গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে দ্বিতীয় খন্ড (পর্ব ৭)

0
471

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৭ (২য় খণ্ড)

চারিদিকে ধুলো-ময়লা আর মাকড়সার জালের আধিক্য লক্ষ্য করা গেল বাড়ির সদর দরজা খুলে প্রবেশ করতেই। কাঠের দরজাটাও ঘুন ধরে গিয়েছে। মড়মড়ে আওয়াজ করছে। কখন যেন ভেঙ্গে পড়ে! এমন ধুলোমাখা জায়গাতে সকলের হাঁচি কাশি বাড়ল। সকলে যে যার মাস্ক মুখে পড়ল। পেছনে থাকা মেহরাজ পকেটে থাকা মাস্ক খুঁজে পেল না। হাতড়ে বুঝতে পারল সে মাস্ক আনতে ভুলে গিয়েছে। বেরিয়ে এলো হাতে পড়ার দুটো গ্লাভস। তা দেখেই সরু চোখে তাকিয়ে হুড়মুড়িয়ে তা ঢুকিয়ে ফেলল পকেটে। কোহিনূর দেখলে খবর আছে তার। কিন্তু ততক্ষণে যার দেখার এবং বুঝেই নিয়েছে যা বোঝার। তার কড়া দৃষ্টি দেখে ততক্ষণে থতমত খেয়েছে মেহরাজ। টর্চের আলোতে বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে রাগের ছাপ। তবে কোহিনূর কিছু না বলেই কাশতে কাশতে নিজের মাস্ক বের করে এগিয়ে দিল মেহরাজের দিকে।
“টেক ইট।”

মেহরাজ হাত বাড়িয়ে নিতে চাইল না। কাঁচুমাচু হয়ে বলল,
“বাট স্যার…”

“আমি এটা এখনো ইউজ করিনি। তুমি ইউজ করতে পারো।”

“আপনি কী ইউজ করবেন স্যার?”

বলেই একটা হাঁচি দিল মেহরাজ। কাশিও উঠল বেশ। কোহিনূর তার হাতে মাস্ক ধরিয়ে তীব্র সুরে বলল,
“আমার ধুলোতে তেমন সমস্যা হয় না। তোমার তো এলার্জি আছে।”

এতটুকু বলেই মেহরাজকে কোনোরকম সুযোগ না দিয়ে হনহনিয়ে ভেতরে চলে গেল কোহিনূর। মেহরাজ কিছুক্ষণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। তারপর মুচকি হাসল কোহিনূরের যাওয়ার পানে চেয়ে। কাশতে কাশতে মাস্ক পড়ে নিলো মুখে।

নাকে হাত দিয়ে আশেপাশে টর্চের লাইট দিয়ে তন্নতন্ন করে খোঁজা হচ্ছে তথ্য। যদি কিছু পাওয়া যায়? কোহিনূর প্রথমেই দেয়ালে থাকা সকল ছবি ঘেঁটে নিলো। ফ্যামিলি ফটো পেলেও সুবিধা। তবে সে হতবাক হলো! তেমন কোনো ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা নেই। তা কি সরানো হয়েছিল আগেই? নাকি অন্যকিছু? এই ড্রয়ার, টেবিল সব ঘেঁটে দেখা হলো। খুব একটা বেশি কিছু পাওয়া গেল না। তাদের দলের একজন বেশ তাড়াহুড়ো করে এসেই ডায়েরী এগিয়ে দিলো একটা। বলল,
“স্যার ডায়েরীটা খাটের নিচ থেকে পেয়েছি। বাট তেমন কিছু লেখা নেই এতে। কিছু অদ্ভুত সংকেত দেওয়া আছে মনে হচ্ছে। আর নিচে লেখা আছে…”

কোহিনূর ইশারায় তাকে থামাল। নিজেই ডায়েরী খুলে দেখল মনোযোগ দিয়ে। আসলেই কিছু সংকেত রকমেরই দেওয়া আছে আর নিচে লেখা,
‘আজকের দিনটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রূপার ওপর আমার কেমিক্যাল দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেছি। এর কার্যক্ষমতা দেখা যাবে পাঁচ বছর পর।’

