স্টাফরা বোকার মতো তাকিয়ে আছে।
কেবিনে এসে ফাহিন বলে, খুব তো বলতি আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। এই নে আমার কেবিন।
– তোরে দিয়ে সত্যি কিছু হয়নি। এখনো নিজের প্রেমেও পূর্নতা পাসনি। হুদাই ভার্সিটি লাইফ থেকে সুমু র পিছনে পরেই ছিলি কাজের কাজ কিচ্ছু হয়নি।
– চুপ থাক এখন আর সেই প্রেমিক ফাহিন নেই আমি, এখন বুঝে গেছি প্রেম ভালোবাসা মরিচিকা। আসল হলো কর্ম নিজের অবস্থান এই দুটো ঠিক থাকলে জীবনে সব পাওয়া যায়।
-থাম ভাই থাম আর লেকচার দিস না। তোর ভাষণ শুনে আমার হার্ট এটাক হবে।যে ছেলেকে ধরে বেঁধে পড়া লেখা করাতে হতো সে কিনা ক্লাস টপারকে ভাষণ দিচ্ছে!
– ওই টপার হয়ে আর কি বা করেছিস,ভার্সিটির সুদর্শন সিনিয়রের সাথে প্রেম আর অকালে বিয়ে ছাড়া।
মিহির চেহারাটা মলিন হয়ে গেলো, তবুও হাসি মুখে বলে,এটাই একটা আর্ট যা সবার নেই।
– আর সেই আর্টের আর্টিস্ট হচ্ছে, দ্যা গ্রেট মার্শিয়া জাহান মিহি। এনিওয়ে এবার বল, কেন এসেছিলি। আর মেয়েটিকে এতো কথাই বা কেন শোনাচ্ছিলি।
মিহি ফাহিন কে সব খুলে বলল,ফাহিন, সুমু নাবিল,নাদিয়া চারজন ছিলো ভার্সিটি লাইফের ভালো ফ্রেন্ড। যদিও সময়ের স্রোতে এক একজন আজ এক এক প্রান্তে তবুও বন্ধুদের কাছে পেলে আমরা হয়তো নিজের কধাগুলো ডায়েরির মতো জমা রাখতে পারি। নিজেকে মেলে ধরি। সব দুঃখ গুলো শেয়ার করতে পারি। যে কথা পরিবার বা অন্য কারো কাছে বলা যায় না সেসব কথা অনায়েসে বলে দিতে পারি!
– তো এখন যা করতে চাইছিস!তাতে কাজ হবে বলে তোর মনে হয়?
– কাজ হবে নাকি জানিনা তবে চেষ্টা করতে তো সমস্যা নেই।
– তোর যা ইচ্ছে। তবে একেবারে মিটমাট করতে পারলে ভালো হতো।
– তুই এটা কি ভাবে বলছিস। বলা যত সহজ ছেড়ে দেয়া তত সহজ নয়!ভালোবাসা এতো টুনকো নয়। সমান্য হাওয়াতেই উড়ে যাবে। আমার ভালোবাসা জমাট রক্তের মতো যতক্ষণ শাফিন নিজ হাতে সেটাকে ফেলে না দিচ্ছে আমি অপেক্ষা করবো।
– তুই যেটা ভালো বুঝিস কর। আমি তোর সাথে আছি। তবে তোর অপেক্ষা কখনো শেষ হবে বলে আমার মনে হয়না।
– দেখ দোষটা কিন্তু শাফিনের একার না। আমার ও ওর বেপরোয়া চলাফেরা। এটিটিউড স্মার্টনেস এসবের প্রেমেই তো পরেছিলাম। তাই আমার মনে হয় আমিও সমান দোষী।বিয়ের আগে সে পার্ফেক্ট ছিলো। কিন্তু বিয়ে আর প্রেমের মাঝে এক বিশাল ফারাক। সেটা তখন বুঝতে পারিনা। প্রেমিক আমরা রনবীর কাপুরের মতো চাইলেও। হ্যাসবেন্ড হিসেবে শাহরুখকে চাই। আর সেটা তো হবে না তাইনা। দু’জন মানুষের মাঝে পার্থক্য থাকবেই।
– তাহলে আলাদা কেন হলি?
