#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৩০
#Jhorna_Islam
সোহার ঘুম ভেঙে যায় আড়মোড়া ভেঙে পিটপিট করে চোখ খুলে আশেপাশে তাকায়।কিছু সময়ের জন্য সে ভুলেই গিয়েছিলো সে হাসপাতালে আছে।
তারপর আস্তে আস্তে সব মনে হয়। ক্যাবিনে সে ছাড়া আর কেউ নেই। একা একা ভালো লাগে না সোহার।তাই আস্তে করে নোহাকে ডাক দেয়। কয়েকবার ডাক দিয়ে ও কোনো সারা শব্দ পায় না।
এবার মা,বাবা কে ডাক দেয় ওদের ও কোনো খবর নেই। শরীরটা খুবই দূর্বল।অনেক কষ্টে শোয়া থেকে উঠে বসে।একেক করে সকলকেই ডাকে কারো কোনো খবর নেই।
এবার সোহার ভিতর থেকে কান্নারা ঠেলে বেরিয়ে আসে।
বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,,তোমরা কোথায় চলে গেলা আমার ভালো লাগছে না। আম্মু, বড় ফুপি এই আপু।বলেই এবার শব্দ করে দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠে।
দায়ান তখনই ক্যাবিনে প্রবেশ করে। সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা মুখ ঢেকে কাদছে।দৌড়ে সোহার কাছে যায়।
বেডের উপর বসে সোহাকে নিজের সাথে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,, এই পা/গলি কি হয়েছে কাঁদছো কেনো? খারাপ লাগছে? কোথাও কষ্ট হচ্ছে বলো আমায়।
সবাই কোথায় চলে গেছে? কখন থেকে ডাকছি কেউ সারা দিচ্ছে না। আমার একা একা ভালো লাগছে না।
সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই বলা হয়নি। সবাই খুব ক্লান্ত ছিলো রেস্ট নেওয়ার দরকার নয়তো ওরা ও অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই আমিই জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছি।
আমি বাড়ি যাবো।এখানে আমি থাকবো না।আমি একদম সুস্থ আছি।আমায় বাড়ি নিয়ে চলুন।
যাবো তো কালই আমরা চলে যাবো। এখানে থাকতে হবে না। শুধু আজকের রাতটা একটু কষ্ট করো। ভ’য় পেয়ে ছিলে একা একা?
আ’ম সো স’রি পাখি।তুমি ঘুমোচ্ছিলে বলে আমার ক্যাবিনে গিয়েছিলাম একটু।আর যাবো না ঠিক আছে? এই যে তোমার পাশে থাকবো।
সোহা দায়ানের থেকে সরে এসে বালিশে হেলান দিয়ে বসে চুপচাপ অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।দায়ান সোহার কাজে নিঃশব্দে হাসে।পা’গলিটার অভিমান এখনো শেষ হয়নি।
ঠিক তখনই দরজায় কেউ ন’ক করে।
দায়ান তাকিয়ে দেখে নার্স খাবারের প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে। দায়ান অনুমতি দেয় ভিতরে আসার।নার্সটা খাবারের প্লেট এনে টেবিলের উপর রাখে।তারপর সোহার কাছে এগিয়ে যায় খাইয়ে দেওয়ার জন্য।
সোহা খাবারের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কোচকে ফেলে। এসব কি ছিঃ ইয়াক আমি এসব খাই না। এইসব ঘাস পাতা সরান আমার সামনে থেকে। আমি এসব একদম খাবো না।
দায়ান নার্সকে উদ্দেশ্য করে বলে,,আপনাকে খাইয়ে দিতে হবে না। আমিই খাইয়ে দিবো।তারপর নিজেই প্লেট টা হাতে তুলে নেয়। এক চামচ সোহার মুখের সামনে ধরে।সোহা মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারপর নার্সের দিকে চোখ যায়।মেয়েটা দায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
সোহার রা’গ উঠে যায়। দাঁত কটমট করে বলে,,,আপনি আমাকে খাবার খাওয়াতে এসেছেন? নাকি নিজে চোখ দিয়ে খেতে এসেছেন?