কোহিনূরের কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ে। রূপা কে? সেটা তার বোধগম্য হলো না! ফলে বিষয়টা আরো বিগড়ে গেল। তবে শান্ত রূপে থেকে বড়ো শ্বাস নিয়ে ডায়েরীর পাতা উল্টিয়ে দেখতে পেল আরো কিছু সংকেত। আর নিচে আগের মতোই লেখা,
‘আমার এক্সপেরিমেন্ট অনেকটা সাকসেসফুল। তবে আমি এর সম্পূর্ণ প্রসেসিং ভুলে গিয়েছি। ব্যাপার নয়! এখন থেকে রূপা নিজের জ্ঞান এবং বুদ্ধিতে নয় আমাদের জ্ঞানে চলবে। তার নিউরনের কার্যক্ষমতা অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। এভাবে আমরা তাকে কাজে লাগাতে পারি।’

কোহিনূর হতবিহ্বল হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। রূপা নামক মানবীকে তাহলে ডার্ক ম্যাক্স এক্সপেরিমেন্ট করতে ব্যবহৃত করেছে। কিন্তু কে এই নারী? আদেও কি তার অস্তিত্ব আছে? সব ভাবনাকে বাগড়া দিয়ে সংকেতের মানে ভেবে নেয় কোহিনূর। প্রথম পাতায় বেশ সুন্দর করে ‘Ca0H’ লেখা আছে। কোহিনূর বিড়বিড়িয়ে বলে,
“যদি আমি এটাকে কোনো কেমিস্ট্রি দিয়ে সংকেত ভাবি তাহলে Ca তে ক্যালসিয়াম, O তে অক্সিজেন আর H তে হাইড্রোজেন হচ্ছে। কিন্তু এভাবে তো মিলছে না। যদি আমি বিষয়টাকে অন্যভাবে ধরি। O কে অক্সিজেন না ভেবে জিরো ধরি তাহলে নম্বরিং করে ২০০১ হচ্ছে। অন্যদিকে অপরপাশের লেখায় ‘Ca0C’ একইভাবে ভেবে হচ্ছে ২০০৬। এই লোকের ডায়েরীর কথা অনুযায়ী সেটাই মিলছে।”

“বাট স্যার এতে তো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। রূপা কে? আর এসব কথা দ্বারা কি বোঝাচ্ছে?”

তখন মেহরাজও এসে দাঁড়াল। পেছন থেকে সে সব কথায় শুনেছে। সে বলল,
“আই থিংক এই রূপা মেয়েটাকে দিয়ে সে এক্সপেরিমেন্ট করেছে। সে যদি বেঁচেও থাকে তবে ক্রি’মি’নাল টিমের মধ্যে সেও আছে।”

“সেটা তো ঠিক। আরো কিছু পাও নাকি দেখো!”

সকলে আবার ব্যস্ত হয়। অনেক খুঁজে ড্রয়ারে থাকা একটা সাদা রুমাল খুঁজে পেল কোহিনূর। প্রথমে সেটাকে পাত্তা না দিয়ে সেটা ফে’লে দিতে গেলেও পরবর্তীতে রুমাল থেকে এসে নাকে ঠেকল বেশ অন্যরকম গন্ধ। নাক সিটকে ফেলে কোহিনূর। নিজেকে ধাতস্থ করে নাকটা কাছে নিয়ে এসে অদ্ভুত গন্ধ পেল সে। ভালো করে ঘ্রাণ নিতেই মনে হলো এটা কোনো কেমিক্যালের গন্ধ। এটাকে সে ফেলল না। একটা ব্যাগে ভরে নিলো। সেখানে আর তেমন কিছুই পাওয়া গেল না। রাত বেড়ে যাওয়ায় বেরিয়ে এলো তারা। বাড়ির আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করেও আহামরি কোনো তত্ত্ব পাওয়া গেল না। কারণ এতগুলো বছরে সব কিছুর বদল হয়েছে। এই গ্রামে খুব একটা মানুষজন থাকে না। সকলে বদলি হয়েছে। যারা পুরোনো তাদের জিজ্ঞেস করে পাওয়া গেল এখানে একজন মহিলা ছাড়া কেউই থাকত না। অথচ বাড়ি ঘেঁটে অন্যরকম তথ্য পাওয়া গিয়েছে। নিজের টিম নিয়ে হেঁটেই যাচ্ছিল কোহিনূরের। সামনে গাড়ি আছে। হাঁটার মাঝে কোহিনূরের দূরদৃষ্টি খেয়াল করে এক চেনা লোককে। সে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে। এখানে ছোটো বাজার থাকার কারণে কিছু জায়গায় লাইট লাগানো। সেই লাইটের আলোতে দেখা মেলে রাশেদ সাহেবের। কোহিনূরের দেখা পাওয়া যাবে এখানে সেটাতেও রাশেদ সাহেব যেন প্রস্তুত ছিলেন না। ভূত দেখার মতো চমকালেন উনি। কোহিনূর উনার সামনে পড়ে যাওয়ায় যেন এড়িয়ে যাওয়ার পথও পেলেন না। কোহিনূর তার টিমকে সামনে এগিয়ে যেতে বলে ইশারায়। সকলে চলে যায়। থেকে যায় শুধু সে। সে নিজেও রাশেদ সাহেবকে দেখে বেশ বিস্মিত এবং অভিভূত।
“স্যার আপনি? তাও এখানে?”

