অবশেষে পূর্ণতা পর্ব ১৮

0
620

#অবশেষে_পূর্ণতা
#লেখক_আহম্মেদ_নীল
#পর্ব_১৮

‘সৃষ্টিকর্তা ফারিয়ার জীবন থেকে যা কেড়ে নিয়েছে তার থেকে উত্তম কিছু দিলো তা বুঝতে পারে। তখুনি ইমতিয়াজ চৌধুরী বলে উঠে,,ফারিয়া মা তুমি রেডি হয়ে নাও। ফারিয়াকে সাদিয়া বেগম বললো,আমার মেয়েকে আমি নিজ হাতে সাজিয়ে দিবো। তারপর সাদিয়া বেগম ফারিয়াকে নিয়ে যায় ফারিয়ার রুমে। তারপর ফারিয়া হাতে দুইটা সোনার রুলিবালা পড়িয়ে দেয়। প্রায় গোছানো শেষের দিকে৷ তারপর ফারিয়াকে নিজের সাথে নিয়ে আবার সবার মাঝে নিয়ে যায়।
ইমতিয়াজ চৌধুরী আমিন সাহেবের উদ্দেশ্য বলে,বেয়াই সাহেব আমরা আজ বরং উঠি। আমিন সাহেব বলে,এটা কোন কথার মতো কথা বললেন আপনারা.?

-‘তখুনি ইমতিয়াজ চৌধুরী বলে,অফিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাদের। রাতের ভেতরে ফাইলগুলো রেডি করতে হবে। তাই সন্ধা নামার আগেই বাসায় ফিরতে হবে। আমিন সাহেব পরিস্থিতি বুঝতে পারলো, তাই আর জোরাজোরি করলো না। বিদায় নেওয়ার সময় ঘুনিয়ে আসলো। ফারির অহনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। ইমতিয়াজ চৌধুরী বলে,মা একদম কান্না করবে না,আমরা তো আছি তোমার পাশে। তুমি তো আমাদের মেয়ে। তাহলে কান্না করছো কেনো.? মা-বাবার জন্য যে ফারিয়ার ভেতরে পুড়ে যাচ্ছে। যে মা-বাবা ফারিয়ার জন্য নিজের বাড়ি- ঘর ফেলে চলে এসেছে শহরে। সে বাবা-মাকে ছাড়া কেমন করে থাকবে ফারিয়া.? মেয়েদর জীবনটা যে সত্যি খুব বেশি অদ্ভুত। তাদের আসল বাড়ি তো স্বামীর বাড়ি। মা-বাবা সে যতই ভালোবাসুক না কেনো,তাকে নির্দিষ্ট সময়ের পর,যে সে বাড়ি চিরতরে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হবে।

(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
-“তারপর আবারো আমিন সাহেবকে জড়িয়ে ধরে ফারিয়া। মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকে। মেয়ের জন্য তার চোখে টলমল করে পানি চলে আসে। মেয়েটা যে বড্ড বেশি অসহায়। আতিক নামক নরপশুর জন্য হয়তো আজ এমন দশা,তবে নীলের মতো একজন ছেলে তার জীবনে এসেছে এটার জন্য আমিন সাহেব ও ফারিয়া ভাগ্যবান। ফারিয়া কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার সাথে গাড়ি অবদি তার মা-বাবা নিয়ে যায়,তারপর তারা কান্না করতে করতে ইমতিয়াজ চৌধুরীর হাত ধরে বলে,আজকে থেকে আমার মেয়েকে দেখে রাখবেন,দয়াকরে কোন ভুলত্রুটি করলে মেয়েটাকে মাফ করে দিবেন। মেয়েটা যে বড্ড বেশি অসহায় বলেই অনবরত কান্না করতে থাকে আমিন সাহেব।

