গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে দ্বিতীয় খন্ড (পর্ব ৮)

0
416

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৮ (২য় খণ্ড)

হসপিটালের এক কেবিনের বেডে শুয়ে রয়েছে উর্মিলা। পরনে ঢিলেঢালা নীল রঙের শার্ট আর প্যান্ট। গায়ের অল্প অংশ সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা। মাঝে মাঝে রাগে ফোঁসফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে সামনে ভীরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা নোমানের দিকে চাইছে। আবারও মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে ঝটকা দিয়ে। সোফায় অভিরূপ ভাবলেশহীন হয়ে গালে হাত দিয়ে বসে থেকে ভাবছে কোথা থেকে কী হয়ে গেল! নার্স ধীর পায়ে এগিয়ে গেল উর্মিলার ডান পায়ের কাছে। আঁতকে উঠে তাকাল উর্মিলা। ব্যান্ডেজ করে ঝুলিয়ে রাখা পায়ে নার্স হাত ছোঁয়াতেই ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
“হাত লাগাবেন না প্লিজ!”

“ওকে ম্যাডাম। টেক কেয়ার।”

বলেই বেরিয়ে যায় নার্স। পা নাড়ানোর সাধ্য নেই উর্মিলার। রাস্তায় যানবাহন থেকে বাঁচতে পিছিয়ে গিয়ে সোজা ম্যানহোলে পড়েছিল সে। সেই সঙ্গে ডান পায়ের হাড় বেশ ভালোভাবেই নড়ে গিয়েছে। স্থানচ্যুত হয়েছে। ডক্টর বলেছে সারতে প্রায় দুইমাস লাগবে। আর সাতদিন হসপিটালে এডমিড থাকতে হবে। নিজের পায়ে নিজেই কুঁ’ড়াল মা’রার মতো কাজ করেছে সে।

বেশ খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে উর্মিলার কেবিনে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করল রাগিনী। চোখ বড়ো বড়ো করে আগে নিজের বান্ধবীর বেগতিক অবস্থা দেখে হতভম্ব হলো সে। বিস্ময় নিয়ে বলল,
“কিরে! কীভাবে হলো এসব?”

অগ্নি দৃষ্টিতে নোমানের দিকে তাকাল উর্মিলা। নোমান হালকা কেশে তা না দেখার ভান ধরল। উর্মিলার দৃষ্টিতে কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে সরু চোখে রাগিনীও নোমানের দিকে তাকাল। যখন ছেলেটি দেখল দুজনের কেউই দৃষ্টি সরাচ্ছে না তৎক্ষনাৎ সে মিনমিন করে বলল,
“আরে বাবা আই এম সরি তো! আমার কী দোষ?”

উর্মিলা চিল্লিয়ে বলল,
“চুপ করুন। কোনো কথা বলবেন না। সব দোষ আপনার। না আপনি রাস্তায় আমার সঙ্গে লাগতে আসতেন আর না আমি ম্যানহোলে পড়ে গিয়ে নিজের বে’হাল দশা করতাম।”

“তোমায় চশমা ছেড়ে কে যেতে বলেছিল? আমি? তুমিই স্বইচ্ছায় নিজের এই দশা করেছ তবুও আই এম দ্যা গ্রেট নোমান সারওয়ার সরি বলছি তাও সমানে আমায় দোষারোপ করে চলেছ।”

“ওমনি দোষ আমার হয়ে গেল? রাস্তায় কে লাগতে বলেছে আপনাকে আমার সাথে?”

নোমান তৎক্ষনাৎ নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে স্বীকার করে বসে,
“আমি কী করব? তোমাকে দেখলেই পেছনে লাগতে ইচ্ছে করে।”

পরক্ষণেই আরো রেগেমেগে যেন আ’গুন জ্ব’লে উঠল উর্মিলার মাথায়।
“দেখেছিস রাগিনী? দেখেছিস? কত বড়ো ফা’জিল লোক!”

বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে পড়ল উর্মিলা। পায়ে টান পড়তেই চোখমুখ কুঁচকে আর্ত’নাদ করে উঠল। সকলেই চমকাল। সবচেয়ে বেশি যেন ব্যথিত হলো নোমান। সে দ্রুত পায়ের নিকট গিয়ে এদিক-ওদিক পর্যবেক্ষণ করতে থাকল। অন্যদিকে রাগিনী দুজনের এই বিতর্কে বেশ ভালোই পুরো কাহিনীটা বুঝতে পেরেছে। সেও অভিরূপের ন্যায় ভাবলেশহীন হয়ে চেয়ে রইল। নোমান এবার উর্মিলার সংলগ্নে গিয়ে তার পকেটে সযত্নে রাখা চশমাটি বের করে চুলগুলো আশপাশ থেকে সরিয়ে উর্মিলার চোখে দিয়ে বলল,
“যেটা তোমার সবচেয়ে প্রয়োজন তা কখনো হাতছাড়া করো না শুকনো মরিচ। তুমি ব্যথিত হলে আমার মনও ভীষণ পীড়া দেয়।”

ফরেনসিক ল্যাবের মেইন দরজাটা টেনে ভেতরে প্রবেশ করে কোহিনূর আর মেহরাজ। নাকে একটা উদ্ভট গন্ধ আসায় দুজনেই চোখমুখ খিঁচে ফেলে। কোহিনূর তো বলেই বসে,
“মনে হচ্ছে ডক্টরস্ গত দশ-পনেরো দিনের ময়লা ল্যাবে জমা রেখে দিয়েছেন।”

কথাগুলো রিসার্চ করা দুই ডক্টরের কানে এলে দুজনেই কোহিনূরের দিকে চেয়ে তাকান। ফরেনসিক স্পেশালিষ্ট ডক্টর আবসার মাইক্রোস্কোপে আবারও চোখ লাগিয়ে দিয়ে বললেন,
“আমাদের জ্বা’লা তুমি বুঝবে না অফিসার। তোমার কাজ তো দৌড়াদৌড়ি করা, গো’লাগু’লি করা অবধিই সীমাবদ্ধ।”

ডক্টর আবসারের কথায় মুচকি হাসে তার জুনিয়র ডক্টর সাদিফ। কোহিনূর ফের বলল,
“কী এমন জ্বা’লায় আছেন আপনি জানতে পারি?”

“অবশ্যই। এখানে এসো।”

কোহিনূর এগিয়ে যায়। ডক্টর আবসার সরে এসে ড্রয়ার থেকে কোহিনূরের উদ্ধার করা সেই সাদা রুমালটা বের করে একটা বড়ো লাইটের নিচে ধরে। তারপর কোহিনূরকে একটা বিশেষ চশমা পরিয়ে বলে,
“এবারের কেইসটা সলভ করতে অবস্থা করুণ হওয়ার আশঙ্কা দেখছি আমি। এই ক্রি’মি’নাল অ’স্ত্র কম মাথার বুদ্ধি বেশি ব্যবহার করে।”

“আসল কথায় আসুন তো আপনি। মাথা আমারও আছে ডক্টর!”

“যেই রুমালটা তুমি এনেছ তার মধ্যে গুপ্ত কিছু মেসেজ ছিল। সেটা যাতে খালি চোখে দেখা না যায় সেকারণে বিশেষ পন্থা ব্যবহার করা হয়েছে। বেশ কয়েকটা কেমিক্যাল নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে অন্যরকম কালি তৈরি করার চেষ্টা করেছে। আর সফলও হয়েছে।”