রাশেদ সাহেব বেশ বিব্রতবোধ করলেন। যেন প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত তিনি। কাঁপা সুরে বললেন,
“আমার এক সহযোগী পুরোনো বন্ধুর বাড়িতে এসেছিলাম। তার মা নাকি অসুস্থ তাই। কিন্তু অফিসার আপনি এখানে?”

“কেইসের কিছু ইনভেস্টিগেশন করার ছিল। সেই সূত্রেই আসা। এখানে আপনার দেখা পেয়ে যাব ভাবিনি।”

“কেইসের কারণে এখানে?”

কেহিনূর নির্লিপ্ত ভাব নিয়েই জবাব দেয়,
“জি। আমরা কিছু তথ্য পেয়েছিলাম। এখানে থাকা এক বাড়িতে ভালোমতোই সার্চ করলাম।”

রাশেদ সাহেব বেশ অস্থির হয়ে শুধালেন,
“কোন বাড়িতে?”

“আরো ভেতরে গিয়ে পুরোনো বাড়ি। গেটের কাছে বোধহয় লেখা ছিল ‘দেওয়ান বাড়ি’।”

রাশেদ সাহেব যেন এবার আঁতকে উঠলেন। নিজের উদ্দীপনা সামাল দিতে না পেরে ফট করে বললেন,
“দেওয়ান বাড়ি?”

কোহিনূর ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকাল। সে ইচ্ছে করেই বাড়ির নামটা বলেছে শুধুমাত্র রাশেদ সাহেবের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য এবং লোকটির প্রতিক্রিয়া বেশ সন্দেহজনক! কোহিনূর শান্ত সুরে বলল,
“আপনি জানেন ওখানে কে থাকত?”

পরক্ষণেই বড়ো শ্বাস নিয়ে তিনি বললেন,
“না। আমি কী করে জানব? আমি এখানকার বাসিন্দা নাকি? অফিসার নির্জন দেখি কাউকেই সন্দেহের কাতারের বাহিরে রাখে না।”

কোহিনূরও এবার না চাইতেও তাল মিলিয়ে হাসে।
“কী করব বলুন স্যার? আমাদের কাজই তো এটা। নিজেদেরও সন্দেহের বাহিরে রাখতে পারিনা।”

রাশেদ সাহেব ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলেন। কোহিনূর কাঁধে আলতো করে হাত দিয়ে বললেন,
“আশা করছি খুব দ্রুত কেইস সলভ করতে পারবে তুমি।”

কোহিনূর আর কিছু বলে না। বিদায় নিয়ে চলে আসে। মনে থেকে যায় ক্ষীণ সন্দেহ এবং সংশয়। প্রশ্ন থেকে গেল অনেকটা।

দুটো দিন পেরিয়েছে। ঘটেছে নতুন দিনের আগমন। সেই আগমনে কারোর প্রতীক্ষা বেড়েছে আর কারোর জটিলতা। এত এত মানুষ সকলেই যেন নতুন কিছুর অপেক্ষায়।

নিজের চেয়ারে বসে খবরের কাগজ ঘাঁটছিল কোহিনূর। চোখ বুলিয়ে নিতে নিতেই সে সামনে থাকা মেহরাজকে ফট করে বলল,
“আজকে কয় তারিখ, মেহরাজ?”

