পরিপূর্ণতা পর্ব ২

0
1364

#পরিপূর্ণতা
#২য়_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী

বিয়ে বাড়িতে পৌছে অহনা দেখে ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে গেছে। এখন শুধু বিদায় বাকি। অহনার কান্না পেয়ে যায়৷ কোথায় ভেবে এসেছিল বিয়ে বাড়িতে এসে কব্জি ডুবিয়ে খাবে তা না এখন খালি মুখে ফিরতে হবে। মুক্ত পৌঁছে বুঝতে পারে অহনার মনোভাব। তাই মুক্ত পাত্রীর মায়ের সাথে কথা বলে অহনার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। পাত্রীর মা অহনা ও মুক্তকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খেতে বসায়।

খাবারে বিরিয়ানির বদলে ভাত দেখে মুক্ত পাত্রীর মাকে জিজ্ঞাসা করে, ভাত দিয়েছেন কেন? বিরিয়ানি কি নেই?

না বিরিয়ানি তো শেষ হয়ে গেছে।

আমরা বিয়েবাড়িতে ভাত খেতে আসিনি। বিরিয়ানি যখন নেই তখন আমরা খাবো না। অহনা চলো আমরা যাই।

অহনার খুব খিদে পেয়েছিল। তাই সে বলে, আমি বরং ভাতই খাই৷

তোমাকে উঠতে বলেছি ওঠো। আমি এখন তোমাকে হাজী বিরিয়ানি খাওয়াবো। চলো এখন।

অগত্যা অহনা খাবার ছেড়ে উঠে আসে। পাত্রীপক্ষের সবাই এতে বেশ অপমানিত বোধ করে। কথাটা পাত্রীর বোন নিলার কানে যায়। নিলা এই অপমানের কথা শুনে খুব রেগে যায়। নিজের এক কাজিনের কাছে জানতে চায়, বল কোন ছেলে খাবার ছেড়ে উঠে গেছে। আমি যদি আজ তার মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিতে না পারি তাহলে আমার নামও নিলা নয়।

নিলার কাজিন তাকে মুক্তর দিকে ইশারা করে। মুক্তকে দেখে নিলা অপলক তাকিয়ে থাকে। এত হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে সে নিজেকে সামলাতে পারে না। প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভুলে গিয়ে মুক্তর সামনে এসে বলে, আসসালামু আলাইকুম বেয়াই সাব। আমি হলাম আপনার একমাত্র বেয়াইন। মানে আপনার নতুন ভাবির ছোট বোন।

মুক্ত নিলার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে, তো আমি কি করব? অহনা চলো আমার সাথে।

নিলা বেশ অপমানিত বোধ করে। তবে সেটা প্রকাশ না করে বলে, এভাবে কোথায় যাচ্ছেন? আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। আমি এক্ষুনি বিরিয়ানি নিয়ে আসছি। খেয়ে তারপর যান।

নিলা তার চাচাতো ভাইকে বলে বাইরে থেকে বিরিয়ানি কিনে আনে। সেগুলো এনে মুক্ত ও অহনাকে দেয়। দুজনে তৃপ্তি করে বিরিয়ানি খায়। নিলা বুদ্ধি করে মুক্তর বিরিয়ানিতে পেট ব্যাথার ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে বিরিয়ানি খাওয়ার পর থেকে মুক্তর পেটে ব্যাথা শুরু হয়।

নিলা মনে মনে বলে, একদম ঠিক হয়েছে। বিরিয়ানি খাওয়ার শখ আজ জন্মের মতো মিটিয়ে দেবো। আর এমনিতেও আপুর পরে আমি যাবো ঐ বাড়িতে তোমার বউ হয়ে। তারপর তোমার এই এটিটিউড বের করে দেব মুক্ত সাহেব।

মুক্তর পেট ব্যাথার কথা শুনে অহনা বিচলিত হয়ে যায়। নিজের ব্যাগ থেকে ওষুধ এনে মুক্তকে দিয়ে বলে, এই ওষুধটা খাও পেট ব্যাথা ঠিক হয়ে যাবে।

মুক্ত ওষুধটা খেয়ে নেয়। যার ফলে তার পেট ব্যাথা সত্যিই অনেক কমে যায়। এরপর আসে বিদায়ের পালা। মহিমা বেগম মুক্ত ও অহনাকে বর বউয়ের সাথে গাড়িতে যেতে বলে। তারা রাজি হয়ে যায়।

অন্যদিকে নিলা জেদ ধরে সে তার বোনের সাথে তার শ্বশুর বাড়ি যাবে। নিলার জেদের কাছে হেরে তার মা-বাবা তাকে যেতে দিতে রাজি হয়। নিলা বিজয়ীর হাসি হাসে।

বর বউ সামনে বসে। মুক্ত, অহনা আর নিলা পেছনের দিকে বসে। নিলা মুক্তর পাশে বসে ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে। যার কারণে মুক্ত অহনাকে বলে, তুমি মাঝখানে এসে বসো। আমি জানালার পাশে বসছি।

