#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৩
#Jhorna_Islam
ছিঃ ছিঃ ছিঃ এই শহইরা পোলাপানগো স্বভাব চরিত্র যে ভালো হয় না সেইটা এই পোলায় প্রমান করে দিলো।
আমাদের গ্রামে এইসব অন্যায় কখনো মেনে নিবো না এর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবো।
এতে বড় মাপের একজন লোকের বাড়িতে এইসব কিছু হচ্ছে। এসব দেখে গ্রামের অন্যরা কি শিখবে?
শাস্তি দিয়ে তারপর সব কথা।কিন্তু মেয়েটার কথা ও তো ভাবতে হবে।
মেয়েটার কি হবে।এই মেয়েকে কে বিয়ে করবে? বদনাম হয়ে যাবে। তাই যা করার আমাদেরই করে দিতে হবে। এই মেয়ের সাথেই ছেলেটার বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।
গ্রামের কয়েকজন লোক আরো নানান কথা বলতে বলতে উত্তরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তাদের সাথে আছে তমার টাকা দিয়ে ঠিক করা ছেলে।এই ছেলেটা যতো চু’রি আছে করে বেড়ায়। গ্রামের কিছু লোকজন ভুল ভা’ল বুঝিয়ে এখানে নিয়ে আসতেছে।
গ্রামের লোক একটা কিছু পাইলেই চলে।ভুল কোনটা আর সঠিক কোনটা হিসাব করে না। আর তিল থেকে তাল বানাতে এরা খুব ও’স্তা’দ।
তারপর গ্রামের লোক গুলো নির্দিষ্ট জায়গায় এসে দাঁড়ায়। সামনে অন্ধকারে দুইটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে কি যেনো করছে বসে বসে। লোকগুলো তাদের মন মতো করে অন্য কিছু ভেবে নিয়েছে। যা খারাপ কিছুর ই ইঙ্গিত দেয়।
তমার ঠিক করা ছেলেটাও গ্রামের লোক গুলো কে আরো ফুসলিয়ে দেয়।
দেখেছেন আমি ঠিক বলে ছিলাম।এই ছেলে টা কি করছে দেখেন। মেয়েটাকে হাতে ধরে জোর করে নিয়ে এসেছে এখানে আমি নিজের চোখে দেখেছি। মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই।তাই আমার মনে হয় মেয়েটার সাথে ছেলেটার বিয়ে দিয়ে দিলে ভালো হবে।
এই দিকে তমা বা দায়ান কোনো কথা বলছে না চুপ করে বসে আছে।
এই ছেলেটার সাহস দেখলে তো আমি অবাক হয়ে যাই।এখনো মেয়েটাকে ধরে বসে আছে।
এই ছেলে ওকে ছেড়ে দাড়াও বলছি।এই কেউ লাইট নিয়ে আয়।
তারপর কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে লাইট এনে একজনকে দেয়।লোকটা সামনের দিকে থাকা অবয়ব দুটোর দিকে লাইট ধরে।
সামনের দিকের দৃশ্য এবার সবটাই দৃশ্যমান। সবাই হা করে সামনে তাকিয়ে আছে। এ কি দেখছে সকলে? এসব কি? কেউই কিছু বুঝতে পারে না।
তমার ঠিক করা ছেলে টা তমার কাছে দৌড়ে আসতে গিয়ে ঐখানে বেঁধে রাখা দড়ি তে পা আঁটকে মুখ থু’ব’ড়ে মাটিতে পরে। পরে আর্তনাদ করে উঠে। প্রচুর ব্যাথা পেয়েছে ছেলেটা।হয়তো পা টাও ম’চকে গেছে।
অথচ এই ছেলের দিকে কারো কোনো হুঁশ নেই। ওরাতো সামনে কি হচ্ছে এসবই ভাবার চেষ্টা করছে।
তারপর একটা লোক প্রশ্ন করেই ফেলে,,,,কি হচ্ছে কি এসব?