কোহিনূর এবার নিচে রুমালের দিকে তাকাল। আসলেই সাদা রুমালে চশমা পরিহিত অবস্থায় কিছু লেখা সে ধরতে পারছে যা খালি চোখে কোনোভাবেই সে দেখতে পায়নি। সেখানে এখন স্পষ্ট লেখা, ‘আমি জে’ল থেকে পা’লিয়ে এসেছি। জে’লে থাকা আমার কাছে অপ’মানের। যেখানে আমার উঁচু একটা পদে থাকা উচিত সেখানে আমাকে আসা’মীর মতো জে’লে রাখা হয়। এটা আমার কাছে লজ্জার। বেঁচে থাকলে আমায় আবার সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। তাই আমি আত্ম’হ’ত্যার পথ বেছে নিলাম। তবে আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে আমার প্রিয়জন। সঙ্গে থাকবে রূপাঞ্জনা। একটা কথা! রূপার নিজের চিন্তাশক্তি ক্ষমতা নেই ঠিকই। কিন্তু ও যদি কখনো এমন কাউকে নিজের আপনজন অথবা তার কথা মনে ধরে যায় তাহলে সেটাই নিজের লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিজের সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণ করবে। আর তাকে যেন কখনোই না ছাড়া হয় যে আমার এই পরিণতির জন্য দায়ী। আমার ভাইয়ের মৃ’ত্যু যেন আমার অংশের হাতেই হয়।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়ায় কোহিনূর। মাথাটা ঘুরছে এবার। তবে এতটুকু বুঝেছে ভাইয়ের প্রতি এত ক্ষো’ভ কেন ছিল ডার্ক ম্যাক্সের। আগের সব তথ্য নিয়ে জানতে পেরেছে ডার্ক ম্যাক্সকে পুলিশের হেফা’জতে করতে তার ভাই সাহায্য করেছিল। কিন্তু তার ভাই কি বেঁচে আছে? নাকি তাকেও মে*রে ফেলা হয়েছে? ভাবনার মাঝে আচমকা রাশেদ সাহেবের কথা মাথায় এলো কোহিনূরের। না চাইতেও সেই লোকটাকেই এসব কিছুর মাঝে প্যাঁচাতে ইচ্ছে করল। কিন্তু নিজের সন্দেহের কথা প্রকাশ করবে কী করে কোহিনূর?

রাত হলো। রাস্তায় কমতে থাকল লোকজনের উপস্থিতি। নিস্তব্ধতা তখন বাড়তে থাকল। দূর আকাশে মেঘের আড়াল থেকে দেখা দিলো চিকন রেখার ন্যায় চাঁদ। ঢাকায় শীত একটু দেরিতেই পড়ে। ভোরের দিকে শীতের আমেজটা হালকা পাওয়া যায়। তাছাড়া আবহাওয়া যেন এত যানবাহন আর কলকারখানার যাঁতাকলে পি’ষে যায়।

আগের চেয়ে আরো বেশি দুর্দশায় পড়েছে রূপাঞ্জনা। এখন আর উঠতেও যেন ভেতর থেকে প্রাণ বেরিয়ে আসে। সারা শরীরে বি’ষ যন্ত্র’ণা হয়। কাউকে বলতে পারে না। বললেও শোনে না। শুধু খাবার সময় ঠিকই অদ্ভুতভাবে তাকে খাবার দিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ম করে তাকে তিনবেলা খাবার দিতে কেউ ভোলে না। তবে শুয়ে শুয়ে থেকেও যেন কোমড়টা ব্যথা করে তার। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো আজকে হাঁটার চেষ্টা করবে। এভাবে আর কত? আজকাল যেন সে মৃ*ত্যুকে নিজের সামনে দেখে। দিন দিন তার অবস্থা যা হচ্ছে সে নিজেই বুঝতে পারছে সময় যেন আর বেশি নেই। রূপা ওঠার চেষ্টা করে। দেয়াল ধরে ধরে উঠে দাঁড়ায় সে। তার পা যেন অকেজো হয়ে পড়েছে। নড়বড়ে চলন দিয়ে যেন সে তৎক্ষনাৎ মুখ থুবড়ে পড়বে। সামান্য উঠে দাঁড়াতেই সে হাঁপিয়ে উঠেছে। পায়ের ধাপ একটু একটু করে ফেলে দরজার কাছে আসে সে। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখতে পায় বিভিন্ন রকমের সরঞ্জাম নিচে ছিটানো। দুর্বল চোখেও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকানোর চেষ্টা করে সে। ভালো করে খেয়াল করে দেখে এসব বো*ম তৈরির জিনিস। কয়েকদিন ধরেই রূপাঞ্জনা লক্ষ্য করেছে আশেপাশের সকলে ব্যস্ত। তারা কি নতুন কোনো অ্যা*টাকের প্ল্যানিং করছে? এতদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিল তারা। কারণ ডা*কাতির পর স্বাভাবিকভাবেই লুকিয়ে না থাকলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

দাঁড়িয়ে থাকার মাঝেই ডার্ক ম্যাক্সের আগমনে দরজা থেকে কপাটের কাছে সরে আসে রূপা। সে চায় না মুখোমুখি হতে। এবার কানে আসে ডার্কের ভার কণ্ঠ।
“রূপাকে রাতের খাবার দেওয়া হয়েছে?”

