তুমি হাতটা শুধু ধরো সিজন ২ (পর্ব ২৪)

0
1133

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৪(বোনাস)
#Jhorna_Islam

দায়ানের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে সোহা তাকিয়ে রয়। তার কি করা উচিত কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।

সোহা নিজের চোখকে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারে নি যে এইটা তিশা।ভেবে ছিলো হয়তো চোখে ভুল দেখছে।

কিন্তু দায়ান কে তিশার নাম ধরে ডাক দিতে দেখেই বোঝে গেছে যে সে ভুল না।সত্যিই তিশা কে দেখেছে। কিন্তু একটা কথা সোহার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না। সেটা হলো তিশা যদি মরেই যায় তাহলে এখানে আসলো কেমন করে।

আদৌ কি দুইজন এক রকম দেখতে হতেই পারে আলাদা আলাদা? হলেও একটু ও কি ভিন্নতা থাকবে না তাদের মধ্যে? এটা কি ভাবে সম্ভব!

একেইতো সোহার শরীরের উপর দিয়ে আজ অনেক ধ’কল গেছে তার উপর এমন ঝ’টকা খেয়েছে তিশা কে দেখে।

নিজের শরীর আর চলছে না সোহার।দায়ানের ক্যাবিন পর্যন্ত ও যাওয়ার আর ক্ষমতা নেই সোহার। তাই পাশে তাকিয়ে একটা বে’ঞ্চ দেখতে পায় ঐখান বসেই নিজের শরীরটা এলিয়ে দেয়।

চোখ বন্ধ করতেই কিছু সময়ের আগের মুহূর্ত গুলো চোখের পাতায় এসে হা’না দেয়। চোখের কোণ বেয়ে অবিরাম ধারায় অশ্রু বেরিয়েই যাচ্ছে।

দায়ান তিশা আপুকে দেখেই তার হাতটা কিভাবে আলগোছে ছেড়ে দিলো।

দায়ানের মুখে তিশা নামটা সোহা কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। দায়ান যখন তিশা তিশা বলে ডাকছিল তখন সোহার খুব কষ্ট হচ্ছিল।

সোহা কে ফেলেই বেরিয়ে গেলো দায়ান।

সোহা এক জায়গায় প্রায় দুই ঘন্টা যাবত বসে আছে। হাসপাতালের গেইটের দিকে তাকিয়ে। এই বুঝি দায়ান আসবে এসে স’রি বলবে। এখন সন্ধা সাতটা বা’জে।

অথচ দায়ানের কোনো খবর নেই। সোহার শরীর যেনো ধীরে ধীরে আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আবার বুক ব্যাথা করছে।

আরো আধা ঘণ্টা বসে থাকে দায়ানের অপেক্ষায়। কিন্ত হায় দায়ানের তো কোনো খবর নেই। সোহার মোবাইল টা ও দায়ানের গাড়িতেই ফেলে রেখে এসেছিলো।

হাসপাতালে আর কোনো ভাবেই থাকা সম্ভব নয় সোহার জন্য। ফি’না’ই’লের গন্ধে আর কিছু সময় থাকলে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারবে না।

সোহার ভিতর এখন ঝ”ড় বয়ে চলেছে। নিজের আপন ফোপাঁতো বোন ফিরে আসবে হয়তো।তবুও মনের মাঝে বিন্দু মাত্র আনন্দ খুজে পাচ্ছে না। নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে হাড়ানোর ভ’য় পেয়ে বসেছে মনে।

সোহা আস্তে করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। দায়ান হয়তো সোহার কথা ভুলেই গেছে। নয়তো তিশা আপুর সাথে কথা বলছে হয়তো।

আচ্ছা এটা কি সত্যি ই তিশা আপু? নাকি অন্য কেউ। পৃথিবীতে কি সত্যি এক রকম দেখতে মানুষ আছে? তাদের মধ্যে কি এতোটা ও মিল থাকে?

এই যে মেয়েটা কে দেখলো পুরোপুরি তিশার মতো দেখতে।মেয়েটার হাঁটা ও।এমনকি হাসি ও তিশার মতোই।

মেয়েটা ফোনে কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলতে বলতে চলে গেলো।তাইতো দায়ানের ডাক ও শুনতে পেলো না।

দায়ান কি তিশা আপুর সাথে এখন কথা বলছে। তিশা আপু কে পেয়েছে উনি? কতো কিছু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ একটার উত্তর ও সোহার কাছে নেই।

এটা যদি সত্যি তিশা আপু হয় তখন? উনিকি তিশা আপুর কাছে ফিরে যাবে? আমাকে উনার জীবন থেকে বের হয়ে যেতে হবে।