অহনা বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারে না। মুক্ত নিজের এক বন্ধুকে ফোন করে বলে, তুই আমার বাইকটা নিয়ে চলে আসবি। পাশেই একটি গ্যারেজে রেখে আসছি।

নিলা মুক্তর থেকে পাত্তা না পেয়ে মুখ ভার করে বসে থাকে। অহনা বসে বসে বোর হচ্ছিল জন্য ফোন বের করে একটি কোরিয়ান ড্রামা দেখতে থাকে। নিলার নজর যায় সেদিকে। সে অহনাকে বলে, এটা ট্রু বিউটি ড্রামা না? আমার খুব প্রিয় ড্রামা। আমিও দেখব।

হ্যাঁ, এটা ট্রু বিউটি। তুমিও দেখো।

মুক্ত একপর্যায়ে তাদের ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমরা এসব কি বিটিএসের ভিডিও দেখছ?

অহনা বলে, এটা বিটিএসের ভিডিও নয়। এটা একটা কোরিয়ান ড্রামা। তোমরা ছেলেরা এই সাধারণ জিনিসটাই বোঝো না।

মুক্ত ফোন থেকে চোখ সরিয়ে নিজের কাজে মন দেয়। অহনা নিলার সাথে মিলে গল্পগুজবে ব্যস্ত হয়ে যায়।

একসময় গাড়ি এসে পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। সবাই এক এক করে গাড়ি থেকে নেমে যায়। মহিমা বেগম বরণ ডালা নিয়ে এসে নতুন বউকে বরণ করে ঘরে তোলে। এইসময় নিলা কল্পনা করে একদিন হয়তো তাকেও মহিমা বেগম এভাবে বরণ করে বাড়ির ছোট বউ করে ঘরে তুলবে।

সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। বরণের পর বর বউকে বাসর ঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়৷ এইসময় অহনা মুক্তকে বলে, মুক্ত ভাইয়া চলো আমরা বাসর ঘর আটকে দাঁড়াই। আজ তোমার বড় ভাইয়ের থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে তবে দম নেবো।

হ্যাঁ ঠিক আছে চলো।

মুক্ত ও অহনা বাসর ঘরের গেট আটকে দাঁড়ায়। মুক্তর বড় ভাই আসতেই অহনা বলে, ভাইয়া এভাবে তো ভেতরে যাওয়া যাবে না। আগে এক লাখ টাকা দাও তারপর ভেতরে ঢুকতে দেবো।

কথাটা শোনামাত্রই মুক্তর বড় ভাই অজ্ঞান হয়ে যায়। মুক্ত পানি ছিটিয়ে তার জ্ঞান ফেরায়। ততক্ষণে নতুন বউ বাইরে চলে এসেছে।

মুক্ত তার নতুন ভাবিকে বলে, ভাবি তোমার কপালে অনেক দুঃখ আছে৷ আমার ভাই যা কিপটা। মাত্র এক লাখ টাকা দিতে বলেছি জন্য অজ্ঞান হয়ে গেল।

ভাই এমন করিস না। আমি এক লাখ টাকা কোথায় পাব।

আমি কোন কথা শুনব না ভাইয়া৷ যদি বাসর করতে চাও তাহলে এক লাখ টাকা দিতেই হবে।

মুক্তর নতুন ভাবি নিজের হাতের গহনা খুলে দিয়ে বলে, এই গহনাগুলো বিক্রি করে এক লাখ টাকা পেয়ে যাবে। এখন তোমার ভাইয়াকে যেতে দাও।

মুক্ত গহনাগুলো নিয়ে বলে, আচ্ছা ভাবি ধন্যবাদ। আমরা এখন যাচ্ছি। অহনা চলো আমার সাথে। এই গহনাগুলো বিক্রি করে আইফোন কেনা যাবে।

অহনা ও মুক্ত খুশি হয়ে চলে আসে। অহনা নিজের ফোনের কথা মনে পড়ে। তাই সে বলে, মুক্ত ভাইয়া আমার ফোন তো নিলার কাছে।

যাও গিয়ে নিয়ে এসো।

তখনই নিলা কান্না করতে করতে অহনার কাছে এসে বলে, আপি তোমার ফোন আমার হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে।

সাথে সাথে অহনা মুখ কালো করে নেয়। মুক্ত নিলাকে কথা শুনিয়ে দেয়। অহনা তখন বলে, ওকে বোকো না। আমি ফোন ঠিক করে আনব।

এত রাতে তুমি একা যেতে পারবে?

না একা কেন যাবো। তুমি চলো আমার সাথে।

হ্যাঁ, আমারই আইফোন কেনা হয়ে যাবো চলো যাই।

তারা দুইজনে মিলে বাইরে বেরিয়ে যায়। একটি ফোন ভালো করার দোকানে গিয়ে ফোন ভালো করতে দেয়। মুক্ত একটা আইফোন কিনে নেয়। আইফোনে অহনার সাথে একটা সেলফি তুলে নেয় মুক্ত। ততক্ষণে অহনার ফোনও মেরামত হয়ে যায়। অহনা ফোন নিয়ে ফিরে আসে বাড়িতে।

বাড়িতে আসামাত্রই অহিমা বেগম অহনাকে থা’প্পড় মা’রে।
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here