#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam
যুথি আসো তোমাকে তোমার দাদির কাছে দিয়ে আসি।
কথাটা বলেই ইরহান রুমে ঢুকে যুথির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
যুথির রা’গ উঠে যায় ইরহানের মুখে কথাটা শুনেই।চিললিয়ে বলে,,কি বললেন আপনি?..
ওরে বাবা আস্তে এতো রে’গে যাচ্ছো কেন যুথি রানী?
— রাগার মতো কথা বলবেন তো রাগবো না তো কি করবো?
কথাটা বলেই যুথি তার কাজে আবার মন দেয়। এখনো ফুপাচেছ মেয়েটা।ইরহান যুথির মুখের দিকে তাকিয়ে রয়।
মাত্রই ইরহান রুমে আসে।দরজার পাশে এসে দেখে যুথি এক হাতে চোখের পানি মুছে আর আরেক হাতে সব কিছু গোছগাছ করে ব্যাগে নিচ্ছে।
তাই ইরহান ইচ্ছে করেই যুথিকে তার দাদির কাছে দিয়ে আসার কথা বলেছে যুথিকে রাগানোর জন্য।
যুথি এক মনে তার কাজ করে চলেছে।ইরহানের দিকে ফিরে ও তাকাচ্ছে না। আর না ইরহানের সাথে কোনো কথা বলছে।ইরহান বুঝতে পারছে যুথি তার সিধান্তে প্রচুর কষ্ট পেয়েছে। সাথে রেগে ও আছে।তাই তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অশ্রুরা এসে চোখের কোণে জায়গা করে নিয়েছে।
ইরহান যুথিকে ডাকে,,যুথি এদিকে এসোতো কথা আছে।যুথি তবুও ইরহানের কথা শুনে না।না ডাকে,সারা দেয় সে তারাতাড়ি তার কাজ করছে।
ইরহাম যুথির একটা হাত টান দিয়ে যুথিকে নিজের সামনে এনে দাঁড় করায়।যুথি ইরহানের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য মো’চড়া মো’চড়ি করে কিন্তু পারে না। প্রায় অনেক সময় করার পর ও যখন ছাড়াতে পারলো না তখন হা’ল ছেড়ে দেয়।চুপ করে মুখ টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখে।
যুথির কা’ন্ডে ইরহান মিটমিটিয়ে হাসে। কি হলো যুথি রানী শক্তি শেষ? এটুকুতেই হাঁপিয়ে হা’ল ছেড়ে দিলে?
দেখলে তো তোমার বরের হাতে অনেক শক্তি। তোমার মতো পুচকে মেয়েকে কিছু একটা করে ঠিক খাওয়াতে পারবে।
ইরহান যুথির থুতনিটা ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,,যুথি রানী আমার দিকে তাকাও। কথাটা বেশ সিরিয়াস ভাবেই বলে।এতোসময় ইরহানের কথায় রসিকতা থাকলেও এখন নেই। যুথি ইরহানের দিকে চোখ তুলে তাকায়।
আমার উপর কি খুব রা’গ হচ্ছে?
