অবশেষে পূর্ণতা পর্ব ১২

0
658

#অবশেষে_পূর্ণতা
#লেখক_আহম্মেদ_নীল
#পর্ব_১২

‘রুম থেকে চলে যেতে নিলে,ইমতিয়াজ চৌধুরী নীলকে বলে দাড়াও। নীল পিছনে ফিরে মাথাটা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে।
নীল তুমি যে আমার ছেলে তার পরিচয় আজকে দিলে। ছেলে হয়ে বাবার চোখকে নতুন করে আলোকিত করে দিলে।
আমি তোমাকে ওই মেয়ের সাথেই বিয়ে দিবো। আগামীকাল আমরা তাদের বাসায় যাবো,কিংবা তারা আসবে। নীল বললো,ড্যাড আই লাভ ইউ সো মাচ। ওড়া আমাদের বাসায় আসতে চাই। ওকে মাই সন। কিন্তুু একটা সমস্যা রয়ে গেছে।

-নীল বলল,কী সমস্যা.? সমস্যাটা হলো তোমার মমকে নিয়ে। তাকে রাজি করানো এতটা সহজ হবে না। নীল নীজেও জানে তার মমকে রাজি করানো কতটা কষ্টসাধ্য,তবে নীলকে যে পারতেই হবে। না হলে সে যে ফারিয়াকে নিজের করে পাবে না। আদেও কী পারবে নীল তার মমকে এই প্রস্তাবে রাজি করাতে.? একটু পর নীল আর ইমতিয়াজ সাহেব চলে গেলো রাতে ডিনার করতে ডিনার টেবিলে। নীল আর ইমতিয়াজ সাহেব অপেক্ষা করছে নীলের মা সাদিয়া বেগমের জন্য। কি নীল বাবা আজ এত তারাতাড়ি ডিনার করতে চলে এসেছো যে.?নীল হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১১ঃ২০ বাজে। অন্যসময় তারা ১২ টার সময় ডিনার করে। নীল বললো,মম অনেকদিন পর তো তাই ভাবলাম,আজ তারাতাড়ি ডিনার করে তোমার আর ড্যাডের সাথে জমিয়ে গল্প করবো অনেক রাত পর্যন্ত। ওকে বলে সাদিয়া বেগম ডিনার টেবিলে বসে পড়ে। ডিনার শেষ করে ইমতিয়াজ চৌধুরী ও সাদিয়া বেগম নীলের রুমের যায় গল্প করার জন্য। নীলের মনের একটা চিন্তা কিভাবে তার মমকে রাজি করাবে এই প্রস্তাবে।(লেখক_আহম্মেদ_নীল)

‘তা বলো নীল তোমার বিজনেস কেমন চলছে.? আলহামদুলিল্লাহ মম সবকিছু ঠিকঠাক চলছে,তবে। সাদিয়া বেগম বললো,তবে কি.? কোন সমস্যা হলে বলতে পারো আমরা সবসময় তোমার পাশে আছি আর আমরা বন্ধুর মতো। সো সবকিছু ক্লিয়ার বলো,তুমিতো ভালো করেই জানো তোমার মম ক্লিয়ার কথা পছন্দ করে। নীলের মনে একরাশ ভয় কাজ করতে শুরু করলো,যদি তার মম কোনভাবে এই প্রস্তাবে রাজি না হয়। তবে নীলকে পারতেই হবে তার মমকে যে কোনভাবে রাজি করাতে। না মানে,মম। নীল তুমি এমন মানে মানে করছো কেনো.?তারপর নীল সবকিছু বলে।ইমতিয়াজ চৌধুরী নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে সোফায়।আর সাদিয়া বেগম রাগান্বিত হয়ে বলে উঠে,নীল তুমি যেটা বলছো এটা কোনভাবে সম্ভব না। নীল এর আগে তার মমকে কখনো এমন রাগান্বিত কন্ঠে কথা বলতে শুনিনি। নীল তার মমের কথা শুনে বলতে লাগে,আমি ছোট থেকে তোমাদের কাছে নিজ থেকে কিছু চেয়ে নিয়নি,কিন্তুু আজ বলছি ফারিয়াকে আমার চায়,প্রয়োজন পড়লে আমি সবকিছুর বিনিময়ে ফারিয়াকে আপন করে নিবো। পুনরায় সাদিয়া বেগম নীলকে বলে,আমি তোমার জন্য তোমার বাবার বন্ধুর মেয়ে ঠিক করেছি। তোমাকে তার সাথেই বিয়ে দিবো। আর তুমি যেটা বলছো এটা কখনোই সম্ভব না।

