#পরিপূর্ণতা
#৩য়_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী
অহনা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে এখনো বুঝতে পারছে না তার মা কেন তার গায়ে হাত তুলল। ভয়ে কিছু জিজ্ঞাসাও করতে পারছে না। কারণ অহিমা বেগম তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ছিল।
অহনা কিছু জিজ্ঞাসা না করলেও মুক্ত আর চুপ থাকতে পারে না৷ সে অহিমা বেগমকে প্রশ্ন ছু*ড়ে দেয়, খালামনি তুমি অহনাকে মা*রলে কেন?
অহিমা বেগম বলেন, মে*রেছি ঠিক করেছি। দরকার পড়লে আবার মা*রব। এই মেয়ের জন্য আমার মান সম্মান সব নষ্ট হয়ে গেছে। আর মুক্ত তুই, তোর থেকে অন্তত এটা আশা করিনি। বাসর রাতে দরজা ধরলি ভালো কথা তো টাকা না নিয়ে বউয়ের গয়না নিলি ছি। আর অহনা তুই আত্মীয়দের সামনে আমার মান সম্মান নষ্ট করে দিলি। আমাদের কি এত অভাব পড়েছে যে টাকার জন্য গহনা নিতে হবে?
মুক্ত এবার পুরো ঘটনাটা বুঝতে পারে। তার নতুন ভাবি ও নিলা মিলে সবাইকে বলেছে সবকিছু। যার কারণে এত ঘটনা ঘটে গেছে। মুক্ত নিজের পকেট থেকে তার নতুন ভাবির গহনা বের করে তার হাতে দিয়ে বলে, এই নাও ভাবি তোমার গহনা। আমি শুধু মজা করে এগুলো নিয়েছিলাম। তোমার গহনা বিক্রি করে আইফোন কেনার জন্য নয়। আমার আগে থেকেই টাকা জমানো ছিল। সেই টাকা দিয়েই আইফোন কিনেছি। এমনিতেও কালকে তোমার গহনা তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম। এত সিন ক্রিয়েট করার দরকার ছিল না। অহনা তুমি চলো আমার সাথে। আর খালামনি তোমাকেও বলছি অন্যের কথায় নিজের মেয়েকে কষ্ট দিও না। এমনি তো অহনা বলে না যে তোমার থেকে চলে আসতে পারলে বাঁচে। তুমি সবসময় ফুফার রাগ অহনার উপর তুলো। ফুফা তোমায় একা রেখে চলে গেছে এটা কি অহনার দো*ষ? অহনা তো তোমারও মেয়ে।
অহিমা বেগম আর কিছু বলতে পারেন না। খুব কষ্ট হয় তার। তিনি নিজেও চান না খারাপ ব্যবহার করতে। অহনাকে যথেষ্ট ভালোও বাসেন তিনি। কিন্তু মাঝে মাঝে তাকে দেখলে নিজের স্বামীর কথা মনে পড়ে যায়। তাই অহনাকে সামান্য কারণেই বকাবকি করেন এমনকি গায়ে হাতও তোলেন।
মুক্ত অহনাকে নিয়ে একটি ঘরে যায়। অহনাকে বলে, তুমি এই রুমে থাকো৷ কোন দরকার হলে আমায় ফোন করো আমি পাশের রুমে আছি। আর একদম কাঁদবে না, কাঁদলে তোমাকে একটুও ভালো লাগে না। মনে হয় শ্যাওলা গাছের পেত্নী।
অহনা হেসে দেয়। অহনার হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় মুক্ত। মনে মনে বলে, তোমার মুখে এই হাসি সবসময় দেখতে চাই আমি। তোমাকে সুখী করার জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতেও রাজি।
অহনাকে সেখানে রেখে নিজের মায়ের রুমে চলে যায় মুক্ত। মহিমা বেগম সবেমাত্র ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন মুক্ত এসে বলে, ভেতরে আসতে পারি আম্মু?
হ্যাঁ আয়। বল কি বলবি।
আব্বু এখনো আসেনি?