নানা না কিছুতেই না।উনি শুধু আমার। আমি তিশা আপুকে দিবো না উনাকে। দরকার পরলে তিশা আপুর কাছে অনুরোধ করবো।

উনাকে ছাড়া আমি কি করে থাকবো? এক মুহূর্ত না দেখলে মনে শান্তি পাই না। উনি সারাজীবনর জন্য আমার কাছ থেকে চলে গেলে আমি মরেই যাবো।

দরকার পরলে তিশা আপু কে বলবো তুমি আমার সব নিয়ে নাও আপু।বিনিময়ে দায়ানকে আমায় দিয়ে দাও।

অনেক ভালোবাসি আমি উনাকে। এখনো আমাদের একে অপরের কাছে ভালোবাসি বলা বাকি।এক সাথে পথ চলা বাকি। আমি তো উনার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। চোখের ভাষা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। আজও আমার অসুস্থতা নিয়ে কতোটা উতলা হয়ে উঠেছিল উনি।ভালোবাসা না থাকলে এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।

হাসপাতালের গেইটের দিকে হাঁটা দিতে দিতে বিরবির করে একটা কথাই বলছে সোহা।তুমি উনাকে কেড়ে নিও না তিশা আপু। উনি শুধু আমার। কেড়ে নিও না উনাকে।

পিছন থেকে একটা নার্স অনবরত ডেকে চলেছে সোহাকে সেই দিকে তার কোনো ধ্যা’নই নেই। সেতো এখন অন্য খেয়ালে আছে।

“ম্যাম আপনার রিপোর্ট গুলো এসে গেছে। ”

ম্যাম কোথায় যাচ্ছেন? রিপোর্ট গুলো নিন।

ম্যাম,,,,ম্যাম?

কে শুনে কার কথা ততক্ষণে সোহা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছে।

নার্স কে এমন ভাবে কাউকে ডাকতে দেখে দায়ানের স্যার+ সিনিয়র ডাক্তার এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? এমন ভাবে কাকে ডাকছো?

আসলে স্যার ম্যাম এতক্ষন উনার টেস্টের রিপোর্ট গুলোর জন্যই অপেক্ষা করছিলো এখানে বসে। কিন্তু এখনই মাত্র রিপোর্ট না নিয়ে উঠে চলে গেলো।

দায়ান স্যারও উনার ক্যাবিনে নেই।আশে পাশে কোথাও দেখলাম না। উনি নিজে দাড়িয়ে থেকে ম্যামের সব টেস্ট করিয়েছে।

দায়ানের রিলেটিভ নাকি মেয়েটা?

উনার ওয়াইফ নাকি স্যার।

মানে? দায়ান বিয়ে করলো কবে? আর আমি ও জানি না?

আমিও উনাকে ম’জা করে বলেছিলাম স্যার।উনি বললেন অনুষ্ঠান এখনো হয়নি।পারিবারিক ভাবে শুধু আ’কদ সম্পন্ন হয়েছে।

ওহ আচ্ছা। রিপোর্ট গুলো আমার কাছে দাও আমি দিয়ে দিবো দায়ান কে।

নার্স টা ফাইল টা এগিয়ে দিতে দিতে বলে,, স্যার মনে হয় ম্যামের হার্টে কোনো সমস্যা।

তোমার কেন এটা মনে হলো?

হার্টের রু’গী’দের যা যা টেস্ট করানো হয়।ম্যামের ও করিয়েছে।

ঠিক আছে তুমি তোমার কাজে যাও।

নার্স টা চলে গেলে উনি ফাইল টা নিয়ে নিজের ক্যাবিনে এসে টেবিলের উপর রাখে। তারপর ফ্রেশ হতে যায়।পাঁচ মিনিট পর বেরিয়ে আসে।

তখনই টেবিলের উপরে রাখা ফোন টা বেজে উঠে। টেবিল থেকে ফোনটা নেওয়ার সময় অসাবধানতা ব’শত ফাইল টা নিচে পরে রিপোর্টের কাগজ গুলো বেরিয়ে আসে।

ফোনে কথা বলতে বলতেই রিপোর্ট গুলো উঠাতে থাকেন। কিন্তু একটা রিপোর্টে গিয়ে চোখ আটকে যায়। ভুল দেখছে ভেবে কল কেটে আবার রিপোর্ট টা দেখে।তারপর একে একে সব গুলো রিপোর্ট দেখে।

রিপোর্ট গুলো নিয়ে উঠে চেয়ারে বসে মনে মনে বলে উঠে,,, ওহ মাই গড।

পাঁচ মিনিট রিপোর্টের দিকে স্থির তাকিয়ে থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে সব দেখে। তারপর দায়ানের নাম্বার বের করে কল লাগায়।