‘ইমতিয়াজ চৌধুরী বলে,আপনারা একদম চিন্তা করবেন না। ফারিয়া আমাদের মেয়ে,তাই আপনারা একদম চিন্তা করবেন না। আর ভুলত্রুটি তো মানুষের জন্য, আর কখনো ভুল করলেও বাবা হিসাবে আমরা ওকে মাফ করে দিবো,একদম চিন্তা করবেন না। আমরা আছি সবসময় আপনাদের সাথে। কোন সমস্যা হলে আমাদের জানাবেন,তারপর ফারিয়াকে গাড়ির ভেতরে তুলে নেয় নীল। ফারিয়া গ্লাস খুলে প্রানপ্রিয় মা-বাবাকে শেষবারের মতো দু নয়ন ভরে দেখে নেয়।তারপর ড্রাইভার গাড়ি স্টাট দেয়। একটু একটু করে ফারিয়া বাবার বাড়ির গন্তব্য হারিয়া নিজের স্বামীর বাড়ির গন্তব্যে পাড়ি দিতে থাকে। মা-বাবার কথা অনেক মনে পড়ে ফারিয়ার,দু চোখ বেয়ে অশ্রু কনাগুলো গড়িয়ে পড়ে। নীলের কাধে মাথা রেখে ফারিয়া কান্না করেই চলেছে। সাদিয়া বেগম বলে,ফারিয়া মা আর কান্না করোনা তো। বাসায় গিয়ে কল দিয়ে কথা বলিয়ে দিবো।

“এদিকে আমিন সাহেব আর অহনা বেগম বাসার ভেতরে গিয়ে মেয়ের জন্য মনমরা হয়ে বসে থাকে সোফায়। এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন মেয়েটা কাছে রয়েছে,কষ্ট তো হবেই। আমিন সাহেব অহনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,নীলের পরিবারের মতো মানুষ হয়না।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) আমাদের মেয়েকে কতটা ভালোবাসে তা তাদেরই আচারনে বুঝতে পারলাম। অহনা বেগম বলে,দেখো রেখো আমাদের মেয়েটা অনেক সুখে থাকবে নীলের পরিবারের কাছে। আমিন সাহেব সহমতে সায় জানালো।

-‘এদিকে দেখতে দেখতে চলে আসলো তাদের আসল গন্তব্যে। বাসার সামনে এসে গাড়িটা থাকলো,তারপর দারোয়ানকে বললো দরজা খুলে দিতে। ভেতরে ঢুকে গেলো গাড়ি। তারপর কয়েকজন সাজেন্ট এসে ফারিয়াকে শুভেচ্ছা জানালো। গাড়ি থেকে নামিয়ে সাদিয়া বেগম ফারিয়াকে নিয়ে যেতে লাগে দুইতলায়। সুন্দর পরিপাটি রুমটায় নিয়ে গেলো ফারিয়াকে, হাতে চাবিটা দিয়ে বললো,আজকে থেকে এই বাড়ির সবকিছু তোমার। আরে কি বলেন মা.? (লেখক_আহম্মেদ_নীল)আপনি থাকতে আমি পারবো না এত বড় দায়িত্ব নিতে। নাও বলছি। সাদিয়া বেগমের অনেক জোরজারির কারনে ফারিয়া চাবিটা নিতে একপ্রকার বাধ্য হলো। সাদিয়া বেগম বললো,বউমা তুমি এখানে বসো,আমি কাজের মেয়ে মিলিকে পাঠাচ্ছি তোমাকে সবকিছু চিনিয়ে দেওয়ার জন্য।ফারিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। ফারিয়া রুমে বসে আছে এমন সময় নীলের আগমন ঘটলো। মে আই ক্যাম ইন ম্যাডাম.?মুচকি হাসি দিয়ে ফারিয়াকে বলে। ফারিয়া বলে,আপনার আবার অনুমতি লাগে নাকি.? ইয়েস ক্যাম ইন স্যার। তারপর নীল রুমের ভেতরে এসে ফারিয়ার পাশে এসে বসে।

-“তখুনি দরজায় টোকা মারে মিলি। নীল বিরক্তিকর হয়ে বলে কে। ভাইজান আমি মিলি, আপা আমাকে পাঠালো। নীল দরজা খুলে মিলিকে রুমে আসতে বলে। নীল ফারিয়াকে বলে,এটা আমাদের ছোট বোন মিলি। আমাদের বাসায়ি থাকে। তোমার কোন প্রয়োজন হলে তাকে ডেকে নিবে সাথে সাথে চলে আসবে। ফারিয়াকে সালাম দিলো মিলি। তারপর তার সাথে আলাপ করে নিলো। আজকে থেকে আমি কিন্তুু আপনাকে ভাবিজান বলে ডাকবো। ফারিয়া বললো,আচ্ছা বলেন সমস্যা নেই। আরে ভাবিজান আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন। হাজারো হলেও আমার ভাইজানের বউ।