সোহা এসব কি হচ্ছে? তুমি তমাকে এমন ভাবে ধরে রেখেছো কেনো? আর তমার এই অবস্থা কেনো? মনে হচ্ছে চু’রি করতে গিয়ে ধরা পরে গেছে আর লোকে মেরেছে।
সামনে আর কেউ না সোহা আর তমা। সোহা এক হাতে তমার মুখ চেপে ধরে আরেক হাতে চুল টেনে ধরে বসে আছে। তমার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে প্রচুর মার খেয়েছে বেচারি।
কি হলো সোহা আমাদের সব খুলে বলছো না কেনো?
আরে আর বইলেন না কাকা।আমার সুন্দরী বান্ধবী তমা কে জি’ন এ আ”ছ”র করেছে।
কি বলো এগুলো?
ঠিকই বলছি কাকারা।আপনারা তো জানেন ই আমাদের তমা টা দেখতে কতো সুন্দরী। তার উপর আজ যা সেজেছে বলার বাইরে। আপনারা তো দেখেছেন ই।
আমাদের গ্রামে তো আবার তেনারা থাকে তাই না কাকা?
আমি অনুষ্ঠানেই ছিলাম তারপর দেখলাম তমা কার সাথে যেনো একা একাই কথা বলছে।আমার তো মনে সন্দেহ জাগে।আরে আমার বা’ন্দ’র’নি থু”ড়ি বান্ধবী একা একা কার সাথে কথা বলছে? সে তো এমন না। নিশ্চয়ই কিছু গ’র্ব’র আছে।
তারপর দেখলাম এদিকে আসছে আমিও সাথে আসলাম।এসে দেখছি একা একাই বলছে,,চলো চলো তোমার সাথে আমি চলে যাবো।তারপর তোমার কাঁধে চড়ে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াবো।মানুষ হয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না আমাকেও তোমার মতো করে নেও।
আমি যা বোঝার বুঝে গেলাম।আমার বান্ধবীরে তেনারা নিয়ে যাবে।বান্ধবী আমার মাত্র হাত বাড়িয়েছে নিয়ে যাওয়ার জন্য বুঝলেন? কিন্তু তেনারা ওর হাত ধরার আগেই আমি ধরে ফেলি।
সে কি শক্তি কি বলবো আপনাদের। আমি কিছুতেই পেরে উঠতে ছিলাম না।ধ’স্তা ধ’স্তি লেগে গেছে প্রায়। আমিও মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি যতো যাই হোক তমা কে আমি ছাড়বনা কথাটা সোহা তমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
সোহার ছাড়বনা কথাটার মাঝে হাজারো ক্রো’ধ,,, অন্য কেউ বোঝতে না পারলেও তমা ঠিক ই বুঝেছে।
তমা নিজেকে সোহার হাত বাড়িয়ে ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা করছে।কিছুতেই পারছে না।চুলের গোড়ালি ব্যাথা হয়ে গেছে। মুখের মধ্যে সোহা এমন ভাবে চেপে ধরে আছে মনে হচ্ছে চা’পা ভেঙে যাবে।দাতের গোড়ায় ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।
শরীরে এক বিন্দু পরিমাণ শক্তি পাচ্ছে না তমা।সোহা তাকে প্রচুর মার মেরেছে। হঠাৎ করে হওয়ায় তমা কিছুই বুঝে নি। সে তো অন্য ধ্যানে ছিলো।উজ্জল ভবিষ্যতের স্বপনে বিভোর।
যতক্ষনে বুঝতে পারে ততক্ষণে সোহা তাকে মেরে অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে। এখন কাউকে কিছু বলতেও পারছে না সোহার মুখ চেপে ধরে রাখার জন্য।
তমা বুঝতেই পারছে না এখানে দায়ানের জায়গায় সোহা কি করে আসলো। সব তো ঠিক ঠাক ই হচ্ছিল। তাহলে মাঝখান থেকে উল্টো হয়ে গেলো কি করে?