– সাময়িক দুরত্ব বাড়িয়েছি।দেখি এই দূরত্ব আমাদের কোথায় নিয়ে যায়।
-সব নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়ে নিলি। শোন একটা কথা প্রেমিক হিসেবে রনবির কাপুর যেমন হোক হ্যাসবেন্ড হিসেবে তারচেয়ে মাচ বেটার। আর বিয়ের পর শুধু মেয়েরাই মেনে নেবে মানিয়ে নেবে এমন না ছেলেটাকেও সমান ভাবে নিজেকে সংযত করতে হবে। দ্বায়িত্বশীল হতে হবে।যত্নশীল হতে হবে। যেটা শাফিন কখনোই চেষ্টা করেনি।
– এবার দেখি কি করে। আচ্ছা আমাকে আবার যেতে হবে।
– কোথায় যাবি?
– বর্ষার বাসায়
– বর্ষা মানে? আমাদের বর্ষা!
– হুম আমাদের বর্ষা। আচ্ছা তবে আজ উঠি কথা হবে পরে।
-তুই এতো দূর থেকে এসে অফিস করবি কি করে?
-দেখতে থাক কি করে করি।
______________________________________________
রোদের প্রখরতা তখন দ্বিগুণ। আজ যেনো অন্য দিনের যেয়ে সূর্যের তেজ বেশি। শাফিন চলে এসেছে যমুনা ফিউচারে। নিজের হাতে থাকা রোলেক্সের ঘড়িটা বিক্রি করে দিয়েছে। বাহিরে বের হয়ে রেস্টুরেন্টে দুপুরের লাঞ্চ সেরে নিলো। কিছু মানুষ আছে ভাঙবে তবুও মচকাবে না। শাফিন ঠিক সেই ক্যাটাগরির মানুষ। খাবার খেয়ে বের হয়েই একটা উবার বুক করে নিলো। গন্তব্য এখন নাইট ক্লাব। আগামীকালের বিল পে করতেই যাচ্ছে।গাড়ীতে বসে বসে চিন্তা করছিলো আর কি কি বিক্রি করবে।চিন্তা শেষ করে বলে, আমার ঘড়িগুলো বিক্রি করে আমি আরামে কয়েক বছর বসে বসে খেতে পারবো।
মিহি আর ফাহিন একসাথে বের হয়েছে। একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার শেষ করে। ফাহিন বলে, শোন তোকে আমার ড্রাইভার দিয়ে আসবে।আর আমি অন্য গাড়ি আনিয়ে চলে যাচ্ছি।
– না তার কোন দরকার নেই আমি বাসে চলে যেতে পারবো।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে দু’জনেই এটা নিয়ে কথা বলছিলো।
শাফিনের গাড়ি মিহির পাশ কাটিয়ে গেলে শাফিন লুকিং গ্লাসে মিহিকে দেখে ড্রাইভারকে বলে এই মামা গাড়ি পিছনে নাও। তাড়াতাড়ি নাও। আবার বলল না না,তুমি এখানেই থামাও। ড্রাইভার গাড়ি ব্রেক করতেই। শাফিন দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আসলো।
মিহি কথা বলছে এমন সময় শাফিন বলে, তোমাকে না বলেছি, এই ছেলের সাথে কোন যোগাযোগ রাখবে না।
মিহি হঠাৎ শাফিনের গলার আওয়াজ শুনে চমকে যায়। কিছু সময় পর শাফিনকে বলে, আপনি কে?