— জানিনা।
— রা’গ হলে এই যে এই অ’ধম তোমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, যা শাস্তি দেওয়ার দিয়ে নিজের রা’গ কমিয়ে ফেলো।নিজের ভিতর রা’গ পোষে রাখতে নেই।এটা খুবই মা’রাত্মক জিনিস। একটা মানুষকে ধ্বংস করতে তার রা’গ ই যথেষ্ট।
— আপনাকে আমার রা’গ নিয়ে না ভাবলেও চলবে।কি বলবেন বলুন।
আমি যে সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি না? অনকে ভেবে চিন্তে নিয়েছি।এমনিতেও এই লোক গুলোর সাথে থাকলে ভালো মানুষ ও অসুস্থ হয়ে যাবে। মানসিক ভাবে এক সেকেন্ডের জন্য ও এদের জন্য শান্তি পাবো না। এরা অসুস্থ মস্তিষ্কের লোক এদের সাথে আমাদের একদম থাকা ঠিক হবে না। এই লোক গুলো টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না। সম্পর্কের কোনো মূল্য বুঝে না এরা। অতিরিক্ত টাকা লোভী মানুষ গুলো খুব ভয়ংকর হয়। এরা টাকার জন্য কোনো পা’প কাজ করতে ও পিছ পা হয় না।
আমি চাইলে অনেক কিছু করতে পারতাম। কিন্তু এসব করতে আমার মন সায় দিচ্ছে না। এরা অনেক বুদ্ধি করে সব কিছু করেছে। আমি যেই একাউন্টে টাকা পাঠাতাম, কিছু দিন আগে কি একটা সমস্যার কথা বলে একাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে আরেক একাউন্টে জমা রেখেছে। জায়গা জমি সবই তো ঐ মহিলার নামে করেছে। এসব করতে গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো।তাও সব ফিরে পেতাম কি না সঠিক জানা ছিলো না। এসব করতে ও,অথবা টাকার প্রয়োজন। টাকা ছাড়া মানুষ এখন এক পা ও এগুবে না।
এতোদিন ভালোবাসা পাওয়ার আশায় এতোটাই কাতর ছিলাম এদের ছ’লনা ধরতে পারি নি।
আমার বাবা হয়তো গরিব ছিলেন যুথি কিন্তু আমাদের গ্রামে উনার অনেক সম্মান ছিলো।সকলের প্রিয় ছিলেন তিনি।আমার বাবার কথার মূল্য ছিলো গ্রামের মানুষের কাছে। এসব করলে মানুষ কি বলবে? আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্মান সব ধুলোর মিশে যাবে।ঐ লোকটার তো কোনো দোষ নেই।
আমার ভাবতে ও ঘৃ’ণা লাগছে ঐ অমানুষ গুলোর শরীরে আমার বাবার র/ক্ত বইছে।আমার বাবার সন্তান হয়েও দুইটার একটা ও আমার বাবার মতো হয়নি।সব ঐ তাছলিমা বানুর বৈশিষ্ট্য পেয়েছে।
এদের মুখ দেখতে ও আমার ইচ্ছে করছে না যুথি।আমি এখানে থাকলে দ’ম বন্ধ হয়ে ম’রে যাবো। আমার এসব কিছু চাই না। আমার বিলাসিতা লাগবে না।আমার শান্তি দরকার।
আমি কোনো প্রতিবাদ না করায় আমাকে তোমার কা/পুরুষ মনে হচ্ছে তাই না? খারাপের সাথে আমিও খারাপ হতে চাই না। কেউ কখনো কাউকে ঠকিয়ে বেঁচে যায় না। (লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম)একদিন না একদিন সেটার ফল ঠিক ভোগ করবে। আমি সব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম।উনিই এদের শাস্তি দিবে হয়তো দুইদিন পর নয়তো দুইবছর পর। কোনো না কোনো দিন ঠিক শাস্তি পাবে।
ওদের ভালো করে ডানা ঝাপটে উড়তে দাও যুথি।একদিন ঠিক ডানা ভেঙে পরবে।একটা কথা আছে জানতো,,”,পিপীলিকার পাখা গ’জায় মরিবার তরে।”
