অবশেষে পূর্ণতা পর্ব ৪

0
774

#অবশেষে_পূর্ণতা
#লেখক_আহম্মেদ_নীল
#পর্ব_৪

-‘নীল বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে গা এলিয়ে দিয়ে সোফায় বসে আছে। তখুনি নীলের সকল ঘোর কাটিয়ে একজন সার্ভেন্ট এসে বলতে লাগলো, স্যার আপনার ডিনার রেডি। নীল সার্ভেন্টের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বললো,ওকে ইউ ক্যান গো নাও।সার্ভেন্ট টা আস্তে করে মাথা ঝাকি চলে গেলো।বেডরুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ঘড়ি খুলতেই ওড়নার সাথে ঘড়ি বেধে গেলো। তখুনি নীলের মনে পড়ে যায় ফারিয়ার কথা। ওড়নার দিকে তাকিয়েই মনে পড়ে, ফারিয়ার সেই নিষ্পাপ চেহারাটা,তার হাসিটা, মনে পড়তেই নীলের ঠোঁট দুটো আপনা আপনি হাসির রেখায় প্রসারিত হয়ে গেলো।নীল মনে মনে ভাবতে থাকে আসলেই মেয়েটা নিষ্পাপ।

‘নীল হাত থেকে ওড়নাটা বাধা থেকে খুলতেই আয়নার দিকে চোখ পড়ে নীলের।আয়নার দিকে তাকাতেই,নীল কিছুক্ষনের জন্য থমকে যায়।নিজের ঠোঁটে ঝুলে থাকা হাসিটা দেখে নীল নিজেই অনেকটা অবাক হয়ে যায়। ও হাসছে,সত্যি হাসছে। তাও আবার একটা মেয়ের জন্য। নীল খুব গম্ভীর টাইপের একজন মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলেনা আর হাসিতো দূরের কথা। লাইক সিরিয়াসলি.?নীল আবারো ভালো করে দেখলো,তার ঠোঁটের কোনে এখনো হাসির রেখা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এটা মন থেকে আসা সত্যিকারের খুশির হাসির রেখা।যেটা শুধু ওর ঠোঁটে না পুরো মুখেও ছড়িয়ে পড়েছে। (লেখক_আহম্মেদ_নীল)নীলের মনে নেই শেষ কবে সে নিজে নিজে আয়নার সামনে দাড়িয়ে এমন হাসির রেখা দেখতে পেয়েছিলো।

“নীল বেডে শুয়ে চোখ দুইটা বন্ধ করে ঘুমানোর জন্য অনবরত চেষ্টা করছে। কিন্তুু তার এর চেষ্টা বিফলে গেলে। কিছুতেই তার ঘুম আসতেছে না। ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ১ টা বাজে। নীল সবকিছু টাইম টু টাইম করে থাকে। সবকিছু টাইম টু টাইম না করলেও খাওয়া,দাওয়া,ঘুমানো আর কাজ সময়মতো করে থাকে।কিন্তুু আজ ঘুমানোর সময় পার হয়ে গেছে তবুও ঘুম আসছে না। চোখ বন্ধ করলেই নীলের সামনে ফারিয়ার মুখটা ভেসে উঠছে আর হাত বেধে দেওয়ার সময়টা মনে পড়ে যাচ্ছে। বারবার চেষ্টা করলেও ঘুমাতে পারছে না। অনেকবার বেডের এপাশ ওপাশ করছে নীল। কেমন যেনো অস্থির অস্থির লাগছে। নীল আর না পেরে অবশেষে উঠে বসে সুরেচ এর নাম্বারে কল দিলো।

-“সুরেচ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।এদিকে ওর ফোন বেজেই চলেছে সেদিকে তার বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই।ফোন না ধরায় নীল আরো বিরক্তিকর হতে লাগলো। প্রায় পাঁচবার ফোন করার পর সুরেচ এর গভীর ঘুম ছেদ করলো কলের শব্দে। (লেখক_আহম্মেদ_নীল)আধো ঘুম ঘুম অবস্থায় কলটা রিসিভ করে বলতে লাগলো,কোন হারামি রে.?রাতবিরেত কল করে আমার কাঁচা ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিলি.? মনে হচ্ছে এখন গিয়ে পিটিয়ে আসি কথাগুলো ঘুমন্ত অবস্থায় বলছে সুরেচ নীলকে।

-‘আচ্ছা আয়, মেরে যা দেখি তোর কত দম। নীলের কন্ঠ শুনে সুরেচ বেবুকের মতো ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে নীল কল করেছে। সুরেচ একটা ঢোক গিলে বলতে থাকে,নীল তুই.?তোরে আবার এত রাতে কিসে কামরালো.? তোর তো এতক্ষনে ঘুমিয়ে হা হয়ে যাওয়ার কথা। তুই কি আমারে স্বপ্নের ভেতরে ফোন দিলি নাতো.? শ্যাট আপ ইডিয়েট,কখন থেকে আবোল তাবোল বলেই যাচ্ছিস,আমাকে কিছুই বলতে দিচ্ছি না।আমিকি তোর কথা শুনার জন্য কল দিছি,আমাকেও কিছু বলতে দে। সুরেচ বললো,হ্য নীল বল।নীল একটু গলা খাকড়ি দিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো,আমার ফারিয়ার সকল ডিটেইলস চাই কালকে সকালের ভেতরে।