নার্স টা হকচকিয়ে তারাতাড়ি দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। দায়ান নার্সটার দিকে তাকিয়ে বলে,, আপনি যান আপনাকে এখানে আর প্রয়োজন নেই।নার্সটা তারাতাড়ি মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।
খেয়ে নাও পাখি প্লিজ। তুমি তো একটু অসুস্থ তাই এসবই খেতে হবে। সুস্থ হয়ে যা খেতে চাইবে তাই খাওয়াবো।প্লিজ খেয়ে নাও।
আমি খাবো না খিদে নেই এগুলো সরান আমার সামনে থেকে।
কাল রাতে কিছু খাওনি।আজ সারাদিন ও তোমার কিছু খাওয়া হয়নি।আবার বলছো খিদে নেই প্লিজ পাখিটা খাও।দেখো আমিও তোমার মতো কাল থেকে না খেয়ে আছি।প্রচুর খিদে লেগেছে আমার।তুমি না খেলে আমারও খাওয়া হবে না।
আর আমি খাবোওনা তুমি না খেলে।
সোহা আড় চোখে দায়ানের দিকে তাকায়। মুখ টা শুকিয়ে আছে। সোহা না খেলে যে দায়ান ও খাবে না সেটা সে বোঝে গেছে।
তাই কিছু সময় ভেবে বলে,,ঠিক আছে খাচ্ছি কিন্তু পুরো টা খাবো না।
দায়ান সোহার কথায় খুশি হয়ে যায়। সে দেখা যাবে তুমি আগে খাওয়া তো শুরু করো।তারপর জোর করে পুরো খাবার সোহাকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়।
—————–
পরের দিন সকাল সকাল ই সোহাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে দায়ান।
সেই থেকে যে লাপাত্তা হয়েছে সোহা দায়ানের সামনেই পরছেনা।হয় ওর মায়ের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে নয় দায়ানের মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকছে।
দায়ান সোহার কাছে আসলেই এড়িয়ে যায় নয়তো ঘুমের অভিনয় করে পরে থাকে।
দায়ান সোহাকে দেখলেই স’রি বলে। কিন্তু সে পাত্তাই দেয় না।
সোহা দায়ানকে পাত্তা না দিলেও দূর থেকেই সোহার খাওয়া দাওয়ার উপর ন’জর রাখছে। সকলকে বলে দিয়েছে তাকে যেনো হাসি খুশি রাখে।
সোহার খাওয়া শেষ হলেই ঠিক টাইমে দায়ান ঔষধ নিয়ে হা’জির হয়। সোহা অন্য দিকে তাকিয়ে দায়ানের হাত থেকে ঔষধ খেয়ে নেয়।
এমন করেই চলছে প্রতিদিন। তারপর হুট করেই দায়ান বলে উঠে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার কোনো দরকার নেই। যা করার যেনো করে আজ থেকেই দায়ানের রুমে যেনো শিফট করা হয় সোহাকে।
সোহা হা করে দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়। কেমন ঠোঁট কাটা লোক।কিভাবে বলে দিলো তাকে যেনো লোকটার রুমে শিফট করে। লজ্জা করলো না?
পরিবারের লোক দায়ানের কথায় আপত্তি করে নি।তারা পারিবারিক ভাবেই ওদের সব কিছু শে’ষ করে।সোহা অনেক বলেছে কিন্তু তার কথা কেউ শুনেনি।
তাই রা’গ করে কারো সাথে সে কথা বলছে না। চুপচাপ নিজের রুমে বসে আছে। এখানে বসে থাকলেই কি নোহা সব জামা কাপড় জিনিস পত্র বিকেলেই দায়ানের রুমে রেখে এসেছে।
সোহা তো অন্য ভ’য় পাচ্ছে। কাল তার অপারেশন সবাই বললেও ছোট্ট একটা অপারেশন তার মন মানছে না। মনটা খালি কু ডাকছে। অজানা ভয়ে ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠছে।এই কয়দিন দায়ানের থেকে দূরে থাকলেও তার ভালোবাসার গভীরতা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।
দায়ানের কথা ভাবলে বুক টা কেঁপে ওঠে। লোকটা তার প্রথম ভালোবাসা হারিয়েছে।এখন সোহা কে ভালোবাসে।যদি সোহার ও কিছু একটা হয়ে যায়। তাহলে লোকটা তো বাঁচবেই না।হয়তো পা’গল হয়ে যাবে।