যুথি ইরহানের কথা গুলো মন দিয়ে শুনেছে। মনে মনে ভাবে লোক টা এতো ভালো কেন? তাই ঠিক করে নেয় ইরহান যা বলবে তাই সে মেনে নিবে। সবাইতো আর প্রতিশোধ পরায়ণ হয়না।
তাই যুথি চুপচাপ আবার সব গোছানোর কাজে মন দেয়।
——————————-
এই দিকে তাছলিমা বানু কে ঘিরে গোল বৈঠক বসিয়েছে বাড়ির সকলে।
ইশান হাতে মলম লাগাতে লাগাতে বলে,,অবশেষে বিনা ঝামেলায় আ’পদ বিদেয় হতে যাচ্ছে। আমি ভাবলাম সহজে সব ছেড়ে দিতে রাজি হবে না।
হয়তো বুঝে গেছে ঝামেলা করে কোনো লাভ নাই।তাই চুপচাপ চলে যাচ্ছে। এখন শুধু টাকা দিয়ে আয়েশ করে জীবন চলবে।
তাছলিমা বানু চুপচাপ বসে আছে। কোনো কথা বলছে না।
ইমন তাছলিমা বানুকে লক্ষ করে বলে,,,মা তুমি চুপচাপ বসে আছো কেনো? তোমার তো এখন খুশি হওয়ার কথা।
তাছলিমা বানু ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বলে,, তোরা এবার নিজের রুমে যা আমি একটু বিশ্রাম নিবো।
তাছলিমা বানুর কথায় সকলেই সম্মতি জানিয়ে রুম থেকে চলে যায়। তাছলিমা বানু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।
———————————–
যুথির গোছগাছ সব শেষ। তেমন কিছুই নেওয়ার নেই কিইবা নিবে। নিজের ২ টা জামা,,ইরহানের জামা কাপড় ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র কয়েকটা।
যুথি সব ঠিক ঠাক মতো নিয়েছো?
হুম।
আমার পাসপোর্ট আর কাগজপত্র গুলো ভালো করে আবার চে’ক করে দেখো নিয়েছো কিনা। পরে যেনো আর এখানে পা রাখতে না হয়। আমি আর চাই না এখানে পা রাখতে।
যুথি আবার সব চে’ক দিয়ে বলে নিয়েছি।
ওকে তো চলো যুথি রানী এবার বেরিয়ে পরি।কথাটা বলেই ইরহান হাত বাড়িয়ে দেয়।
যুথি ইরহানের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,, কোথায় যাবো আমরা বোকা পুরুষ?
দেখি কোথায় যাওয়া যায়। ভাবতেছি গাছ তলা গিয়ে থাকবো বউকে নিয়ে।তারপর খড়কুটো জোগাড় করে বাসা বানাবো “খড়কুটোর_বাসা”। দারুণ হবে না ব্যাপারটা?
আমার আর যুথি রানীর “খড়কুটোর বাসা “।
যুথি ইরহানের দিকে অপলকে তাকিয়ে রয়।
ইরহান যুথির চাহনি দেখে বলে,,কি ব্যাপার তুমিকি আমার খড়কুটোর বাসা তে থাকতে রাজি নও? বলতে পারো তাহলে তোমাকে তোমার দাদির কাছে পাঠিয়ে দেই?
যুথি ইরহানের পেটে চিমটি কেটে বলে,,,একদম মে’রে দিবো বোকা পুরুষ। আমাকে কোথাও দিয়ে আসার চিন্তা ও মাথায় আনলে। বোকা পুরুষ কোথাকার।
সব সময় আপনার বোকামি আমি সহ্য করবো না বলে দিলাম।
ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,,
“আমার বোকামিতে যদি তোমার ভালোবাসার শাসনগুলো পাওয়া যায় তাহলে আমি সারাজীবন তোমার বোকা পুরুষ হয়ে থাকতে রাজি।”
আমার বোকা পুরুষ হয়ে আমার কাছেই থাকেন।এরপর অন্য কারো কাছে বোকামির পরিচয় দিলে মাথা ফাটিয়ে দিবো।আপনার এই দয়ালু মনোভাব যেনো আজই শেষ হয়।এরপর নিজের ব্যতীত অন্য কারো কথা আগে ভাববেন না।
ইরহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
তারপর ইরহান এক হাতে ব্যাগ আরেক হাতে যুথির হাত আবদ্ধ করে বেরিয়ে আসে সেই বাড়ি থেকে।
#চলবে,,,,,,,,,