‘সুরেচ ভ্রু কুচকে বললো,এই ফারিয়া টারিয়া আবার ক্যাডা.?আজ সন্ধার সময় যে মেয়েটাকে গাড়িতে করে আমরা নামিয়ে দিয়ে আসলাম।ওই মেয়েটার কথা বলছি। আচ্ছা ওই মেয়েডা.?তা তুই এই মেয়েটার ইনফো দিয়ে কি করবি কথাগুলো সুরেচ নীলের দিকে ছুড়ে মারলো। নীল এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,ওর নাম ফারিয়া। তোকে যা বললাম তুই তাই কর ওত বেশি না বুঝে। আর কালকের ভেতরে পুরো ডিটেইলস দিবি কথাটা বলেই নীল কলটা কেটে দেয়। সুরেচ ব্যঙ্ক করে বিরবির করে বলতে লাগলো,সব ডিটেইলস চাই আমার ব্যাস। আরে হালুয়া নাকি.? কইলা আর হয়ে গেলো।শালা মুখে বলে দিলো আর হয়ে গেলো আর এদিকে আমার ঘুমটার দিলো তো বারোটা বাজিয়ে।

‘সকাল ৭ টা। নীল ব্রেকফাস্ট করার জন্য নিচে এলো। একটু পর সুরেচ এর আগমন ঘটলো। নীলের সামনে একটা ফাইল এনে ফেলে দিয়ে গা এলিয়ে দিয়ে বসে পরলো ধপ করে। তারপর বললো,এই নে এতটুকু সময় শুধু ওর বাসার ঠিকানা ম্যানেজ করতে পারলাম। এর বেশি কিছু ম্যানেজ করতে পারলাম না,তবে পরে সবকিছু ম্যানেজ করে দিবো চিন্তা করিস না একদম। নীল কিছু না বলে ফাইলটা হাতে নিয়ে সুরেচকে বললো,আপাতত একটুকুই চলবে। আর আমিতো আগের মতো ভার্সিটিতে যায়না,অফিস সামলাতেই এখন পুরো সময়টা চলে যায়।

“তারাতাড়ি ব্রেকফাস্ট করে নে বের হবো কথাগুলো নীল সুরেচের দিকে ছুড়ে মারলো। কোথায় বের হবো এখন আবার.? তুই তো সারারাত শান্তি করে নাকে তেল মেরে ঘুমালি। আর এদিকে আমি সারারাত শিয়ালের মতো জাইগা জাইগা মেয়েটার ইনফো জোগার করলাম। সেদিন ফারিয়াকে নামিয়ে দিয়েছিলো,বাজারে। তাই নীল সঠিকভাবে ফারিয়াদের বাসার এড্রেসটা জানতে পারিনি। তুই আবার ওই মেয়েটার প্রেমে হাবুডুবু খেলিনা তো নীল.?কথাগুলো সুরেচ নীলকে বলতে লাগলো।নীল কিছু না বলে ব্রেকফাস্ট করতে লাগলো। সুরেচ মনে মনে নীলকে কিছুটা গালি দিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে লাগলো।

-‘সুরেচের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী নীল ফারিয়ার বাসার কাছাকাছি চলে এসেছে। নীল নিজেও জানেনা সে এখানে কেনো এসেছে,আর কিইবা করতে চায়।শুধু মনে হচ্ছে ফারিয়াকে একনজর না দেখলে তার মনের ভেতরে শান্তি হবেনা। ওর ভেতরের অস্থিরতা দূর হবেনা। সুরেচ ফারিয়ার বাড়ির কিছুটা সামনে গাড়ি থামিয়ে দিয়ে বললো,এসে পড়েছি। এখন কি বাসার ভেতরে যাবি.?নীল কি বলবে ও তো নিজেই জানে এখন কি করবে।এখানে চলে তো এসেছে,কিন্তু এখন একটা অপরিচিত বাসার ভেতরে কিভাবে যাবে.?আর বলবেই বা কি.? চরম একটা কঠিন সিচুয়েশন এর ভেতরে পড়ে গেলো। নীল গাড়ি থেকে নেমে বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছে,ফারিয়াকে কোথাও দেখতে পায় কিনা সেই আশায়।সুরেচ মনে মনে বলতে লাগলো,কি দিন এসে গেলো নীল। শেষমেশ কিনা রাস্তার ফোর টুয়েন্টি পোলাপানদের মতো মেয়েদের স্টক করা শুরু করলি.? যেই নীল আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকায় পর্যন্ত নি। যার জন্য পুরো ভার্সিটির মেয়েরা লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকে তার সাথে একটিবার কথা বলার জন্য। আর শেষে কিনা সেই নীল একটা মেয়ের জন্য রাস্তায় পাহারা দিচ্ছে। হে খোদা এটায় দেখার হয়তো বাকি ছিলো। এই মেয়েটার জন্য না জানি আর কি কি করা লাগবে.?