তাইতো আরো বেশি করে দায়ানের থেকে দূরে থাকতে চাইছে সোহা।কিন্তু বেহায়া মন তো মানে না।দায়ানের কাছে দৌড়ে গিয়ে দায়ানের প্রশস্ত বুকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে। বলতে ইচ্ছে করে আপনার এই বু’কের ভিতর আমায় ঢুকিয়ে রাখুন।আমি কোথাও যেতে চাই না আপনাকে ছেড়ে। আমার যে বড্ড ভ’য় করছে। আপনার সাথে আমি অনেক অনেক বছর পথ চলতে চাই।
একসাথে হাতে হাত রেখে জীবন টা পাড় করতে চাই।আমায় শক্ত করে ধরে রাখুন তো একদম ছাড়বেন না।
কিন্তু কিছুই বলা হয় না। এই কয়দিনে এমনিতেই দায়ানের মুখ টা শুকিয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া আর ঘুম যে কিছুই ঠিক মতো করছে না দেখেই বোঝা যায়।
সোহা এসব ভেবে মুখ চেপে কেঁদে উঠে। কেনো সে লোকটার জীবনে আসতে গেলো যদি নাই বাঁচতে পারে এক সাথে। আরো কেনো আগে জানতে পারলো না তাহলে দায়ান কে নিজের অনিশ্চিত জীবনের সাথে কিছুতেই জড়াতো না। সোহার কিছু হয়ে গেলে লোকটা মরেই যাবে।
সোহার হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। দৌড়ে ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে যায় সোহা।পানির টে’প জোরে ছেড়ে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। মাঝে মাঝে নিজের ভিতর টা হালকা করার জন্য জোরে জোরে কাঁদা দরকার।প্রায় অনেক সময় নিয়ে সোহা বাথরুমের দেয়ালে হেলান দিয়ে কাঁদে। মনটা কিছু টা হালকা হলে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেরিয়ে আসে। হাতে টাওয়াল নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের উপর চোখ যায়। একটা কাগজ রাখা।
কৌতূহল বসত এগিয়ে গিয়ে কাগজ টা হাতে তুলে নেয়।
“একটু ছাদে আসবে? তোতাপাখি প্লিজ একটু আসো।”
দায়ান তাকে ছাদে কেনো যেতে বলছে? লোকটা কেন এমন পা’গলামো করে সোহা তো আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।লোকটা কেনো বুঝার চেষ্টা করে না।
প্রায় অনেক সময় বসে থেকেও দায়ানের ডাক উপেক্ষা করতে পারে নি সোহা। দৌড়ে ছাদে চলে যায়।
ছাদে গিয়ে বেশ অবাক হয় পুরো ছাদ বাহারি মরিচা বাতিতে লাইটিং করা।কতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। নানান ধরনের ফুল আর বেলুন দিয়ে ডেকোরেট করা হয়েছে সব কিছু। সোহা অবাক হয়ে চারপাশ দেখে।
হঠাৎ করেই সব আলো নিভে যায়।সোহা এতে কিছুটা হকচকিয়ে যায়। তারপর আবার আলো জ্বলে উঠে।
সোহা সামনে তাকিয়ে দেখে তার সামনে দায়ান হাঁটু গেড়ে বসে আছে। হাতে ফুলের তোরা।
দায়ান সোহাকে মায়াময় কন্ঠে ডেকে উঠে,, সোহা,,,
সোহা দায়ানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।
আমি জানি না কিভাবে প্রপোজ করতে হয়।এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে ও পারি না। তাই সোজাসাপটা বলছি।
“আই লাভ ইউ ”
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।তোমার সাথে আমার জীবন টা কাটাতে চাই।তুমি আমার এই ছন্ন ছাড়া জীবনে এসে আমাকে আবার নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছো।আমি আমার এই পাখি কে অনেক ভালোবাসি।
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি সোহা।
হুমম ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ মানে? আমি তোমাকে ভালোবাসি তো।
এই জন্যইতো বললাম ধন্যবাদ। আপনি আমাকে ভালোবাসেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ভালোবাসার বিপরীতে কেউ ধন্যবাদ বলে? প্লিজ উত্তর টা দাও না। তোমার মুখ থেকে উত্তর টা শোনার জন্য আমার কান দুটো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
ভালোবাসিতো পাখি।
#চলবে,,,,,,