#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৪
#Jhorna_Islam
সোহা নিজের রুমে এসে হাঁ’পা’তে থাকে। কার সাথে ম’শ’করা করার কথা ছিলো কার সাথে করে এসেছে।
উফফ আশে পাশে খেয়াল করে তারপর মজা করার দরকার ছিলো। কি করতে গিয়ে কি করে এসেছে।
সব সময় তোর দ্বা’রা একটা না একটা ভুল হবেই সোহা।ধূর আজ কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠলাম। পরোক্ষনেই আবার মনে পরে যায়। এইরে সকালে ঘুম থেকে উঠে আমিতো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমার মুখই দেখেছিলাম আগে।৷ আরো নানা ধরনের কথা বিরবির করে বলতে বলতে চোখ খুলে তাকায়।
চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে আবার ওমাগোওওওও বলে চিৎকার করতে গিয়েও মুখে হাত দিয়ে আটকে ফেলে।
সোহার সামনে তার প্রান প্রিয় বোন নোহা প’ল’কহীন দৃ’ষ্টি’তে তাকিয়ে আছে।
উফফ আপু তুই কি বলতো? এভাবে কেউ ভূ’তের মতো সামনে এসে দাড়িয়ে থাকে? তুই জানিস না এমনিতেই আমার হা’র্ট দু’র্বল যদি এট্যা’ক ফ্যা’টা’ক আসতো তখন?
তুই এমন ভাবে দৌড়ে আসলি মনে হলো তোর পিছনে ডা’কা’ত তারা করেছে। আর কি পা’গলের মতো বিরবির করে বলছিস?নোহা সোহাকে জিজ্ঞেস করে।
“আর বলিস না বইন,,তোর বোন ভুল স্টেশনে গাড়ি ব্রে’ক করে ফেলেছিলো।ব্রে’ক করেও শান্ত হয়নি একদম এক্সি’ডে’ন্ট করে ফেলেছে।
কি বলছিস এসব।
ঠিকই বলছি।গু’রু’তর এক্সি’ডে’ন্ট হয়েছে।
এমনিতেই তোর মাথা খারাপ আরো খারাপ হয়ে গেছে দেখছি।কি আবোলতাবোল বকছিস কখন থেকে। কি হয়েছিল সেটা সোজাসাপটা বল নয়তো এইযে হাত দেখছিস ঠাস করে গালে লাগিয়ে দেবো।
আরে আর বলিস না তারপর সোহা একে একে সব কিছু তার বড় বোন নোহাকে বলল।
নোহা সব শুনে বলে উঠে,, এসবের কোনো মানে হয়? সবটার মাঝে তোর বাড়াবাড়ি। বাড়িতে আসতে না আসতেই কিসের মজা করিস? তাও আব্বুর সামনে করেছিস আম্মুর সামনে করলে এতোসময়ে তোমার গাল হয়ে যেতো লাল।সবাই কি ভাববে বলতো। এমন কেউ করে? চোখ ধরেছিস ভালো কথা এটা মজার মাঝে পরে।বাট চুল ধরে টানাটানি এসবের কোনো মানে হয়?
দায়ান ভাইতো ব্যাথা পাইছে হয়তো।
উনি দায়ান?