মিনমিন করে জবাবটাও কর্ণকুহরে ভেসে আসে রূপার।
“না বস। এইতো কাজ শেষে যাচ্ছিলাম।”

“তোর কাজ করার চক্করে আমার কাজটা অসম্পূর্ণ থাকবে নাকি? এমনিতেই ওই শা*লির কৈ মাছের প্রাণ। তোর এই অনিয়মের জন্য যদি ওর শরীরে ঠিকমতো পয়*জন না যায় আর ও বেঁচে গেলে ওই কেমিক্যাল পয়’জন দিয়ে তোকেই মা’রব। বুঝতে পেরেছিস?”

চমকে ওঠে রূপাঞ্জনা। দুরুদুরু বুকে সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আর যেন সম্ভব হচ্ছে না। র’ক্ত চলাচল যেন এক মূহুর্তের জন্য থেমে গেল। মস্তিষ্ক ততক্ষণে তার অসুস্থতা এবং এই মৃ’ত্যুসম য’ন্ত্রণার মূল কারণ জেনে ফেলেছে। সে আবার শুনতে পায়,
“আমি এখনি খাবার দিয়ে আসতেছি।”

রূপা বিলম্ব না করে ঝড়ো গতিতে এসে বিছানায় গা এলিয়ে অন্যপাশ ফিরে চাদর টেনে চোখ বুঁজে নেয়। কিছু মূহুর্ত কাটতেই আগমন ঘটে কারোর। স্টিলের থালা রাখার শব্দটা পায় সে। আর পুরুষালী কণ্ঠ বলে,
“খাবার রাখলাম। খাইয়া নিবা।”

রূপাঞ্জনা অন্যপাশ ফিরেই থাকল। কিছুক্ষণ পর ঘরটা নীরব হওয়ায় ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে দেখে নিলো সে। হাতের কাছে খাবারের থালা টেনে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল খাবারের দিকে। বিড়বিড়িয়ে বলল,
“এখানে থাকলে আমার ম’রণ নিশ্চিত। আমায় পালাতে হবে।”

পরক্ষণেই মাথায় আরেকটা প্রশ্ন আটকালো রূপাঞ্জনার। পালিয়ে কোথায় গিয়ে বাঁচবে সে? আদেও বাঁচতে পারবে? তার যে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এখানে থাকলে মৃ’ত্যু নিশ্চিত আর বাহিরে গেলে হাজতবাস নিশ্চিত। সে তো নিজেই নিজের জন্য কোনো পথ খোলা রাখেনি। তবে মনটা একটাই জিনিস চাইছে তা হলো সুন্দর করে বাঁচা।

সবে ঘুমানোর জন্য বিছানায় এসে বসেছেন রাশেদ সাহেব। কয়েকদিন ধরে রাতে ঘুমের ঔষধ খেয়েও ঘুমটা চোখে আসছে না। কারণটা হয়ত ভয়ে বা আতংকে। অজানা কোনো সত্যি উন্মোচনের সংশয়! তিনি নিজের মেয়ের কথা ভেবে নিজেকে শান্ত করেন। উনার নিজের মেয়ের শান্ত এবং মিষ্টি মুখশ্রী দুনিয়ার যে কাউকে ভুলিয়ে দিতে বাধ্য। কিছুক্ষণ আগেই তার আদরের কন্যা ঔষধগুলো খাইয়ে দিয়ে তবেই ঘুমোতে গেল। আচ্ছা কখনোও কি তার সেই আদুরে মেয়েটা তাকে ঘৃণা করতে পারে? ভাবতেই বুকে যেন একটা পাথর চেপে বসল। বড়ো শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করতেই ফোনটা বেজে উঠল উনার। কিছুটা বিরক্ত হলেন। এত রাতে কে? ফোনটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাতে নিলেন তিনি। অপরিচিত নম্বর। তবুও বিভিন্ন কারণে উনি রিসিভ করেন।
“হ্যালো? আমি সাইকোলজিস্ট শাহ্ রাশেদ বলছি। আপনি কে?”

