#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২২
#Jhorna_Islam
” আমার কাছে একটু আসতে পারবেন?”প্লিজ!
কি নিঃসংকোচ সেই আবদার! এরকম ডাক বুঝি সহজে কেউ অবহেলা করতে পারে? বুকের ভিতর টা নিজের অজান্তেই মোচড় দিয়ে উঠলো দায়ানের। কন্ঠ টাতে অনেক টা আকুলতা আর অপারগতা লুকিয়ে আছে বুঝি।
মেয়েটা ঠিক আছে তো? কিছু হয়নি তো আবার?
শুধু শুধু এইভাবে ডাকার মেয়েতো সোহা না।খানিকটা ভ’য় কাজ করছে মনে।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে সোহা?
তুমি ঠিক আছো তো?
প্লিজ আপনি তারাতাড়ি আসুন না।আমি একদম ঠিক নেই।আমার খুব ভ’য় করছে। আমার শরীর খারাপ লাগছে।
ওকে। আমি এখনই আসছি একদম ভ’য় পাবে না ঠিক আছে?
এখন কোথায় আছো আমাকে লোকেশন মেসেজ করো আমি এখনই আসছি। বলেই দায়ান ফোন কেটে দেয়।
মনে মনে নিজেকেই নিজে গা/লি ছুড়ে কেনো সে সোহাকে ওর কোচিং এর বান্ধবীদের সঙ্গে যেতে পার্মিশন দিলো।
তারপর দায়ান হাসপাতালের মিটিং রুমে প্রবেশ করে। ওখানে সকল ডাক্তারদের নিয়ে মিটিং বসেছে আজ।তাই দায়ান সকাল সকালই এসে পরেছে।প্রায় আধা ঘণ্টা মিটিং এর পর দশ মিনিটের জন্য ব্রেক দেওয়া হয়েছিলো। সকলেই যেনো একটু রিলেক্স করতে পারে।
এই দশ মিনিটের জন্য যে যার ক্যাবিনে চলে গিয়েছিলো।দায়ান ও তাই।ব্রেক শেষে বের হয়ে আবার মিটিং রুমে ঢুকতে নিবে দায়ানের আরেক সিনিয়র ডাক্তারের সাথে কথা বলতে বলতে তখনই দায়ানের ফোনটা পকেটে ভাইব্রেট হতে থাকে।
দায়ান ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে সোহার কল।তাই দায়ান এ’ক্স’কি’উ’জ’মি বলে একটু দূরে সরে যায় তারপর রিসিভ করতেই সোহা কথা গুলো বলে উঠে।
দায়ান মিটিং পুনরায় শুরু হওয়ার তিন মিনিট পর মিটিং রুমে প্রবেশ করে। তখন এক সিনিয়র ডাক্তার আর দায়ানের স্যার বক্তব্য রাখছিলো।দায়ান কে ঢুকতে দেখে জিজ্ঞেস করে এনি প্রবলেম দায়ান?
এ’কচু’য়া’লি স্যার,,, আই হেভ টু গো নাউ।ইট’স এন ইমার্জেন্সি।
স্যার কিছু একটা ভেবে তারপর বলে,,,ওকে যাও।মিটিং টা তো ভিডিও করে রাখা হচ্ছে তুমি পরে দেখে নিও।
ঠিক আছে স্যার।ধন্যবাদ বলেই দায়ান হাসপাতালের বাইরে হাঁটা দেয়। হাঁটতে হাঁটতেই হাতের ফোনের মেসেজ টিউন টা বেজে উঠে। সোহা লোকেশন সেন্ড করেছে।
তারপর দায়ান তারাতাড়ি গাড়িতে উঠে গাড়ি দিয়ে সোহার পাঠানো ঠিকানা তে যেতে থাকে।
বার বার একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে দায়ানের কেন যে কাল যখন সোহা তার কোচিং এর বান্ধবীদের সঙ্গে যখন দেখা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলো সকলের কাছে তখন দায়ান কেনো না করলো না? না জানি মেয়েটার কি হয়েছে।
দায়ান গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দেয়।যতো দ্রুত পৌছানো যায়। ত্রিশ মিনিটের রাস্তা দায়ান দশ মিনিটে শেষ করে একটা শপিংমলের সামনে এসে থামে।তারপর গাড়িটা তাড়াতাড়ি পার্কিং করে দৌড়ে মলের ভিতর ঢুকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে সোহাকে খোঁজার চেষ্টা করে। না খোঁজে পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে কল লাগায়।
সোহা কল রিসিভ করে কিছু বলবে তার আগেই দায়ান বলে কোথায় আছো আমি পৌঁছে গেছি।
পশ্চিমের দিকে আসুন একটু।
দায়ান সোহার কথা মতো গিয়ে দেখে দুইটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আরেকটা মেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। দায়ানের আর বুঝতে বাকি নেই ঐটাই সোহা।। প্রায় দৌড়ে ঐখানে যায়।৷
কি ব্যাপার সোহা কি হয়েছে তোমার?..