তো আর কে হবে ওরা পাঁচ জনই এসেছে।যেহেতু রুশ কে ধরিসনি তাহলে দায়ান ভাইয়ের সাথেই এমন কাজ করেছিস।
আল্লাহ আমিতো উনাকে দেখতে পারলামনা আপু।সেই ছোট বেলা দেখেছি।
দেখতেই পাবি।উনিতো আর চলে যাচ্ছে না।আর উনাকে স’রি বলে দিবি।
হুম।
আর শোন রুশের সাথেও এমন মজা করতে যাবি না বুঝলি।যেটা তে ব্যাথা পায়।বলেই লাজুক হাসলো নোহা।
বোনের দিকে তাকিয়ে রয় কিছু সময় সোহা তারপর বলে উঠে ওমাগোওওওও টুরু লাভ। পা’গ’লকে কেন মাঝ নদীতে গিয়ে নৌকা ডুবার কথা মনে করিয়ে দিলি আপু? এখন তো আমি এইটাই করবো। দেখনা তোর বরের কি হা’ল করি।হুহ্ ঢং সর সামনে থেকে।
———————-
বসার ঘরে সকলেই দায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। দায়ান মনে মনে বেশ বিরক্ত এসব কিছু তার একদম ভালো লাগছে না।তার উপর চুল টেনে ধরায় রা’গ টা যেনো তরতরিয়ে বেড়ে চলেছে।অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক করে রেখেছে। অন্যের বাড়িতে কোনো সি’ন’ক্রি’য়েট করতে চায় না সে।নয়তো এতোসময় এখানে থাকতো নাকি।কখন বাড়ি চলে যেতো।
দায়ান রুশের দিকে তাকিয়ে দেখে রুশ তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যার অর্থ ভাই আমার প্লিজ রা’গ করিস না।
এরমধ্যে সোহার বাবা শান্ত গলায় বলে উঠে,, আব্বাজান কিছু মনে করো না প্লিজ। আমার ছোট মেয়েটা একটু পা’গলাটে ধরনের। তাই এমন করে ফেলেছে। ও বুঝতে পারেনি বিষয় টা।ভেবেছিলো রুশ বাবা। আসলে বাড়ির ছোট মেয়েতো সকলেরই খুব আদরের। সকলের আদর পেয়ে একটু দুষ্টু হয়ে গেছে। সারাদিন এটা ওটা নিয়ে ম’জা করতে থাকে। এতো বলে কয়ে ও ওকে একটু সিরিয়াস বানাতে পারলাম না।কেন যে মেয়েটা বোঝে না সবাইতো আর ম’জা পছন্দ করে না।ওর হয়ে আমি স’রি বলছি।তুমি কিছু মনে করো না।
দায়ানের মা বলে উঠে,, ভাইজান আপনাকে স’রি বলতে হবে না। বাচ্চা মেয়ে ভুল করেছে।এতে স’রি বলার কি আছে? আর এই বয়সে একটু আধটু ম’জা করেই থাকে।এখন না করলে কখন করবে? আর সময় ও পরিস্থিতি ওরে আপনা আপনি ই সিরিয়াস বানিয়ে দিবে।এসব বাদ দিন দায়ান কিছু মনে করেনি।তাই না দায়ান?
দায়ান তার দৃষ্টি মায়ের দিকে দেয়। তার মা তাকে চোখের ইশারায় বলে বলতে যে সে কিছু মনে করেনি।
“হ্যা আংকেল আপনাকে স’রি বলতে হবে না। আমি কিছু মনে করিনি।”
রুশ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে খুব ভয়ে ভয়ে ছিলো। দায়ান না আবার এসব কান্ডে বাড়ির রাস্তা ধরে।
আমি একটু রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিতে চাই।আসলে মাথাটা খুব ধরেছে।
হ্যা হ্যা যাও! তারপর সোহার বাবা তাদের বাড়িতে কাজে সাহায্য করে সেই ছেলেটিকে বলে,,দায়ানকে তার রুম দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। দায়ান ও উঠে রুমের দিকে চলে যায়। প্রায় অনেক বছর পর আসা হলো রুশের মামার বাড়ি। বাড়িটা আভিজাত্যপূর্ণ গ্রামের মধ্যে এমন বাড়ি সকলেরই নজর কারবে।সব কিছুই সৌখিন ভাবে সাজানো।ছেলেটা দায়ানকে রুম দেখিয়ে চলে যায়।
দায়ান রুমে ঢুকে আগে ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে যায়। মাথায় পানি দেওয়া দরকার। মাথাটা গরম হয়ে আছে।
————–
সোহা বোনকে চলে যেতে বলে নিজেই রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে আসে। তখনকার ঘটনার কারণে কারো সাথেই কোশল বিনিময় হয় নি।তাছাড়া দেখা দরকার কি পরিস্থিতি। সবাই এখনো সোহার ভুলটা নিয়েই পরে আছে কি না।উফফ কেন যে এক্সাইটেড এর ঠেলায় আশে পাশে না তাকিয়ে মজা করতে গেলো।লোকটা তাকে এখন কি ভাবছে? এসব ভাবতে ভাবতেই সোহা নিচে নেমে আসে।
নিচে সবাই হালকা খাবার খাচ্ছে আর আলাপ আলোচনা করছে।সোহা চোখ এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ও বসার ঘরে দায়ান কে দেখতে পেলো না।
সোহা গিয়ে চুপচাপ সকলের পাশে দাঁড়ায়। দায়ানের মা সোহাকে হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকে।সোহা এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে।
কেমন আছো মা? কতো বড় হয়ে গেছো।সেই ছোট থাকতে দেখেছিলাম।আমাদের ব্যস্ততার করণে আসতে ও পারি নি।তুমিও তো যাও না।মানুষ কি ফুপুর বাড়ি যায় না?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আন্টি। আসলে পড়াশোনার কারণে যাওয়া হয়ে উঠে নি।এসব বাদ দাও তুমি কেমন আছো?