তমার এসব ভাবনার মাঝেই গ্রামের লোক গুলো সোহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,,, কি বলো মা তমারে তো মনে হয় তে’নারা ভর করেছে।ওরে যে করেই হোক সাথে করে নিয়ে যাবে তারা।।।
আহারে মেয়েটার বয়সই বা কতে।পৃথিবীর আলো বাতাস ও ভালো করে উপভোগ করতে পারে নি। আমাদের ই কিছু একটা করতে হবে।
এই কেউ গিয়ে ঝাড়ু,ছেড়া জোতা,, শুকনা মরিচ নিয়ে আয়।
সোহা বলে উঠে হ্যা চাচা যা করার তারাতাড়ি করুন।আহারে আমাদের তমা সুন্দরী টাহ্। সোহা তমার সাথে কি হতে চলেছে ভিতরে ভিতরে তা ভেবে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মুখে দুঃখী ভাব টা ফুটিয়ে রেখেছে এখন কিছুতেই হাসা যাবে না।
তারপর গ্রামের কিছু লোক তমার উপর জি’ন তাড়ানোর টো”টকা শুরু করে দেয়। এখানে যারা যারা আছে তাদেরকে সোহা আবার বারণ করে দেয় যেনো বিয়ের অনুষ্ঠানে এসব কথা না যায়।সকলেই সম্মতি জানায়।
তমাকে তার জা”ল বিছানো দরি মানে যেটা বেঁধে রেখেছিলো দায়ান অন্ধকারে আসলে এইটায় বেজে যেনো নিচে পরে যায় আর তমা দায়ানকে দেখে তার বরাবর গিয়ে দাড়াবে যেনো তমার উপরই গিয়ে দায়ান পরে।আর ঐ সময় ছেলেটাও গ্রামের কিছু লোক নিয়ে এসে ওদের এই অবস্থায় দেখলে নিশ্চই বিয়ে দিয়ে দিবে।
কিন্তু কথায় আছে না? ” পরের জন্য খা”দ তৈরি করলে সেই খা”দে নিজেরই পরা লাগে।”
তমার বেলাতে ও ঠিক তাই হয়েছে। ওর সেই দড়ি টা দিয়েই ওর হাত পা বাঁধা হয়েছে।
তারপর শুকনো মরিচ পোড়া দিয়ে তমার নাকের কাছে নেওয়া হয়।তমার তো দফারফা অবস্থা। কাশি উঠে গেছে।
একটা লোক বলছে তুই কেন মেয়েটার ঘাড়ে চাপলি? চলে যা।যা বলছি।
সোহা এখনো মুখ চেপে ধরে আছে। তমা মরিচ সরানোর জন্য মাথা দুলিয়ে না না করছে আর ওমম ওমম শব্দ করছে।লোকটা ভাবলো তমার মাঝে থাকা জি”নটা বুঝি বলছে যাবে না। তারপর মরিচ নেয় তমার নাকের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়।এবার ঝাল সহ্য করতে পারে না। লোকটা মরিচ থেরাপি শেষ করে আবার,, জোতা থেরাপি করে।সব শেষে ঝাড়ু দিয়ে ইচ্ছে মতো কয়েক টা লাগায়।
এতো অত্যাচার তমা আর সহ্য করতে পারে না সোহার উপরেই নেতিয়ে পরে গোঙাতে থাকে।সোহা প্রথমেই কিছু উত্তম মাধ্যম দিয়েছে তার উপর আবার এই লোকদের জি”ন তাড়ানোর অত্যাচার সব মিলিয়ে তমার অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা।
সোহার এবার মায়া লাগলো বেচারির জন্য। আজকের জন্য অনেক খেয়েছে।শিক্ষা হলে এটুকুতেই হবে।এই মাইরের কথা যতো দিন মনে থাকবে ততোদিন আর কোনো ছেলের দিকে চোখ তুলে তমা তাকাবে বলে মনে হয় না।