“আমি তোমাদের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।বিয়ে যদি করি তাহলে ফারিয়াকেই করবো,না হলে আর কারো সাথে করবো না। এটায় আমার ফাইনাল কথা।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) ইমতিয়াজ চৌধুরী সাদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,নীল চেহেতু ওই মেয়েকে বিয়ে করতে চাই তাহলে ওই মেয়ের সাথে বিয়ে দিলে সমস্যা কি। সাদিয়া বেগম রাগান্বিত কন্ঠে ইমতিয়াজ চৌধুরীকে বলে,তুমিও দেখছি ছেলের সাথে পাগল হয়ে গেছো। তোমাদের যা ভালো মনে হয় তাই করো। যদি ওই নষ্ট চরিত্রহীন মেয়েকে এই বাড়িতে বউ করে নিয়ে আসো তাহলে আমি এই বাড়িতে থাকবো না বলেই রাজে গজগজ করতে করতে সাদিয়া বেগম তার রুমে চলে যায়।

-এদিকে ইমতিয়াজ চৌধুরী ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে নীলের কাধে হাত রেখে বলে,বাবা চিন্তা করোনা,তোমার ড্যাড তো আছে। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।তুমিতো জানো তোমার মম কেমন। অনেক ভালো একজন মানুষ। তবে কোন মা চায়না একটা ডিভোর্স মেয়েকে ঘরের বউ করে আনতে। সবার মন মানসিকতা এক রকম না। আমিতো আগে এগুলো ভাবতাম,কিন্তুু তুমি আমার ভুলগুলো ভাঙিয়ে দিয়ে আমার চোখকে আর মনকে করেছো আলোকিত। এভাবে তোমার মমকেও বুঝাতে হবে,তার মনের ভেতরকে আলোকিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি তুমি পারবে। হাল ছেড়েনা বলে ইমতিয়াজ চৌধুরীও চলে যায়।

‘নীল অনেকটা কষ্ট পায় তার মায়ের এমন কথা শুনে। রুমের দরজা বন্ধ করে অন্ধকার রুমে বসে থাকে। অন্ধকারকে তার সঙ্গী করে নেই রাতটা পার করার জন্য।(লেখক_আহম্মেদ_নীল)রাত প্রায় ১ঃ৩৫ মিনিট। নীলের চোখে ঘুমের কোন হুদিস নেই। তার একটাই প্লান তার মমকে রাজি করানো। তবে কিভাবে রাজি করাবে তা একদম তার জানা নেই। নীল কি পারবে তার মায়ের সকল রকমের ভুল ধারনা মনটাকে সঠিক ধারনায়, সে কি পারবে তার মায়ের মনের মাঝে থাকা ভুল ধারনাগুলো ভেঙে দিয়ে সেই মনকে আবারো নতুন করে আলোকিত করতে.?

“ইমতিয়াজ চৌধুরী রুমে গিয়ে দেখলো সাদিয়া বেগম বালিশে মুখগুজে কান্না করছে তার চোখের পানি বালিশটা অঝরে ভিজে যাচ্ছে। ইমতিয়াজ চৌধুরীকে আসতে দেখে চোখের অশ্রুগুলো মুছে নিয়ে উঠে বসলো। ইমতিয়াজ চৌধুরী সাদিয়া বেগমকে বুঝাতে চাইলে সে বারবার ব্যর্থ হয়।
সাদিয়া বেগমের মুখে একটায় কথা আমি আমার ছেলেকে কখনো ডিভোর্সী মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারিনা। আমি মা হয়ে কখনো পারবো না এমন মেয়ের সাথে আমার হিরের টুকরো ছেলেকে বিয়ে দিতে। নীল যদি বাইরের একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসুক আমি র্নিদ্বিধায় মেনে নিবো। ডিভোর্সের বিষয়টা না হয় মেনে নিলাম,তবে পেটে থাকা বাচ্চাটাকে কেমন মেনে নিবো আমি। আমি কখনো মেনে নিতে পারবো না। এটা কখনোই সম্ভব না।