সোহা মাথা তুলে মলিন মুখ করে দায়ানের দিকে তাকায়। মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। চোখের কোণে অশ্রু জমে হালকা ফুলে লাল হয়ে আছে।
দায়ান কে দেখে কান্নারা যেমন বি’দ্রো’হ করে বাইরে বের হয়ে আসতে চাইছে। মুখ দিয়ে এবার যেনো একটা কথা ও বের হচ্ছে না। সব গলায় আটকে আছে।
সোহাকে চুপ করে থাকতে দেখে পাশের দাঁড়ানো একটা মেয়ে বলে উঠে। আসলে ভাইয়া হয়েছে কি আমরা একটু ঘুরাঘুরি করে শপিং করে দেন খেয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার প্লে’ন করেছিলাম।
তো সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এখানে আসতেছিলাম।শপিং মলের সামনেই কয়েক জন লোক কিছু একটা নিয়ে কথা কাটাকাটি করছিলো।তো এক পর্যায়ে একটা লোকের মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয় তারপর ধাক্কা মারে।যার ফলে লোকটা ছিটকে এসে সোহার পায়ের কাছে এসে পরে।লোকটার মাথা দিয়ে প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছিল। সোহার পায়ের সামনে পরেই কা’ত’রা’তে থাকে।
তারপর থেকেই সোহা কেমন যেনো করছে। আমরা ওকে ধরে এনে এখানে বসিয়েছি। তারপর কিছু টা ঠিক হয়েই আপনাকে কল দিয়েছে।
দায়ান সব শুনে সোহার দিকে এগিয়ে আসে।হাঁটু গেঁ’ড়ে সোহার সামনে বসে। সামনের ছোট্ট চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। যত্ন করে নিজের হাতে ঠিক করে দেয়।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়।
ঠিক আছো না এখন?
সোহা মাথা কা’ত করে যে সে ঠিক আছে।
দায়ান সোহার হাতের দিকে তাকিয়েই বোঝে গেলো মেয়েটা এখনো ভ’য় পাচ্ছে হাতগুলো মৃদু কাঁপছে।
দায়ান সোহার দুই হাত নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে। রিলেক্স একদম ভ’য় পেয়ো না।ঐসব ভুলে যাও।ভাবো কিছুই হয়নি তুমি ঐসব দেখোনি ঠিক আছে?
আমি আছি না? আর একটুও ভ’য় পেওনা।
এখন উঠতে পারবে?
সোহা নিজেকে একটু ধা’ত’স্ত করে উঠে দাঁড়ায়। তখন ও দায়ান তার হাত ছাড়েনি।
সোহার মন থেকে এখনই ভ’য় টা দূর করতে হবে। নয়তো এটার বে’ড এফে’ক্ট পরবে পরবর্তীতে সোহার উপর। তাই দায়ান সোহার হাত ধরে নিজেই সোহাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে তার বান্ধবীদের বলে,, তোমরা ও আসো আমার সাথে। প্রায় অনেক সময় তো হলো বাড়ি থেকে বের হয়েছো নিশ্চয়ই খুব খিদে পেয়েছে। এখানকার সেকেন্ড ফ্লোরে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে।খুব ভালো খাবার পাওয়া যায়। আজ আমার তরফ থেকে তোমাদের জন্য ট্রিট।
তারপর সকলেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে।দায়ান সকলের পছন্দ জেনে তারপর খাবার অর্ডার দেয়। সোহা এখনো চুপচাপ বসে আছে। দায়ান সোহার হাত টায় হালকা একটু চা’প দিয়ে আস্তে করে বলে,,,একটু ফ্রি হও সোহা।দেখো তোমার জন্য ওদের মধ্যে কেমন জড়তা কাজ করছে।
সোহা ওদের দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই ওরা কেমন জড়তা নিয়ে বসে আছে। তারপর সোহা একটু ঠিক ঠাক হয়ে বসে।
দায়ান ওদের কে সহজ হওয়ার জন্য পরিচয় জানতে চায়। সকলেই ওদের পরিচয় জানায়।দায়ান ও নিজের পরিচয় দেয়। খাবার টেবিলে আসলে সবাই কে সহজ হয়ে খেতে বলে। দায়ানের ব্যবহারে সকলেই এবার জড়তা কাটিয়ে আস্তে আস্তে খেতে থাকে। সোহা শুধু খাবার নাড়াচাড়া করছে।
