#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৫(বোনাস)
#Jhorna_Islam
“আই লাভ ইউ দায়ান।”
কথাটা বলেই সোহা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে ল’জ্জা’য়। প্রচুর ল’জ্জা লাগছে তার।ইশশশ ভালোবাসি কথাটা বলতে এতো ল’জ্জা অ’স্ব’স্তি ঘিরে ধরে কেনো?
না না আই লাভ ইউ কথাটাতে এতোটা ও ফিলিংস কাজ করে না।যতোটা আমি আপনাকে ভালোবাসি কথাটাতে কাজ করে।
ইংরেজিতে লাভ ইউ বলার থেকে বাংলায় ভালোবাসি কথাটা বেশি সুন্দর।
তাছাড়া কেউ খুব সহজেই আই লাভ ইউ বলে দিতে পারে।আমি তোমাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারে না কেউ সহজে যদি কারো ভালোবাসায় কোনো খা”দ থাকে তাহলে একটু হলেও শব্দ তিনটি বলার আগে মুখে আটকাবে।
সোহা আই লাভ ইউ কথাটা খাতায় লিখে ছিলো।কিন্তু মন মতো হয়নি বলে কেটে খাতা থেকে ছিড়ে ফেলে।সোহা ঠিক করে রেখেছে ভালোবাসি কথাটা দায়ান কে চিরকুট হিসেবে দিবে।মুখে গিয়ে দায়ানের সামনে বলতেই পারবেনা।ল’জ্জা জড়তা সব এসে এক সাথে আ”ষ্টে পি’ষ্টে জড়িয়ে ধরবে।
মানুষের মনে যখন ল’জ্জা এসে হা’না দেয়।তখন মনের ভাব অন্য কে জানানোর জন্য চিঠির চেয়ে সুন্দর পদ্ধতি হতেই পারে না।
একটার পরে একটা করে চিঠি লিখছে আর কেটে ফেলে খাতার পৃষ্ঠা ছিড়ে নিচে ফেলে দিচ্ছে। একটাও মন মতো হচ্ছে না।
—————————–
ঐদিনের পরে আরো এক মাসের মতো কেটে গেছে। রিসেশনে ঐদিন দায়ান আর যেতে পারে নি।সোহা দায়ানের মায়ের থেকে জানতে পেরেছিলো,,সোহাদের বাড়ি থেকে এসেই দায়ান হসপিটালে জয়েন হয়।আর কাজে প্রচুর ব্যস্ত হয়ে পরে। ডাক্তার দের তো আর ছুটি নেই।ওদের দিন রাত পার হয়ে যায় হাসপাতালে রু’গি’র সেবা করে।
রুশের রিসেশনের দিন ও দায়ান ছুটি পায় নি।মাত্র দুই ঘন্টার জন্য ছুটি নিয়ে সন্ধায় এসেছিলো।কিন্তু একটা রু”গির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো জরুরি অপারেশন করতে হবে নয়তো লোকটাকে বাচানো যাবে না। এজন্য দায়ান কে ফোন করা হয়েছে। তাই চলে যেতে হয়েছিলো।
সোহার আর তার পরিবারের লোকজন ঐদিন আর ফিরে আসেনি।থেকে গেছে দায়ানদের বাড়িতে।
পরেরদিন খুব ভোরেই সোহা ঘুম থেকে উঠে দায়ানদের বাড়ির ছাদে যায়।ছাদে গিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে রয়। চোখের পলক ই যেনো ফেলতে ভুলে গেছে।
দায়ান ছাদে থ্রি কোয়াটার টাউজার আর হাতা কাটা টিশার্ট পরে বু’ক ডাউন দিচ্ছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে।উফফ কি সুন্দর যে লাগছে।
দায়ান হঠাৎ করে ছাদে কারো অস্তিত্ব টে’র পেয়ে তাকিয়ে দেখে সোহা।তাই তারাতাড়ি করে উঠে দাঁড়ায়।
হেই পিচ্চি বন্ধু কি অবস্থা তোমার?
আপনাকে বলবো কেনো আমার অবস্থা? হুয়াই?
ওরে বাবা রাগ করেছো বুঝি আমার উপর?
এটাও বলবো না!
আচ্ছা বলতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি। আমার ডাক্তার ম্যাডাম আমার উপর প্রচুর খে”পে আছে।
আসলে আমি স’রি। তোমাদের বাড়ি থেকে আসার পর হসপিটালে জয়েন হয়ে একটুও সময় হয়ে উঠেনি।দেখলেই তো কাল যাই একটু সময় নিয়ে এসেছিলাম তাও চলে যেতে হলো।
তারপর সোহা মনে মনে বললো আপনার মায়ের কাছে শুনেছি।মুখে কিছু বলেনা চুপ করে থাকে।
সোহাকে চুপ করে থাকতে দেখে দায়ান বলে,,ঠিক আছে আর রা’গ করো না কয়েকদিন আমাদের বাড়িতে থেকে যাও।আমি সময় বুঝে আমাদের শহর তোমায় ঘুরিয়ে দেখাবো।
থাক আর ঘু”ষ দিতে হবে না। আমি উনাকে আমাদের গ্রামে ঘুরিয়েছি বলে উনি উনাদের শহরে ঘুরিয়ে সমান সমান করতে চাইছে হুহ।
আরে কি বলো ঘু”ষ কেনো হবে? তুমি আমার বি’য়া’ই’ন না? তার উপর আবার আমার ডাক্তার পিচ্চি বন্ধু।তোমার একটা হ”ক আছে না?