“এগারো তারিখ স্যার।”

খবরের কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে নেয় সে। ভ্রু কুঁচকে বলে,
“সত্যি? তাহলে তো আর বেশি সময় নেই।”

“কীসের স্যার?”
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে মেহরাজ। কোহিনূর না চাইতেও মুখ ফসকে বলে,
“আরে, রায়ানের জন্মদিন! হাতে একদম সময় নেই। কী যে করি!”

বলার সঙ্গে সঙ্গেই কোহিনূরের মুখটা থমথমে হয়ে যায়। যেন এই কথা বলা এবং এতটা আগ্রহ দেখানো তার উচিত ছিল না। সোজা হয়ে নড়েচড়ে বসল সে। গলা খাঁকারি দিয়ে গাম্ভীর্য ধারণ করে বলল,
“আই মিন আমাদের ডিপার্টমেন্টের সব মেম্বারদের বার্থডেতে তো সবাই মিলে উইশ করা হয়। নতুন যারা জয়েন করেছে তাদের বিষয়টা জানিয়ে রাখা ভালো। তুমি জানিয়ে দিও। নয়তবা, তার এসিস্ট্যান্ট শেখর আছে তো! আমার হাতে এসবের জন্য এত সময় নেই।”

বলেই ব্যস্ত হওয়ার ভঙ্গি ধরে কোহিনূর। মেহরাজের হাসি পায় ভীষণ। আসলে তার সামনে থাকা এই শ্রদ্ধেয় মানুষটির চালচলন বোঝা বড়ো দায়! লোকটি বুঝতে দিতে চায় না কখনো সে বাকিদের নিয়ে কতটা ভাবে। রায়ানের জন্মদিন নিয়ে যে কোহিনূর কতটা প্রকোপিত সেটা মেহরাজের জানা। কিন্তু মানুষটি যে স্বীকার করার নয়!

“আসতে পারি?”

মেয়েলি রিনরিনে কণ্ঠ শুনে তীব্র অভিঘাত লাগল কোহিনূরের হৃদয়ে। এই অভিঘাত য’ন্ত্রণা বা ব্যথার ছিল না। এটি ছিল তৃপ্তিদায়ক। এই রসহীন খবরের কাগজে আর মন টিকে থাকে? চোখের পিপাসু দৃষ্টি সকলের আগেই ছুটে যায় নিজের পিপাসা নিবারণ করতে সেই অভিঘাতী নারীর দিকে। নারীটি যত এগোচ্ছে কম্পন বাড়ছে সর্বাঙ্গে। তার পরিপাটি হাসি মনের তুষ্টি আরো বাড়িয়ে দিলো! মেয়েটি এতটা প্রলুব্ধা কেন? মনটাকে কোহিনূর আজকাল মাঝে মাঝে শাসায়। কেন তার মনে আসে এত লজ্জাহীন চিন্তা?

সুযোগ বুঝে কেটে পড়ে মেহরাজ। রাগিনী ধীর পায়ে এগিয়ে আসে। টেবিলের ওপাশে দাঁড়িয়ে পড়তেই কোহিনূর ইশারায় কাছে ডাকে তাকে। রাগিনী টেবিলের এপাশে আসতেই তার হাত ধরে তাকে কোলের ওপর বসায় কোহিনূর। রাগিনী তার গলা পেঁচিয়ে নরম সুরে বলে,
“কখন এসেছেন?”

“কাল যে বললাম আজ সকালে ফিরব। ভোরবেলায় পৌঁছে গিয়েছি।”

“তাহলে তো ঘুম হয়নি ঠিকঠাক। তবুও এখন অফিসে বসে আছেন?”

কোহিনূর রাগিনীর গালটা আলতো টেনে ধরে বলে,
“না আসলে তোমার এই সুন্দর আগমনটা চোখ ভরে দেখতে পেতাম কী বলো?”

“দেখায় তো সময় তো চলে যায়নি।”

“তোমায় মন ভরে দেখার একটা সুযোগও আমি ছাড়তে চাই না মাই সাইকোলজিস্ট ম্যাডাম!”