– এই একদম নাটক করবে না।আমি কে সেটা তুমি ভালো করেই জানো।
– সরি ভাইয়া আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।
ভাইয়া ডাক শুনে শাফিনের মাথায় রক্ত উঠে গেলো,চেচিয়ে বলে,তোর চিনতে হবে না। বলেই ফাহিনের কলার ধরে বলে,তুই তোর তো চেনার কথা আমি কে? তোকে-না সেই ভার্সিটিতে থাকতেই থ্রেট দিয়েছে আমার বউয়ের পিছু ঘুরবি না।
মিহি ফানির কলার ছাড়িয়ে দিয়ে বলে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিনক্রিয়েট করছেন কেন?আপনি হয়তো ভুলো যাচ্ছেন আপনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই।
-তুই এই ছেলের জন্য আমাকে ছেড়ে এসেছিস।
– এসব উল্টোপাল্টা কথা একদম বলবে না। তুমি তোমার মতো থাকো আমি আমার মতো থাকবো।
– তুই থাক তোর মতো যেমনে মন চায় থাক। শুধু কোন ছেলের আশেপাশেও তোর ছায়া যেন না দেখি।
মিহি শাফিনের সামনে ফাহিনের হাত ধরে বলে, চল এখানে আর থাকার মতো পরিবেশ নেই।
মিহি সামনে পা বাড়াতেই শাফিন মিহির অপর হাত ধরে আটকে দেয়। মিহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই শাফিন বলে, আমি তোমাকে ছেড়েই দেবো তার আগে আমার কথা শুনতে হবে।
মিহি বলে,আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই মিস্টার শাফিন মাহমুদ।
– তুমি আমার কথা শুনতে বাধ্য। আমার সোজা কথা এই ছেলের সাথে কোন যোগাযোগ রাখবে না।
মাহি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ডিয়ার এক্স আমার লাইফ আমি কি করবো সেটা আপনার বলে দিতে হবে না। তাই নিজের কাজ করুন।
মিহি চলে যেতেই শাফিন বলে,তোমার ব্যবস্থা আমি পরে করছি।
মিহি গাড়িতে এসে বসে,ফাহিনকে বলে সরি।
– ইট’স ওকে। সরি বরতে হবে না। ওর এই স্বাভাব নতুন নাকি! তবে আপসোস এখনো একটুও পাল্টায়নি। তোকে মনে হয় এখনো ভালোবাসে।
– রাখ তোর ভালোবাসা। ব্যবহার ঠিক করতে পারেনি এখনো। একবার এটাও বললো না। আমার ভুল হয়েছে আর এমন হবেনা। চলো ফিরে চলো।
-তোদের সমস্যা তোরাই ভালো বুঝবি। যাইহোক শাফিন ভাই আবার নতুন কোন কান্ড করে কে যানে।
– আবার কিছু করলে ঠাসসসস করে দুই গালে বসিয়ে দেবো চড়।তখন বুঝবে।
______________________________________________
দিন শেষ হয়েছে,পাখিরা কিচিরমিচির করতে করতে নিজেদের বাসায় ফিরেছে,চারপাশ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। তবুও দূরের চাঁদটা মিটিমিটি আলো দিচ্ছে। তার আশেপাশে রয়েছে ছোট ছোট তারার মেলা। শাফিন উদয়ের সাথে ছাদের এক কোণে বসে নি*কো*টি*নের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলছে, বুঝলি, মেয়ে মানুষের মন পুরাই আকাশের মতো হুটহাট পরিবর্তন হয়। এই দুইদিন আগেই আমার জন্য কত নাটক করলো। আমি না খেলে খায় না। আমার জন্য এই করে সেই করে। আর আজ অন্য ছেলের হাত ধরে আমার সামনে দিয়ে চলে গেলো।
উদয় বলল,তুই কি বলছিস এসব! মিহি ভাবিকে আমি চিনি।
উদয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই গর্জে উঠে বলে,তুই কি বললি আবার বল।
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।