সোহা তারপর কিছু একটা ভেবে বলে ঠিক আছে। আপনি আগে ফ্রি হোন পরবর্তীতে এসে ঘুরবো।আজ আপুকে নিয়ে চলে যাবো।
আচ্ছা ঠিক আছে। এই কয়েকদিন আমারো একটু বেশি কাজের চা’প।তারপর হয়তো একটু ফ্রি হবো।
তারপর সোহা তার বাবা মায়ের সাথে নোহা ও রুশকে নিয়ে ঐদিন ই সকালের খাবার খেয়ে চলে যায়।
ওখানে গিয়ে রুশ আর নোহা আরো এক সপ্তাহ থাকে।
সোহার এইচএসসির রেজাল্ট দিতে আরো অনেক দেরি। ভালোভাবে পড়াশোনা করে এডমিশন টেষ্ট দিতে পারলেতো চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু এই মেয়ে পড়ছেই না।আগে যাই নোহা জোর করে পড়তে বসাতো। এখন তো নোহা ও নেই। সোহা নোহাকে ছাড়া কারো কাছে পড়তেও চায় না যে, টিচার রেখে দিবে।
এসব নিয়ে নোহার বাবা মা নোহা ও রুশের সাথে আলাপ করেছিলো।
রুশ সব কথা শুনে বলে,,,,সোহাকেও তাদের সাথে নিয়ে যাবে।ওখানে নোহা পরাবে।না হয় কোচিং এ ভর্তি ও করিয়ে দিবো।আর বাড়িতে ও এক্সট্রা টিচার রেখে দিলাম কোনো সমস্যা নেই। আর এডমিশনের জন্য ঢাকা তো যেতেই হবে।
নোহা রুশের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়। বোনকে তাহলে নিজের কাছে রাখতে পারবে।বাবা মা কে ও বলে রাজি হওয়ার জন্য।
সোহার বাবা মা ভেবে বলে,,দেখ তোরা যা ভালো বুঝিস কর।কিন্তু সোহা কি যেতে রাজি হবে?
নোহা বলে,,এটা না হয় আমার উপর ছেড়ে দাও।
নোহা গিয়ে সব সোহাকে বলে। সোহা সব শুনে প্রথমে রাজি হয় না। নোহার জোরাজোরিতে আর দায়ান কে দেখতে পাবে এই ভেবে পরে রাজি হতে যায়।
পরেরদিন ব্যাগ পেক করে রুশ আর নোহার সাথে সোহা ও দায়ানদের বাড়িতে উপস্থিত হয়। সকলেই ওদের সাথে সোহাকে দেখে অনেক খুশি হয়।
——————–
দায়ানের সাথে সোহার আবার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। হাসপাতাল থেকে ছুটি বা বন্ধ পেলেই দুটিতে মিলে শহর ভ্রমনে বেরিয়ে পরে।
সোহা তো দায়ান বলতে এখন প্রায় পা/গল।সারাক্ষণ দায়ানের সাথে দুষ্টুমি করে।
দায়ান ও সোহাকে তেমন কিছু বলে না।মনে মনে হয়তো সোহার দুষ্টুমি গুলো সেও বেশ উপভোগ করে।
দায়ান যতক্ষন বাড়িতে থাকবে সোহা সারাক্ষণ দায়ান কে লুকিয়েছে লুকিয়ে দেখতে থাকে।কি যে ভালো লাগে। ইচ্ছে করে দায়ানকে নিজের সামনে বসে পলকহীন ভাবে দায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকতে।
সোহা এতোদিনে নিজের মন কে বোঝে গেছে।যে সে কেনো দায়ানকে এক পলক দেখার জন্য উতলা হয়ে উঠে। দায়ান কাছাকাছি থাকলে কেনো তার বুকটা শব্দ করে ঢিপ ঢিপ করে। আসলে এসব তো ভালোবাসারই একটা অংশ। হে সোহা দায়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে। এই লোকটা কে ছাড়া সোহা এখন কিছু ভাবতেই পারে না। দায়ানের মনে কি চলছে তা সোহা জানে না। সে শুধু জানে দায়ানকে সে ভালোবাসে।জীবন টা দায়ানের সাথেই কাটাতে চায়। দায়ান কে পাওয়ার জন্য যা করা লাগে করবে।সোহার শুধু একটাই চাওয়া লোকটা যেনো সোহার ভালোবাসা বোঝে।সোহাকে ও যেনো একটু ভালোবাসে।
————————-
আজ দায়ানের মায়ের সাথে দায়ানের হাসপাতালে গিয়ে ছিলো দুপুরের খাবার নিয়ে।
দায়ানের মায়ের সাথে ক্যাবিনে ঢুকে দেখতে পায়,, দায়ান একটা নার্সের সাথে কি যেনো নিয়ে কথা বলছে আর হাসছে।
এই দৃশ্য দেখে সোহাট মাথায় র/ক্ত উঠে যায়।উনি কেনো এই সুন্দরী সাথে হেসে হেসে কথা বলবে? নার্সের চাহনি দেখেই বোঝে গেছে সোহা যে মেয়ে টা দায়ানকে হয়তো পছন্দ করে।
তমা শাঁ/কচু”ন্নি থেকে বাঁচিয়েছে। আর কতোজন থেকে বাঁচাতে হবে? লোকটা দিন দিন এতো সুন্দর হচ্ছে কেনো?
এসব ভেবে দায়ানের সাথে কথা না বলেই আজ এসে পরেছে।এসেই সেই যে বসেছে চিঠি লিখা নিয়ে। কিন্তু একটাও মন মতো হচ্ছে না ধূ”র।
ইচ্ছে করছে দায়ানকে নিজের আঁচলের তলায় লুকিয়ে রাখতে।তাহলে যদি কেউ লোকটার দিকে না তাকায়।
#চলবে,,,,,,,,,,,
বিঃদ্রঃ কেমন হলো জানাবেন।