এইতো আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
তারপর সোহা সকলের ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে ওদের সাথেই আড্ডায় মেতে উঠে। খুব সহজে সকলের সাথে মিশে যাওয়া সোহার কাছে কোনো ব্যাপারই না।মানুষকে হাসাতে সোহা প’টু। এরই মাঝে সোহার মায়ের ডাক আসে রান্না ঘর থেকে।
সোহা সকলের দিকে তাকিয়ে বলে,,, তোমরা বসো আমি এখন আসি।পরে আবার কথা হবে।
রুশ ও বলে উঠে,, আমিও রুমে যাই। সারা রাস্তা ড্রাইভ করে এসেছি খুব ক্লান্ত লাগছে।একটু রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন।
সোহার পাশ দিয়েই রুশ নিজের ব’রা’দ্দ’কৃ’ত রুমের দিকে পা বাড়ায়।পাশ থেকে সোহা বলে উঠে হ্যা যাও যাও যা রেস্ট নেওয়ার নিয়ে নাও।তারপর আর সময় কই? শা”লি আছি না দুলাভাইয়ের আরাম হা/রাম করার জন্য?
রুশ সোহার দিকে সরু চোখে তাকায় তারপর মাথায় একটা টোকা মেরে বলে,,,আমি তোর দুলাভাই হওয়ার আগে ভাই হই।তাও আবার বড় ভাই ভুলে গেলি নাকি? সো ম’জা নিতে আসবিনা।
একশোবার নিবো আজ থেকেই শুরু হবে রেডি থেকো বুঝলা।সোহার মা ইতিমধ্যে আবার ডেকে উঠায় সোহা দৌড়ে রান্না ঘরের ভিতর ঢুকে পরে।
সোহার মা সোহা রান্না ঘরে ঢুকার সাথে সাথেই কিছু না বলে হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দেয়।
যা এটা নিয়ে উপরে যা দায়ান কে দিয়ে আয়।ছেলেটার নাকি মাথা ব্যাথা করছে। তাই ভেষজ চা তৈরি করে দিয়েছি খেলেই মাথা ব্যাথা কমে যাবে।
আম্মু আমি কেনো? অন্য কাউকে কে পাঠাও।
সোহার মা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই বলে উঠে যাচ্ছি রা’গ দেখাতে হবে না। সোহা তার মাকে প্রচুর ভ’য় পায়।বাবার সাথে ফ্রি থাকলেও মায়ের সাথে ততোটা না।সোহার মা সোহার এরকম ছেলে মানুষি একদম নিতে পারে না।তাই সব কিছু মায়ের আড়ালেই করে।কিছু সামনে পরলেও হয় নোহা,নয়তো তার আব্বু ব্যাপারটা সামলে নেয়।
সোহা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে উপরে যেতে যেতে বলে,,, লোকটার সাথে কি কাজটা করলাম।এখন যদি আমায় দেখে রে’গে যায়? চা যদি আমার উপর ছুড়ে মারে? এসব ভাবতে ভাবতেই রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।
দায়ান বিছানায় বসে তার মাথা মুছতে ব্যস্ত।
সোহা ছোট করে দরজায় টোকা দেয়।
দায়ান শুনেও কিছু বলে না।সারা ও দেয় না।
সোহা সারা শব্দ না পেয়ে আবার টোকা মারে।
দায়ান এবার গম্ভীর কণ্ঠে কামিং ব’লে উঠে। কারণ এটাতো আর তার,বাড়ি না।কে জানে কে এসেছে।বাড়ির কেউ হলে দায়ান বুঝতে পারতো।কারণ ওনারা দরজা টোকা দেওয়ার সাথে দায়ানের নাম ধরেও ডাকতো।
সোহা গলার স্বর শুনেই কেঁপে ওঠে। বাবাগো লোকটা বোধয় রেগে আছে।তারপরও সাহস জুটিয়ে বুকে থু’থু দিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে যায়।