না। বিয়েবাড়ির কত কাজ। সব করতে তো দেরি হবে।
ও একটা কথা বলতে আসলাম। আমি আর খালামনির ভরসায় অহনাকে রাখার সাহস পাচ্ছি না। খালামনি ধীরে ধীরে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আমি অহনার দাদির কাছে শুনেছি, খালা কারণে অকারণে অহনার গায়ে হাত তোলে। এই অবস্থায় অহনাকে বেশিদিন ভালো রাখা যাবে না। তুমি কিছু করো আম্মু। অহনাকে যতদ্রুত সম্ভব এখানে নিয়ে এসো।
আমিও জানি সেটা। আর তো মাত্র কয়েক’টা দিন। অহনার এইচএসসির রেজাল্ট আসুক তারপর ওকে এখানে নিয়ে আসব। যদি পাবলিকে চান্স পায় তাহলে প্রাইভেটে পড়াবো। তবুও ওকে নিয়ে আসব।
আচ্ছা তাহলে আমি যাই।
পরের দিন সকালেই অহিমা বেগম সিদ্ধান্ত নেন আজই তিনি অহনাকে নিয়ে চলে যাবেন। মহিমা বেগম অনেক মানানোর চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন। অহিমা বেগম মূলত যেতে চাইছেন কারণ তার শাশুড়ী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্বামী অন্য আরেকটা মহিলার সাথে পালিয়ে যাওয়ার সময় শাশুড়িই অহিমা বেগমের একমাত্র সহায় সম্বল। তার শ্বশুর একজন সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন। সেই কারণে তার মৃত্যুর পর তার শাশুড়ী যে পেনশনের টাকা পায় সেই দিয়ে সংসার চলে।
অহিমা বেগম নকশিকাঁথা সেলাই করেন। এভাবেই তাদের সংসার চলে। অহিমা বেগম ও অহনাকে এগিয়ে দিতে যায় মুক্ত। তাদের গিয়ে টাঙ্গাইলের বাসে চড়িয়ে দিয়ে চলে আসে।
❤️
আজ অহনার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। সে আর্টস থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। নিজের রেজাল্ট নিয়ে খুব খুশি সে। এসএসসিতে সাইন্স নিয়ে এ প্লাস পায়নি সে। তাই ইন্টারে এসে আর্টস নিয়েছিল সে। এবার ভালো রেজাল্ট করতে পেরে আফসোস হচ্ছে আগে যদি মায়ের কথা শুনে আর্টস নিত তাহলে ভালো হতো। তা না জেদ করে সাইন্স নিয়েছিল।
অহনা তাকায় আদিলের দিকে। আজ অহনারা সব বন্ধুরা মিলে নিজেদের ভালো রেজাল্ট সেলিব্রেট করছে। সেখানে আদিলও এসেছে। অহনা ভেবে রেখেছে আজই আদিলকে প্রপোজ করবে। তাইতো একটি গোলাপ ফুলও নিয়ে এসেছে সে। আজ এই ফুল দিয়েই প্রপোজ করবে।
অহনা যখনই প্রপোজ করতে যাবে তখনই আদিল হঠাৎ করে সবার সামনে অন্য একটি মেয়েটিকে প্রপোজ করে। মেয়েটিকে নাকি অনেকদিন থেকে পছন্দ করে আদিল। অনেকদিন থেকে পটানোর চেষ্টা করছে। তাই আজ সরাসরি প্রপোজ করে দিল। মেয়েটাও আজ আদিলকে আই লাভ ইউ টু বলে দিল। সমস্ত বন্ধুরা মিলে আনন্দে মেতে উঠল। সবার সামনে অহনাও মেকি হাসল। কিন্তু গোপনে অশ্রু বিসর্জন করে। তার বুক ফে*টে যাচ্ছিল আদিলকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখে।
সেদিন বাইরে থেকে ফিরে বাড়িতে এসে দরজা লাগিয়ে কাদতে থাকে অহনা। আদিল অন্যকারো হয়ে গেছে এটা সে মানতে পারছিল না। নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না সে। তাই অনেক বড় একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। আদিলকে যে করেই হোক নিজের করে নেবে। প্রয়োজনে ঐ মেয়ের সাথে আদিলের ব্রেকাপ করিয়ে নেবে তাও।
এরপরের দিন, অহনা সরাসরি আদিলের সামনে গিয়ে তাকে প্রপোজ করে। আদিল রেগে গিয়ে বলে, তুমি জানো না আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। তবু কেন আমায় প্রপোজ করছ?
তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে তো কি ব্রেকাপ করে নেও। বিশ্বাস করো আমার থেকে বেশি ভালো তোমাকে আর কেউ বাসতে পারবে না।
এসব নাটক অন্য কোথাও গিয়ে করো অহনা। আমি তোমাকে ভালোবাসিনা বুঝেছ?
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আদিল। বলো কি ভাবে প্রমাণ দিতে হবে। তুমি যা বলবে আমি তাই করব। তুমি বললে নিজের জীবনও দিয়ে দেবো।
আদিল বলে, আচ্ছা আমি বললে জীবন দিতে পারো। তাহলে যাও আমাকে যদি সত্যি ভালোবাসো তাহলে মেইন রোডের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াও। তাহলে বুঝব তুমি আমায় সত্যিই ভালোবাসো।
আদিলের কথা শুনে অহনা সত্যিই মাঝরাস্তায় গিয়ে দাঁড়ায়। আদিল ও তার বন্ধুরা সবাই অহনাকে সরে আসতে বলে কিন্তু অহনা সরে আসে না। হঠাৎ একটি গাড়ি এসে অহনাকে ধা*ক্কা মা*রে। মুহুর্তেই রাস্তা রক্তে ভেসে যায়। আদিল ও তার বন্ধুরা পালিয়ে যায়। কিছু মানুষ এসে অহনাকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
অহনার পরিবারের কাছে খবর পৌঁছে যায়। অহনার মা ও দাদি ছুটে আসে। মুক্ত তার মায়ের কাছে খবরটা শোনামাত্রই ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়।
অহনার রক্তের প্রয়োজন ছিল। মুক্ত টাঙ্গাইলে এসে বিভিন্ন যায়গায় কথা বলে রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়। অহনার অবস্থা তবুও অবনতি হয়। মুক্ত কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর মাধ্যমে জানতে পারে অহনা নাকি স্বেচ্ছায় রাস্তার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এটা শুনে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
#চলবে