-‘হঠাৎ কোথাথেকে আসা হাসির ঝলকানির শব্দে নীলের সকল ভাবনার ছেদ কাটলো।নীল পাশে তাকিয়ে দেখলো পাশে থাকা একটা ছোট মাঠের ভেতরে কিছু বাচ্চারা খেলাধুলা করছে। সেখান থেকে ভেসে আসছে একটা মেয়ের হাসি।নীল কোনকিছু না ভেবেই একপা দুপা করে সেদিকে অগ্রসর হতে লাগলো। মাঠের ভেতরে পৌঁছে দেখতে পেলো কাঙ্ক্ষিত সেই চিরচেনা মানুষটি বসে বসে বাচ্চাদের খেলা দেখছে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে। আর সেই চুলের উপর সূর্যের আলো উপসে পড়ছে। সূর্যের আলোতে চুলগুলো অপরুপ সুন্দর দেখাচ্ছ। তা দেখে মূহুর্তে থমকে গেলো নীল। তার হাসি দেখে বুকের বাম পাশে কোন ঘুমন্ত কিছু জেগে উঠে লাফাতে শুরু করলো।যেনো সে আর বুকের ভেতর থাকতে রাজি না। নীল ফারিয়ার দিকে অপরুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে খেয়াল করলো,কাল রাত থেকে ওর ভেতরে যে অস্থিরতা কাজ করছিলো, এখন তার বিন্দু পরিমানও নেই। বরং সেখানে এখন একরাশ প্রশান্তি আর ভালোলাগা কাজ করছে। নীলের ঠোঁট জোড়ায় ভেসে উঠলো সেই ভালোলাগার একরাশ হাসির ঝলকানি। তাহলে কি নীল নিজের অজান্তেই ফারিয়ার প্রেমে পড়ে গেলো.?

_________

-‘সকাল সকাল আতিক ব্রেকফাস্ট করার জন্য বসে পড়ে।আতিত এর মা নিজের ছেলের জন্য নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে আসে। আতিক তার মাকে বলে, সামিয়া তো আছেই(আতিক এর দ্বিতীয় বিয়ে করা নতুন বউ)।তুমি করতে গেলে কেনো.?

“সামিয়া এখন এই বাড়ির নতুন বউ। তাকে দিয়ে এখনো কিছু করানো যাই নাকি.? তাছাড়া আমাদের বাড়ি তো কাজের লোক আছে। আতিক কিছু না ভেবে পুনরায় ব্রেকফাস্ট করায় মনোযোগ দিলো।সামিয়া ছোট একটা স্কাট পড়ে আতিক এর সামনে এসে বলে,আতিক আমি রেডি। তুমি আমাকে ভার্সিটিতে নিয়ে যাবে না.? তুমি এসব ড্রেস পড়ে বের হবে কথাটা আতিক সামিয়াকে বলে।

(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
-‘আতিক এর প্রশ্নে সামিয়া বললো,কেনো কোন সমস্যা.? বিয়ের আগে তো আমি এসব ড্রেস পড়তাম।তোমার সাথে কত জায়গায় গেছি ঘুরতে। আপনাদের তো বলাই হয়নি ফারিয়ার সাথে থাকাকালিন সময় আতিক সামিয়ার সাথে রিলেশন এ জড়ায় ,এবং ৮ মাসের মাথায় আতিক ফারিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে সামিয়াকে বিয়ে করে। এর পেছনের মূল কারন ছিলো,ফারিয়ার বাচ্চা হচ্ছিল না,আর তার মা থাকে কুটকথা শুনাতো। দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য আতিতকে লেলিয়ে দিতো তার মা। আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছে যারা ছেলের সংসার ভেঙে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে থাকে।এরা মা নামের কলঙ্ক।

-“আহ আতিক,মেয়েটাকে পড়তে দে।আতিক তার মায়ের কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। আর এদিকে সামিয়া বলতে লাগলো,জানেন মা,আতিক না কেমন যেনো চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন শুধু মুড অফ করে রাখে। কেনো আতিক কি হয়েছে তোর.?(মা) তেমন কিছু না মা। অফিসের কাজে পেশার যাচ্ছে তাই আর কি। আমার খাওয়া হয়ে গেছে। সামিয়া চলো। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।

#লেখক_আহম্মেদ_নীল)
‘আতিক কথা বলে গাড়ির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। আর সামিয়া পিছনে পিছনে যেতে শুরু করে। এদিকে আতিক এর মা পড়ে যায় চিন্তায়।তিনি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে ছেলের মনে কি চলছে। যদি তার আন্দাজ ঠিক হয় তাহলে তো অনেক বড় সর্বনাশ।

চলবে কী.?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here