দায়ান এখনো খেয়াল করেনি যে কে এসেছে।তার ইচ্ছে ও করছে না দেখার। দায়ান কে এমন ভাবলেশহীন দেখে সোহা অবাক হয়।এটা কোনো কথা? রুমে কেউ ঢুকেছে কথা না বলুক মাথাটা তুলে দেখবে তো কে? তা না করে সেই কখন থেকে মাথা নিচু করে মুছে চলেছে।যার জন্য সোহা নিজেও মুখটা দেখতে পাচ্ছে না।
আপ-আপনার নাকি মাথা ব্যাথা করছে? আম্মু আপনার জন্য ভেষজ চা করে পাঠিয়েছে। খেলে মাথা ব্যাথা কমে যাবে।বলেই কাপটা দায়ানের দিকে বাড়ায়।
দায়ান চোখ মুখ কোচকে মুখ উপরের দিকে তুলে সোহার দিকে তাকায়।
সোহা এবার দায়ানের মুখ টা দেখতে পায়।দেখেই চমকে উঠে। বুকের ধ’রা’স ধ’রা’স করছে।এক মনে দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়। লোকটাকে খুবই অগোছালো লাগছে। মুখ ভর্তি দাড়ি।চুল গুলো বড় বড় হয়ে আছে। মুছার কারণে এলোমেলো হয়ে কপাল টা ঢেকে আছে।মুখটা পুরাই গম্ভীর করে রাখা।
দায়ানের এই অগোছালো উসকো খুসকো চুলে গম্ভীর মুখে যেনো আলাদা সৌন্দর্য ফুটে ওঠেছে।সোহার এসব ভাবনার মাঝেই দায়ান বলে উঠে,,, টেবিলে রেখে যাও আমি খেয়ে নিবো।
সোহা বেশ অবাক হয় দায়ানের কথায়।একটু আগে এমন একটা কান্ড ঘটালো সে লোকটা তাকে কিছুই বললনা?আর কিছু না ভেবে কাপ টা টেবিলের উপর রেখে বেরিয়ে আসার জন্য উল্টো দিকে পা বাড়ায়।কয়েক কদম এগিয়ে ও আবার পিছনে ফিরে দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“শুনুন তখনকার জন্য স’রি আমি বুঝতে পারিনি ঐটা আপনি।বেবেছিলাম রুশ ভাইয়া।”
দায়ান সোহার দিকে তাকালোও না প্রতি উত্তরে কিছু বলল ও না।
দায়ানের দিকে তাকিয়ে কোনো সারা না পেয়ে সোহা রুম থেকে বের হয়ে যায়।
এবার দায়ান উঠে গিয়ে চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে চুমুক বসায়।
—————————–
সকলেই দুপুরে এক সাথে খাবার খেয়েছে। শুধু দায়ান সেই যে রুমে ঢুকেছে আর বের হয়নি। তার মা গিয়ে খাবারের জন্য খেতে ডেকেছিলো সে জানিয়েছে খাবে না।
দায়ানের মা হয়তো বুঝে গেছে দায়ানের৷ অ’স্ব’স্তি হচ্ছে। তাই কথা বাড়ায় নি।নিজে খাবার এনে দায়ানকে খাইয়ে দিয়েছে।সকালে ও ভালো ভাবে খায়নি।এখন ও যদি না খায় তাহলে অসুস্থ হয়ে যাবে।
এখন প্রায় বিকেল দায়ান জানালার পাশে চেয়ার নিয়ে বসে বাইরের একটা গাছের দিকে তাকিয়ে আছে। ঐখান থেকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসছে।দরজায় টোকা পরায় দায়ানের ভাবনার ব্য’ঘা’ত ঘটে আশ্চর্য এখন আবার কে এলো?
কে?
আমি! বলেই সোহা ভিতরে ঢুকে পরে।
দায়ান সোহাকে দেখে বলে, দেখো আমার একদম কথা বলতে ইচ্ছে করছে না সো তুমি,,,,,,আর কিছু বলার আগেই সোহা বলে,,,,,,
“ঘুরতে যাবেন আমার সাথে? ”
#চলনে,,,,,,,,,,,
বিঃদ্রঃ রাতে আরেকটা পার্ট দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।