কোহিনূর আপনমনে কথাটি বলে রাগিনীর ঘন চুলের ঘ্রাণ নিতে মত্ত হয় সে।
“ওখানে গিয়ে কোনো ইনফরমেশন বা কিছু পেলেন?”

“কিছু কিছু জিনিস পেয়েছি বাট সেটাও ফরেনসিক ল্যাবে আছে এখনো অবধি। এতটুকু ভালোই বুঝেছি এই কেইসের যেই মূল নাম ডার্ক ম্যাক্স! তার কেমিস্ট্রি এবং রিসার্চের প্রতি অনেক ঝোঁক। আর অন্যদিকে এই লোকটার জীবনকাহিনী পাঁচ বছর আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের ডা*কাতি আর সেদিনের বলা ওই কবিরের ডার্ক ম্যাক্স নামটা উচ্চারণ করার পর যেন ওই কেইসটা আবারও শুরু হয়েছে। ব্যাংকের ডা’কা’তিতেও যেভাবে সেখানে থাকা লোকজনকে জ্ঞান হারা করেছিল সেটাতে বোঝা যায় এটাও কোনো কেমিক্যালের টেকনিক।”

“তাহলে বলতে চাইছেন ডার্ক ম্যাক্স বেঁচে আছে?”

বেশ আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল রাগিনী। কোহিনূর মাথা নাড়াল।
“না বেঁচে থাকার সম্ভবনা নেই। উনার পোস্টমর্টেমও করা হয়েছে। যদি কেউ বেঁচে থাকে তবে সেটা তার কাছের কেউ। হতে পারে তার ছেলে অথবা মেয়ে আবার তার ভাইও হতে পারে!”

রাগিনীও বেশ বিভ্রান্ত হলো এবার। আসলেই বিষয়টা বেশ জটিল। কোহিনূর কথা বলতে বলতে ফট করে প্রশ্ন করে বসল,
“আচ্ছা, তোমার বাবা কি গতকাল বা তার আগের দিন কোথাও গিয়েছিল?”

“হ্যাঁ গিয়েছিল তো। কোন যেন বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিল। হঠাৎ এই প্রশ্ন? আপনি জানলেন কী করে?”

সন্দিহান হয়ে প্রশ্ন করে রাগিনী। কোহিনূর দ্রুত কথা ঘুরানোর জন্য বলে,
“ইটস ম্যাজিক মাই ইয়ং লেডি! শুধু হবু বউয়ের প্রতি নয় আমার শ্বশুরমশাইয়ের প্রতিও টেলিপ্যাথি কাজ করে।”

রাগিনী বেশ বুঝল কোহিনূর কথাটা ঘোরাতে চাইছে। তৎক্ষনাৎ সে কথা ধরে বলল,
“মোটেও আমার কাছে কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবেন না মি. অফিসার। বলুন কী করে জানলেন?”

“সেদিন রাতে রাস্তায় দেখলাম তো!”

এবার রাগিনী ক্ষ্যান্ত হলো। কোহিনূরও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। এ যেন মেয়ে নয় পুরো গোয়েন্দার হেড। সাইকোলজি নিয়ে পড়া স্টুডেন্টদের কাছে একারণেই পদে পদে ধরা খেতে হয়। কে জানে ভবিষ্যতে আর কতবার ধরা খেতে হবে!

সকাল সকাল অভিরূপকে একপ্রকার টে’নেহিঁ’চড়ে সঙ্গে করে জগিং-এ নিয়ে এসেছে নোমান। আগে অভিরূপের দৈনিক রুটিনের মাঝে ছিল সকালে উঠে জগিং করা। ভেবেছিল বাহিরে বের হলে ছেলেটা একটু স্বাভাবিক হবে। তার ভেতরের চাঞ্চল্য রূপটা বাহিরে আসবে। সে আবারও হাসবে। কিন্তু তা হলো না। বিপরীতটা ঘটল বরং। মাস্ক পড়ে থাকা সত্ত্বেও অভিরূপ প্রেমীরা চিনতে দেরি করল না তাকে। মূহুর্তে ভিড় জমে গেল। সেসব কোনোরকমে সামাল দিয়ে পার্ক থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে অভিরূপকে নোমান বলল,
“দুনিয়ায় যেখানে যাবি সেখানে জ্বা’লা! তোকে নিয়ে গিয়েও শান্তি নেই।”

অভিরূপ হাঁটতে হাঁটতেই বলল,
“এই থিংক তোর আরেকটা অশান্তি হাজির হতে চলেছে।”

হাঁটা থামাল দুজনেই। নোমান কিছু বুঝল না। হাত নাড়িয়ে বলে উঠল,
“কী বলছিস?”