‘নীল বলে মিলি মম তোকে কিসের জন্য পাঠিয়েছে তাই বল.? ভাইজান ভাবিকে সবকিছু চিনিয়ে দেওয়ার জন্য আমাকে পাঠিয়েছে। মিলি তোকে কষ্ট করা লাগবে না,আমি সবকিছু চিনিয়ে দিবো সমস্যা নেই। তারপর মিলি নীলের কথামতো চলে যায়। নীল আবার ফারিয়ার পাশে গিয়ে বলে,একদম কষ্ট পাবেনা। আমি অফিসের সময় টুকু বাদে তোমার সাথেই থাকবো। আর ওই সময়ে মম আর বাকিরা থাকবে। কোন সমস্যা হলে আমাকে অবশ্যই জানাবে,লজ্জার কোনকিছু নেই আমার সাথে। ফারিয়া বলে আমার শাড়ি আর গহনা পড়ে কেমন কেমন লাগছে। নীল তাকে বলে সবকিছু পরিবর্তন করে নিতে সে বাইরে যাচ্ছে। তারপর ফারিয়া গহনাগুলো খুলে রেখে দেয়। একটু পর দরজা খুলে দেয়,আর একা একা হাটার জন্য চেষ্টা করে। নীল এসে বলে,এই এই তুমি কি করছো এসব.?

“আমি আবার কী করলাম.? এই যে একা একা হাটার চেষ্টা করছো। আর কখনো একা একা হাটার চেষ্টা করবে না,তোমাকে দেখাশোনার জন্য ৪ জন মানুষ রাখা হয়েছে। ফারিয়া রুমে ভেতরে দাড়িয়ে নীল বলে,আপনি আমাকে এত ভালোবাসেন কেনো,আমি আপনার এত ভালোবাসা যে নিতে পারছি না। তোমাকে ভালোবাসার কোন কারন নেই,আমার সবকিছু জুড়েই তো তুমি আছো। তোমাকে ঘিরেই তো আমার সকল স্বপ্ন। নীলের কথা শুনে ফারিয়া নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে প্রথমবারের মতো নীলকে জড়িয়ে ধরে। ফারিয়া খুব ভালো করে জানে যে, এটা তার নিরাপদ আশ্রয়। এই বুকটা যে তাকে আবার নতুন করে শান্তির আশ্রয় দিয়েছে।

-‘এই নীল ফারিয়াকে নিয়ে একটু বাইরে আসো তো। সাদিয়া বেগমের ডাকে ফারিয়া নীলের থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। তারপর নীলকে বলে চলুন আমাকে একটু ধরুন,মা ডাকছে আমাদের। ইস নীলের খুব রাগ হচ্ছে, মম আর ডাকার সময় পেলো না,রোমান্টিক মূহুর্তেই ডাকতে হলো। আর কয়েক মিনিট পর ডাকলে কি এমন ক্ষতি হতো.? শুধু শুধু রোমান্টিক সময়টা নষ্ট করে দিলো। দূর ভালো লাগেনা। কি এত ভাবছেন.? ফারিয়ার কথা নীলের সকল ভাবনার ঘোর কাটলো। তারপর ফারিয়াকে ধরে নিয়ে যায়,সাদিয়া বেগমের রুমে,যেখানে উপস্থিত ছিলো ইমতিয়াজ চৌধুরীও।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) অনেকক্ষণ গল্প করার পর,ফারিয়া বললো,আমি একটু হাটবো। সাদিয়া বেগম বলে আমি তোমাকে ধরছি,চলো তবে। আরে মা আপনাকে শুধু শুধু কষ্ট করা লাগবে না। আমি একাই হাটতে পারবো। তারপর ফারিয়া নিজে নিজে হাটতে থাকে। আর পিছনে পিছনে নীল যেতে থাকে। এই মেয়ে এত বেশি বুঝো কেনো তুমি.? এই সময়ে একা একা হাটা অনেকটা রিস্ক। হঠাৎ মাথা ঘুরে কিংবা অন্য কোন কারনে পড়ে গেলে বেবির তো সমস্যা হবে। আপনি আছেন তো আমাকে ধরার জন্য, নীলের চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলে বলতে থাকে ফারিয়া।

‘ফারিয়ার হাতটা আলতো করে ধরে। চলুন না আমাকে একটু ওয়াশরুমে নিয়ে। মুখে একটু পানি দিবো। কেমন কেমন একটা লাগছে।