দায়ানের ফোন বন্ধ বলছে।আরো কয়েকবার লাগায় বার বার একই কথা বলছে। ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন।

———————

সোহা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে দায়ানের গাড়ি দেখতে পায় না। হয়তো গাড়ি নিয়ে গেছে।

প্রায় অনেক সময় দাড়িয়ে থাকার পরে একটা সি এন জি পায়। তাও অনেক ভাড়া দিতে হবে নয়তো যাবে না। রাত হয়ে গেছে বলে সোহা কথা বাড়ায় না। লোকটার দাবিই মেনে নেয়। সে শুধু বাড়ি যেতে চায় এখন।

গেইটের সামনে এসে লোকটার ভাড়া দিতে গিয়ে মনে হলো ব্যাগটা তো গাড়িতেই আছে ফোনের সাথে। এখন টাকা দিতে হবে।লোকটা কে বলে বাড়ি থেকে এনে তারপর দিচ্ছে। লোকটা কিছুতেই মানতে নারাজ।এখন সোহাকে যেতে দিলে নাকি সোহা পালিয়ে যাবে।

লোকটা সোহাকে যেতেও দিচ্ছে না। আবার চি’ল্লা চি’ল্লি ও করছে।

দায়ানের উপর এবার সোহার অনেক রা’গ হলো। কি ভাবে সোহাকে এমন বিপদে ফেলে চলে গেলো? গেলো তো গেলো একটা বার ও কি ভাবলো না।রাতের বেলা কি হবে মেয়েটার।

তখনই দারোয়ান এগিয়ে এসে জানতে চায় কি হয়েছে?
ড্রাইভার লোকটা ভাড়া না দেওয়ার কথা বলল।সোহা নাকি মিথ্যা বলে কেটে পরতে চাইছে এগুলোও বলল।সব শুনে দারোয়ান ড্রাইভার কে ইচ্ছে মতো বকে তারপর নিজে টাকা দিয়ে দেয়। লোকটা কাচুমাচু করে সি এন জি নিয়ে কেটে পরে।

সোহা চুপচাপ বাড়ির ভিতর ঢুকে। সকলে তখন ড্রইং রুমে বসে বসে গল্প করছে। অবশ্য রুশ আর দায়ানের বাবা আরো পরে আসবে।

দায়ানের মা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,,, কিরে মা তোর এতো দেরি হলো যে? আমরা তো ভেবেছি তুই দায়ানের সাথেই আছিস।

দায়ান কি এসেছে?

বড় ফুপি উনি আমার সাথে আসে নি।আমি একাই এসেছি।

ওহ আচ্ছা ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।খাবার দিচ্ছি কি না কি খেয়েছিস সারাদিন।মুখ টা দেখ কিরকম শুকিয়ে আছে।

আমি কিছু খাবো না। খেয়ে এসেছি। আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরবো।আমাকে কেউ ডেকো না।আমার মাথা ব্যাথা করছে। বলেই কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়।

তারপর ফ্রেশ না হয়েই গিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে।

সোহাকে কেউ আর ঘাটায় নি।রাতে যে দায়ান বাড়ি ফিরে নি এটা নিয়েও তারা বেশি চিন্তা করে নি।হয়তো হাসপাতালে কাজ আছে।তাই মোবাইল বন্ধ রেখেছে। বাড়িতে জানাতে ভুলে গেছে এটাই ভেবে নেয় সকলে।

—————
সোহা কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে নিজেও জানে না। পরের দিন চিৎকার চেচামেচি আর জিনিস পত্র ভাঙার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে বোঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে।

দায়ানের গলার স্বর শুনে তারাতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে আসে।নিচে আর নামেনি।উপর থেকেই দায়ানের জোরে জোরে বলা কথা গুলো শুনে স্ত’ব্ধ হয়ে রয়।

তিশা বেঁচে আছে তোমরা কেনো আমাকে বলোনি? কেন বলোনি? মিথ্যা কেন বলেছো আমায়?

চিৎকার করছে আর জিনিস পত্র ভাঙছে। হাত কেটে হাত দিয়ে র/ক্ত ঝড়ছে সেই দিকে তার খেয়াল নেই।

#চলবে,,,,,,,

বিঃদ্রঃ নিজেদের মতো কাহিনি ভেবে নিবেন না আগেই বলে দেই।ধৈর্য রাখুন শেষ পর্যন্ত দেখুন কি হয়। নিজের মতো ভেবে কষ্ট পেলে আমার এতে কোনো দোষ নেই। শেষ পর্যন্ত দেখতে থাকুন কি হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here