অপরপাশটা কিছুক্ষণ নীরব থাকল। তারপর মেয়েলি একটা দুর্বল কণ্ঠ শুনতে পেলেন রাশেদ সাহেব।
“আমি জানি এটা আপনি। সব ভালো করে জেনেই আপনাকে কল করেছি।”

কণ্ঠটা চিনতে খুব বেশি সময় লাগল না রাশেদ সাহেবের। গলা শুঁকিয়ে এলো উনার। নিজেকে ধাতস্থ করে শক্ত গলায় বললেন,
“কী সমস্যা শামীমা? কেন বারবার আমার পিছু করছ?”

“পিছু করার যথেষ্ট কারণ আপনিই করে দিয়েছেন। এতগুলো আপনাকে পাগলের মতো খুঁজেছি শুধুমাত্র একটাই কারণে। আমার সন্তানের খবরটা একবার আমাকে দিন। আর বিরক্ত করব না!”

“একটু আগেই বললে অনেক বছর কেটে গিয়েছে। এত সময় চলে গিয়েছে। আমাদের পথ আলাদা হয়েছে। আজ আমিও তোমায় চিনি না, তুমিও আমায় চেনো না। অযথা আগের অতীত টেনে বর্তমানকে নষ্ট করে দিও না। আমি অনেক ভালো আছি।”

এবার ওপাশ থেকে উত্তপ্ত কণ্ঠ শোনা গেল।
“স্বা’র্থপর লোক! নিজে তো ভালো আছেন! কিন্তু আমার ভালো থাকার কী হবে? আমার সবকিছু কেঁ’ড়ে নিয়ে আপনার তো ভালো থাকারই কথা।”

রাশেদ সাহেবের মেজাজটাও বিগড়ে এলো এবার। তড়িঘড়ি করে বললেন,
“তোমার এসব কথা শোনার জন্য আমার সময় নেই। পরেরবার কখনো কল করবে না আমাকে।”

বলেই কলটা কেটে দিতে চান রাশেদ সাহেন। এবার ওপাশ থেকে কান্নারত সুর শোনা যায়। ডুকরে কেঁদে ওঠে শামীমা।
“দয়া করুন আমাকে। একটা বার আমার সন্তানের কথা আমায় বলুন। কেমন আছে সে? একটা বার আমায় জানান।”

রাশেদ সাহেন ঢক গিলে চুপ থাকেন। তার চুপ থাকা দেখে শামীমা বলেন,
“বেঁচে আছে তো সে?”

“জানি না আমি। তোমার সন্তানের কথা আমি জানি না। আমি শুধু আমার মেয়ের কথা জানি। তোমার সন্তান পারলে তুমি খুঁজে নাও।”

শামীমা কাঁদতে কাঁদতেই চিৎকার করে বলেন,
“কেউ জানে না আপনার এই সুন্দর মনের ভেতরটা কতটা কুৎসিত। আমি সবাইকে জানিয়ে দেব। আমি পুলিশের কাছে যাব। বিচার চাইব।”

রাশেদ সাহেব এবার তাচ্ছিল্য করে হাসেন। হাসতে হাসতেই বলেন,
“গিয়ে কী বলবে? বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট শাহ্ রাশেদ কী করেছে তোমার সাথে? কে বিশ্বাস তোমার কথা? তুমি একটা সামান্য পিঁপড়ে যার কথা কারোর কান অবধি পৌঁছাবে না। এসব হু’মকি আমাকে দিতে এসো না। পরবর্তীতে আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবে না। ফলাফল ভালো হবেনা।”
আর অপেক্ষা না করে কল কেটে দিলেন রাশেদ সাহেব। অতীতের বেড়াজালে যেন আবারও আটকা পড়তে চলেছে জীবন!

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here