-‘পূর্বদিক থেকে সূর্য উদয় হয়ে নতুন একটা সকালের আগমন ঘটলো। সেই সূর্যের আলো জানালার ফাক দিয়ে নীলের চোখে আর মুখের উপর পড়তেই নীলের ঘুমটা ভেঙে যায়। রাতে সে কখন ঘুমিয়েছে তার কিছু মনে নেই। একটু পর বেড থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করার জন্য টেবিলে না গিয়ে সে আবার পুনরায় নিজের রুমে চলে যায়। ছেলের চলে যাওয়া দেখে ইমতিয়াজ চৌধুরী বুঝতে পারলো নীলের মনের মাঝে একরাশ কষ্ট আর অভিমান তার মমের উপর। সাদিয়ে বেগম বসে আছি চুপচাপ,ছেলেকে ছাড়া সে একা একা খুব কম সময়ে নাস্তা করে। বাইরে গেলে সেই সময়টা শুধু নীলকে ছাড়া নাস্তা করে,তবে নাস্তা করার সময় ছেলের কথা মনে করে আর বলতে থাকে। হাজারো হলেও অনেক সাধনার পর একটা হিরের টুকরো ছেলে বলে কথা। সাদিয়া বেগমের বিয়ের ৮ বছর চেষ্টা পর নীলের জন্ম হয় এই পৃথিবীতে। যেদিন নীল এই পৃথিবীতে আলো দেখে সেদিন থেকে এই ছেলেকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন বুনতে থাকে তার পরিবার। সাদিয়া বেগমের সেই সব হাজারো স্বপ্ন চুরমার করে নীল ফারিয়া নামক রমনীকে বিয়ে করতে চাই। তাদের ইচ্ছে ছিলো ধুমধাম করে বিয়ে দিবো,যা পুরো শহরকে মাতিয়ে তুলবে,সবাই জানতে পারবে চৌধুরী পরিবারের একটামাত্র ছেলে এবং এই শহরের নামকরা বিজনেস ম্যান নীল চৌধুরীর বিয়ে হচ্ছে। কিন্তুু শেষে কিনা নীল একটা ডিভোর্স প্রেগন্যান্ট মেয়েকে বিয়ে করবে কথাগুলো ভাবছে আর সাদিয়া বেগমের চোখ বেগে টপটপ করে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে থাকে। নিয়তি কখন কাকে কোথায় নিয়ে যায় তা একমাত্র উপর ওয়ালাই জানে।

(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
-“নীলকে কয়েকবার ডাকার পরও সে নাস্তা করতে আসেনা। ইমতিয়াজ চৌধুরী ছেলেকে রুম থেকে আনতে যায়। কারন ইমতিয়াজ চৌধুরী জানে নীল কতটা অভিমানী। কিরে বাবা,নাস্তা করতে হবে তো.?তারাতাড়ি চল বলেই নীলের হাত ধরে নাস্তা করাতে টেবিলে নিয়ে যায়। ইমতিয়াজ চৌধুরী পড়ে গেছে চরম বিপদের ভেতরে। একদিকে ছেলের অভিমান,অন্য দিকে তার স্ত্রী সাদিয়ার অভিমান। দুজনের অভিমান ভাঙাতে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে চেষ্টা থামায় নি ইমতিয়াজ চৌধুরী। একটু পর নীল মুখটা গোমড়া করে টেবিলে বসে নাস্তা করতে। নীল কারোর দিকে বিন্দু মাত্র তাকালো না। সামান্য একটু খেয়ে চলে যায়। সাদিয়া বেগম ভালো করে বুঝতে পারে নীল সারারাত ঘুমায় নি,কারন নীলের চোখগুলো ফুলে গেছে আর রাগে অনেকটা জবা ফুলের মতো লাল হয়ে যায়। ছোট্ট থেকে নীল রাগ করলে ওর চোখজোড়া জবা ফুলের মতো ধারন করে।