(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
_____________________

-‘নারগিস বেগমের রুমে রাতটা পার করে সামিয়া। সকাল হতেই সূর্যের আলো জানালা ভেদ কর আতিকের মুখের উপর পড়তেই,আতিক উঠে পড়ে। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে বসে থাকে মনমরা হয়ে। এদিকে সকাল সকালে সামিয়া কোমড়ে ব্যাথা নিয়ে আতিক আর নারগিস বেগমের জন্য কফি তৈরি করে। প্রথমে নারগিস বেগমকে দিয়ে আতিককে দেওয়ার জন্য তার রুমে যায়। দেখে আতিক মনমরা হয়ে বসে আছে বেডে,আর ফোনটার স্কিনের দিকে তাকিয়ে। সামিয়া আসার শব্দ শুনে আতিক সামিয়ার কাছ বরাবর আসতেই আতিক মুখ তুলে তাকাতেই সামিয়ার চোখ পরে তার চোখের দিকে। আতিকের চোখগুলো রক্ত জবা ফুলের মতো লাল টকটকে হয়ে আছে,যা দেখে সামিয়ার হাত থেকে কফির কাফটা ফ্লোরে পড়ে যায়,তার অনেকটা অংশ ছিটকে আতিকের শরীরে পড়ে। আতিক রেগে বলে,তোমার কি চোখ নেই,অন্ধ নাকি.? নিজেকেই সামলাতে পাড়ে না আবার আমাকে কফি দিয়ে ভালোবাসা দেখাতে এসেছে। সরি বলে সামিয়া ভাঙা টুকরো গুলো তড়িঘড়ি করে তুলে নেয়। টুকরো গুলো তুলে নেওয়ার সময় গরম কফির পানি তার হাতটাতে ফুসকা করে ছাড়ে। সামিয়ার চোখর অশ্রু কনাগুলো অঝোরে পড়ে টুকরোগুলো তোলার সময়। স্বামীর এমন ব্যবহারে দিনেদিনে সামিয়া ভেতরেটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে ফেলছে,যা সে কাউকে বলতে পারছে না।

-“ফোসকা পড়া হাত নিয়ে সামিয়া ওগুলো ফেলে ওয়াশরুমের গিয়ে নিজের হাতে ঠান্ডা পানি দেয়,মুখচেপে কান্না করতে থাকে,যাতে তার কান্নার শব্দ কারো কান অবদি না পৌঁছায়। সামিয়া কত বড় ভুল করছে একটা সংসার ভেঙে, তা এখন হাড়েহাড়ে টের পারছে। আমাদের মানুষের নিতিই হচ্ছে এমন,,ভুল করার পর আমরা আমাদের ভুলগুলো ঠিকই বুঝি।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) কিন্তুু ভুলগুলো এমন সময়ে বুঝতে পারি,,সেই সময়ে ভুলগুলো হাজারো চেষ্টা করলেও তা আমরা শুধরাতে পারি না। আজ আতিকের পরিবারও সবাই সবার ভুলগুলো বুঝতে পারছে,,তবে তারা হাজারো চেষ্টা করলেও এখন,সেই ভুলগুলো আর শুধরাতে পারবে না।

‘সামিয়া ফুসকা পড়া হাতে পানি দিচ্ছিলো,এমন সময়,তার নাক থেকে আবার অনবরত রক্ত পড়তে থাকে। চোখে তার রাতের মতো আধার নেমে আসে। সবকিছু তার ঘোলা ঘোলা লাগে। নিজের শরীরের সবটুকু চেষ্টা দিয়েও সামিয়া নিজেকে দাড় কড়িয়ে রাখতে পাড়েনা। মা বলে ওয়াশরুমে আচড়ে পড়ে যায়। সামিয়া এমন চিল্লানো কন্ঠ শুনে নারগিস বেগম আর আতিক উঠে যায়।

“আতিক নারগিস বেগমের রুমে গিয়ে সামিয়াকে খুজতে থাকে। আর নারগিস বেগম যায় আতিকের রুমে। দুজন মুখোমুখি হয়ে বলতে লাগে,,,,

চলবে কী.?

(আসসালামু ওয়ালাইকুম। গল্পটা পড়ে সকলে গঠনমূলক কমেন্ট করে আপনাদের সকলের মতামত জানাবেন। গল্পের ভেতরে কোনপ্রকার ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here