সোহা ভালো করে খাও।তুমিতো কিছুই খাচ্ছ না।
আমি আর খাবো না।
কিন্তু,,,,,,,,
প্লিজ,, সোহা অসহায় দৃষ্টিতে বলে।তাই দায়ান আর জোর করে না।সকলেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। ওরা দুজন বেরিয়ে যেতে চাইলে দায়ান বাঁধা দেয়। জানায় সে নিজে দিয়ে আসবে।এমন ভর দুপুরে গাড়ি পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে ওদের জন্য। সোহা ও বলে গাড়িতে উঠে বসতে।তারপর দায়ান দুইজন কে গাড়ি দিয়ে ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আসে।
সোহা গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
দায়ান বুঝতে পেরেছে সোহার মনে ঐ ঘটনা টা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তাই সে গাড়ি ঘুরিয়ে শহরের থেকে একটু দূরে নদীর পাড়ের দিকে যাওয়ার সিধান্ত নিয়ে গাড়ি চালায়।খোলা মেলা পরিবেশে গেলে হয়তো মনটা ভালো হবে।
সোহার বু’কে আস্তে আস্তে যে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হচ্ছে তা সে বুঝতে পারছে। নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। হয়তো এতে ব্যাথাটা একটু কমবে।কিন্তু না বেড়েই চলেছে এই অসহ্য যন্ত্রনা।আর সহ্য করতে পারছে না।সাথে শ্বাস ও নিতে পারছে না। অনেক কষ্ট হচ্ছে।
কয়েক বার জোরে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছু টা ধা’তস্ত করে দায়ানের হাত খা’ম’চে ধরে।
দায়ান হঠাৎ করে এমন হওয়ায় গাড়ি চালাতে চালাতে সোহার দিকে তাকায়। সোহা কিছু বলতে চাচ্ছে।
দায়ান দ্রুত গাড়ির ব্রেক করে।সোহার কাছে এগিয়ে বলে,,,, কি হয়েছে সোহা খারাপ লাগছে? কষ্ট হচ্ছে বলো আমায়?
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,, আমার বুকে খুব ব্যাথা করছে সহ্য করতে পারছি না আমি। নিশ্বাস নিতে পারছিনা।গলায় যেমন কেউ টিপে ধরে রেখেছে যেনো শ্বাস নিতে না পারি। শ্বাস কষ্ট হচ্ছে আমার।
দায়ানের খুব অসহায় লাগছে এখন নিজেকে।ডাক্তার হয়েও মাথা কাজ করছে না তার।সোহা জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। অনেকটাই দূরে এসে পরেছে দায়ান গাড়ি নিয়ে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কেন যে এখানে আসতে গেলো।নিজের চুল এবার নিজেই টেনে ধরে দায়ান।
সোহা দায়ানের হাত এমন ভাবে খা’মচে ধরেছে ছিলে র/ক্ত বের হয়ে গেছে। সোহা আস্তে আস্তে নেতিয়ে পরছে।
দায়ান চোখ বন্ধ করে কিছু সময় নিয়ে কিছু একটা ভাবে।তারপর সোহার দিকে তাকায়।
সোহা অসহায় চোখে দায়ানের দিকেই তাকিয়ে আছে।
দায়ান তার শুকনো গলা ঢুক গিলে ভিজিয়ে নেয়।তারপর সোহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,,,,,,,, আ’ম স’রি! সো স’রি জান।
সোহা দায়ানের দিকে প্র’শ্না’ত্ত’ক দৃষ্টিতে তাকায়।
দায়ান আবার বলে,,,, আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ। এটা ছাড়া এখন আর আমি কোনো উপায় দেখছি না। আমি চাইনি আমাদের কাছে আসা।প্রথম স্পর্শ এমন ভাবে হোক। বাট আ’ম হেল্পলেস।বলেই সোহাকে দুই হাত দিয়ে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর,,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,