“সামনের ফুটপাতে তাকিয়ে দেখ।”

নোমান অভিরূপের কথা অনুযায়ী সামনেই তাকায়। যানবাহনের মাঝে দেখা গেল চশমা পড়া নোমানের সেই কাঙ্ক্ষিত শুকনো মরিচকে। সেই মূহুর্তেই সে অভিরূপকে খুঁচিয়ে বলল,
“ওহ হো! চল না একটু ওর সাথে লেগে আসি!”

“আমি যাব কেন? তুই যা। লেগে আয়। দেখিস রাস্তার মধ্যে মা’রামা’রি শুরু করে দিস না। আমি একটু দোকান থেকে পানি কিনতে যাচ্ছি।”

বলেই দোকানের দিকে হাঁটা দেয় অভিরূপ। নোমানও পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তা পার হয়ে ফুটপাতে থাকা মানুষের সমাগম ঠেলে এসে দাঁড়ায় উর্মিলার পাশে। তখনও মেয়েটা সেদিকে খেয়াল করেনি। সে ব্যস্ত খালি কোনো রিকশা বা অটোর খোঁজ করতে।
“ওদিকে কাকে দেখছ?”

আচমকা এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে তাকায় উর্মিলা। নিজের চশমা ঠিক করে দেখতেই সেই গা জ্ব’লানো হাসিটা দেখে মুখ ফুলিয়ে উর্মিলা বলে,
“যাকেই দেখি আপনার কী সমস্যা?”

“আমি ভাবলাম তুমি দেখতে পাচ্ছো কিনা তাকে তাই আমি আরেকটু দেখতে সাহায্য করি।”

উর্মিলা তেলেবেগুনে জ্বলে বলে উঠল,
“এসেছে সাহায্য করতে! লাগবে কোনো সাহায্য!”

“আরে যাচ্ছো টা কোথায়?”

“ভার্সিটিতে।”

নোমান আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“তো খালি গাড়ির খোঁজ করছ?”

উর্মিলা জবাবে কিছু বলল না। আসলে সকাল থেকে তার মেজাজ ঠিক নেই। মায়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে সে। তর্কের মূল বিষয়বস্তু ছিল বিয়ে! এখন নাকি তার বিয়ে নিয়ে ভাবা উচিত। তবে উর্মিলা এই বিষয়ে বেশ উদাসীন। সেসব নিয়েই বিরক্ত সে। তাকে এবং নোমানকে একটা ফাঁকা অটো ক্রস করে যেতেই নোমান বলল,
“ওইতে একটা ফাঁকা অটো গেল মিস.। দেখতে পাওনি? চোখে আরেকটা চশমা লাগাও। শুধুমাত্র এটা দিয়ে হবেনা বোধহয়!”

ব্যস…উর্মিলার মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেল এবার। দ্রুত চোখ থেকে চশমা খুলে নোমানের হাতে ধরিয়ে ফুঁসে উঠে বলল,
“একটাও চশমা লাগবে না আমার। আপনার চশমা আপনি রাখুন। আমি চশমা ছাড়াই ওইপাশে পার হবো এখন।”

বলেই বিলম্ব না করে উর্মিলা ঝাপসা দৃষ্টিতে এপাশ ওপাশ থেকে চলতে লাগল। এরই মাঝে কল এলো তার। সব মিলিয়ে থমকে দাঁড়াল সে। রাস্তায় বড়ো বড়ো যানবাহনের হর্ণের আওয়াজ কানে আসতেই আঁতকে উঠল। কিছু না ভেবেই সরে পিছিয়ে যেতে লাগল। কর্ণকুহরে নোমানের ডাকটা ভেসে এলো। পুরোটা শোনা আর হলো না তার। ঘটে গেল আকস্মিক ঘটনা।

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here