‘সাদিয়া বেগম বুঝতে পারে তার ছেলের গভীর ভালোবাসার টান।একটু পর রুমের দিকে হনহন করে চলে যায় সবাই যায় যার মতো। ইমতিয়াজ চৌধুরী বসে থাকে হতভম্ব হয়ে নাস্তার টেবিলে। ইমতিয়াজ চৌধুরী ঠিক করে তাদের দুজনকে রুমে ডেকে বুঝিয়ে বলবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। নীলের রুমে নিয়ে গেলো সাদিয়া বেগমকে। নীল তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,ড্যাড আমি যদি তাকে নিয়ে জীবন পার করতে পারি তাহলে নিশ্চয়ই তোমাদের কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। মম তুমি কি বলেছিলে,,ডিভোর্সী মেয়ে,,হুম ফারিয়া একটা ডিভোর্স মেয়ে,তারপর নীল বলতে লাগলো,ফারিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা। সাদিয়া বেগম এবার নিজের ভুল বুঝতে পারলো। কারন এই পরিস্থিতির সম্মুখীন সে নিজেও হয়েছে। ফারিয়া তো তাও তারাতাড়ি মা হতে পেরেছে। কিন্তুু সাদিয়া বেগম তো বিয়ের ৮ টা বছর পর মা হতে পেরছে। সাদিয়া বেগম সবকিছু শোনার পর নিজের প্রতি নিজের একরাশ ঘৃণা জন্মাতে থাকে। নীল আবারো বলে উঠলো,আর কি বললে সন্তানের কথা.? পথে থাকা এতিমদের কখনো দেখেছো,,আজ যদি আমি ফারিয়াকে বিয়ে করি,এবং বাচ্চাটাকে পরিচয় না দিয়,তাহলে সেও এতিম হয়ে যাবে।

‘আমাদের কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে যদি আমাদের পরিচয়ে শিশুটাকে বড় করে সুন্দর একটা জীবন দিয়.?
আমার তো মনে হয়না যে কোন সমস্যা হবে।

__________________

-‘আতিক সুয়ে আছে। সামিয়া একটু পর রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে,আতিক এর পাশে এসে বসে। আতিক সামিয়াকে শুয়ে পড়তে বলে। সামিয়ার মাথায় ঘুরপাক খায় নারগিস বেগমের বলা প্রতিটা কথা। যত তারাতাড়ি সামিয়ার পেটে বাচ্চা আনতে পারবে তত তারাতাড়ি সামিয়ার মায়ায় আতিককে জড়িয়ে নিতে পারবে। আতিক হয়তো গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। সামিয়া একটু একটু করে আতিক এর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আতিক এর গোলাপের মতো পাপড়ি ঠোঁটের কাছে সামিয়া তার নিজের ঠোঁট নিয়ে গেলো। বন্ধ রুমের ভেতরে শুধু দুজনের শ্বাস প্রশ্বাস এর শব্দ শোনা যাচ্ছে। সামিয়া আতিক এর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে অনবরত কিস করতে থাকে। আতিক তা বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি করে উঠে বলে,কি করছো এসব.??শান্তিতে একটু ঘুমাতেও দাওনা। সামিয়া বলতে লাগে,কোনো এখন কি আর আমাকে ভালো লাগেনা.? আমি তোমার বিয়ে করা বউ আমার সবকিছুর অধিকার আছে।

-‘সামিয়া আবারো আতিক কে জড়িয়ে ধরতে লাগলো,আতিকও আর মানা করলো না,তবে আতিক এর কাছে সামিয়াকে এখন বিরক্তিকর লাগছে। সামিয়া আবারো আতিক এর ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট নিয়ে যেতে চাইলে আতিক আর কোন বাধা দেয়না। সামিয়া মনে মনে নারগিস বেগমের কথা অনুযায়ী কাজ শুরু করে। সামিয়া আতিককে অনবরত কিস করতে থাকে। হঠাৎ আতিকের মাথা আবারো ফারিয়া নামক রমনীর কথা ভেসে ঔঠে।

“তখুনি আতিক সামিয়া,,

চলবে কী.?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here