লোকটা আবার তমা কে কিছু করতে গেলে সোহা বাঁধা দেয়। কাকা অনেক হয়েছে।আর কিছু করতে হবে না। হয়তো চলে গেছে দেখেন না তমা কি রকম নেতিয়ে পরেছে।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোক গুলো ও সোহার কথায় সম্মতি জানায়। দুইটা মহিলা তমা কে ধরে ওদের বাড়িতে নিয়ে যেতে থাকে।
সোহা উঠে দাড়িয়ে এবার ঐ ছেলেটার কাছে আসে।ছেলেটা বসে বসে এতক্ষন তমার সাথে কি করছে এসবই দেখতে ছিলো।নিজের অপরাধের কথা প্রায় ভুলেই গেছে।
সোহা ছেলেটার কলার ধরে দাড় করিয়ে এক চ’ড় লাগিয়ে দেয়। তুই যেনো কি বলছিলি তমাকে কে যেনো টেনে এখানে নিয়ে আসছে? বলেই আরো একটা লাগায়।
লোকগুলোর ও এবার হুঁশ আসে।হ্যা তাইতো এই ছেলেটাই আমাদের ভুল বুঝিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে। এই ধর সবাই এটা কে।
ছেলেটা মচকানো পা নিয়েই দৌড়াতে থাকে পালানোর জন্য। গ্রামের লোক গুলো ও ছেলেটার পিছনে ছুটে ধরার জন্য। ধরতে পারলে এটা কেও আধমরা করে ছাড়বে।
সোহা ওদের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। ভাগ্যিস রুশ ভাইয়া বলে ছিলো,,দায়ান কে ছাড়া তিনি কবুল বলবেন না। তাইতো সোহা দায়ানকে খুঁজতে থাকে।
তারপর দেখতে পায় দায়ান এদিকে আসছে।সোহা দৌড়ে এসে দায়ানের পাশে দাড়ায়।
আপনি এদিকে কোথায় যাচ্ছেন? ঐদিকে রুশ ভাইয়া আপনার জন্য বসে আছে। তারাতাড়ি যান সকলেই আপনারা জন্য অপেক্ষা করছে।
তুমিই না বললে আমায় নাকি কি বলবে? উত্তরের দিকে দাঁড়িয়ে আছো।তাইতো যাচ্ছিলাম এখন দেখি তুমি ঐদিক থেকে আসছো।
আমি? আমি আবার কখন বললাম?
একটা ছেলেকে পাঠিয়েছো বলার জন্য।
সোহা কিছু সময় ভেবে ধরে ফেলে নিশ্চিত কোনো কিছু ঘা”পলা আছে। তাই দায়ানকে বলে,,,আপনি যান আমি দেখছি ব্যাপারটা।
থাক তোমার আর দেখতে হবে না। হয়তো ছেলে টা ম’জা করেছে তুমিও চলো।একা একা ভ’য় পাবে।
পাবোনা আপনি যান।
দায়ান তাও সোহাকে না করেছে যেতে।কিন্তু শুনেনি।রহস্য বের করতে নেমে পরে দায়ানকে ভিতরে পাঠিয়ে।
তারপর উত্তরের দিকে গিয়ে তমার সব কথাই শুনে ফেলে সোহা।তারপর অন্ধকারে কিছুক্ষন চুলে ধরে কয়েকটা লাগিয়ে দেয়।
তখনকার কথা ভাবতে ভাবতেই মনে পরে বিয়ের কথা।বোনের কাছে থাকতে হবে। দৌড়ে যেতে থাকে নোহার কাছে।
#চলবে,,,,,,,
বিঃদ্রঃ তমার সাথে দায়ানকে মিলানোর কথায় তোমরা সকলেই আমাকেে বকেছো।এবার ভালো মন্তব্য করে একটু খুশি করে দেও।শাস্তি টা কেমন হলো জানিও।